তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা শেষ পর্ব

0
1976

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (২৫~শে’ষ পর্ব)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

সকালের মিষ্টি একটুকরো রোদ মুখের উপর আ’চ’ড়ে পড়তেই চোখ-মুখ কু’চ’কে ফেলি আমি। পরমুহূর্তেই একটু নড়ার চেষ্টা করতেই নড়তে সক্ষম না হওয়ায় পিটপিট করে চোখ মেলে নিজেকে তীব্রের বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো অবস্থায় আবিষ্কার করলাম, মূহূর্তের মধ্যেই গতকাল রাতের ভালোবাসাময় মূহূর্ত গুলো আমার সামনে ভাসতে শুরু করলো।

আমার ঠোঁটের কোনে প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠে। অবশেষে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে একান্ত নিজের করে পে’তে সক্ষম হলাম। ভালোবাসার মানুষটি নিজের করে পাওয়ার মাঝে যে সুখ লাভ হয় তা অন্য কিছুতে মেলে না। পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে দামী, মূল্যবান সুখ গুলোর মাঝে একটি হলো ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়া।

তীব্রের বুকের উপর আমার মাথা থাকায় আমি তীব্রের হৃ’দ’পি’ন্ডে’র ধকধক আওয়াজ খুব গভীর ভাবে অনুভব করতে পারছি। সময়গুলো এতো মধুর হওয়ায়, মনে হচ্ছে সময়গুলো এখানেই থে’মে যাক। তীব্রের বুকে মাথা রেখে এভাবেই কাটিয়ে দেই সারাটি জীবন। আমি তীব্রের হাতের ভা’জ থেকে আমার ডান হাত বের করতে নিতেই তীব্র একটু নড়ে উঠলেন। পরমুহূর্তে ধীরগতিতে আমার হাতটি বের করতে সক্ষম হলাম।

তীব্রের ঘন লো’মে ভরপুর বুকের মাঝে আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে লাগলাম। কিছুসময় এভাবেই পেরিয়ে যায়, তীব্রের ঘুম ভে’ঙে গেলে আমাকে আরো গভীর ভাবে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললেন…

____”শুভ সকাল মিসেস.তীব্র রহমান!”

____”শুভ সকাল। ঘুম হলো আপনার?”

____”উমম..কেন!”

____”উঠতে হবে তো।”

____”উঠে কি করবে? আদর কি কম দিয়ে ফে’লে’ছি আবার দিতে হবে বুঝি!”

তীব্রের মুখে সকাল সকাল এমন লা’গা’ম বিহীন কথা শুনামাত্র ল’জ্জা’য় আবারও আমার অবস্থা খা’রা’প হতে শুরু করে। আমি তীব্রের বুকে আলতো করে একটা ঘু’ষি মে’রে বললাম…

____”সকাল সকাল কি সব বলছে পা’জি লোক!”

____”পা’জি বললে আমাকে! তাহলে এবার পা’জি’দের যা কাজ হয় সেই কাজের নমুনা দেখিয়ে দেই তোমাকে কি বলো!”

আমি দ্রুত কন্ঠে বললাম…
____”এ এই এই একদম না….!”

কে শুনে কার কথা, তীব্র আমাকে নিচে শুইয়ে দিয়ে আমার উপর নিজের শরীরে অর্ধেক ভা’ড় ছেড়ে দিয়ে আমার ঠোঁটের ভাজে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন। কিছু সময় নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ছ’ট’ফ’ট করলেও পরমুহূর্তে তীব্রের ভালোবাসার পরশে সায় প্রদান করলাম। মিনিট ৫ পর তীব্র আমার ঠোট ছেড়ে দিয়ে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়তে থাকলেন৷ আমিও জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছি৷

কিয়ৎক্ষণ পর আমি তীব্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম…
____”দয়াকরে কখনও আমাকে ছে’ড়ে যাবেন না তীব্র! আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি, আপনার ভলোবাসায় সারাজীবন নিজেকে রাঙিয়ে রাখতে চাই। আপনার শূ’ন্য’তা বেঁচে থাকতে যেনো আমাকে স’হ্য করতে না হয়। আমাকে ছে’ড়ে যাওয়ার হলে আমাকে মে’রে ফে…..”

