তিমিরে ফোটা গোলাপ পর্ব ৩

0
293

তিমিরে ফোটা গোলাপ
পর্বঃ ০৩
Writer Taniya Sheikh

কিছু কষ্ট ক্রমশ অনুভূতিহীন করে তোলে। তখন কষ্ট, যন্ত্রণা বলে কিছু অনুভূত হয় না। প্রথমে হৃদয় তারপর ধীরে ধীরে শরীরটা অসাড় হয়ে পড়ে।চোখের সামনে কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার । বেঁচে থাকাটা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। ইসাবেলা ভগ্নশরীরে বিছানায় শায়িত। নিজের শরীরটাকে পাখির পালকের ন্যায় মনে হয়। এত হালকা কখনো মনে হয়নি আগে। দিন যত যাচ্ছে ওর অবস্থার অবনতি ঘটছে। ডাক্তার এসে রোজ দেখে যাচ্ছেন। ওষুধে কাজ হচ্ছে না। দু’এক চামচ স্যুপ খেয়ে প্রাণ ধারণ কতটা সফল হয়? বাড়ির সকলে চিন্তিত। আন্না মেরিও বড়ো শক্ত মনের মহিলা। তিনিও মেয়ের এই করুন অবস্থা দেখে না কেঁদে পারলেন না। ওলেগ স্ত্রীর মতো কঠিন মনের নন। মেয়েদের তিনি বরাবরই অত্যাধিক ভালোবাসেন। ইসাবেলা তার বড়ো আদুরে মেয়ে। সেই মেয়ের এই শয্যাশায়ী অবস্থা দেখে তিনি প্রায় ভেঙেই পড়েছেন। ইসাবেলার দাদা-দিদিমার অবস্থা খানিক ছেলেরই মতো। তাতিয়ানা, ভ্লাদিমি বোনকে কত বুঝাচ্ছে! ইসাবেলা যেন সকল বুঝের বাইরে চলে গেছে। এদিকে ভ্যালেরিয়ার যাওয়ার দিন আসন্ন। তিন দিন থাকার জায়গায় তিন সপ্তাহের অধিক হলো এই বাড়িতে আছে। এই বাড়ি আসার পর যেই চিঠিটি পেয়েছিল তাতে ফাদার জালোনভ লিখেছেন, চার দিন পরে ভ্যালেরিয়ার জন্য ফিটন পাঠানো হবে। এবার তাদের মিশন বেলারুশ বর্ডারের কাছাকাছি একটি ছোট্ট গ্রামে। ফাদার তাঁর সঙ্গী সাথীদের নিয়ে ইতোমধ্যে সেখানে পৌঁছে গেছেন। ইসাবেলার কারণে ভ্যালেরিয়া আঁটকে আছে এখানে। চারদিন পর আগত ফিটন ফিরিয়ে দিয়েছে। ফাদারকে চিঠি লিখে না যাওয়ার কারণ জানিয়েছে। সাথে লিখেছে যত দ্রুত সম্ভব ফিরবে সে। কিন্তু তা আর হলো না। এই অবস্থায় মেয়েটাকে ফেলে যেতে সায় দিচ্ছে না ওর বিবেক। গতকাল ডাক্তার ইসাবেলাকে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে নতুন একটা কথা বলেছেন। ডাক্তার জানিয়েছেন ওষুধ নয় ইসাবেলার এই মুহূর্তে প্রয়োজন হাওয়া বদলের। বাড়ি সকলে স্থির করল ওকে নিয়ে হাওয়া বদলে যাবে অ্যালেক্সিভদের আদি গ্রামে। কিন্তু বাধ সাধে ইসাবেলা। সে কোথাও যাবে না। ডাক্তার নিষেধ করেছেন ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করতে। ভ্যালেরিয়া ইসাবেলাকে এভাবে তিলে তিলে শেষ হতে দেবে না। সে ওর শিওরে গিয়ে বসল। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,

“তুমি কী চাও, ক্রাসিভায়া? আমরা তো তোমার এই অবস্থা আর দেখতে পারছি না। বড়ো কষ্ট হচ্ছে আমাদের। নিজের সাথে এমন অনাচার করো না প্লিজ।”

