বিবর্ণ আলোকবর্ষ পর্ব ২

0
1538

#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃদিশা মনি

আলোর স্বামী আতিক ছুটে এসে তার সতীন রূ’পাকে এলো’পা’তা’ড়ি মা’র’তে মা’র’তে বলে,
‘তোর এত বড় সাহস আমার মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করিস।’

আতিক এইমুহূর্তে যেন প’শুর ন্যায় শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছিল। আতিকের এই ভয়ংকর রূপ দেখে আলো স্তব্ধ হয়ে যায়। রূপাকে কি নির্ম’মভাবে মা’রছে আতিক। অথচ রূপার সাথে তার ভালোবাসার বিয়ে। আতিকের মা’র খেয়ে রূপার অবস্থা খুব খা’রা’প হয়ে যায়। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল জীবনের শে’ষ প্রান্তে দাড়িয়ে আছে। আলোর খুব মায়া হয় রূপার উপর। যতই সে আলোর সতীন হয়ে আসুক সেও তো একটা মানুষ।

আলো রূপাকে বাচানোর জন্য আতিকের সামনে ঢাল হয়ে দাড়ায়। আতিকের বিবেকবুদ্ধি তখন লোপ পেয়েছে। আতিক রূপাকে ছেড়ে আলোকে মা’রতে উদ্যত হয়৷ এক লা’থিতে আলোকে দূরে সরিয়ে দেয়। আলোর পেটে ভয়ানক আঘাত লাগে৷ কষ্টে যন্ত্রণায় আলো ছটফট করতে থাকে। আমিনা বেগম ছুটে যায় আলোর কাছে। আলো বলে,
‘আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আম্মা। আমার বাচ্চাটা মনে হয় আর বাচবে না।’

আলোর কথাটা কানে আসতেই থেকে যায় আতিক। এমন একটা খবর যে তাকে শুনতে হবে সেটা সে কল্পনাও করতে পারেনি। আমিনা বেগম মুখে আচল দিয়ে কাদতে থাকেন। আতিকের দিকে অ’গ্নি’দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘নিজের সন্তানের ক্ষতির কারণ যদি তুই হোস। তাহলে আমি ভুলে যাব তুই আমার সন্তান। নিজের হাতে তোকে শে’ষ করে দেব।’

আতিক ছুটে এসে আমিনাকে বলে,
‘কি হয়েছে আম্মু বলো আমায়। আলো কি প্রেগন্যান্ট। আমাকে কিছু বলো নি কেন?’

আমিনা বেগম রাগে ক’ট’ম’ট করতে করতে বলেন,
‘তুই সুযোগ দিয়েছিলি কখন? কয়েকদিন থেকে আলোর মাথা ব্যাথা, বমির সমস্যা। তাই আমি কাল ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাই পরীক্ষা করতে। তখনই এই সুসংবাদটা পাই। বাড়িতে ফিরে তোকে এই খবরটা জানিয়ে সারপ্রাইজ দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু তুই তো আমাদেরকেই সারপ্রাইজ দিয়ে দিলি। নতুন বউকে নিয়ে এলি। আলোকে নির্দয়ের মতো ঘর থেকে বের করে দিলি। মেয়েটা এই অবস্থায় কত কষ্ট সহ্য করল।’

আলো সমানে গোঙাতে থাকে। আমিনা বেগম আতিককে বলেন,
‘তুই গাড়ি বের কর এক্ষুনি। আলোকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।’

আতিক আলোকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তোলে। তারপর তাকে নিয়ে যায় হাসপাতালে।

৩.
‘কি অবস্থা আমার স্ত্রীর?’

আতিক তীব্র উৎকন্ঠার সাথে প্রশ্নটি করে। আতিকের উৎকন্ঠার বিপরীতে ডাক্তার দুঃখের সাথে বলেন,
‘দুঃখিত মিস্টার হোসাইন আপনার স্ত্রীর মিস ক্যারেজ হয়ে গেছে। আপনাদের একটু সচেতন হওয়া দরকার ছিল। ওনার পেটে এত বেশি আঘাত লাগল কি করে?’

