#মেঘফুল_ফুটলো_মনে
#পর্ব – ৮
#লেখনিতে – আবরার আহমেদ শুভ্র
–এই চিরকুটের মানে কি সারাহ? তুইও বা এই কাজটা করলি কেন? ফুয়াদ ভাই যদি জানতে পারে একবার তাহলে বুঝতে পারছিস কি হবে?
তানজিমের কথা শুনে মুখটিপে হাসলো সারাহ। সারাহকে হাসতে থেকে কপাল খানিকটা কুঁচকে গেলো তানজিমের। বিরক্ত হয়ে সে বলে উঠল,
–এমন পাগলের মতো ভেটকি মারতেছস কেন? যেটা বলছি সেটার উত্তর দে না।
–কি আর করবে? বড়জোড় কয়েকটা কথা শোনাবে! তাও মোটিভেশনাল গালিবাক্য! তা নাহলে কয়েকটা চড়!
আর সেটা শুনতে এতো তাড়াহুড়ো করবার কি আছে? আজিব! আচ্ছা বলছি তাহলে শোন, ফুয়াদ ভাই চিটাগাং এ আসবে সেটা আম্মুর কাছ থেকে কয়েকদিন আগেই শোনেছিলাম আমি। তিনি কেউ একজনকে ভালোবাসেন! অনেকবেশি ভালোবাসেন হয়তো! আর হয়তো সে তুই কিংবা অন্য কেউ হতে পারে। এখন সে করে হতে পারে সেটা তো জানা প্রয়োজন আমার এজ এ্যা কাজিন হিসেবে! কিন্তু আমি এটাও শুনেছি তিনি তাকে তিনি কেশবতী বলে সম্মোধন করেন। যেটা স্পষ্টত তোর কাছে পার্সেলে আসা চিরকুটটাতে! আর তাই তার সেই কেশবতীটাকে সেটাই জানতে এই কাজটা করলাম বুদ্ধি করে। বেসিক্যালি একটা জিনিস কিন্তু বুঝতি পারছি না, সেটা হলো তিনি তোর প্রতি এতো সেনসিটিভ কেন? অনেক আগে থেকেই দেখতাম তিনি অন্য বিষয়ে হেলাফেলা করলেও তোর বিষয়ে যথেষ্ট কঠোর ছিলেন। এখন সেই ব্যক্তি অর্থাৎ তোর কাছে পাঠানো স্ট্রেঞ্জার আর ফুয়াদ ভাই কি একজনই নাকি ভিন্ন কেউ সেটা জানতেই এই প্লানিং। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মরবে ব্যাস।
সারাহ-র কথা শোনে চোখ বড়বড় হয়ে গেলো তানজিমের। এসব কি বলছে সারাহ সেটার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না সে। সবটাই তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ফুয়াদ কেউ একজনকে ভালোবাসে সেটা শুনে তার মনটা কেমন যেন করছে। লাগছে কেউ যেন ছুরি দিয়ে ক্ষত করছে তার হৃদপিণ্ডটা। যথাসম্ভব সে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটা সে কোনমতেই পারছেনা। কেমন যেন অস্থির লাগছে তার। মনে একরকম তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। তানজিমের এমন অস্থিরতা দেখে সারাহ জিজ্ঞেস করে বসল,
–কি হয়েছে তানজিম! এমন করছিস কেন তুই? শরীর খারাপ করছে নাকি?
–না সারাহ! আ’ম ওকে।
–তাহলে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? এনিথিং র্যং? বল না?
–তেমন কিছু না। এই এমনি গরম লাগছে তাই।
–হাউ ফানি দোস্ত! মিথ্যে বলছিস আমার সাথে? নিশ্চয় তোর ভেতর কিছুই তো চলছে! বল না কি হয়েছে! যাক না বললে নাই। আর এই এসির ভেতরে তোর গরম লাগছে? আমার তো ঠান্ডায় গা জমে যাচ্ছে।
–এবার দুটো চড় মেরে গা গরম করে দিবো নাকি তোর?
হঠাৎ করে ফুয়াদের এমন কথায় চমকে উঠলো দুজনেই। সারাহ এবার একটা শুকনো ঢুক গিলে ফুয়াদের দিকে তাকালো। ফুয়াদ রক্তচক্ষু নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এতে আরও ভয় পেয়ে গেলো সারাহ। ফুয়াদ এবার দাঁতে দাত চেপে বলে উঠল,
–এসব কেন করেছিস সারাহ?
–ন্ ন্ না মানে ভাইয়া আমি তো কিছুই করিনি।
–ওহ আই সি! তুই তাহলে একদম ইনোসেন্ট গার্ল তাই তো? ওকে ওয়েট এ সেকেন্ড! … বলে পিছন ফিরে সেই ছেলেটিকে ইশারায় তাদের দিকে আসতে বললো৷
এবার ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে শুরু করলো সে। আর মনেমনে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছে যেন এই যাত্রায় তাকে বাঁচিয়ে দেয়। তার ভাবনার মাঝেই ছেলেটি তাদের সামনে এসে উপস্থিত হলো। ফুয়াদ তাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
–এবার কি আর কোনো প্রমাণ দিতে হবে মিস সারাহ?
–আ্ আসলে ভ্ ভাইয়া ভুল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারছিলাম আপনি কেউ একজনকে ভালোবাসেন। আর সেই মেয়েটা কে সেটা জানতেই এই কাজটা করলাম। আপনার কাজিন হিসেবে তো আমাদের জানার রাইট আছে না? তাই!
