তোমার নিরব অভিমানীনি(২৫)

0
688

#তোমার_নিরব_অভিমানীনি(২৫)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

রাদ এর ভুবন ভোলানো হাসি, মনমুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে নজরাত। যা লক্ষ্য করে রাদ ভ্রু জোড়া নাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–” কি দেখছো অমন করে?
–” দেখছি আমার নিরামিষ মার্কা বর টা হাসলে কত্ত কিউট লাগে!
–” তোমার বর মোটেও নিরামিষ মার্কা না। বরং আমিষ বলতে পারো।
–” তাই না?
–” হুম, এবার তুমি শুয়ে যাও। আর আমাকে কাজ করতে দাও প্লিজ?

নজরাত প্রশ্নাতুর চোখে চেয়ে বলে,
–” ঐ দিনের জন্য আপনি কি এখনো রে’গে আছেন আমার উপর?

রাদ আচমকা নজরাত কে তার বক্ষপটে টেনে নিল। খুবই উষ্ণ, খুবই আন্তরিকভাবে আদর করল। তারপর আলতো ভাবে দু গালে দুটো করতল চেপে ধরে। মুখখানা তুলে খুব বিবিষ্টভাবে চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
–” আমি তোমাকে একেক সময় একেক রকম কথা শুনিয়েছিলাম। ঘরে ব‌উ রেখে অন্য নারীতে আসক্ত ছিলাম। তবুও বিন্দুমাত্র ঘৃণা তোমার চোখে আমার জন্য দেখতে পাইনি আমি। সেখানে তোমার একটা কথা কি করে মনে গেঁথে রাখি বলো? তাছাড়া তোমার মায়ার শরীর। তাই তো নারী হয়ে আরেকটা নারীর হয়ে কথা বলেছো। এখানে অন্যায়ের কিছু নেই। তখন তোমার আকষ্মিক কথাটা আমার মস্তিষ্ক নিতে পারেনি তাই হয়তো রে’গে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস করো পরে নিজেকে সামলে নিয়েছি, বুঝিয়েছি।
–” তাহলে আমার সাথে আগের মত কথা বলেন না কেন? অফিস থেকে এসেই ওটা (ল্যাপটপ) নিয়ে বসে থাকেন।

রাদ শুকনো ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বলল,
–” আচ্ছা এ জন্য তুমি ভেবে নিয়েছো যে আমি তোমার সাথে রে’গে আছি? বোকা মেয়ে, আজকাল অফিসে ভীষণ চাপ বুঝলে? এই তো গতকাল ও অডিট ছিল। কোথাও কোন ভুল ত্রুটি থাকলে সেগুলোর সব দায় আমাকেই বহন করতে হবে।
–” তুমি না বস? শুনেছি অফিসের বস দের তেমন কাজ থাকে না। তবে তোমার এতো কাজ কেন শুনি?
–” সেগুলো নাটক সিনেমায় দেখা যায়। বাস্তবিক অর্থে সবার চেয়ে বেশি দায়িত্ব থাকে বস দের। আচ্ছা বাদ দাও, রাত বেড়ে যাচ্ছে তুমি শুয়ে যাও।

নজরাত বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টে বসে রইল। তখন রাদ অনুচ্চ স্বরে বলল,
–” কি ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে?

নজরাত দুষ্টু হেসে উপর নিচ মাথা নাড়ে। তখন রাদ করুণ চোখে চেয়ে বলে,
–” তাহলে আমার কাজ গুলো কে করবে?
–” আমি কি জানি? তুমি এখন আমার সাথে ঘুমোবে ব্যাস।

অগত্যা রাদ কে নজরাত এর সাথে শুয়ে যেতে হল। না হয় বিনা মেঘে বজ্রপাতের আশংঙ্কা আছে হা হা হা।
_________