পুরো কথা শে’ষ করার পূর্বেই তীব্র ওনার ব’লি’ষ্ঠ হাত দিয়ে আমার মুখ চে’পে ধরলেন। ধ’ম’কে’র সুরে বললেন…

____”সবসময় ২ লাইন বেশি বলতে হবে নাকি তোমার! আর একবার যদি মৃ’ত্যু’র কথা মুখে এনেছো তবে তোমার এই সুন্দর মুখ একদম ভে’ঙে গু’ড়ো করে ফে’ল’বো বলে দিলাম৷ কোথাও যাবো না আমি তোমাকে ছে’ড়ে, আর না কখনও তোমাকে যেতে দিবো।”

তীব্রের ধ’ম’ক আমার মনে শান্তির হাওয়ার মতো দোলা দিয়ে গেলো। আমার চোখ জোড়া চিকচিক করছে। এ জল সুখের জল, প্রাপ্তির জল, ভালোবাসার মানুষটিকে একান্ত নিজের করে পাওয়ার খুশির জল। আমি আমার ডান হাত দিয়ে আমার মুখে তীব্রের রাখা হাতটি ধরে অনেক গুলো ভালোবাসার পরশ একে দিলাম। তারপর তীব্রের হাতটি আমার গালের সাথে ঠেকিয়ে বি’ন’য়ে’র স্বরে বললাম….

____”একবার ‘ভালোবাসি’ কথাটি বলুন না!”

তীব্র ওনার বাম হাতটিও আমার অন্য গালে রেখে আমার কপালের সাথে কপাল ঠে’কি’য়ে নাকের সাথে আলতো করে নিজের নাক ঘ’ষা দিতে দিতে বললেন…

____”ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি। আমার বউকে আমি অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।”

তীব্রের মুখে এতোবার ভালোবাসি কথাটি শুনে আমার চোখজোরা উ’প’চে খুশির অ’শ্রু বেড়িয়ে এলো। তীব্র খুব যত্ন নিয়ে সেই অশ্রু মু’ছে দিলেন আর বললেন…

____”এই সুন্দর আর চোখজোড়া কখনও যেনো অ’শ্রুতে সি’ক্ত না হয়। সবসময় তোমার ঠোঁটে প্রাপ্তির হাসির রেখা ফুটে থাকবে এটাই চাই বউ।”

আমি আমার দু’হাত দিয়ে তীব্রকে জড়িয়ে ধরলাম।

——————————

ড্রয়িং রুমে বসে ল্যপটপে কিছু কাজ করতে ব্য’স্ত তীব্র। আমি রান্নাঘরে তীব্রের পছন্দের কিছু খাবার রান্না করছি। সেই সময় মূল দরজা ভে’দ করে শফিক ভাইয়াকে ভিতরে আসতে দেখলাম। শফিক ভাইয়া তীব্রের সন্নিকটে এসে কিছু বললেন আমি শুধু তা দেখতে পারছি কিন্তু কি বলছেন এতো দূর থেকে তা শোনা যাচ্ছে না। আমি বিষয়টাকে ততোটা গুরুত্ব দিলাম না৷ পরমূহূর্তে দেখলাম হু’ট করেই তীব্র বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ালেন, আমার দিকে ঘুরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন….

____”তৃপ্তি আমার জরুরী কিছু কাজ প’ড়ে গিয়েছে এক্ষুনি বাহিরে যেতে হবে। আসতে দে’ড়ি হবে, আমার অপেক্ষায় থেকো না, খেয়ে নিও।”

এতোটুকু বলে শফিক ভাইয়া আর উনি দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেলেন। আমি স্ত’ব্ধে’র দাঁড়িয়ে রইলাম, তাকিয়ে রইলাম তীব্রের যাওয়ার পানে। আমার মন জুড়ে বি’ষ’ন্ন’তা’রা জায়গা দ’খ’ল করে নিলো। এতো সময় নিয়ে এতোগুলো রান্না করলাম ওনার জন্য আর উনি এভাবে চলে গেলেন! বি’ষ’ন্ন মন নিয়ে রান্নার বাকি কাজটুকু শে’ষ করে সবগুলো খাবার টেবিলের উপর সাজিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে রুমে থাকা দেওয়াল ঘড়ির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলাম, ঘড়ির কা’টা দুপুর ২টা ছু’ই ছু’ই। ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। না খেয়েই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম। কখন যে ঘুমের রা’জ’ত্বে পারি দিয়েছিলাম বুঝে উঠতে পারি নি।

