ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ৭

0
914

#ধূসর_রঙের_রংধনু -৭
#তাসনিম_তামান্না

বাসায় এসে অভ্র রুমে যেতে গিয়ে দেখলো রুম লক করা নীলিমার কাছে চাবি চাই তে গিয়ে নীলিমা বলল সে এ ব্যাপারে কিছু জানে না। নিপা বুঝে গেলো রুদ্রের কাজ রেগে গেলো। রুদ্র তখন রুমেই ছিল।
— আপনি ঐ রুম লক করেছেন কেনো?
— ইচ্ছে হয়েছে তাই
— আপনার ইচ্ছেতে তো কিছু হবে না
— আমার ইচ্ছেতেই সব হবে
— চাবি দিন
— চাবি নিয়ে কি করবে? আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে এই রুমে থাকবে এটা আমাদের রুম
— ঐটাও আমাদের রুম। আমার আর অভ্রের রুম আপনি কোন সাহসে রুম লক করেন? সেদিন বাবা বলে ছিল বলে এই রুমে থাকতে রাজি হয়েছিলাম। আমি আপনাকে জাস্ট টলারেট করতে পারছি না সহ্যকর মানুষ আপনি আমি ঔ রুমে শিফট করবো
— নিপা আমাকে রাগিও না
— রাগার মতো কাজটা আপনি করেছেন। কোন সাহসে আপনি রুম লক করেছেন?
— সাহসের কথা বলছ সাহসটা আমার বরাবরই বেশি আর আমি চাই না তুমি ঐ রুমে যাও
— কোথায় গেছি, কি করছি, কোথায় যাবো না সব আপনার কাছে শুনতে আমাকে করতে হবে? অভ্র কখনো আমার সাথে এমন করতো না আমাকে ইচ্ছাটাকে প্রধান্য দিত
রুদ্র রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলল
— অভ্র অভ্র আর অভ্র তোমাকে না বলেছি অভ্রর নাম তোমার মুখে না শুনি?
— শুনলে কি করবেন? মে রে ফেলবেন? ফেলুন তবুও আমি অভ্রের নাম একশো বার নিবো হাজার বার নিবো দেখি আপনি কি করেন
রুদ্র রাগে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে নিপাকে চ ড় মা র তে হাত উঠাতে নীলিমা অভিজিৎ ওদের চিৎকার চেচামেচিতে ওপরে এসে দেখে রুদ্র নিপাকে চ ড় মা র তে যাচ্ছে। নীলিমা এসে রুদ্রের হাত ধরে ফেলে ধমকে উঠে রুদ্রকে বলল
— এসব কি হচ্ছে রুদ্র? ও তো ঠিকি বলেছে তুমি কেনো অভ্রর রুম লক করবে? আবার তুমি ওর গায়ে হাত তুলছ? এই শিক্ষা পেয়েছ তুমি ছিঃ…
— সারাক্ষণ কানের কাছে অভ্র গুনোগান শুনতে আমার ভালো লাগে না
— বড় ভাই হয় সে তোমার তুমি নাম ধরে কেনো ডাকছ
— উফফ যাও তো আমি জ্ঞান শুনতে ভালো লাগছে না। ও আমাকে বেঁচে থেকেও শান্তি দিলো না মরে গিয়েও শান্তি দিলো না। আমার জীবনটা ওর জন্য শেষ হয়ে গেলো
— রুদ্র।
নীলিমা রেগে রুদ্র কে চ ড় মা র লো। রুদ্র আরো হিং*স্র হয়ে গিয়ে চিৎকার করে বলল
— হ্যাঁ হ্যাঁ আমাকেই তো মা র বে অভ্রই তোমার ছেলে আমি তোমার কেউ না। সবসময় তুমি অভ্রকেই বেশি ভালোবাসো আমাকে কখনো ভালোবাসো না আমার দোষটাই শুধু খুঁজে পাও অভ্রর দোষ তো তোমার চোখেই পড়ে না। কখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করেছ আম্মু কখনো করো নি তোমার শুধু অভ্রই সন্তান আমি তো কেউ না। আবার এখন বউয়ের মুখে অভ্রের গুনগান শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি এই অভ্রের কাছ থেকে কি আমার রেহাই নেই?
কথাগুলো বলে রুদ্র আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না। চলে গেলো রুম থেকে। অভিজিৎ আগে থেকেই রুদ্রের এ কথা গুলো জানত তাই ও রুদ্রের পিছনে পিছনে গেলো। সকলে রুদ্রের এমন কথা শুনে থমকে গেলো। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। নীলিমা রুদ্রের চোখে পানি দেখেছে। নীলিমা মা হয়ে ছেলের মুখে অভিযোগ শুনে রুদ্রের কষ্ট অনুভব করলো। নিপার মায়া লাগতে গিয়েও অভ্রের নামে খারাপ কথা গুলোর জন্য ঘৃ ণা হলো। নীলিমা ধীর পায়ে রুম থেকে প্রস্থান করলো। সকলে রুম থেকে যেতেই সারারুম চাবি খুঁজে অভ্রর রুমে গেলো।