রূপক এর ছুটির মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে। সাজ্জাদ হোসেন কে কতো করে বুঝিয়ে বলল তার কাছে বিদেশে চলে যেতে। কিন্তু তিনি যেতে নারাজ। তিনি বলেন, দেশের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। তাছাড়া আমার মেয়েকে এখানে একা রেখে আমি যাই কি করে? মেয়েটা যে বড্ড একা হয়ে পড়বে। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে তো আমার কাছে এসে নিঃশ্বাস ফেলতে পারে।

রূপক বোনের কথা ভেবে আর জোর করল না। ভেবেছিল বাবা রাজি হলে রাহা কে ও তার কাছে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু এখন তো বাবা কে একা রেখে রাহা কে নিয়ে যেতে পারে না।
________

আজকে রূপক আর রাহা আসবে বলে মণি আর নজরাত মিলে রান্না বান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাজেদা চৌধুরী রাদ কে বলে সমস্ত বাজার সদাই আনিয়েছেন।

রাদ ড্রয়িং রুমে বসে পত্রিকা পড়ছে তখন নজরাত তার জন্য কফি নিয়ে আসে। রাদ পত্রিকা রেখে নজরাত কে পাশে বসিয়ে বলল,
–” লাইব্রেরী রুমে তোমার একটা ডায়েরী আছে না?

নজরাত আকস্মিক বিচলিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–” হ্যাঁ ওটা কি করেছো তুমি?
–” আরে আমি যাস্ট একটু..

নজরাত নির্বিকার মুখে বলল,
–” যাস্ট একটু কি?
–” আরে বলতে তো দিবে?

নজরাত করুণ চোখে চেয়ে থাকলে রাদ বোকা হেসে বলল,
–” একটা পেইজের কিছু অংশ ছিঁড়ে নিয়েছি। বিশ্বাস করো অল্প‌ই নিয়েছি।
–” কি! আমার এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা ডায়েরী আমাকে না বলে ছিঁড়তে পারলে তুমি?
–” আরো শুন?

নজরাত উঠে দৌড়ে যেতে নিলে সিঁড়ির কোনায় লেগে খুব ব্যথা পেল। আর্তনাদ করে বসে পড়লে রাদ দ্রুত এসে বলল,
–” কি হয়েছে তোমার?

নজরাত কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী করে বলল,
–” কথা বলবে না তুমি আমার সাথে। তুমি আমাকে জিজ্ঞেস না করে এমনটা করতে পারলে? আমার কতো জরুরি লেখা আছে ওটাতে তুমি জানো নাকি?
–” আরে আমি একটা ফ্রেশ পাতা ছিঁড়েছি। লেখা ছিল না ওটাতে।
–” তবুও কেন ছিঁড়বে তুমি?
রাদ কাতর স্বরে বলল,
–” ল্যাপটপ নিয়ে ডিবানে বসে কাজ করতে গিয়ে দেখি ওখানে টিকটিকি পটি করে রেখেছে। হাতের কাছে আর কিছু না পেয়ে, তোমার ডায়েরী দেখতে পেয়ে পেইজের পাতা নিয়ে ওটা পরিষ্কার করেছি। আমি কি ভুল কিছু করেছি বলো?

সাজেদা চৌধুরী আর মণি চলে আসে এর মধ্যে। নজরাত কে ওভাবে ফ্লোরে বসে থাকতে দেখে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কি হয়েছে ব‌উমা?
নজরাত কাঁদো কাঁদো মুখে বলল,
–” ব্যথা পেয়েছি মা। এর সব দোষ আপনার ছেলের।
রাদ অবুঝের মতো বলে,
–” আমার! আমি কি করলাম? তুমি নিজেই তো দৌড়াতে গিয়ে ব্যথা পেলে?
–” তুমি যদি আমার ডায়েরীর পেইজ না ছিঁড়তে তবে কি আমাকে দৌড়াতে হতো? নিশ্চয়ই না। তবে কার দোষ বলো?