———————————–

____”শফিক তুই সম্পূর্ণ শিউর তো এই ঠিকানাতে গেলেই আমি নূরার খোঁজ পাবো!”

____”হুম, বস। আমি পা’ক্কা শিউর।”

তীব্র একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। দীর্ঘ ৫ বছর পর জানতে পারলো নূরা বে’চে আছে, ভালো আছে। আজ স্বচ’ক্ষে দেখতে পারবে নূরাকে, নিজের ১ম ভালোবাসার মানুষটিকে খুশি তো হওয়ার ই কথা। ঘন্টা ২য়েক পর গন্তব্য স্থলে পৌঁছে যায় তীব্র আর শফিক। তীব্র ওর হাতে থাকা ঠিকানাটি আরেকবার দেখে নিয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সামনে একটা বড় আকারের গেইটে লেখা আছে ‘চৌধুরী ভিলা’। তীব্রের পা কাঁপছে, আর কয়েক কদম ফেললেই সে নূরাকে দেখতে পারবে। এই কয়েক কদম অগ্রসর হওয়ায় যে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগবে এই এক একটি সেকেন্ড যেনো তীব্রের কাছে এক একটি দিনের সমান লম্বা মনে হচ্ছে।

চৌধুরী ভিলার মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে কলিং বেল বা’জা’য় তীব্র। অপেক্ষা জিনিসটা এই মূহূর্তে ভিষণ পু’ড়া’চ্ছে তীব্রকে। কিয়ৎক্ষণ পর চৌধুরী ভিলার মূল দরজা খুলে যায়। আদিত্য তীব্রকে দেখে চিনতে না পেরে প্রশ্ন সিক্ত কন্ঠে বলে…

____”জ্বি কাকে চাই? কে আপনি!”

তীব্র অ’স্থি’র কন্ঠে বলে…
____”এখানে কি নামিয়া ইসলাম নূরা নামের কেও থাকেন? তাকে একটু ডেকে দিবেন আমার ওনার সাথে জরুরী দরকার আছে!”

____”জ্বী না, এই নামে এখানে কেও থাকে না। এখানে আমি আর আমার স্ত্রী থাকি শুধু। এটা আমাদের নিজস্ব বাসা। আমার নাম মি.আদিত্য চৌধুরী আর আমার স্ত্রীর নাম….”

____”কে এসেছে গো এই অসময়ে!”

আদিত্য পুরো কথা শে’ষ করার পূর্বেই ভিতর থেকে মিরা আদিত্যের নিকট উপরোক্ত প্রশ্নটি ছু’ড়ে। আদিত্য মিরার দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই তীব্র মিরাকে দেখে থ’ম’কে যায়। অস্পষ্ট স্বরে বলে…

____”নূর নূর পাখিইইই …!”

আদিত্য মিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে…
____”চিনি না, এখানে নামিয়া ইসলাম নূরা নামের কাওকে খুঁজতে এসেছিলেন। বলে দিলাম এই নামে এখানে কেও থাকে না।”

তীব্র অপলক দৃষ্টিতে মিরার দিকে তাকিয়ে আছে, মিরা ধীর পায়ে আদিত্যের পাশে এসে দাঁড়ায়। তীব্রের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হাসি মুখ নিয়ে বলে…

____”আপনার কোথাও ভু’ল হয়েছে৷ কেও আপনাকে ভু’ল ঠিকানা দিয়েছে।”

তীব্র দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে বার কয়েক শুকনো ঢো’ক গি’ল’লো। নূরা তীব্রকে চিনতে পারছে না, বিষয়টা তীব্রকে আরো গভীর ভাবে আ’ঘা’ত করছে। কিয়ৎক্ষণ নিরব থেকে তীব্র আদিত্য আর মিরাকে উদ্দেশ্য করে বললো…

