তুমি আসবে বলেছে হৃদয় পর্ব ৯+১০

0
646

#তুমি_আসবে_বলেছে_হৃদয়
#পর্ব-৯+১০
#মেঘলা_আহমেদ

-” আমার দাদুভাই কে বিয়ে করবি রিদিশা? আগলে রাখতে পারবি আমার এরিক দাদু ভাই কে?

কথাটা ডায়নিং টেবিলে যেন ছোটখাটো বিষ্ফো’রণ ঘটালো। দাদুকে বেশ স্বাভাবিক দেখা গেল। রিদিশা কেবল খাবারের লোকমা মুখে দিচ্ছিলো, এই কথা শুনেই লোকমা হাত থেকে পড়ে গেল। রিদিশা বিষ্ফোরিত নয়নে মিসেস ময়ূরী তাহসান এর দিকে তাকান। তার মনে হচ্ছে ভূমি কাঁপছে চারপাশে। চারপাশে ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আইলাসহ সব বয়ে যাচ্ছে। এরিক হতভম্ব হয়ে গেছে দাদির কথায়। সে কখনো ভাবেনি তার দাদি এভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিবে। যার জন্য সে এত সময় অপেক্ষা করলো, আর দাদি এক কথাতেই বলে দিল? এরিক হাত ধুয়ে কোনদিকে না তাকিয়ে সদর দরজার দিকে যেতে থাকে। রিদিশা নিজেও হতভম্বের মত এরিকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না। মিসেস ময়ূরী তাহসান গলা উঁচিয়ে এরিক কে বললেন-

-” আরে দাদুভাই কই যাস? লজ্জা পেয়েছিস নাকি?

এরিক কোন কথার জবাব দিল না। সে হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। এখানে থাকলে রিদিশা তাকে খু|ন করবে সিউর। এলেন ফোকলা দাঁতে হাসলেন। রিদিশার দিকে তাকিয়ে বললেন-

-” বুঝলে দাদুভাই, আমার নাতিটার একটু লজ্জা বেশি।

রিদিশা এরিকের দাদুর কথায় বোধহয় সবথেকে বেশি অবাক হলো। এরিক নাকি লাজুক? এই কথা পৃথিবীর সবাই মিলে কিংবা এলিয়েন গোষ্ঠি এসে বললেও রিদিশা বিশ্বাস করবেনা। ময়ূরী রিদিশার দিকে তাকিয়ে বলল-

-” কি হলো রিদিশা উত্তর দিলে না যে দিদিভাই? এরিক কে কি তোমার পছন্দ না?

রিদিশা কি বলবে মাথা কাজ করছেনা। এরিক কে সে বিয়ে করবে? সিরিয়াসলি? এই ছেলের সাথে সারাজীবন থাকা সম্ভব না। রিদিশা মুখ তুলে তার প্রথম যুক্তি দাড় করিয়ে বলল-

-” দেখো গ্র্যান্ড মা এখনে পছন্দ অপছন্দের বিষয় আসছে কেন? তুমি কি জানো না এরিকের চেয়ে আমি তিন বছরের সিনিয়র! ওকে বিয়ে করা অসম্ভব!

রিদিশা আশার আলো নিয়ে তাদের উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে। মিসেস ময়ূরী মৃদু হেসে বললেন-

-” এখানে ছোট বড় এর প্রশ্ন আসছে কেন? আর যখন তুমি বয়সের প্রসঙ্গ টানছো তখন বলবো আমাদের ধর্মে জায়েজ আছে বয়সের ব্যবধানে এভাবে বিয়ে করা। যদিও আমরা তার মত মহামানব নই তবুও বলি, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) কিন্তু তার চেয়ে বয়সে অনেক বড় নারীকে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করেছিলেন। তাদের কি অশান্তি ছিল? তাদের মধ্যে যে প্রেম মোহাব্বাত ছিল তেমন জুটি বিরল। তাই বয়সের প্রসঙ্গ টেনো না এখানে।