সাজেদা চৌধুরী বললেন,
–” রাদ যেহেতু দোষী তো রাদ? বৌমাকে সোফায় বসিয়ে দেখ কোথায় ব্যথা পেল? লাগলে বরফের কিউব লাগিয়ে দে।

সাজেদা চৌধুরী চলে গেলে রাদ বলল,
–” চলেন ম্যাডাম?
নজরাত গলা খাটো করে বলল,
–” আমি হেঁটে যেতে পারবো নাকি? পায়ে ব্যথা পেয়েছি কিনা?

রাত বিগলিত হয়ে হেসে বলল,
–” কোলে উঠার ধান্দামি তাই না?
নজরাত বালিকার মতো সরল অকপটে গলায় বলল,
–” বুঝতেই যখন পারছেন তখন দাঁড়িয়ে আছেন কেন? তুলুন আমাকে।

রাদ হেসে নজরাত কে কোলে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল,
–” দেখি কোথায় ব্যথা পেয়েছো?
–” থাক আপনাকে দেখতে হবে না।
–” কেন?
–” পায়ে ব্যথা পেয়েছি কিনা। আমার পা ছুঁতে হবে না। আপনি বরফের কিউব নিয়ে আসুন। আমি লাগিয়ে নিব।

রাদ কথা শুনলো না। জোর করে পা টেনে দেখতে লাগল। তখন নজরাত চিন্তিত মুখে বলল,
–” আপনি কি ডায়েরী খুলে দেখেছিলেন?
রাদ তার দিকে তাকালে নজরাত আমতা আমতা করে বলল,
–” না মানে ভালো করে খেয়াল করেছিলেন তো ওই পাতায় লেখা ছিল না তো?
রাদ ছোট্ট করে জবাব দেয়, না।
_______

রূপক আর রাহা আসলে সবাই একসাথে লাঞ্চ করতে বসে। তখন রাহা ফিসফিস করে নজরাত কে বলে,
–” ভাবীমণি তুমি কবে ভাইয়া কে বলবে? যে তুমি সেই লেখিকা রুপকথা! তুমি তোমার পরিকল্পনা মাফিক বলবে বলে আমি কিছু বলছি না ভাইয়া কে। কিন্তু না বলে থাকতেও পারছি না। কেমন যেন পেটের মধ্যে কথা গুলো ঠিক হজম হচ্ছে না জানো?

নজরাত ক্ষীণ একটু হেসে বলল,
–” আর একটু সবুর কর ননদিনী ভাবীমণি। ধৈর্যের ফল মিষ্টি হয় বুঝলে?
রাহা মুখে কান্নার ভাব ফুটিয়ে তোলে বলে,
–” আর কতদিন?
হঠাৎ তাকে রাদ খেয়াল করে ভ্রু কুঁচকে বলল,
–” তোর আবার কি হয়েছে? মুখচোখ এরকম করছিস কেন?
রাদ এর সাথে সাথে রূপক সহ সবাই তাকায় তার দিকে। সবার এমন প্রশ্নাতুর চাহনিতে বিষম খেয়ে গেল রাহা। নজরাত পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,
–” মন খারাপ করো না। দেখবে মাস খানেক পরেই ভাইয়া আবার চলে আসবে।

এ কথা শুনে রাহা মুখ চোখে বিহ্বল ভাব ফুটিয়ে তোলে বলল,
–” কিসের মধ্যে কি?
নজরাত ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝায় বেশি কথা আর না বলতে।
________

মাস খানেক পর,
নজরাত অসুস্থ হয়ে পড়লে রাহা কল করে ইমিডিয়েটলি রাদ কে বাড়ি আসতে বলে। রাদ অস্থির হয়ে পড়ে। বলে, ডাক্তার সাথে নিয়ে আসবে কিনা? অ্যাম্বুলেন্স কল করবে কিনা? রাহা কেন বসে আছে সে কেন ডাক্তার কে কল করেছে না?….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here