____”আমাকে এক গ্লাস পানি দিবেন!”

তীব্রের পানির প্রয়োজন শুনে আদিত্য বললো…
____”অবশ্যই কেনো নয়! আর আপনারা বাহিরেই বা কেনো দাঁড়িয়ে আছেন! ভিতরে আসুন, বসুন। মিরা তুমি ওনাদের জন্য হালকা খাবারের ব্যবস্থা করো।”

তীব্র ভিতরে যাওয়ার জন্য সম্মতি জানালে মিরা রান্নাঘরে চলে যায়। শফিক আর তীব্র চৌধুরী ভিলার ভিতরে প্রবেশ করে। ড্রয়িং রুমে রাখা শোফায় বসে পরে তীব্র, শফিক ও আদিত্য। আদিত্য নম্র স্বরে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে…

____”তো আপনার পরিচয়টা পেলাম না এখনও!”

____”আমি আবরার রহমান তীব্র। পেশায় একজন ব্যবসায়ী, ঢাকায় থাকি।”

____”ওহহ আচ্ছা, আমার নাম তো বললাম ই তখন৷ আমি পেশায় কলেজের প্রফেসর।”

আরো কিছুসময় তীব্র আর আদিত্যের মাঝে কথপোকথন হয়। একসময় নিজের মাঝে থাকা সকল দ্বি’ধা দ’ন্দ’কে কাটিয়ে তীব্র আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে বলে…

____”আপনার ওয়াইফ এর নাম কি আসলেই মিরা!”

আদিত্য ভ্রু কু’চ’কে তাকায় তীব্রের দিকে। তারপর প্রশ্নসিক্ত কন্ঠে বলে…

____”কেনো বলুন তো!”

____”আপনার ওয়াইফ এর সাথে আমার একজন পরিচিতার চেহারার হুবহু মিল রয়েছে। আমি যার খোঁজে এখানে এসেছি সে। দীর্ঘ পাঁচ বছর পূর্বে আমি নূরাকে একটা দূ’র্ঘ’ট’না’র ফ’লে হা’রি’য়ে ফেলি। তারপর আর কোনো খোঁজ মেলে নি ওর, আজ আমার পি.এ (শফিক) এর থেকে এই বাসার ঠিকানা পেলাম। তাই দ্রুত এখানে চলে এলাম। কিন্তু এসে নূরার মতো আপনার স্ত্রীকে দেখতে পেয়ে বেশ অবাক হলাম তাই জানতে চাইলাম। নূরা আর আপনার স্ত্রীর চেহারার কতোটা মিল রয়েছে আমি আপনাকে ৫ বছর আগের কিছু পিক দেখাচ্ছি তাহলে বুঝতে পারবেন।”

তীব্র ওর ফোন বের করে গুগোল ড্রাইভে প্রবেশ করে নূরার ৫ বছর পূর্বের ছবিগুলো বের করে আদিত্যকে দেখায়। আদিত্য অবাক হয় না, কিয়ৎক্ষণ পর আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে….

____”হয়তো আপনার পরিচিতা নূরা আর আমার ওয়াইফ মিরার মাঝে গভীর কোনো যোগ সূত্র রয়েছে। আর সত্য কথা হলো মিরার আসল নাম মিরা নয়। আমি ওকে ৫ বছর পূর্বে একটা নদীর ধারে গভীর আ’ঘা’ত প্রাপ্ত অবস্থায় প’রে থাকতে দেখেছিলাম। তারপর ওকে আমার সাথে করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। মাথায় প্রচুর আ’ঘা’ত পাওয়ায় মিরার একটা ক্রি’টি’ক্য’ল সা’র্জা’রী করতে হয়েছিলো। যার দ’রু’ণ মিরা ওর অতীত সম্পূর্ণ রুপে ভু’লে গিয়েছিলো৷ তারপর থেকে মিরা আমার সাথেই থাকে। মিরা নামটি আমিই ওকে দিয়েছিলাম। ধীরে ধীরে ওর গভীর যত্ন নিয়ে আমি ওকে সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ করে তুলি। অতঃপর আমাদের দুজনের মাঝে ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। তারপর আমি মিরার সাথে বিবাহকার্য সে’রে ফেলি। দীর্ঘ ৫বছর ধরে আমি আর মিরা একসাথে আছি স্বামী-স্ত্রীর ব’ন্ধ’নে আ’ব’দ্ধ হয়ে। আমাদের এই ছোট্ট সুখের সংসারে আমরা প্রতিটি সময় ভিষন হাসি-খুশি, আনন্দের সাথে কাটাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ।”

