#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
তীব্রের হাতের লেখা এই ৩লাইনের প্রতিটি শব্দ আমার বুকের মধ্যে তো’ল’পা’ড় শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। শেষের “নূর” নামটি বারংবার যেনো আমার কানে বাজছে। তবে কি তীব্রের জীবনে আরো এক নারীর অ’স্বি’ত্ব ছিলো! আর সেই নারীকে ভালোবাসার বিনিময়ে চরম ধো’কা আর বিশ্বাস’ঘা’ত’ক’তা’র শি’কা’র হওয়ায় সকল নারী জাতির প্রতি তীব্রের এতো রা’গ, ঘৃ’ণা!
কে এই নূর! কি কারণে সে তীব্রের ভালোবাসার সাথে ছ’ল’না করেছিলো! তীব্রের বু’কে ছু’রি দ্বারা আ’ঘা’ত করেছিলো কিসের ক্ষো’ভে! আমার মনে হাজার প্রশ্নের ভিড় জমে গিয়েছে যেনো ইতিমধ্যে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ক’ণা জমতে শুরু করেছে। সেদিকে পা’ত্তা না দিয়ে পরবর্তী পৃষ্ঠা উ’ল্টা’লা’ম।
————————-
ডায়েরির পাতার ফ্লাসব্যক~~
————————–
ইসলাম মন্ঞ্জিলে জাবেদ ইসলাম এর মাথায় ব’ন্দু’ক ঠেকিয়ে রেখেছে বিশিষ্ট শিল্পপতী আবরার রহমান তীব্র এর বডিগার্ড। জাবেদ ইসলামের ড্রয়িংরুমের সোফায় আয়েসে পায়ের উপর পা তুলে দৃষ্টি মেঝেতে স্থির রেখে বসে আছে তীব্র। জাবেদ ইসলাম বারকয়েক শুকনো ঢো’ক গি’লে ভী’ত সুরে বলে উঠে…
“” আমাকে মে’রে ফেললেও আমি আপনার দেওয়া কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করবো না মি.রহমান। এই কোম্পানি আমি অনেক পরিশ্রমের পরে সফলতার শীর্ষে আনতে পেরেছি। এই কোম্পানির সাথে আমার অনেক ইমোশন, ভালোবাসা জড়িয়ে আছে যা আমি আপনার ধার্য করা কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে পারবো না। এর থেকে আমার মৃ’ত্যু শ্রেয় “”।
জাবেদ ইসলামের এমন কথায় তীব্র অট্টহাসিতে ফে’টে পড়ে, পরক্ষণেই হাসি থামিয়ে ঠান্ডা গলায় রাগ মিশ্রিত রেখে বলে উঠে..
“” এই মূহূর্তে তুই আমার লোকের গান পয়েন্টে মাথা রেখে কথা বলছিস, তাই মুখ থেকে বের করা প্রতিটি শব্দ হিসাব করে বলিস। জানিস ই তো ব’ন্দু’কে’র গু’লি আর মুখের কথা একবার বের হলে তা আর রিটার্ন করা সম্ভব হয় না। আমার কাছে তোর মতো ব্যবসায়ীদের প্রা’ণ ভিষণ তু’চ্ছ, তাই তোকে মা’র’তে আমার হাত এতোটুকুও হাত কাঁ’প’বে না “”
“” মা’রু’ণ, মে’রে ফেলুন আমায়। বললাম তো আমি আপনার দেওয়া কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করবো না (জাবেদ)””
তীব্র চো’য়া’ল শক্ত করে নিজের হাতে থাকা গানটি ইসলাম মন্ঞ্জিলের মূল দরজায় দিকে ফা’কা সুট করে। সঙ্গে সঙ্গে একটি মেয়ের আর্তনাদ তীব্র সহ সকলের কর্ণপাত হয়। জাবেদ ইসলাম দরজার দিকে লক্ষ্য করতেই নিজের মেয়েকে পরে যেতে দেখে আঁ’ত’কে উঠেন৷ দিক-বেদিক কোনো চিন্তা না করে মাথায় ঠেকিয়ে রাখা ব’ন্দু’ক’ধা’রী লোকটিকে ধা’ক্কা দিয়ে মূল দরজার নিটক ছুটে এসে মেয়েটির মাথা নিজের কোলের উপর নিয়ে বলে উঠেন…
“” নিরা মামনি আমার, আমার মেয়ে, চোখ খোল মা। দেখ তোর বাবাই তোর কাছে আছে, কিছু হবে না তোর। “”
