#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ১৯(বোনাস পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা মনি
আলো আর রানাকে একসাথে দেখে রাগে ফুসছিল বর্ষ। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,
‘এই মেয়ে তো সত্যি একটা গোল্ড ডিগার। আমি আগে থেকেই জানতাম। পড়ালেখার কথা বলে ভার্সিটিতে এসে এখন এসব হচ্ছে। আমি আগেই জানতাম মেয়েটা সুবিধার না। আমি শুধু এটাই বুঝতে পারছি না ওদের একসাথে দেখে আমার এতো খারাপ লাগছে কেন?’
আলো কফি শেষ করে উঠে আসে। আসার সময় বর্ষর মুখোমুখি হয় আলো। আলো চাইছিল পাশ কা’টিয়ে চলে যেতে।
‘এই মেয়ে তুমি ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে আসো নাকি প্রেম?’
‘ঠিক করে কথা বলুন ভুলে যাবেন ন্স আমি আপনার স্টুডেন্ট। আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আপনি কথা বলতে পারেন না। আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি আমি কোন প্রেম করছিলাম না উনি আমার সিনিয়র।’
বর্ষ আলোর হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,
‘আমাকে বেশি মেজাজ দেখাতে এসো না।’
আলো এক ঝ’টকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায়। বর্ষ শুধু আলোর দিকে তাকিয়ে নীরবে রাগ ঝাড়তে থাকে।
৩৭.
জোনাকি কোম্পানিতে যাওয়ার জন্য বাইরে এসেছিল তখন আচমকা তার সামনে এসে গাড়ি দাড় করায় বর্ণ। জোনাকি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
বর্ণ গাড়ি থেকে নেমে বলে,
‘আমিও কোম্পানিতেই যাচ্ছি। চলো একসাথে যাই।’
‘আমি একা যেতে পারব।’
‘একবার বিশ্বাস করে আমার সাথে একসাথে চলো। আমি কখনো তোমায় ছাড়ব না।’
‘আপনি আমার কাছে আকাশের তারা। যাকে আমি কখনো চাইলেও স্পর্শ করতে পারবো না।’
জোনাকির কথাটা বর্ণর বুকে তীরের মতো বি’ধে। জোনাকি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ চলে যায়। বর্ণ খুব কষ্ট পায় জোনাকির ব্যবহারে। এই প্রথম কাউকে পছন্দ করল সে। আর সেই মেয়েটাই এভাবে তাকে অবজ্ঞা করছে।
বর্ণ মন খারাপ করে কোম্পানির উদ্দ্যেশ্যে যায়। জোনাকি রাস্তায় যেতে যেতে গতকাল রাতের কথা ভাবে। কাল রাতেও বর্ণর সাথে জোনাকির দেখা হয়েছিল ছাদে। জোনাকির ভালো লাগছিল তাই সে ছাদে যায়। সেখানে আগে থেকেই ছিল বর্ণ। জোনাকিকে দেখে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসে। বর্ণ অনেক কথা বললেও জোনাকি কোন উত্তরই দেয়না। বর্ণ বুঝতে পারে না এত এত মেয়েরা যেখানে শুধু তার সাথে কথা বলার জন্য মুখিয়ে থাকে সেখানে এই মেয়েটা এভাবে তার থেকে দূরে দূরে থাকছে কেন। একপর্যায়ে জোনাকিকে জিজ্ঞেস করেই ফেলে,
‘তুমি কি আমাকে পছন্দ করো না?’
জোনাকি হা হয়ে যায় এরকম একটা প্রশ্ন শুনে। নিজেকে কোনরকমে সামলে নিয়ে চুপচাপ ছাদ থেকে চলে আসে। বর্ণ বিরক্ত হয় কিছুটা।
আজকেও বর্ণ একইরকম ভাবে বিষন্ন। সে জানে না জোনাকি কেন তার সাথে কথা বলতে চাইছে না।এই ২৮ বছরের সিংগেল লাইফে এই প্রথম কোন মেয়ের প্রতি তার এত ইন্টারেস্ট জাগল। বর্ণ তপ্ত শ্বাস ফেলে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে। কোম্পানিতে পৌছে গাড়ি থেকে নেমেই মনে মনে ফন্দি করে জোনাকিকে বাগে আনার।
কোম্পানিতে ঢুকেই ম্যানেজারের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আজ যে বা যারা দেরি করে আসবে তাদের আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে। কাজে অমনোযোগী আমি একদম পছন্দ করি না।’
‘জ্বি স্যার।’
জোনাকি যানজটে আটকে আছে। তার কর্মস্থলে পৌছানোর সময় হয়ে গেছে। জোনাকির খুব চিন্তা হচ্ছিল। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় হেটে চলে যাওয়ার করেও তাই। এতকিছুর পরেও ৩০ মিনিট লেইট হয়ে যায়। ফলস্বরূপ কোম্পানিতে গিয়ে তাকে বর্ণর মুখোমুখি হতে হয়। বর্ণ অনেক কষ্টে নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করে বলে,
‘এরপর থেকে লেইট করলে আর কাজে আসতে হবে না। লেইট না করার জন্য একটা উপায়ও বলে দিতে পারি।’
জোনাকি জিজ্ঞাংসু দৃষ্টিতে তাকায়। বর্ণর একটু মজা করার ইচ্ছা হয়। তাই প্রথমে গাম্ভীর্যের সাথে বলতে শুরু করে,
‘উপায় হলো,,,’
গাম্ভীর্য ভাব কমিয়ে মুখে একরাশ হাসি এনে বলে,
‘তুমি কোম্পানিতে আসার সময় বর্ণ নামের একজন তোমাকে নিজের গাড়িতে ওঠার অফার করবে। তার অফারটা লুফে নিতে হবে।’
বর্ণর মুখে এমন কথা শুনে জোনাকির চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়।বর্ণ এবার আবার গাম্ভীর্য ভান করে,
‘এখন আসতে পারো লেইট হয়ে যাচ্ছে।’
জোনাকির বর্ণর ব্যবহারগুলো দেখে তাজ্জব বনে যায়। পিছনে ফিরে হাটা লাগিয়ে দেয়।
৩৮.