রিদিশা অস্বস্তি ফিল করছে। এলেন হা করে মুগ্ধ হয়ে ময়ূরীর কথা শুনছে। আজ এই বয়সে এসেও ময়ূরীর বলা প্রতিটা কথায় সে ছন্দ খুঁজে পায়। রিদিশা জোড় দিয়ে বলে-

-” আচ্ছা মানলাম বয়সের প্রসঙ্গ আর টানছিনা। কিন্তু আমি এরিক কে কখনো ঐ চোখে দেখিনি। ওকে বিয়ে করা আমার পক্ষে অসম্ভব। ওর সাথে আমি এক মিনিট ও থাকতে পারবো না। ওর সাথে আমার একটুও বোনে না। সারাক্ষন ঝগড়া লেগে থাকে। সেখানে সারাজীবন থাকার কথা মানেই ইম্পসিবল !

মিসেস ময়ূরীর মুখটা কালো হয়ে গেল। সে চোখের চশমাটা খুলে চোখের পানি মুছলেন। কন্ঠ খাদে নামিয়ে শুদ্ধ বাংলায় বললেন-

-” দেখো রিদিশা। এই তিনটা বছর ধরে তোমাকে আমি চিনি। আমি তোমাকে আমার নিজের নাতনির মত ভালোবেসেছি। তুমি আমার বান্ধবীর নাতনি। তোমার উপর আমি কোন কিছু চাপিয়ে দেবো না। আসলে এরিক গত দু’বছর ধরে তোমাকে ভালোবাসে। এমন একটা দিন নেই ছেলেটা তোমার খোঁজ নেয়নি। তোমাকে প্রথম দেখে তার ভালো লাগে খুব। আমার মুখে তোমার গল্প শুনে সে তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। আমার নাতি আমার কাছে আবদার করে বসে তার তোমাকে চাই। তখন এই বয়সের ব্যাপার টা নিয়ে আমি অনেক তর্ক বিতর্ক করেছি। কিন্তু সে আমায় কতশত যুক্তি দিয়ে হারিয়ে দিল। তার লক্ষ্যই এখন নাকি তোমাকে ভালোবাসা‌। তারপর আমিও সায় দিলাম। আমাদের যত কথা হতো সব তোমাকে নিয়েই। আমার নাতিটা কখনো কোন মেয়ের দিকে তাকায়নি। সে মেয়েদের সঙ্গ পছন্দ করতো না। প্রথমবার তোমাকে মুখ ফুটে যখন চাইলো আমি না ফিরিয়ে দিতে পারিনি। তার পুরো পৃথিবী উল্টে গেলেও তোমাকে চাই। এই যে অফিসে জয়েন করা, সবটা তোমার জন্যেই। নিজের পড়াশোনা শেষ করেই তোমাকে পাওয়ার জন্য এরিক ম|রিয়া হয়ে উঠেছে। তুমি ওর প্রথম ভালোবাসা। আমার নাতিটা তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে তোমাকে না পেলে। ও ইচ্ছা করেই তোমার সাথে ঝগড়া করে। তোমাকে কত ভাবে বুঝিয়েছে, তবুও তুমি তাকে জুনিয়র বলে পায়ে ঠেলেছো। ও অনেক কান্না করেছে আজ। ফেলিক্স অফিসে থাকলে সে তোমায় দেখতে পাবেনা। তোমাকে না দেখে থাকতে পারবেনা তাই আমার কাছে ছুটে এসেছে। তার বাবাকে বোঝাতে বলেছে যাতে ফেলিক্স কে অফিসে না বসায়। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এরিকের বাবা ফেলিক্স কে অন্য কাজের জন্য এনেছে। তার উদ্দেশ্য হয়তো তোমাদের আলাদা করা নয় অন্য কিছু। আচ্ছা রিদিশা যে ছেলেটা তোমাকে দুই বছর ধরে পাগলের মত ভালোবাসে। তোমাকে একেবারে পাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাকে কি এভাবেই পায়ে ঠেলে দিবে?