ডাক্তারের কথা শুনে আতিকের মাথা নিচু হয়ে যায়। সে ডাক্তারের সামনেই কেদে দেয়।

‘আমি আমার সন্তানের খু’নি ডক্টর। আমার কারণেই এমনটা হয়েছে।’

ডাক্তার আতিকের কথার কোন মানে খুঁজে পায়না। আতিক ছুটে যায় আলোর কেবিনে।

আমিনা বেগম আলোকে শান্তনা দিচ্ছিলেন কিন্তু আলোকে সামলাতে পারছিলেন না। আলো সমানে কেদেই চলছিল। সন্তান হারানোর কষ্ট আলো মেনে নিতে পারছিল না। কত আশায় ছিল আলো যে নতুন সন্তান এসে তার জীবনটা বদলে দেবে কিন্তু তার ভাগ্যে বুঝি সন্তান সুখ নেই।

‘আমার জীবনটা এমন কেন আম্মা। আমার জীবনটা এত কষ্টে ভরা কেন? আমার জন্মই হয়েছে বিবর্ণ ভাবে। জন্মের পরেই মাকে হারিয়েছি। সৎ মা যদিও মায়ের মতোই ভালোবাসা দিয়েছে কিন্তু সৎ বোনের অত্যা’চার সহ্য করতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। আমার নিজের আপু জোনাকির জীবনও আমার মতো জানেন। বেচারি ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। কিন্তু বিয়ের চার বছরেও সন্তান না হওয়ায় ওর স্বামী ওকে ডিভোর্স দিয়েছিল। এরপর সমাজের লোকের কত কথা সহ্য করেছে। আমাদের দুই বোনের জীবনই আস্ত একটা বিবর্ণ আলোকবর্ষ জানেন। যেই আলোকবর্ষে আলোর কোন চিহ্ন নেই।’

আলোর কথাগুলো আমিনা বেগমের বুক ক্ষ’ত’বি’ক্ষ’ত করে দেয়। আতিকও দাড়িয়ে আলোর সব কথা শুনে ফেলে। নিজের প্রতি ঘৃ’ণা তার আরও বেড়ে যায়।

আলোর নজর পড়ে দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকা আতিকের উপর। আতিককে দেখে ক্ষো’ভে ফে’টে পড়ে আলো।

‘ঐ লোকটা এখানে কি করছে আম্মা? আমার সন্তানকে মে’রেও কি ওনার শান্তি হয়নি? এখন আমাকেও কি মা’রতে চান? ওনাকে চলে যেতে আমার সামনে থেকে। নাহলে আমি ওনাকে খু’ন করে দেব।’

আতিক আলোর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। আমিনা বেগম এসে আতিককে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। তিনি বলেন,
‘তোর মতো কুলা’ঙ্গা’র ছেলে জন্ম দিয়ে আমি পা’প করেছি। এখন চাইলেও সেই পা’পমো’চন করতে পারব না। ভাগ্য ভালো তোর বাবা বেচে নেই। নাহলে তিনি এটা কিছুতেই সহ্য করতে পারতেন না।’

‘আম্মু আমি জানি আমি ভুল করেছি। আমি আমার ভুলের জন্য অনুতপ্ত। আমায় ক্ষমা করে দাও আম্মু।’

‘তোকে আমি বা আলো কেউ কখনো ক্ষমা করব না। আর খবরদার আমাকে আম্মু বলে ডাকবি না। তোকে নিজের ছেলে বলতেও আমার ঘৃ’ণা হচ্ছে। কোন পাপের ফলে যে, তোর মতো একটা প’শুকে জন্ম দিয়েছি। তুই আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা বলছি। নাহলে তোকে মে’রে নিজের পা’পের প্রায়শ্চিত্ত করব।’