আদিত্যের বলা কথাগুলো শুনে তীব্রের আর বুঝতে বাকি নেই মিরাই যে নূরা। নূরা স্মৃ’তি শ’ক্তি হা’রি’য়ে বর্তমানে মিরা নামে অন্যের স্ত্রী হয়ে অন্যকে ভালোবেসে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে বিবাহিত জীবন কা’টা’চ্ছে, কতো সুখী আর খুশি আছে সব মিলিয়ে তীব্রের মনের ভিতর জমে থাকা সব ক’ষ্ট গুলো শে’ষ হয়ে যায়। নূরা বে’চে আছে ভালো আছে এটাই ওর জন্য অনেক বেশি। তীব্র কিছুসময় নিরব থেকে আদিত্যকে ওর আর নূরার অতীত সম্পূর্কে সবটা জানায়। সবটা শুনে আদিত্যের চোখে-মুখে চি’ন্তা’র ভা’জ স্পষ্ট হয়।

তীব্র তা লক্ষ্য করে, ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে তীব্র আদিত্যকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে…

____”ভ’য় পাবেন না মি.চৌধুরী, নূরার আই মিন আপনার স্ত্রী মিরার কোনো ক্ষ’তি হবে না। সে আপনার কাছে ভালো আছে এটা দেখেই আমি খুশি হয়েছি। ব্যস কিছু কাজ বা’কি রয়ে গিয়েছে সেগুলো সম্পন্ন না করলে আমি আমার লাইফে শান্তি পাবো না।”

____”কি কাজ!”

____”মিরার সাথে আমার বিবাহ হয়েছিলো এটা তো মি’থ্যে না। হতে পারে ওর বর্তমানে কিছু মনে নেই, কিন্তু আমার ওর মাঝে যে অদৃশ্য সম্পর্কের বা’ধ’ণ আজও রয়ে গিয়েছে সেই বা’ধ’ণ থেকে মিরাকে মু’ক্ত করাটা ভিষণ জরুরী।”

____”মানে!”

____”আমি আগামীকাল আপনার কাছে আমার আর মিরার ডি’ভো’র্স পেপার পাঠিয়ে দিবো। আপনি মিরার থেকে পেপারে সাইন করিয়ে নিবেন। তারপর আমার নিকট পাঠিয়ে দিবেন। কালকের পর থেকে আমার আপনার স্ত্রীর নিকট আর কোনো দা’বি থাকবে না। সে আমার থেকে সারাজীবন এর মুক্তি লাভ করবে। তারপর আপনার সাথে ওর সম্পর্ক ও সহজ হবে আর আমার সাথে আমার বর্তমান স্ত্রীর।”

তীব্রের কথা বুঝতে পেরে আদিত্য কিছু সময় চি’ন্তা করে সম্মতি প্রদান করে। কিয়ৎক্ষণ পর মিরা নাস্তা নিয়ে উপস্থিত হয়। তীব্র আর শফিক হালকা নাস্তা করে আদিত্য আর মিরাকে বি’দা’য় জানিয়ে চৌধুরী ভিলা থেকে বেড়িয়ে আসে। মূল দরজা পেরোনোর পর শে’ষ বারের মতো মিরা রূপী নূরার হাস্স্যোজ্জ্বল চেহারা দেখে নেয় তীব্র। তারপর আর পিছন ঘুরে তাকায় না। সোজা গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে। গন্তব্য নিজ বাড়িতে, নিজ আসল স্থানে।