ইসাবেলা জবাব দেয় না। শূন্য চোখে চেয়ে থাকে। ভ্যালেরিয়ার চোখে জল চলে এলো এবার। ইসাবেলার হাতের পল্লবে চুমু দিয়ে ফের বলল,

“আমি তোমাকে এভাবে শেষ হতে দেবো না ক্রাসিভায়া। তুমি যাবে গ্রামে। আর__”

“না, আমি কোথাও যাব না ভ্যালেরি। পিটার ফিরে যদি আমায় না পায়? আবার হারিয়ে যাবে ও। আমি ওকে হারাতে দেবো না। ও আসবে ভ্যালেরি। ও আসবে। আমি অপেক্ষা করব ওর জন্য।”

“এভাবে অপেক্ষা করবে? এভাবে তো শেষ হয়ে যাবে তুমি। ওর জন্যও হলেও তো তোমাকে বাঁচতে হবে ক্রাসিভায়া।”

ইসাবেলা নির্নিমেষ চেয়ে রইল ভ্যালেরিয়ার মুখের দিকে। তারপর হঠাৎই ডুকরে কেঁদে ওঠে। ওই দূর্বল শরীরে কাঁদতেও ভীষণ কষ্ট হয়। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল,

“আমি কী করব ভ্যালেরি? আমার দম বন্ধ হয়ে আসে এখানে। পিটার কেন চলে গেল? ওর কী একটুও মনে পড়ে না আমায়? একটা চিঠি অব্দি পেলাম না। এতটা পর করে দিলো এক মুহূর্তে? কীভাবে পারল ও? ও ভ্যালেরি, আমি বোধহয় ওর অপেক্ষায় শেষ হয়ে যাব। ও কী আসবে আমার অন্তেষ্টিক্রিয়াতে?”

“হুশ! এসব বাজে কথা বলো না তুমি। তোমার কিছু হবে না। আমি কিছু হতে দেবো না।” ওর চোখের পানি মুছে কপালে আলতো চুমু দিয়ে আবার বলল,

“জীবনের অর্থ কি এই স্থিরতা ক্রাসিভায়া? এভাবে অভিমানে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার নাম জীবন নয়। মানুষের এই পৃথিবীতে আগমনের শুরুটাই হয় লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে। তোমাকে শিখতে হবে সেই লড়াই। এই দুঃখ, কষ্টের হলাহল গলাধঃকরণ করে পৃথিবীতে টিকে থাকা খুব কঠিন, নিজেকে শেষ করে ফেলা সেখানে বড্ড সহজ কাজ। ঈশ্বর মানুষকে দুঃখ, কষ্ট কেন দেয় জানো? যেন মানুষ নিজেকে, নিজের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা শক্তিটাকে চিনতে পারে। তুমি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে দুর্বল মানুষদের ন্যায় অন্ধকারে ডুবিয়ে ফেলতে চাইছ নিজেকে। এমনটা করো না। ঈশ্বর তোমাকে ভালোবাসেন। যে তোমার ভালোবাসা বুঝতে চাইল না তার জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করতে মরিয়া, কিন্তু যে তোমায় নিঃস্বার্থ ভালোবাসে সেই ঈশ্বরকে একটুখানিও ভালোবাসো না তুমি। এ তো অন্যায়। ঈশ্বরের প্রতি অন্যায় করছ তুমি ক্রাসিভায়া।”

ইসাবেলার চোখের কোণা দিয়ে অশ্রু ঝরে। শুষ্ক ঠোঁট দু’টো চেপে ধরে দু’চোখ বন্ধ করল। ভ্যালেরিয়ার হাতটা খুব শীতল। ওর কপাল ছুঁয়ে দিলো হাতটা। অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইল। ভ্যালেরিয়ার প্রতিটি কথা ভাবছে। সত্যি কী সে ঈশ্বরের সাথে অন্যায় করছে? চোখ মেলে চাইল ভ্যালেরিয়ার মুখের দিকে। সে এখনো চেয়ে আছে ওর মুখ পানে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইসাবেলা বলল,

“ঈশ্বর কি আমার আচরণে রুষ্ট, ভ্যালেরি? আমি কী তাঁকে খুব কষ্ট দিলাম?”