সেইমূহূর্তেই জাবেদ ইসলামের দৃষ্টি পরে নিরার পেটের পাশ থেকে র’ক্ত গড়িয়ে মেঝেতে পড়ছে। জাবেদ ইসলামের আর বুঝতে বাকি রইলো না কিছুসময় পূর্বে তীব্রের গান থেকে সু’ট হওয়া গু’লি’টি তার মেয়ের পে’টে এসে লেগেছে। জাবেদ ইসলাম দ্রুত নিরার পাশ থেকে উঠে তীব্রের নিকট ছুটে এসে ওর পায়ের কাছে বসে মিনতীর সুরে বলে উঠেন…
“” দয়াকরে আমার মেয়েকে নিয়ে আমাকে এইমূহূর্তে হাসপাতালে যেতে দিন নয়তো আমার মেয়েটাকে আমি
বাঁ’চা’তে পারবো না “”
তীব্র ওর ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে জাবেদ ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলে…
“” তোর মেয়ে তো দেখছি একদম সঠিক সময়ে এন্ট্রি নিয়েছে, যে কাজ তোকে মা’রা’র হু’ম’কি দিয়ে সম্পন্ন করতে পারছিলাম না এতোসময় ধরে চেষ্টার পরও সেই কাজ তোর মেয়ে এসে এতো সহজেই সম্পন্ন করার রাস্তা বের করে দিবে ভাবতে পারি নি, আই এম ইম্প্রেইসড। “”
জাবেদ ইসলামের বিস্ময়কর দৃষ্টি তীব্রের কঠিন মুখের উপর স্থির রাখা। তীব্র ওর হাতে থাকা গানটি জাবেদ ইসলামের মাথার চারপাশ দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে…
“” মেয়ের জীবনের প্রতি এতো মায়া থাকলে এইমূহূর্তে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে দে, তারপর সসম্মানে আমার লোকেরা তোর মেয়েকে এই শহরের বেস্ট হস্পিটালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে দিবে। আর যদি এখনও বলিস যে তোর মেয়ের জীবনের চেয়েও মূল্যবান তোর কোম্পানি বড় তাহলে এই ন্য’কা কা’ন্না ব’ন্ধ করে আমার পাশে আয়েসে বসে পড় আর নিজের মেয়েকে য’ন্ত্র’ণা’য় ছ’ট-ফ’ট করতে করতে শে’ষ নিঃশ্বাস ত্য’গ করতে দেখ। “”
তীব্রের মুখে এমন হৃ’দ’য়’হী’না কথা শুনে জাবেদ ইসলামের চোখ নোনাজলে ভ’রে উঠে, ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। কিছুসময় স্ত’ব্ধ থাকার পর জাবেদ ইসলাম কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ব’লে উঠে..
“” অ’স’হা’য়’ত্বে’র সুযোগ নিয়ে নিজের কার্য সিদ্ধি করে নিচ্ছেন মি.রহমান! দুনিয়ার ধা’র দুনিয়াতেই শো’ধ হয়ে যায়, আল্লাহ আপনাকেও দেখছেন আর আমাকেও। আমার প্রতি আজ হওয়া এই অ’ন্যা’য়, অ’বি’চা’রে’র শো’ধ আমি নিতে পারলাম না ঠিকই কিন্তু একদিন এমন আসবে যখন আপনি আমার থেকেও চ’র’ম অ’স’হা’য় হয়ে পড়বেন। হ’তা’শা, আর ক’রু’ণ মৃ’ত্যু য’ন্ত্র’ণা ছাড়া কিছু দেখবেন না আপনার চারপাশে। “”
এতোটুকু বলে জাবেদ ইসলাম সোফার পাশে থাকা টি-টেবিলের কাছে এগিয়ে গিয়ে বসেন, টেবিলের উপর রাখা ছিলো কন্ট্রাক্ট পেপারটি, এই পেপারে সাইন করা যেন তার শরীর থেকে তার আ’ত্না’কে বের করে নেওয়ার সমতুল্য। এতোসময় ধরে চোখে জমে থাকা নোনাজল গুলো গড়িয়ে পড়লো পেপারটির উপর, কাঁপা কাঁপা হাতে সাইন করে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র টেবিলের উপর থেকে পেপারটি নিজের হাতে উঠিয়ে নিয়ে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হতে বললেন…
“” দ্রুত এই মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করাও, চিকিৎসার যেনো কোনো ত্রু’টি না হয়। “”