দুদিন আগে নিপা শ্বশুর বাড়ি তে এসেছে। নিপার মা আসতে দিতে চায় নি এতোদিন পর নিজের মেয়েকে কাছে পেয়ে। কিন্তু নিপা পরিক্ষা আর শ্বাশুড়ি মা’র কথা রাখতে চলে এসেছে। তাছাড়া এখন বাপের বাড়ি বেশি দিন থাকলে চারিদিক থেকে নানান রকমের কথা উঠবে ভাবী সেটা ভালো চোখে দেখবে না অশান্তি সৃষ্টি হবে সব ভেবেই নিপা চলে এসেছে। নিজেকে কারোর কাছে বোঝা করতে চাই না।

দু’দিন বাড়িতে এসে সংসার, বাচ্চা সব সামলিয়ে উঠতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। নীলিমা বলেছে সব তিনি করবে কিন্তু নিপা তো এতোটাও কান্ডজ্ঞানহীন না জানে নীলিমার বয়স হয়েছে এখন এতো ধকল তিনি পারবেন না। তাই তো নিপা সবটা ঠিক ভাবে করে পড়াশোনা টাও করছে।

রাতে রুদ্র বাড়ি আসতেই দেখলো নিপা পড়ছে বাবু ঘুমাচ্ছে। রুদ্রের সাথে নিপা সেদিনের পর থেকে তেমন একটা কথা বলে না। যথা সম্ভব দূরে দূরে থাকে দরকার ছাড়া কিছু বলে না। রুদ্র ফ্রেশ হয়ে এসে বলল
— খেতে দিবে না?
— টেবিলে রাখা আছে খেয়ে নিন
— তুমি খেয়েছ?
— হ্যাঁ না খেয়ে থাকার তো কোনো কারণ দেখিছি না

নিপার এমন ব্যবহারে রুদ্র কষ্ট পায়। কিন্তু কিছু বলল না চুপচাপ খেতে চলে গেলো। খেয়ে রুমে এসে বলল
— নিপা শোনো
— বলেন
— বাবা বলছিল তোমার যে কয়েক দিন এক্সাম সে ক’দিন বাবুকে দেখাশোনার জন্য একটা আইয়া রাখবে। মা র ও বয়স হয়েছে ওনিও পারবে না তুমি কি বল
— হুম রাখেন সমস্যা নেই। কিন্তু খোঁজ খবর নিয়ে রেখেন এখনকার দিন কাল ভালো না
— হ্যাঁ আমি খোঁজ নিয়েছি। তাছাড়া আমি তারাতাড়ি বাসায় আসার চেষ্টা করবো।

দেখতে দেখতে নিপার এক্সাম এসে গেলো। ব্যস্ততার জন্য মেয়েকে তেমন সময় দিতে পারছে না নিপা। দেখতে দেখতে নিপার এক্সাম শেষের দিকে। শেষ এক্সাম দিয়ে বাড়িতে পা রাখতেই হৃদির জন্য রেখে দেওয়া আইয়াটার কান্নার আওয়াজ শোনা গেলো। নিপাকে দেখে আইয়াটা এসে নিপার পা জড়িয়ে ধরে এলোমেলো বুলি আউড়াতে আউড়াতে বলল
— বিশ্বাস করেন আপা আমি কিছু জানি না আপনার বাচ্চাকে আমি কোথাও পা*চা*র করি নি

নিপার দুনিয়ায় যেনো উল্টে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

আসসালামু আলাইকুম। আজ ছোট হয়ে গেছে জানি ইনজেকশন ফোটানোর জন্য হাতে অনেক ব্যথা অনেক কষ্ট লিখছি। আশা করি বুঝবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here