#হারানো_সুর-১১তম পর্ব(ভ্রমণ-১)
©শাহরিয়ার
— প্রেমা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হৃদয় আর রিমির দুষ্টমি দেখছিলো। মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছিলো দু’জনের দুষ্টমি। মিহিকে কোলে নিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো প্রেমা। যদদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। মুহুর্তেই কারো মন ভালো করে দেবার জন্য প্রেমার ব্যালকনিটা যথেষ্ট্য। মিহি প্রেমাকে বলে উঠলো মামুনি চলো ঘরে যাই বাবা আর খালা মনির সাথে গল্প করবো। প্রেমা মিহির কপালে চুমু খেয়ে রুমের ভিতর ঢুকলো। মিহি দৌঁড়ে বাবার কোলে যেয়ে বসলো। সবাই মিলে গল্প করতে করতে সময় এগিয়ে চলতে শুরু করলো। এর ভিতর রিমি সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
প্রেমা:- হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে আপনি মিহিকে নিয়ে শুয়ে থেকে রেস্ট করেন। আমি যেয়ে মাকে রান্নায় সাহায্য করি।
হৃদয়:- আচ্ছা ঠিক আছে যাও।
প্রেমা:- চা খাবেন?
হৃদয়:- হ্যাঁ হলে মন্দ হয়না।
— প্রেমা হেসে রুম থেকে বের হয়ে রওনা হলো কিচেনের দিকে। কিচেনে যেয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে মা চুলায় কি দিয়েছো?
মা:- পানি গরম দিয়েছি, জামাইকেতো চা দেয়া হয়নি তোরাতো শুধুই গল্প করে চলেছিস।
প্রেমা:- ভালো করেছো বলে চা বানাতে শুরু করলো।
মা:- শুধুই চা দিবি নাকি? একটু নাস্তাও দে সাথে।
প্রেমা:- কি যে বলো না তুমি উনি এখন নাস্তা খাবে না।
— মায়ের সাথে গল্প করতে করতে চা বানিয়ে নিয়ে রওনা হলো প্রেমা। রুমে ঢুকে হৃদয়ের দিকে চা এগিয়ে দিলো।
হৃদয়:- হুম তোমার হাতের চা মিস করছিলাম।
প্রেমা:- বুক সেল্ফ থেকে কিছু বই বের করে হৃদয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে, এগুলো পড়তে পারেন আপনার সময় ভালো কাটবে।
— হৃদয় হাত বাড়িয়ে বই গুলো নিয়ে ধন্যবাদ দিলো। প্রেমা হাসি মুখে সে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। কিচেনে মায়ের সাথে রান্নায় সাহায্য করতে শুরু করলো দুই বোন। হৃদয় মিহিকে বুকে জড়িয়ে গল্পের বই হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো। আজ বহু বছর পর কোন গল্পের বই হাতে তুলে নিয়েছে হৃদয়। গভীর মনোযোগ সহকারে বই পড়তে শুরু করেছে সে। বই পড়তে পড়তে কখন যে দুপুর হয়ে গিয়েছে সেদিকে হৃদয়ের খেয়ালই নেই। সব রান্না শেষ করে প্রেমা রুমে এসে দেখতে পেলো হৃদয় বুকের উপর বই রেখে ঘুমিয়ে আছে। পাশেই মিহিও ঘুমিয়ে রয়েছে। প্রেমা খাটের উপর বসে হৃদয়ের হাত থেকে বই নিতেই হৃদয় চোখ মেলে তাকালো।
প্রেমা:- ঘুমে ডিস্ট্রার্ব করলাম নাতো?
হৃদয়:- না,
প্রেমা:- বাবার কিনে নিয়ে আসা নতুন লুঙ্গী আর টাওয়েলটা হৃদয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে গোসল করে আসেন। সকলে এক সাথে লাঞ্চ করবো।
হৃদয়:- লুঙ্গীর সাথে প্রেমার হাত ধরে টান দিতেই প্রেমা বিছানায় হৃদয়ের বুকের উপর পরে গেলো।
প্রেমা:- বুকের উপর শুয়ে থেকেই কি করছেন?
হৃদয়:- কি করছি?
প্রেমা:- মেয়ে জেগে যাবে,
হৃদয়:- তো কি হবে?
প্রেমা:- কেউ রুমে চলে আসবে।
হৃদয়:- আসুক তাতে আমার কি?
প্রেমা:- ইস কি বলেন লজ্জা লাগে না?
হৃদয়:- কেন লজ্জা লাগবে? কিসের লজ্জা লাগবে? আমি কি অন্য মেয়ে নিয়ে শুয়ে আছি নাকি?