মি. এলেন বাংলা বোঝেন না। তাই তিনি নিজের মতো খাওয়া শেষ করে উঠে গেলেন। রিদিশা বাক বিমূঢ় হয়ে বসে আছে। কি বলা উচিত, কি বললে ঠিক হবে এই মুহূর্তে কিছুই তার মাথাতে আসছেনা‌। রিদিশা খুব করে চাইছে সে যেন অজ্ঞান হয়ে যায় এখন। এত প্রেসার নেয়া সম্ভব না। এরিক তার সাথে প্রথম দিন থেকে যেভাবে চলেছে, তাতে বোঝাই যায় নি এরিক তাকে আগে থেকে চেনে কিংবা এত ভালোবাসে। আচ্ছা সত্যিই কি ভালোবাসে? ভালো তো সেও বেসেছিল শোয়াইব কে। কই শোয়াইব তো বুঝলো না। এরিক ভালো বাসলে বাসুক তার কি? সে সারাজীবন শোয়াইব কেই নিজের মনে জায়গা দিয়ে রাখতে চায়।

-” রিদিশা! কখনো তো কিছু চাইনি তোমার কাছে। আজ আমি নিষ্ঠুর হয়ে আমার নাতির জন্য তোমাকে চাইছি।

মিসেস ময়ূরীর কন্ঠ দূর্বল শোনালো। সে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। একজন দাদি তার নাতিকে কত ভালোবাসে তা এনাকে না দেখলে হয়তো রিদিশার জানা হতো না। রিদিশা কথা বলতে পারছেনা। মনে হচ্ছে কোন অদ্ভুত শক্তি তার গলা চেপে ধরেছে। রিদিশা অনেক কষ্টে মুখ খুলে বলে-

-” দেখুন দাদি আমিও একজন কে ভালোবাসি। আমার প্রথম ভালোবাসা। তাকে কি করে ভুলে যাই? আমি চাইনা তার জায়গা অন্য কাউকে দিতে। ক্ষমা করুন। আমি আর নিতে পারছিনা।

রিদিশা মুখ ঢেকে কেঁদে ওঠে। মিসেস ময়ূরীর দৃষ্টি শীতল হয়ে আসে। সে কি করবে বুঝতে পারছেনা‌।
ভালোবাসার কাছে কোন সঙ্গা টিকবে কি? নিজেকে ধাতস্থ করে সে রিদিশা কে প্রশ্ন করে-

-” আচ্ছা আমি তো এই তিনবছরে কারো সাথে দেখা করতে দেখলাম না তোমায়। তুমি যাকে ভালোবাসো সে কি বাংলাদেশের? সেও কি তোমায় ভালোবাসে?

রিদিশা নিভে যায়। কি উত্তর দিবে সে। কার জন্য কান্না করছে? যে তার ছোট বোনের স্বামী? সমাজ কি বলবে? রিদিশা নিচের ঠোঁট কামড়ে কান্না থামায়। ভেজা কন্ঠে বলে-

-” সে আমাকে কখনোই ভালোবাসেনি। সে আমার ছোট বোন কে ভালোবেসেছে। সে আমার ছোট বোনের স্বামী। সে হয়তো জানেও না আমি তাকে ভালোবাসি। তবুও খুব পুড়ে তার জন্য। তার কথা মনে হলেই আমি এলোমেলো হয়ে যাই। ভালোবাসা টা একতরফা ছিল তবুও আমি ভুলতে পারিনা। সে কেন আমায় ভালোবাসলো না?

ময়ূরী রিদিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন-

-” দিদিভাই দুনিয়াটা এমনই রে। দেখ এরিক ও তোকে একতরফা ভালোবাসে দুই বছর ধরে। তুই তো জানিস একতরফা ভালোবাসায় কত কষ্ট। তুই আমার দাদু ভাইটাকে এত কষ্ট দিবি? ওর ও তো আক্ষেপ থেকে যাবে যে তুই ওকে ভালোবাসলিনা।

রিদিশা শুকনো হেসে বলে-

-” ভালোবাসা শব্দটা শুনলেই কষ্ট হয়। এটা কোন চার অক্ষরের শব্দ না। এটা মানুষের অনুভুতি শেষ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এটা একটা শব্দ না, অনেক কষ্ট এখনে আবদ্ধ। ভালোবাসা যারে একবার এই রোগে ধরেছে, সেই জানে এর নিরাময় নাই!