ভ্যালেরিয়া মৃদু হেসে বলল,

“ঈশ্বর ক্ষমাশীল। তিনি আমাদের সকলকে ভালোবাসেন। আমরা অবুঝ, পাপী। কত ভুল হয় আমাদের। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। তাই বলে ঈশ্বর আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন না। তিনি ধৈর্যশীল। আমরা যখন অনুতপ্ত হয়ে তাঁর দ্বারে ক্ষমাপ্রার্থনা করি, তিনি খুশি হন। ক্ষমা করতে ভালোবাসেন তিনি।”

ইসাবেলা আবার চুপ হয়ে যায়। ভ্যালেরিয়া ওকে জিজ্ঞেস করে,

“রবিবার যাবে আমার সাথে চার্চে?”

ইসাবেলা ছলছল চোখে হালকা মাথা নাড়ায়। সে যাবে। ভ্যালেরিয়ার বুকের উপর থেকে যেন পাথর সরে গেল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। তার মনে আশা জাগে ইসাবেলা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে।
পরদিন সকালে ইসাবেলাকে ধরে পাশ্ববর্তী চার্চে গেল ভ্যালেরিয়া। সাথে আন্না মেরিও, তাতিয়ানা আর ভ্লাদিমিও ছিল। সকলে প্রার্থনা করে ইসাবেলার সুস্থতার জন্য। ফাদার ওর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। ইসাবেলার ভালো লাগল চার্চের মতো পবিত্র স্থানে গিয়ে। কয়েকজন সিস্টারের সাথেও কথা হলো ওর। ওরাওঁ ভ্যালেরিয়ার মতো বড়ো মমতায় বুঝাল। মনের অস্থিরতা সেই ক্ষণে অনেকটাই কমে আসে। বিষণ্ণতা কিন্তু কাটল না। দৃষ্টিতে সেই আগের মতো উদাসীনতা। বাড়ি ফেরার পথে চার্চের বাইরের খোলা মাঠটাতে কিছুক্ষণ বসল। আন্না মেরিও ভ্লাদিমিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। ইসাবেলার সাথে তখন ভ্যালেরিয়া আর তাতিয়ানা। ইসাবেলা ওর মাথাটা তাতিয়ানার কাঁধে রেখে শূন্য গগনে চেয়ে রইল একদৃষ্টে। ভ্যালেরিয়া কথা বলছে তাতিয়ানার সাথে। তাতিয়ানার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একমাত্র মা আন্না মেরিও নাখোশ নয়, ভ্যালেরিয়াও নাখোশ। তাতিয়ানা অবিবাহিত সিঙ্গেল মাদার। ওর জীবনযাপন খুব উগ্র। তাশা গর্ভে আসার আগে সে রোজ বার, পার্টিতে মেতে থাকত। কোনো কোনো দিন রাতে বাড়িতেও ফিরত না। তাশার বাবা কে এই জবাব সে কাওকে দেয়নি। তবে তাশার জন্মের পর অনেকটাই সভ্য হয়েছে তাতিয়ানা। পার্টিতে গেলেও বারে এখন তেমন যায় না। ভ্যালেরিয়া ওকে বলছে পছন্দ মতো ছেলে দেখে বিয়ে করতে। তাতিয়ানা মুখ কুঁচকে বলল,

“বিয়ে! ও আমার জন্য না।”

“তাশার কথা ভাবো একবার। ওরও তো পিতার আদর পাওয়ার হক আছে।” ভ্যালেরিয়া বলল।

তাশার প্রসঙ্গ এলে তাতিয়ানা নরম হয়ে যায়। মুখ অন্য দিকে ফিরে বলল,

“আমিই ওর বাবা, আমিই ওর মা। কোনো পুরুষের প্রয়োজন নেই আমাদের জীবনে।”

“এত বিতৃষ্ণা কেন পুরুষদের প্রতি তোমার?”