— কথাটা বলেই আরও শক্ত করে বুকের সাথে চেঁপে ধরলো প্রেমাকে।
প্রেমা:- ছাড়ুন উঠে গোসল করে নিন। মা নিশ্চই এতো সময়ে ডাইনিং এ খাবার রেডি করে ফেলেছে।
— হৃদয় প্রেমার ঠোঁটের গভীর নিজের ঠোঁট নামিয়ে নিয়ে আসলো। প্রেমার মুখ থেকে আর একটা কথাও বের হলো না। শক্ত করে হৃদয়কে জড়িয়ে ধরলো। হৃদয় প্রেমার ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিয়ে উঠে বসতে বসতে পিচ্চিই থেকে যাবা। বিয়ের পর মেয়েরা বড় হয় তাদের রুমে যখন কেউ প্রবেশ করে তখন নক করেই প্রবেশ করে এটা জানো না নাকি তুমি?
প্রেমা:- বসতে বসতে পাশে মেয়ে শুয়ে আছে এটা ভুলে গেলেও চলবে না।
— প্রেমার কথা শুনে হৃদয় হাসতে হাসতে ওয়াশ রুমে চলে যায়। প্রেমা মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে আসতে আসতে ডেকে তুলে। মিহি চোখ ডলতে ডলতে কি হয়েছে মামুনি?
প্রেমা:- ফ্রেস হতে হবে মামুনি, দুপুর হয়েছে এখনতো খেতে হবে। তাড়াতাড়ি তুমি খালা মনির কাছে যাও খালামনি তোমাকে রেডি করে দিবে।
মিহি প্রেমার কোলে থেকে নেমে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। প্রেমা বিছানা গুছাতে গুছাতে হৃদয় গোসল ছেড়ে চলে আসলো। খালি গায়ে হৃদয়কে দেখে প্রেমা অপলক চেয়ে রইলো। বুকের ভেজা পশম গুলোতে বিন্দু বিন্দু পানি জমে রয়েছে।
হৃদয়:- এভাবে কি দেখছো?
প্রেমা:- লজ্জা পেয়ে কিছুনা, ভালো করে শরীর মুছে এ পাঞ্জাবীটা পরে নিন।
— হৃদয় হাত বাড়িয়ে প্রেমাকে টান দিলো। প্রেমা এই কি করছেন হঠাৎ এতো রোমান্টিক হয়ে গেলেন ঘটনা কি?
হৃদয়:- রোমান্টিক হতে কোন ঘটনা লাগে নাকি? বলেই হাত দিয়ে টান দিয়ে প্রেমার শাড়ির আঁচলটা নিয়ে নিজের বুকে জমে থাকা পানি গুলো মুছতে শুরু করলো।
প্রেমা:- এই যে মশাই কেউ রুমে ঢুকে পরলে কি অবস্থা হবে?
হৃদয়:- কি হবে দেখে লজ্জা পেয়ে দৌঁড়ে পালাবে।
— হৃদয়ের কথা শুনে প্রেমা জোরে হেসে দিলো। এমন সময় দরজায় কড়া নেড়ে আপু বলে ডাক দিলো রিমি। প্রেমা সোহানের হাতে পাঞ্জাবীটা ধরিয়ে দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি পরে নিন। দ্রুত শাড়ির আঁচল ঠিক করে যেয়ে দরজা খুলে দিতেই রিমি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে হইলো তোমাদের তাড়াতাড়ি করো বাবা সেই কখন থেকে ডাইনিং এ বসে আছে খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
প্রেমা:- রিমির কান ধরে টান দিয়ে এতো কথা বলিস কেন? বেশী পাকনা হয়ে গেছিস।
রিমি:- এই আপু ছেড়ে দে লাগছে খুব।
প্রেমা:- লাগুক তাহলেই তোর বুদ্ধি হবে।
— দু বোন যতক্ষণ কথা বলছিলো ততক্ষণে হৃদয় পাঞ্জাবী পরে নিয়েছে, রিমি হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে জিজুকে একদম নায়কের মত লাগছে দেখ দেখ আপু।
প্রেমা:- তোর দেখার ইচ্ছে হলে দেখ, আমি সারা জীবন দেখতে পারবো।
— প্রেমার কথা শুনে হৃদয় কাঁশি দিয়ে উঠলো, রিমি সেতো দেখতেই পাবি কিন্তু আজকের মত কি আর দেখতে পাবি। পুরনো হয়ে গেলে তখন আফসোস করবি বুঝলি।
প্রেমা:- চুপ করে খেতে চল।