আতিক চলে আসে হাসপাতাল থেকে। অনুতা’পের আগু’নে দগ্ধ হচ্ছে আতিক। বেচে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আর তার নেই। অসময়ে সঠিন জ্ঞান কোন কাজে আছে না। আতিকের ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। এখন সে চাইলেও আর কিছু ঠিক করতে পারবে না। কারণ সে নিজের হাতেই সবকিছু ন’ষ্ট করে দিয়েছে।

৪.
আতিক বাড়ি ফিরে দেখে রূপা কোথাও নেই। রূপার প্রতি যদিও এখন তার আর কোন মায়া নেই। রূপাকে নিজের জীবনের সবথেকে বড় ভুল মনে হচ্ছে তার। আতিক এখন চায় সব যেন ঠিক হয়ে যায়। যদি ফিরে যেতে পারত একদিন আগে তাহলে সে সব ঠিক করতে পারত।

আচমকা কলিং বেলের শব্দে আতিক বিরক্ত হয়। কে এলো এখন? আলো আর আমিনা বেগম তো এখন হাসপাতালে। এত তাড়াতাড়ি নিশ্চয়ই হাসপাতাল থেকে আসবে না। তাহলে কি রূপা ফিরে এলো?

রূপার কথা ভেবে আতিকের মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সে দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খোলে। দরজা খুলে যা দেখে সেটার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিলনা।

হ্যা, রূপাই এসেছে তবে একা আসেনি। সাথে পুলিশ নিয়ে এসেছে। রূপা পুলিশদেরকে বলে,
‘গ্রেফতার করুন এই লোকটাকে। এনার একজন স্ত্রী থাকা স্বত্বেও ইনি তার অনুমতি না নিয়ে আমায় বিয়ে করেছেন, বিয়ের পর আমার উপর অক’থ্য অত্যা’চা’র করেছেন। আমি ওনার নামে নারী নি’র্যা’তনের মামলা করব।’

আতিক নিমেষেই ঠান্ডা হয়ে যায়। জে’লে যাওয়ার ভয়ে রূপার পা ধরে বসে পড়ে আতিক। অনুরোধ করে,
‘আমাকে তুমি জে’লে পাঠিও না রূপা। আমি তো তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করে এনেছিলাম। তখন একটু মাথায় রাগ উঠে গিয়েছিল তাই,,,,তুমি সেইজন্য আমায় পুলিশে দেবে?’

রূপা এক ঝ’টকায় আতিককে নিজের পা থেকে সরিয়ে বলে,
‘তুই আমাকে যেভাবে মে’রেছিস তারপরও তোকে ক্ষ’মা করব ভাবছিস? তোকে জে’লের ভাত খাইয়ে তবে আমার শান্তি।’

সঙ্গে সঙ্গে আতিককে গ্রেফতার করা হয়। আতিককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ স্টেশনে। রূপা তৃপ্তির হাসি হাসে।

আলো তার শাশুড়ীর সাথে হাসপাতালে ছিল। রূপাও হাসপাতালে চলে আসে। রূপাকে দেখে তারা কেউই খুশি হয়না বরং তারা দুজনেই রূপাকে দেখে প্রচণ্ড রেগে যায়।

রূপা খিলখিল করে হেসে বলে,
‘আতিক এখন জে’লে এই সুখবরটাই দিতে এলাম।’

সাথে সাথে আমিনা বেগমের থা’প্পর তার গালে পড়ে। তিনি বলেন,
‘তোর মতো মেয়েদের জন্যই শত শত মেয়ের সংসার, স্বপ্ন ন’ষ্ট হয়। তোদের চরম শা’স্তি পাওয়া উচিৎ।’

রূপা মৃদু হাসে। রূপা আলোর দিকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,
‘আমি কিন্তু তোমার অনেক বড় উপকার করেছি। তোমার উচিৎ আমাকে ধন্যবাদ জানানো।’
চলবে ইনশাআল্লাহ
>>গল্পটা আপনাদের কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here