‘আলো একটু এদিকে আসবে?’
রানার নিঃসংকোচ আবেদনে আলো সাড়া দেয়। রানা যেহেতু তার সিনিয়র তাই তার কথা অমান্য করতে চায়নি। রুহি বনানী ইশারা করে তার ভাইকে বুঝিয়ে দেয়, ❝All The Best❞
রানা মৃদু হেসে আলোকে নিয়ে একটি বটবৃক্ষের নিচে চলে আসে। রানা বলতে শুরু করে,
‘জানো বটগাছ কিন্তু অনেক উপকারী গাছে। এই যে এখন যেভাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে, চারিদিকে গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা সেখানে এই গাছ আমাদের ছায়া দিচ্ছে। আমিও তোমাকে এভাবে ছায়া দিতে চাই।’
রানার কথা শুনে আলো ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। রানা আলোর অবাক হওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমি আসলে উদ্ভিদবিদ্যার স্টুডেন্ট তো তাই একটু উদ্ভিদের ভাষায় কথাগুলো বললাম।’
‘আপনি কি বলতে চান স্পষ্ট করে বলুন।’
‘ঠিক আছে সরাসরি বলছি, ❝I Love You Alo. I Love You❞’
রানার কথাটা শুনে আলোর কেন জানিনা হাসি পেয়ে যায়। আলো হেসেই দেয়।
‘এভাবে হাসছ কেন আলো? আমি কি মজার কথা বলেছি?’
‘না আপনি মজার কথা বলেন নি। আপনার কথাটা মজার নয়। আমার জীবনটাই মজার। জন্মের পর থেকে তো মজা দেখে বড় হচ্ছি।’
‘মানে?’
‘আমার সম্পর্কে কিছু জানেন আপনি? হয়তো জানেন না। আমার এই সুন্দর চেহারা দেখেই হয়তো আমায় ভালোবেসে ফেলেছেন। তাহলে আপনার আমার ব্যাপারে জানাও উচিৎ। সবকিছু জানার পর আপনার ব্যাঙের ছাতার মতো গজানো ভালোবাসা উবে যেতে পারে।’
‘আমি তোমাকে সত্যিই ভালো,,,’
‘আমি আলো, একজন ডিভোর্সি নারী। আমি আমার মা-বাবাকে ছেড়ে এখানে চলে এসেছি ঢাকায়। একজনের বাড়িতে আশ্রিত। একমাত্র আমার বড় বোন জোনাকিই আমার সাথে আছে। এসবকিছু জেনেও কি আমাকে বিয়ে করতে চান?’
আলোর এসব কথা শুনে রানা বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে ফেলে। নিজেকে মনে মনে অনেক গালি দেয় আলোকে পছন্দ করার জন্য। আলো রানার মুখ দেখেই তার মনের ভাষা বুঝতে পারে। আলোর মুখে বিদ্রুপের হাসি ফুটে ওঠে। সে আর এক মুহুর্ত সেখানে অপেক্ষা না করে চলে আসে।
দূরে দাড়িয়ে এতক্ষণ আলো আর রানার সব কথোপকথন শুনে ফেলে বর্ষ। আলোর জন্য হঠাৎ তার খুব খারাপ লাগতে শুরু করে। সে নিজেকে প্রশ্ন করে,
‘আমি কি মেয়েটাকে ভুল ভাবছি? আসলে কি ও কোন অসহায় মেয়ে।’
এসব ভেবে বর্ষ হাটা ধরে।
রুহি বনানী ছুটে আসে রানার কাছে। রানাকে প্রশ্ন করে,
‘কি হলো ভাইয়া? মিশন কমপ্লিট তো? আলো তাহলে আমার ভাবী হবে।’
রুহি বনানীর কথা শুনে রেগে যায় রানা। রুহি বনানীর গালে ঠাস করে থা’প্পর মা’রে।
‘তুই একবার ঐ মেয়েটার খোজ নিবি না? যে সে মেয়ের সাথে আমি রিলেশন করব। আর কখনো আমার সামনে ঐ মেয়ের নাম নিবি না। আর তোকেও যেন না দেখি ঐ মেয়েটার সাথে মিশতে? ‘
‘মিশব মিশব হাজার বার মিশব। তোকে আমি ভয় পাই নাকি? আলো অনেক ভালো মেয়ে। তুই মেয়েটাকে রিজেক্ট করলি তাইতো। দেখিস আমি নিজে আলোর জন্য তোর থেকে ভালো ছেলে জোগাড় করিয়ে দেব। এটা আমার চ্যালেঞ্জ।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨
>>আসসালামু আলাইকুম। আমার একটা কথা জানতে ইচ্ছা করল তাই জানতে চাইছি আপনাদের কাকে বেশি ভালো লাগছে বর্ণ নাকি বর্ষ? সবাই উত্তর দিয়ে যাবেন প্লিজ ✨