— তিনজন হাঁটা শুরু করলো ডাইনিং এর দিকে। টেবিলে যেয়ে বসতে চোখ কপালে উঠার মত অবস্থা হয়েছে হৃদয়ের পুরো টেবিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ কোথাও একটুও জায়গা খালি নেই। নানান রকম খাবার দিয়ে পুরো টেবিলে সাজানো।
প্রেমা আর রিমি খাবার বেড়ে দিচ্ছে, রুই মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট, খাশির রেজালা, চিকেন রোস্ট, জাল ফ্রাই, শিক কাবাব। কি নেই টেবিলে, জামাই আদর বুঝি এভাবেই করে। দেখে মাথা ঘুরে যাবার অবস্থা হৃদয়ের। মনে মনে হৃদয় বলছে আজ বুঝি খাবারের নিচেই আমাকে চাঁপা পরে মরতে হবে। হৃদয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছে প্রেমা। তাই সব কিছু থেকে অল্প অল্প করে তুলে দিতে থাকলো। হৃদয় হাত দিয়ে বাঁধা দেবার চেষ্টা করলে প্রেমা চোখ বড় বড় করে হৃদয়ের দিকে তাকালে হৃদয় হাত সরিয়ে নেয়।
বাবা:- খাও বাবা তিনজন মিলে রান্না করেছে, তোমার উসিলায় আমারও খাওয়া হয়ে যাবে। বুড়ো হয়ে গেছি এখনতো আর শ্বশুড় বাড়ি যাওয়া পরে না।
— শ্বশুড়ের মুখে এমন কথা শুনে মুখ চেঁপে হেসে দিলো হৃদয় তারপর বলতে শুরু করলো বাবা কি বলেন আপনার এমন কি বয়স হয়েছে? এখনো আপনি দৌঁড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে প্রথম হবেন।
— হৃদয়ের কথা শুনে সকলে এক সাথে হেসে উঠলো। হৃদয় তৃপ্তি নিয়ে প্লেটের পুরো খাবার শেষ করলো। প্রেমা বললো আরেকটু খাবার দেই। হৃদয় হাত নেড়ে বললো আর পারবো না। প্রেমা একটা প্লেটে খাবার নিয়ে খেতে বসলো, মিহি এতো সময় প্রেমার মায়ের হাতে খাবার খেলেও প্রেমাকে খাবার বাড়তে দেখে সে তার কাছে ছুটে আসলো। প্রেমা মিহিকে নিজের পাশের চেয়ারে বসিয়ে মুখে তুলে খায়িয়ে দিতে থাকলো। হৃদয় টেবিল থেকে উঠতে উঠতে রিমির দিকে তাকিয়ে বললো ভাবছি সকলে মিলে বেড়াতে যাবো বিকেলে।
রিমি:- খুশি হয়ে ওয়াও! কত দিন বেড়াতে যাওয়া হয়না।
হৃদয়:- হুম তাহলে তাড়াতাড়ি রেস্ট নিয়ে রেডি হয়ে যাও।
— বলে হাঁটা শুরু করলো রুমের দিকে। সকলের খাওয়া শেষ হতে সব কিছু গুছিয়ে প্রেমা মিহিকে সাথে নিয়ে রওনা হলো রুমের দিকে। হৃদয় বিছানায় শুয়ে রেস্ট নিচ্ছে। প্রেমাকে দেখে উঠে বসলো।
প্রেমা:- কোথায় যাবেন বেড়াতে?
হৃদয়:- আজকের আকাশটা বেশ সুন্দর কোন নদী থেকে ঘুরে আসলে দারুণ হয়।
— দু’জন বিছানায় শুয়ে গল্প করতে করতে বিকেল হয়ে গেলো। প্রেমা হৃদয়ের সহযোগিতায় শাড়ি পরে নিলো। আকাশি রঙের শাড়ি। তারপর মিহিকে রেডি করতেই রিমি দরজা নক করে ঘরে প্রবেশ করলো। হৃদয় বললো বাবা মা যাবে না? রিমি জানালো না আমাদের ঘুরে আসতে বলছে। হৃদয় সবাইকে নিয়ে গাড়িতে করে রওনা হলো। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর একটা নদীর সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করলো। নদীর পরিষ্কার পানিতে তাকাতেই যেন মনটা সকলের আনন্দে ভরে উঠলো। হালকা বাতাসে প্রেমার চুল গুলো উড়ে বার বার সামনে চলে আসছে। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রয়েছে হৃদয় সেদিকে। রিমি বলে উঠলো নৌকায় চড়বে।
#চলবে…