————————————

রহমান মন্ঞ্জিল এর মূল দরজা ভে’দ করে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে তীব্র। আজও তীব্রকে অ’গো’ছা’লো, অ’বি’ন্য’স্ত দেখাচ্ছে। তীব্র কি মনে করে রান্নাঘরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সেইমূহূর্তে ডায়নিং টেবিলের সাথে থাকা চেয়ারে বসে সেখনেই মাথা এলিয়ে রাখা তৃপ্তিকে দেখতে পায় তীব্র। ভ্রু কিন্ঞ্চিত কুঁচকে আসে তীব্রের। ধীরপায়ে ডায়নিং রুমে প্রবেশ করে তীব্র। তৃপ্তির সন্নিকটে এসে দাঁড়াতেই দেখে তৃপ্তি ঘুমিয়ে গিয়েছে। কি ভিষণ মায়াবী মুখ খানা কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই কেমন শুকিয়ে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে তীব্রের। টেবিলের উপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা খাবার গুলোর তীব্র কয়েকটা ঢাকনা সরিয়ে সরিয়ে দেখে সব খাবার ওর পছন্দের।

কিন্তু সব খাবার ই বাটিতে ভর্তি অবস্থায় আছে৷ তারমানে তৃপ্তি আজ সারাদিন খায় নি! তীব্রের এবার নিজের কাছে নিজেকেই ভি’ষ’ণ দো’ষী মনে হচ্ছে। নূরার খো’জ পেয়েছে শোনা মাত্র তাড়াহুড়ো বশত তৃপ্তি যে সকাল থেকে ওর জন্য রান্না করছে সেই বিষয়টা ভু’লে গিয়ে দ্রুততার সাথে বাসা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলো। আর সেই অ’ভি’মা’নে’ই তার বউ আজ না খেয়ে তার অপেক্ষায় বসে আছে।

তীব্র মনে মনে নিজেকে কয়েক হাজারটা বকা+ঝা’রি দিয়ে নেয়। তারপর দ্রুত নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবারও নিচে তৃপ্তির নিকট চলে আসে। মেয়েটা গভীর ঘুমে নি’ম’জ্জি’ত হয়ে আছে তীব্রের তা বুঝতে বাকি নেই। তীব্র এবার তৃপ্তির ঘুম কি করে ভা’ঙা’বে সেই চি’ন্তা’য় ডু’বে যায়।

কিয়ৎক্ষণ এভাবেই নীরবতার মাঝে কে’টে যায়। পরমুহূর্তে তীব্র তৃপ্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে..

____”বউউউউউউউ…ওওও বউউউউউউ… তোমার একমাত্র জামাই তোমাকে আহ্বান জানাচ্ছে এবার তো চোখ খুলো লক্ষীটি। বউউউউ… ওও মিষ্টি বউউউউ… শুনছোওওও….

তীব্রের ডাকে তৃপ্তি ন’ড়ে চ’ড়ে উঠে। পিটপিট করে চোখ মেলে নিজের খুব সন্নিকটে তীব্রের অবস্থান বুঝতে পেরে দ্রুত স’রে আসতে নিলে তীব্রের মাথার সাথে আমার মাথা টো’কা লে’গে যায়। দুজনেই “আহহহহ” বলে ব্য’থা’র স্থানটিতে হাত বুলাতে থাকি। তীব্র রসিকতার স্বরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন…

____”মাথার সাথে মাথা টো’কা লাগলে বিজোর সংখ্যার টোকা রাখতে হয় না। নয়তো টো’কা প্রাপ্তকারী দু’জনের মাথাতেই এক জোড়া করে শিং গ’জা’বে যেটা দেখতে মোটেও শোভনীয় নয়। তোমার মাথার সাথে আমার মাথা বিজোর সংখ্যা মানে একবার টো’কা খেয়েছে, তাই এটা জোর সংখ্যা করতে হবে আমার মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে আরেকবার টো’কা দাও জলদী।”

আমি মুখের আকৃতি স্বাভাবিক এর তুলনায় বড় আকারের করে তীব্রের উপর স্থীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। চোখের পলক না ফে’লতেই তীব্র আমার মাথায় আরেকটা টো’কা দিয়ে বলে….