“চুপ করো ভ্যালেরি। এ নিয়ে আর কোনো কথা বলবে না। আমার ভালো লাগছে না এখানে বসতে। ইসাবেল, তুমি ওর সাথে বসো। আমি চললাম।”

ইসাবেলা সোজা হয়ে বসতে তাতিয়ানা উঠে দাঁড়ায়। ওর মুখটা কঠিন দেখাচ্ছে। ভ্যালেরিয়া এবং ইসাবেলা দু’জনই ভ্রুকুটি করে তাকাল। হঠাৎ কী হলো ওর? ভ্যালেরিয়া কিছু বলবে তার আগেই হনহনিয়ে চলে গেল বাড়ির দিকের রাস্তায়।

“তাতিয়ানার এই উগ্রতা আমাকে বড্ড ভাবায় ক্রাসিভায়া। ও কিন্তু এমনটা ছিল না পূর্বে। হ্যাঁ, একটু স্বাধীনচেতা ছিল কিন্তু উগ্র নয়। ওর হঠাৎ বদলে যাওয়ার কারণ আমি আজও বুঝে উঠতে পারি না। আগে সব বলত আমাকে। কোথা থেকে যে আমাদের মধ্যে দুরত্বটা চলে এলো ভেবে পাই না।”

তাতিয়ানার যাবার পথ পানে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ভ্যালেরিয়া। ইসাবেলাও ভাবুক হয়। ওর মনে পড়ে তাতিয়ানা প্রচণ্ড হাসি- খুশি আর প্রাণোচ্ছল মেয়ে ছিল। ঠিক ইসাবেলার মতো শান্ত, অন্তর্মুখী স্বভাবের না। ওর অন্তরে যা থাকত কোনো রাখ ঢাক ছাড়াই প্রকাশ করত। সবাইকে ভালোবাসত, মাকেও। মায়ের সাথে মতের অমিল ছিল তখনো কিন্তু এখনকার মতো এতটা নয়। এখন মা যেন ওর শত্রু। এই তো বছর দুই আগে কী এক কারণে মা মেয়েতে তুমুল কথা-কাটাকাটি। একপর্যায়ে তাতিয়ানা বলেই বসেছিল ঘৃণা করে মা’কে সে। প্রচণ্ড ঘৃণা করে। বাকরুদ্ধ হয়ে যান আন্না মেরিও। চোখ ছলছল হয়ে গিয়েছিল তাঁর। এরপর তাঁদের সম্পর্কের দেয়ালের এক একটা ইট খসে পড়তে লাগল। ইসাবেলা এর কারণ খোঁজেনি আগে। আজ কেন যেন মনে হলো অকারণে কিছু ঘটে না। মা-মেয়ের এই বৈরি সম্পর্কের মাঝে নিশ্চয়ই রহস্য আছে। কিন্তু কী?

“ক্রাসিভায়া?”

ভ্যালেরিয়ার ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো।

“হুম।”

“সন্ধ্যে হয়ে এলো। চলো উঠি।”

ইসাবেলা সম্মতিসূচক মাথা নাড়াতে ওর বাহু জড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় ভ্যালেরিয়া। হাঁটতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ইসাবেলার। পা দু’টো যেন জেলির মতো। সোজা হয়ে দাঁড়াতে শক্তি পায় না। আস্তে আস্তে ওরা বাড়ির পথে চলল। কিছু দূর হেঁটে ইসাবেলা জিজ্ঞেস করে,

“কবে ফিরছ তুমি?”

“পরশু।”

ইসাবেলার পা থেমে যায়। ভ্যালেরিয়া চিন্তিত গলায় বলল,

“কী হলো?”

“আমাকে সাথে নেবে ভ্যালেরি? তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই থাকব। একদম ভালো মেয়েটি হয়ে।”

ভ্যালেরিয়া জানে এবার না করলে ইসাবেলা ওই ঘর ছেড়ে আর বেরোবে না। কিন্তু ওকে নিয়ে কী করে ওই বিপৎসংকুল স্থানে যাবে?

“আচ্ছা থাক। তুমিই যাও। আমি কারো উপর বোঝা হতে চাই না।” পাশের গাছটার সাথে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়ায়।

“তুমি আমার উপর বোঝা নও, ক্রাসিভায়া।”

ইসাবেলা কংক্রিটের রাস্তা চেয়ে রইল। ভ্যালেরিয়া আঁজলা ভরে ওর মুখটা তুলে বলে,

“আমি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি ক্রাসিভায়া। ঈশ্বরের পরে এতটা ভালো আমি কাওকে বাসি না। বিশ্বাস করো আমাকে?”