রিদিশা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। তখনি ভেসে আসে একটা পুরুষ কন্ঠস্বর-

-” একটা সুযোগ কি দেয়া যায়না?

#চলবে

#তুমি_আসবে_বলেছে_হৃদয়
#পর্ব-১০
#মেঘলা_আহমেদ

আবহাওয়া টা কেমন যেনো রাশভারী লাগছে। বিষন্ন লাগছে বাতাস ও। দমবন্ধকর পরিবেশের মধ্যে, এরিকের কন্ঠ যেনো সাইলেন্ট ঘুর্ণিঝড়ের আভাস দিলো। একটা কালো গোলাপের বুফে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এরিক। তার চেহারা শান্ত। দেখে মনের অবস্থা বোঝার উপায় নেই। রিদিশা আর ময়ূরী তাকিয়ে আছে সদর দরজায় দাঁড়ানো এরিকের দিকে। এরিক এগোতে এগোতে বলল-

-” সবাই কি এক হয় রিদিমনি? আমাকে কি একটু সুযোগ দেয়া যায়না? আমাকে একটু ভালোবেসে দেখো। তোমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবো। তোমার কষ্ট পাওয়ার কারণ আমি হবো না। বিশ্বাস করো তোমাকে সবসময় আগলে রাখবো। তুমি চাইলে বছর বছর বাচ্চার মা বানিয়ে দেবো। প্লিজ! একসেপ্ট মি!

রিদিশার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো এরিকের কথায়। অস্বস্তিতে গলা কেউ চে|পে ধরেছে মনে হচ্ছে। সময় কা|টছে না কেন। সে আরচোখে মিসেস ময়ূরীর দিকে তাকালো। তিনিও মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। রিদিশার এরিক কে বেশরম প্রাণী মনে হচ্ছে। গুরুজনের সামনে কেউ এভাবে কথা বলে। এই ছেলের লাজ লজ্জা কিছুই নেই। ছিহ মার্কা কথা বার্তা। কি লাগামহীন এই ছেলে। এর মুখটা সুঁই দিয়ে সেলাই করার মতো ভয়ং|কর ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখলো রিদিশা। রেগে কটমট করে তাকিয়ে বলল-

-” দেখলে দাদি তোমার নাতি কত লাগাম ছাড়া। এর সাথে তুমি আমাকে সারাজীবন রাখার প্ল্যান করছো? কখনো না। এরকম একটা অসভ্য ছেলেকে আমি কখনো বিয়ে করবো না।

রিদিশা গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। বিছানার উপর হাত পা ছড়িয়ে বসলো সে। মস্তিষ্ক টা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। সব চিন্তা ভাবনা সাইডে ফেলে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো রিদিশা। ঝড় টর্নেডো এলেও সে উঠবে না। বড্ড ঘুম পাচ্ছে। মিসেস ময়ূরী তাহসান আর এরিক জোড়ে হেসে উঠলো। ময়ূরী নাতীর কান ধরে নিজের পাশে বসালো। রাগী মুড নিয়ে বলল-

-” কোথায় গিয়েছিলি হতচ্ছাড়া? এতদিন আমার কান পচিয়েছিস ভালোবাসা ভালোবাসা করে। যখনই বিয়ের কথা বললাম ওমনি বাবার মতো সুরসুর করে পালালি।

এরিক ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। হালকা আর্তনাদ করে বলল-

-” আহ গ্র্যান্ডমা ছাড়ো লাগছে তো আমার।

গ্র্যান্ডমা হেসে কান ছেড়ে দিলো। এরিক কান ডলতে ডলতে বলল-

-” এভাবে কেউ ধরে। এগুলো আমার বউয়ের জিনিস, তুমি ধরে ধরে সেকেন্ড হ্যান্ড বানিয়ে দিচ্ছো কেন? আর বুড়ি শোন তখন আমি পালিয়ে যাইনি। আমি মোটেও তোমার ছেলের মতো ভিতু নই‌। আমি এই কালো গোলাপের বুফে টা আনতে গিয়েছিলাম। এটা রিদি কে দিয়ে দিয়ো। এটা ওর খুব পছন্দের। আচ্ছা দাদি ও কি সত্যিই আমাকে একসেপ্ট করবে?