ফুয়াদ এবার ছেলেটিকে চলে যেতে ইশারা করলো। তারপরে দুহাত ভাজ করে একটু এগিয়ে গিয়ে তাদের সামনে গিয়ে বসল। তারপর চক্ষুদ্বয় ছোটছোট করে বলে উঠল,
–ওমা তাই নাকি? রাইট আছে তোদের? তো জানতে পারলি কে সেই মেয়েটা?
–না মানে। জানি না তো সে কে!
–যেই হোক না কেন সেটা জানার প্রয়োজন নেই তোদের। সোজা একটা কথা শোনে রাখ, আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। হা তাকে আমি কেশবতী বলেই ডাকি। আর কিছু জানার আছে? সো এখন এসব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগ দে। সামনে এক্সাম শুরু হবে।
মাথা নেড়ে সায় দিলো তারা। তানজিম এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তার ফুয়াদ ভাই কেউ একজনকে ভালোবাসে সেটা শুনে তার কেন যেন কোথাও শূন্য শূন্য লাগছে। কেমন ফাঁকা লাগছে তার চারদিকটা। কেন লাগছে এমন সেটার ডেফিনিশন সে নিজেও জানে নাহ্।
______
কয়েকদিন ধরে তানিম আর অথৈয়ের সম্পর্কটা বেশ অবনতির দিকেই যাচ্ছে। এখন খুব একটা জরুরি ছাড়া কেউ কারো সাথে কথা বলে না। বিষয়টা তানিমের মা নয়না খেয়াল করেছে। কিন্তু সংসারে অশান্তিকে ভয় পেয়ে এতোদিন কিছু না বলেন নি। এরই মধ্যে সুসংবাদ এলো রওশন প্যালেসে। তাদের বড় নাতির বউ অর্থাৎ তানিমের বউ মা হতে চলেছে। তাই নয়না বেগম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি নিজেই আজ ছেলের সাথে কথা বলবেন এই বিষয়ে। বাবা হওয়ার কথা শোনে মনে মনে কিছুটা খুশি হলেও কেমন যেন খাপছাড়া লাগছে তানিমের। সে আজ হারে হারে টের পাচ্ছে তার জীবনে তানজিমের অনুপস্থিতি! আজ সে নিজেই নিজের ভাগ্যের কাছে অসহায়! সে যদি সেদিন তানজিমের কথা শুনতো তাহলে হয়তো তার বাবা হওয়ার আমেজটা আজ অন্যরকমই হতো। তার ধ্যান ভাঙলো মায়ের ডাকে,
–এখানে এতো রাতে একা দাঁড়িয়ে কি করছিস বাবু? ঘরে বউ একলা আর তুই এখানে দাড়িয়ে আছিস অকর্মণ্যের মতো?
তানিমের মা তানিমকে বাবু বলেই ডাকেন। মায়ের কথায় মাথা নিচু করে রইলো তানিম। বিষয়টা তার মা নয়না বেগম বুঝতে পারলো,
–কি হয়েছে বাবু? কয়েকদিন ধরে দেখছি তুই কেমন যেন হয়ে গেছিস? অথৈ বউমা আর তোর মাঝে তেমন কোনো কথা হয় না, যেমনটা একজন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে বলে।
–আসলে মাম্মা তেমন কিছুই না।
–তুই কি আমাকে শিখাচ্ছিস বাবু? আমি তোর মা, আর এই সময়টা আমিও পার করে এসেছি। তাই আমাকে এই বিষয়ে আবোলতাবোল বুঝাতে চাইলেও ফলাফল শূন্য। তুই কি জানিস যে সময় একজন স্বামীর প্রয়োজন তার স্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো, তাকে সময় দেয়া সেই সময় তুই তাকে এড়িয়ে চলছিস। এটা কি তার সাথে অন্যায় নয়? যদি তার কিছু হয়েই যায় সেদিন কি তুই নিজেকে ক্ষমা করতে চাইলেও করতে পারবি?
–মা আমি কি করবো বলো?
–কি করবো মানে কি? অথৈয়ের সাথে সময় কাটা। ওর কি লাগে না লাগে সেটা দেখবি্। সবসময় ওর ভালোলাগা না লাগার উপর খেয়াল রাখবি। একজন স্বামীর থেকে স্ত্রীর তো এটাই চাওয়া।
–কিন্তু মাঝে আমি তো তানজিমকে ভালোবাসি। আর অথৈকে চাই না, আমার তানজিমকে চা…. কথা শেষ করার আগেই তানিমের গালে সজোরে চড় মারলেন নয়না বেগম।
যে ছেলের গায়ে ছোট্ট থেকে কখনও একটা আচড় লাগতে দেননি আজ সেই ছেলেকে চড় মারলেন তিনি, রাগে গজগজ করতে করতে বলে উঠলেন,
–অমানুষ হিসেবে জন্ম দিয়েছি আমি তোকে! শেষপর্যন্ত তোর মুখ থেকে এসব শুনতে হলো আমায়? কেন তুই অথৈয়ের জীবনটা নষ্ট করলি? কেন বল? ওকে বিয়ে করার আগে বলিসনি কেন কথাটা?
–মা…
–চুপ, তোর ও-ই নোংরা মুখে না বলে ডাকবি না আমায়। বলে হনহনিয়ে চলে গেলেন তানিমের মা নয়না বেগম৷ আর তানিম অসহায় দৃষ্টিতে তার মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। শেষপর্যন্ত তার মাও তাকে ভুল বুঝলো।
#চলবে ~