ইসাবেলা মাথায় নাড়ায়। সে বিশ্বাস করে ভ্যালেরিয়াকে। ভ্যালেরিয়া মুচকি হাসে। পরক্ষণেই গম্ভীর দেখা গেল তাকে। সে বলল,

“আমি কাওকে সত্যিটা বলিনি। আজ তোমাকে বলছি, আমি সাধারণ সিস্টার নই ক্রাসিভায়া। আমার দায়িত্বও ওদের মতো নয়। প্রতিটি মুহূর্ত মৃত্যুর সাথে লড়তে হয়। ঈশ্বর যেমন আছে শয়তানও আছে এ কথা বিশ্বাস করো তুমি?”

ইসাবেলা ভ্রু কুঁচকায়। ভ্যালেরিয়া একটু সরে দাঁড়ায়। গলার ক্রুশটা মুঠোর মধ্যে ধরে বিড়বিড় করে কিছু বলে। ইসাবেলা চেয়ে থাকে ওর মুখের দিকে। ভ্যালেরিয়া আকাশের দিকে চেয়ে বলে,

“পৃথিবীতে এমন কিছু ঘটে যার ব্যাখ্যা সব সময় পাওয়া যায় না। প্রকৃতি বড্ড অদ্ভুত। মানুষের সামনে এমন এমন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় যা থেকে মুক্তির উপায় বিজ্ঞান বাতলে দিতে পারে না। মানুষকে তখন শরণাপন্ন হতে হয় ঈশ্বরের। একমাত্র তিনিই মুক্তির পথ দেখান।” এতটুকু বলে থামে ভ্যালেরিয়া। ইসাবেলা কিছুই বুঝতে পারল না। ভ্যালেরিয়া বলল,

“বিজ্ঞানের জয়জয়কারে মানুষ ধর্মের ছায়াতল থেকে সরে যাচ্ছে। সব কিছু যুক্তিতর্কের বিচারে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে মানুষ। আস্তিকতাকে অযৌক্তিক মনে করে অনেকে। এসবে একজনের প্রভাব প্রবলভাবে বাড়ছে মানুষের মস্তিষ্কের উপর। কার জানো? শয়তানের। শয়তান আদম সন্তানদের ঘৃণা করে। আমরা সকলেই একথা জানি কিন্তু মানি কয়জনে বলো? কিছু মানুষ এসব জেনেও লোভের বশবর্তী হয়ে, বিপথগামী হয়ে শয়তানের পূজা করে। শয়তানকে খুশি করতে মানবজাতি ধ্বংসের লীলাখেলায় মেতে ওঠে। ওরা নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষদের ধ্বংস করে এই পৃথিবীতে শয়তানের রাজত্ব কায়েম করতে চাইছে। ওদের পথটা খোলা চোখে দেখা যায় না ক্রাসিভায়া। ওরা গুপ্তচক্র। পৃথিবীর বাতাসে মিশে থাকে। আমরা সাধারণ দৃষ্টিতে ওদের দেখতে পাই না। অথচ, আমাদের আশেপাশেই ওঁৎ পেতে আছে সুযোগ বুঝে আক্রমণ করবে বলে। একটু একটু করে এগোচ্ছে ওরা, খুব সাবধানে। শয়তান ওদের নিরপত্তা দেয়। ওরা মানুষের ছদ্মবেশে শয়তান, ক্রাসিভায়া। কায়াটা মানবীয় কিন্তু রূহটা শয়তানের হাতে বন্দি। খুব শক্তিশালী ওরা। কিন্তু ঈশ্বরের চাইতে নয়। আমরা ঈশ্বরের পক্ষ হয়ে ওদের বিরুদ্ধে লড়ি। ওদেরকে সমূলে নির্মূল করা সহজ নয় তবুও চেষ্টা করছি মানুষকে রক্ষা করতে ওদের নিষ্ঠুরতা থেকে। তুমি যদি দেখতে ওদের নিষ্ঠুরতার ছবি!”

ভ্যালেরিয়ার মুখ-চোখ আর্ত হয়ে ওঠে। ক্রুশটা শক্ত করে ধরে আছে। ইসাবেলার কৌতূহল বাড়ে। ভয় যে হয় না তা নয়। কিন্তু কৌতূহলটাই বেশি।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here