মিসেস ময়ূরী তাহসানের মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে গর্ব করে বলল-

-” আমার এমন সুদর্শন নাতি কে রিজেক্ট করার ক্ষমতা রিদিশার নেই। ও অবশ্যই তোকে মেনে নেবে‌। তবে তোকে ওর পিছে পড়ে থাকতে হবে। নিজের প্রতি ওর ভালোলাগা তৈরি করতে হবে‌। ঠিক তোর দাদু যেমন আমার পিছে পড়ে থাকতো। তোর প্রতিটা কাজ যেনো ওর ভালো লাগে। আর পারলে ওকে একটু জেলাস ফিল করাবি। তাতেই কাজ হয়ে যাবে‌‌। ও যাকে ভালোবাসে তাকে নিয়ে ভয় নেই‌। সে তো ওর ছোট বোনেরই স্বামী। তাই এখন কিভাবে ওকে নিজের করতে পারো সেই চিন্তা করো‌।

এরিক গভীর মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি কথা শুনলো। এরপর দাদির দিকে তাকিয়ে বলল-

-” দেখো গ্র্যান্ডমা তুমি অনেক ভালো পরামর্শ দিয়েছো। তবে এই বিষয়ে আমার গ্র্যান্ড পাপার পরামর্শ নেয়া উচিত। বুড়ো তোমাকে কিভাবে পটিয়েছে সেটা শেখা উচিত। এ বিষয়ে তো সে পটু। তুমি সাইডে চাপো।

এরিকের কথায় মিসেস ময়ূরী তাজ্জব বনে গেল। সে নিজে এতকিছু করলো অথচ তার নাতী দাদুকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এরিক সেদিকে না তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। চিৎকার করে – ও গ্র্যান্ড পাপা ও গ্র্যান্ড পাপা। বলতে বলতে এলেনের রুমে গেলো। মি. এলেন ম্যাগাজিন পড়ছিলেন। এরিকের চেঁচানো তে সে উঠে বসলো। এবার হয়তো তাকে কাজে লাগবে। এরিকের কথায় সায় দিয়ে এলেন বলল-

-” আয় ভেতরে আয়। ষাঁড়ের মতো না চেঁচিয়ে কাছে আয়।

এরিক গিয়ে এলেনের গা ঘেঁষে বসলো। তার আগামাথা নিরীক্ষণ করে বলল-

-” গ্র্যান্ড পাপা তুমি কি জানো, তুমি এখনো কতটা ইয়াং আছো? পাশাপাশি বেশ স্ট্রং ও আছো। তোমাকে আরেকটা গ্র্যান্ডমা এনে দিলে তুমি পারবেনা আমাকে একবছরের মধ্যে একটা ফুপি এনে দিতে? বলো পারবেনা? রিদিশার তো একটা ফুপি শ্বাশুড়ি ও লাগবে।

নাতীর মুখে এমন কথা শুনে এলেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সে যেন রেগে কিছু বলতেও ভুলে গেল। মিসেস ময়ূরী দরজার ওপাশ থেকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। মি. এলেনের চোখ ময়ূরীর উপর পড়তেই তার মূখটা অসহায় হয়ে গেলো। ময়ূরী চোখ কটমট করে তাকালো এলেনের দিকে। এই বয়সে এসে প্রেয়শীর রাগী রূপ দেখে এলেন যেন আবার প্রেমে পড়লো। এরিক দুজন কে আর চোখে দেখে বলল-

-” গ্র্যান্ড পাপা তুমি ভয় পেয়ো না। গ্র্যান্ড মা কিছু বলবেনা। তুমি আমাকে ফুপি দিতে পারবে না কি সেটা বলো। নাহলে আমি গ্র্যান্ড মা কে বিয়ে করিয়ে দিচ্ছি। সেই ফুপির ব্যবস্থা করুক।

এবার ময়ূরী আর দাঁড়িয়ে থাকলেন না। সে তেড়ে এসে এরিক কে কান ধরে দাঁড় করালেন। রেগে বললেন-

