ধূসর রঙের রংধনু পর্ব ৫

0
1003

#ধূসর_রঙের_রংধনু -৫
#তাসনিম_তামান্না

সেদিনের রুদ্রের কথায় ভবনায় পড়ে গেছিল নিপা কিন্তু কিছু বলে নি শুধু বলেছিল ‘আমার সময় লাগবে’ রুদ্র সময় দিয়েছে নিপাকে। আসলে ভেবে কিছু বের করতে পারি নি। নিপা চায় সব কিছু স্বাভাবিক হোক কোনো একটা ম্যাজিক হোক অভ্র ফিরে আসুক। কিন্তু জানে এমন কোনো ম্যাজিক হবে না ওর চোখের সামনে থেকেই অভ্রর খাটিয়া নিয়ে গেছিল। সেদিন যে কত বার অজ্ঞান হয়ে গেছিল অভ্রর মৃত্যুর শোকে ভাবলেই মনে হয় এই তো সেদিন অথচ তিনমাস হয়ে গেলো। একটা মানুষ চলে গেলো তবুও একমুহূর্তের জন্য সে মানুষ টাকে মনের আড়াল করতে পারলো না। নিপা সেদিনের পর চুপচাপ হয়ে গেছে রুদ্রের সাথে অযথা রাগারাগি চেঁচামেচি করে না। রুদ্রও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে ল্যাব টু বাড়ি আবার কখনো কখনো কাজের সুত্রে বাইরে ও যেতে হয়। কিন্তু এতো কিছুর মধ্যে রুদ্র যতই রাত হোক বাড়ি ফিরে আসে বা আসার চেষ্টা করে। নিপা এর কারণ বোঝে না।
আজ অনেক দিন পর বাবার বাসায় এসেছে নিপা। বাবা-মা চাপাচাপি তে আসতেই হলো। এদিকে রুদ্র এ বাড়ির নতুন জামাই সে কখনো সে ভাবে আসে নি। বাড়িতে আসতেই নিপার বাবা-মা, ভাই -ভাবী এগিয়ে আসলো। একপ্রকার হৈচৈ বেঁধে গেলো। এতো কিছুর মধ্যে চাচী, পপি কে দেখতে পেলো না আগে নিপা আসলেই ওরাও আসতো। হৈচৈ করতো কিন্তু এখন সময়টা পাল্টেছে সব কিছু আর আগের মতো নেই। নিপা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
নিপা রুদ্র কে নিয়ে নিজের চিরচেনা রুমটায় আসতেই অভ্রর সাথে কাটানো সৃতি গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
রুদ্র নিপার বেডে বসতেই ডেবে গেলো হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলল
— বাহ! তোমার বেডটা এতো নরম সফট কেনো?
রুদ্রের কথা শুনে নিপার হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেলো। নিপা আর অভ্র যে দিন বিয়ের পর এ বাড়িতে এসেছিলো। অভ্রও সেদিন বলেছিল
— তোমার বেড দেখছি তোমার মতোই নরম। ছুঁলেই গলে যায়
নিপা লজ্জা পেয়ে বলেছিল
— যাহ দুষ্টু কি যে বলো না
— শোনো আমাকে একদম দুষ্টু বলবে না নিজেকে এই বুড়ো বয়সে বাচ্চা বাচ্চা ফিল আসে
— তুমি মোটেও বুড়ো না তুমি আমার হ্যান্সাম, ড্যাসিং একমাত্র বর
অভ্র বেডে আরাম করে শুয়ে নিপা একটানে নিজের ওপরে ফেলে বলল
— উহুম আমি তোমার হ্যান্সাম ট্যান্সাম হতে চাই না আমি তোমার কৃষ্ণমানব-ই হয়ে থাকতে চাই সারাজীবন বুঝছ তুমি
নিপা চটফট করতে করতে বলল
— আচ্ছা বুঝছি। কি করছ ছাড়ো দরজা খোলা কেউ চলে আসবে
অভ্র গাল ফুলিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বলল
— আমার কাছে আসলেই তোমার শুধু পালাই পালাই যাও ছেড়ে দিলাম আর কখনো তোমাকে ছুবো না
নিপা বুঝলো অভ্রর রাগ হয়েছে। উঠে দাঁড়িয়ে মাঝায় হাত দিয়ে বলল
— ওমনি না একটু আগেই না বললে তুমি বাচ্চা না তাহলে এখন বাচ্চাদের মতো করে মুখ ফুলিয়ে আছো কেনো?
অভ্র উত্তর দিলো না শোয়া থেকে উঠে গিয়ে লাগেজ টেনে বিছানায় উঠিয়ে জামাকাপড় বের করতে লাগলো নিপা উপায় না পেয়ে অভ্রকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
— বাবুটা রাগ করে না
অভ্র গম্ভীর কণ্ঠে বলল
— তোমাকে না কতবার বলেছি এসব নিবা নিবি দের মতো বাবু সোনা বলবে না ডিজগাস্টিং লাগে
— আগে বলো রাগে বলো রাগ করো নি তাহলে আর বলবো না
— আমার রাগের তুমি কি ধার ধারো না-কি? তোমার কোনো যায় আসে?
— অবশ্যই যায় আসে আমার একমাত্র বর রাগ করেছে মানে সেটা বিরাট ব্যাপার
অভ্র হেসে ফেলো নিপার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল
— তোমার একমাত্র বর রেগেছে বলে এতো আদর তাহলে তো এ রাগ বার বার আসুন সারাদিন থাকুন