____”আহহহহ এবার আসল শান্তি মিললো।”

আমি তীব্রের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের মনের চা’পা অভিমান গুলোকে আবারও জাগিয়ে তুলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে তীব্রকে পাশ কা’টি’য়ে চলে যেতে নিলে তীব্র আমার হাত ধরে ফেলেন। আমি ওভাবেই দাড়িয়ে থেকে তীব্রের হাতের বা’ধ’ন থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই তীব্র এক টানে আমার পিঠ ওনার বুকের সাথে মিশিয়ে নেন। আমি তীব্রের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর যতোই চেষ্টা করছি ততোই তীব্র আমাকে ওনার সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিচ্ছেন।

আমার কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে শীতল কন্ঠে বললেন…

____”আমার বউয়ের মিষ্টি অভিমান গুলো ভা’ঙা’তে’ই তো আমার কিছু অনিয়ম করা জরুরী হয়ে দাড়ায়।”

তীব্রের এহেনু কথায় আমার ন’ড়া-চ’ড়া সম্পূর্ণ থে’মে যায়। শরীরে আবার সেই অন্যরকম শিহরণ যুক্ত অনুভূতি গুলো কাজ করতে শুরু করে। বেশ কিছুসময় ধরে তীব্রের ভালোবাসা পেয়ে আমার সকল অভিমান, রাগ মূহূর্তের মধ্যেই মিলিয়ে যায়৷ পরমুহূর্তে আমি আর তীব্র রাতের খাবার খাওয়া শে’ষ করি৷ তারপর দু’জনে একসাথে রুমে চলে আসি।

আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল চিরুনি করছি। আড় চোখে দেখছি তীব্র খা’লি গা’য়ে বিছানার উপর শুয়ে থেকে ফোন দেখছে। আমি চুলগুলো হাত খো’পা করে ধীরপায়ে তীব্রের সন্নিকটে গিয়ে বসি। তারপর কোনো কথা না বলে তীব্রের বুকের উপর শুয়ে পড়ি। আমার এমন কাজে তীব্র মিষ্টি হেসে ফোনটা রেখে দিয়ে আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। মাঝেমধ্যে আমার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়। আমি প্রশান্তিতে দু’চোখ বুঝে রেখেছি।

———————————

তীব্র আর আমি ড্রয়িং রুমে সোফার উপর পাশাপাশি বসে টিভিতে মুভী দেখছিলাম। সেই সময় তীব্রের ফোন বেজে উঠে। তীব্র ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কি বলে তা সঠিক শুনতে সক্ষম হলাম না। তীব্র প্রতিত্তুরে বললো…

____”সব পা’পে’র শা’স্তি। আমি তো জ’ঘ’ন্য মৃ’ত্যু দিতে চেয়েছিলাম ঐ …….জা’নো…… এর কিন্তু তার আগেই যে পটল তুলবে তা বুঝতে পারি নি।”

বলেই তীব্র কল কে’টে দেয়। আমি উৎসুক নয়নে তীব্রের দিকে তাকিয়ে আছি। তীব্র কিছু সময় নিরব থেকে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…

____”একটা কি’ট বেঁচে ছিলো। যাকে মা’র’লে পা’পে’র সাম্রাজ্যের মূল হো’তা’দের মা’রা’র কার্য সম্পূর্ণ রূপে সফল হতো। কিন্তু একটু আগে শুনতে পেলাম আমার চাচা নামক মন্ত্রী কি’ট’টা অ’তি’রি’ক্ত মানসিক প্রেসার সহ্য করতে না পেরে স্ট্রো’ক করে মা’রা গিয়েছেন গতকাল রতে৷”

আমি ড্য’ব’ড্য’ব নয়নে তাকিয়ে আছি তীব্রের দিকে। তীব্র আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে…

____”আজ থেকে আমি আর তুমি মিলে একটা সুস্থ -সুন্দর জীবন কাটাবো বউ। তোমার মাঝে সারাজীবন ধরে আমার পূর্ণতা খুঁজে পাবো। আমার তুমিটাকে খুব যতনে আমার মনের গহীনে লু’কি’য়ে রাখবো। ভালোবাসা দিয়ে সবসময় আগলে রাখবো। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা গুলো কখনও শে’ষ না হোক। অনেক ভালোবাসি তোমাকে বউ।”

____”আমিও আপনার মাঝে আমার পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছি, সারাজীবন ধরে আপনাকে ভালোবাসে আপনার হয়েই কাটিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ। আপনার প্রতি ও আমার ভালোবাসাময় অনুভূতি গুলোর কখনও শে’ষ না হোক এটাই চাই।”

#সমাপ্ত………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here