-” খুব শখ না আমাদের বিয়ে করানোর। দাঁড়াও তোমার রিদিশাকে আমি বিয়ে দেবো। তুমি দেখবে আর জ্বলবে।

এরিকের মুখটা একটুখানি হয়ে গেলো। সে চোখ দিয়ে দাদিকে বোঝাচ্ছে এমন টা না করতে। এরিক মুখে জোড়পূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলল-

-” দেদেখো ছাড়ো গ্র্যান্ডমা‌ লাগছে। আমি কিছু বলিনি। কিছু করবেনা তুমি। আমি যথেষ্ট স্ট্রং। রিদিশার জন্য আমিই যথেষ্ট আছে। আমি ভালো ছেলে। গ্র্যান্ডপাপা তুমি বরং আমাকে মেয়ে পটানোর সরি রিদি কে পটানোর কিছু ট্রিক শিখিয়ে দাও। আমি বাসায় যাব। আম্মু আম্মু আর এলিনা চিন্তা করছে হয়তো।

দুজনেই ফিক করে হেসে দিলো এরিকের কথায়। এরিক নিজেও তার মেলালো তাদের সাথে। দরজার পাশ থেকে সবটা দেখলো রিদিশা। তার বুকটা বিষিয়ে উঠলো। এদের মাঝে এতো ভালোবাসা কেন। সে আবারো ছুটে গেলো নিজের রুমে। সবকিছু বিষাক্ত লাগছে। দুইটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লো। একটু ঘুমানো দরকার।

___

এরিক বাসায় যেতেই তার মা এলিজা তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে ছেলের দিকে তাকালেন। ছেলের দিকে তীক্ষ্ণ গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লেন –

-” সারাদিন কই ছিলে?

এরিক মায়ের কথায় থেমে গেলো। মৃদু হেসে জবাব দিলো-

-” আমার খোঁজ রাখার সময় আছে বুঝি তোমার। ফেলিক্স এসেছে তো‌। যাও তাঁকে কোলে নিয়ে বসে থাকো। নিজের ছেলে থাকতেও তাকে কম্পানিতে বসাবে তোমরা। তার প্রতি এতই দরদ। যাওনা তার কাছে। আমার খোঁজ নিতে এসো না।

এলিজার মনটা খারাপ হয়ে গেলো ছেলের কথায়। সত্যিই কি ছেলেকে সময় দেয়া হয়না তার? আর ফেলিক্স কে হিংসা করছে তার ছেলে। কালকেই সব বুঝতে পারবি এরিক। ফেলিক্স কে কেন কম্পানিতে বসাতে চাইছি সব বুঝতে পারবি। কোন মা বাবাই চায় না তাদের সন্তানের বিপদ হোক। তোকে বাঁচাতেই এত কিছু করা, তুই তো আমাদের নিষ্ঠুর ভাবছিস। তোর পিছে এতবড় ষ|ড়যন্ত্র হচ্ছে যার এক কণাও তুই জানিস না। এলিজা সাবধানে চোখের কোণে আঙুল দিয়ে পানিটা মুছে ফেললো। সন্তানের জন্য যতই করুক না কেন সেটা কখনোই তারা দেখে না। তাদের চাহিদা পূরণ না হলেই তারা হাজার অভিযোগ করবে। কিন্তু পাছে বাবা মায়ের কষ্টগুলো দেখবে না। এরিক সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেছে। এলিজা সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

__

সকালে অফিসে যেতেই এরিক কিছুটা অবাক হয়। তার বাবা আর ফেলিক্স একত্রে এসেছে। সাথে তার গ্র্যান্ড মা গ্র্যান্ড পাপা এমনকি তার মাও আছে। তারা সবাই যেনো এরিকের অপেক্ষাতেই ছিলো। তখনি তারা ইথানের কেবিনে ঢুকে পড়ে। আচ্ছা কি হতে চলেছে? ফেলিক্স কে কি ইথানের জায়গায় দেবে‌। এরিকের ভাবতেই খুশিতে মন ভরে ওঠে। কিন্তু ভেতরে তার জন্য বড় চমক অপেক্ষা করছে!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here