নিপা কিছু বলতে যাবে তার আগে নিপার ভাবীর কণ্ঠে ভেসে আসলো
— এই সরি সরি আমি কিন্তু কিছু দেখি নি
অভ্র নিপা লজ্জা পেয়ে ছিটকে সরে গেলো। অভ্র মাথা চুলকে বলল
— কি যে বলি ভাবী আপনার ননদ টাও না আমি রাগ করেছি বলে রাগ ভাংঙ্গা ছিল। যা দুষ্টু আপনার ননদ
নিপা হা করে তাকিয়ে আছে তা দেখে অভ্র একটা চোখ মা রলো। নিপার ভাবী হেসে বলল
— হয়েছে হয়েছে বাবাহ আমি কি কিছু দেখেছি না-কি ফ্রেশ হয়ে খেতে এসো
নিপার ভাবী যেতেই নিপা রেগে অভ্রকে মা র তে লাগলো। অভ্র হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।
এসব কথা ভেবে নিপা আনমনে হেসে উঠলো। রুদ্র অবাক হয়ে নিপার দিকে তাকিয়ে রইলো কতদিন পর নিপার এমন হাসির শব্দ শুনতে পেলো। নিপার সেটা খেয়াল হতেই চুপ হয়ে গেলো। রুদ্রকে বলল
— আব আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমি একটু আসছি
— কোথায় যাচ্ছো?
— আসছি
— বাবু কে আনতে যাচ্ছো?
নিপা বিরক্ত হয়ে বলল
— হ্যাঁ
নিপা চলে এলো চাচি দের ফ্ল্যাটে নিপার বাবারা দুই ভাই এক বোন ওরা একবাড়িতেই থাকে কিন্তু ওপর নিচ। কলিং বেল বাজাতেই নিপার চাচি এসে দরজা খুলে দিলো নিপা কে দেখেই মুখে আঁধার নেমে এলো নিপা বুঝতে পেরেও বলল
— চাচি কেমন আছো?
— ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?
— ভালো। আমি আসবো জানতে না?
— জানবো না কেনো?
— তাহলে অন্য দিনের মতো আজ গেলে না যে পর হয়ে গেছি বুঝি?
চাচি মলিন হাসলেন বলল
— না রে মা আমার মেয়েটা ভালো নেই রে সারাদিন রুমে বসে থাকে ঠিক মতো খায় না। কি করি বল তো?
— সব আমার জন্য হলো তাই না চাচি?
— সবই ভাগ্য ভাগ্যর ওপরে কি কারোর হাত আছে। নিজেকে শুধু শুধু দোষারোপ করছিস
— পপি কোথায়?
— রুমেই আছে দেখ
নিপা পপির রুমে চলে আসলো পপিকে জানালা ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। নিপা বলল
— কেমন আছিস?
— যেমন দেখতে চেয়ে ছিলি। তুই নিশ্চয়ই ভালোই আছিস
— তোকে কে বলল ভালো আছি? মুখে ভালো আছি বললেই কি ভালো থাকা যায়?
— তোর এসব কথা অন্য জায়গায় গিয়ে বলল আ’ম নট ইন্টারেস্টিট
— এভাবে কতদিন থাকবি?
— ম রার আগ পর্যন্ত
— তোর কাছে চাচা চাচির দাম নেই? তারা কষ্ট পাচ্ছে দেখছিস না? এতো গুলো বছরের ভালোবাসার চেয়ে তোর কাছে দু দিনের ছেলের ভালোবাসা এত দাম? বাহ চমৎকার আমি তোর থেকে এমনটা আশা করি নি
— তো কেমনটা আশা করেছিলি আমি যেনো ম রে যায়?
— আমার কথা না বুঝে ষাঁড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেনো?
পপি রণমুর্তি হয়ে তাকালো যেনো চোখ দিয়েই ভার্স করে দিবে। নিপা মলিন কণ্ঠে বলল
— কি হাল করেছিস নিজের চেহারায়? চোখে নিচে কালি কেমন শুকিয়ে গেছিস
— এমন টাই তো চেয়ে ছিলি
— তোকে বলেছি তোকে এমন দেখতে চাই?
— তুই যা তো তোর সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না
— তাড়িয়ে দিচ্ছিস?
— হ্যাঁ
— আচ্ছা চলে যাচ্ছি থাক তুই যদি মনে করিস আমার কথা গুলো ভেবে দেখবি তাহলে দেখতে পারিস। আর বলে ছিলি না। আমি ম রি না কেনো? আমি ম রি না আমার মেয়ের জন্য আমি ম রে গেলে ওকে কে দেখে রাখবে বলত? ওর জন্যই বেঁচে আছি না হলে কবেই অভ্রর সাথে ম রে যেতাম

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here