বলেই ইসলাম মন্ঞ্জিল থেকে বেরিয়ে এসে নিজের বি.এম.ডব্লিউ গাড়িতে উঠে স্থান ত্য’গ করে তীব্র।
তীব্রের চলে যাওয়ার পরপরই ওর লোকেরা জাবেদ ইসলামের মেয়েকে নিয়ে সিটি হাসপাতালে এনে ভর্তি করিয়ে দেন। জাবেদ ইসলাম ও সঙ্গে এসেছেন, অপারেশন থিয়েটরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাকে। অ.টি এর বাহিরে থাকা চেয়ারে বসে মাথার দুপাশে দুহাত রেখে নিরব ভাবে চোখের পানি ফেলছেন জাবেদ ইসলাম।
————————-
বড় বড় ম’ন্ত্রী-মি’নি’স্টা’র’রা নিজেদের পাওয়ার খা’টি’য়ে যখন কার্য হা’সি’ল করতে সক্ষম হন না। তখন তীব্রের সাথে তারা যোগাযোগ করেন, মো’টা অং’কে’র টাকার বিনিময়ে তীব্রের সাথে ডি’ল করেন৷ বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির লি’ডা’র’শি’প এ থাকা ব্যক্তিটিকে মৃ’ত্যু ভ’য় দেখিয়ে যেনো সেই কোম্পানি তাদের হাতে তুলে দেয় তীব্র। মা’ফি’য়া কিং হওয়ায় তীব্রকে শহরের আনাচে-কানাচেতে থাকা সকল মানুষই এক নামে চিনতো।
তাদের সকলের মুখে মুখে ছিলো তীব্রের তীক্ষ্ণ নজর যে কোম্পানি বা যার উপর পড়বে তার ধ্বং’স কেও আটকাতে সক্ষম হবে না। বেঁচে থাকার ভ’য়ে আ’প’শে নিজের কোম্পানি যদি তীব্রের হাতে তুলে না দেয় তাহলে ক’রু’ণ মৃ’ত্যু দিয়ে হলেও সেই কাজ তীব্র হা’সি’ল করেই ছাড়ে। ভালো-খা’রা’প বিবেচনা করে না কখনও, শুধু টাকা দ্বারা সবকিছু বিচার করে। যে কাজের জন্য যতো বেশি মোটা অং’কে’র টাকা তীব্রকে দেওয়া হবে সে কাজ ততো দ্রুত শে’ষ করবে তীব্র।
জাবেদ ইসলাম খুব দ্রুতই সৎ ভাবে পরিশ্রম করে, বুদ্ধি খা’টি’য়ে শহরের না’মি-দা’মি লোকেদের টে’ক্কা মে’রে ট’পে নিজের কোম্পানিকে দা’ড় করিয়েছিলেন। এ নিয়ে জাবেদ ইসলামের প্রতি ঈ’র্ষা’ন্বি’ত ছিলেন শহরের বাকি কোম্পানির CEO রা, ধাপে ধাপে জাবেদ ইসলাম তার কোম্পানিকে ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিকল্পনা করতে শুরু করলে বাকিরা তার চ’র’ম শ’ত্রু’তে পরিণত হয়ে যায়। পরিস্থিতি দিন’কে দিন হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে দেখে বাকি কোম্পানির CEO এর মাঝে একজন যিনি ছিলেন জাবেদ ইসলাম এর কোম্পানির পরের স্থানে তিনি টপ ১ এ আসার লো’ভে তীব্রের সাথে চু’ক্তি ব’দ্ধ হন।
তীব্র যদি জাবেদ ইসলামের কোম্পানিকে তার নামে করে দিতে পারে তাহলে তিনি তীব্রকে নিজের কোম্পানি থেকে ৭০% শে’য়া’র প্রতিমাসে দিয়ে দিবেন। তীব্র ও রাজি হয়ে যায় চু’ক্তি’তে, পরবর্তীতে পরিকল্পনা করে জাবেদ ইসলামের বাড়িতে এ’ট্যা’ক করবে নিজের লোকদের সাথে নিয়ে। তীব্র খো’জ নিয়ে জেনেছে জাবেদ ইসলাম ভিষণ সৎ স্বভাবের লোক, তাই তীব্র এতোটুকু বুঝতে পেরেছে জাবেদ ইসলাম আ’প’শে তার কোম্পানি তীব্রের হাতে তু’লে দিবেন না। কিন্তু তীব্র যেহেতু একবার চু’ক্তি ব’দ্ধ হয়েছে সেহেতু যে-কোনো মূ’ল্যে সে এই কোম্পানি হা’তি’য়ে নিবেই নিবে। আর ঠিক তেমনটাই হলো, তীব্র ওর হা’র্ট’লে’স স্বভাব দেখিয়ে জাবেদ ইসলামের থেকে তার কোম্পানি হা’তি’য়ে নিয়ে চু’ক্তি সম্পন্ন করলো।
#চলবে…..