#মেঘফুল_ফুটলো_মনে
#লেখনিতে- আবরার আহমেদ শুভ্র
~পর্ব- ০৫
.
পার্সেলে পাওয়া খামটি খুলে তাতে একটি চিরকুট পেলে তানজিম। সাথে তার একটা ছবি। যেন জীবন্ত লাগছে ওটাকে। খুলবে না ভাবলেও কি মনে করে খুলে ফেললো সেই চিরকুটটা। তাতে খুব সুন্দর করেই লেখা আছে,
প্রিয়তমা কেশবতী,
কেমন আছো জানতে চাইবো না, কারণ সেটা জানতে চাওয়া নিতান্তই বেমানান। আজ তোমায় কিছু বলতে চাই। শোনো, তোমায় আমি ভালোবাসি বলতে চাই না! জীবন চলার পথে অনেক কিছুই তো ভালো লাগে তাই না? যেমন ধরো- চাঁপা ফুল ফোটার শব্দহীন গন্ধ অথবা বসন্তোৎসবের সময়ে শালবীথিতে শালফুলের দৃশ্যমান গন্ধ কিংবা মধুপূর্ণিমা রাতের মধুমালতী এবং রজনীগন্ধার মনোহরণকারী গন্ধ কার না ভালো লাগে! সকলে তাতে সমান ভাগ! সমান খুশি! সে কোনো বিশেষ কারো নয়! কিন্তু তুমি যে আমার জীবন কাননের মধু মালতী! তোমার সুভাস যে শুধুই আমার জন্য! এ সুভাস তো অন্য কারো জন্য নয় কেশবতী । আমি জানি কখন তুমি পুষ্পিত হও! তুমি কি জানো কোন সৌরভে আমি আকুল হই? তুমি নিজেই জানে না তোমার ঐ দুটি পাপড়ির নজর কাড়া সৌন্দর্য্যে আমি পাগলপার হয়ে যায়! তুমি কি জানো, তোমার মনোহরণ করা সৌন্দর্য্যে আমি বিমোহিত? সবচেয়ে বড় কথা হলো, তুমি কি বুঝবে আমার না বলা কথাগুলো? তুমি কি বুঝবে আমার না বলা আকাঙ্ক্ষাগুলো? কিন্তু, এই যে নিঃশর্তভাবে তোমার সবকিছুই আমার ভালো লাগে! এটাকে কি বলে আমি জানি না হয়তো ভালোলাগা! না হয় ভালোবাসা! লোকে যদি এটাকে ভালোবাসা বলে, তাহলে আমি তোমাকে ভালোবাসি! ভালোলাগা আর ভালোবাসা খুব কাছাকাছি দুটো শব্দ। ভালোলাগাতে অনুভূতি থাকে না তবে ভালোবাসাতে থাকে আবেগ-অনুভূতির সম্মীলন। ভালোলাগাতে হারানোর মতো কিছু নেই তবে ভালোবাসাতে হারানোর অনেক কিছুই থাকে। ভালোলাগাতে প্রেম থাকে না কিন্তু প্রেম ছাড়া ভালোবাসা কল্পনাতীত। হা, আমায় প্রতিটা মুহুর্তেই তোমায় হারানোর ভয় আঁকড়ে ধরে। সবসময় তোমায় কাছে রাখতে বড্ড ইচ্ছে করে কিন্তু অদৃশ্য বাধঁন সেটা করতে দেয় না। বড্ড ভালোবাসি তোমায় প্রিয়সি। বড্ড বেশিই! তোমার প্রতি অকৃত্রিম ভালোলাগা , আর এই ভালোলাগাই আমার হৃদয়ের সবটুকুই দখল করে তীব্র থেকে তীব্রতর এক অনুভূতির জানান দেয়, যে অনুভূতিকে অগ্রাহ্য করা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব! বলতে পারো এর নাম কি? কি এই অনুভূতি! হা যেটা ভাবছো সেটাই! ভালোলাগা আর ভালোবাসার এক সম্মীলন অব্যক্ত অনুভূতি! ভালোবাসি প্রিয়! খুব বেশিই! যতোটা বাসলে তোমায় পাওয়া যাবে আপন করে ঠিক তার চেয়েও বেশি। সবশেষে একটা কথায়ই বলবো, ‘ভালোবাসি আমার এই কেশবতীকে ! অনেক বেশিই ভালোবাসি ঠিক যা ভাষায় প্রকাশ করা আমার কাছে দুষ্কর কর্ম সাধনের সমান!’
ইতি
স্ট্রেঞ্জার
সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এই চিরকুটটা পড়ে বেশ ভালো লাগল। মনে মনে ভাবল, তবে যে মানুষটি এই চিঠিটা দিয়েছে সে আসলেই সুন্দর। চিরকুটটা পড়ে তার মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো। কিন্তু কে দিতে পারে এই চিঠি? পরক্ষণেই মনে পড়ল সারাহ্দের বাসায় সেদিনের বলা ধ্রুব আর ফুয়াদের বলা কথাগুলো।
– আচ্ছা এই চিরকুটটা ফুয়াদ ভাই দেয়নি তো? নাকি অন্য কেউ!দুর হয়তো ভুল করে কারো পার্সেল আমার নামেই চলে আসছে। কিন্তু ভুল করে পার্সেল আসলো মানলাম কিন্তু আমার এই ছবি সে পেলো কোথায়? কিভাবে পেলো সে এই ছবিটা? নাকি যে এই চিরকুটটা দিলো সে আমার খুব পরিচিত কেউ?
এমন শতশত ভাবনা জমা হলো তার মনে। গভীর চিন্তায় মগ্ন হলো সে। হঠাৎ, তার ভাবনার মাঝে ব্যাঘাত ঘটিয়ে দিলো সারাহ-র কল। একরাশ বিরক্ত নিয়েই রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সারাহ্ বলে উঠল,
– কিরে এমন কি চিন্তায় বিভোর হলি যে আমার ছয়টা কলের একটাও রিসিভ করতে পারলি না?
– ধ্রুব ভাইকে আমার জামাই হিসেবে পেলে কেমন হবে সেটার চিন্তায় বিভোর হয়ে আছি, তাই তোর কল রিসিভ করতে পারি নাই।
– থাপ্পড় একটাও বাইরে পরবে না। সব তোর মুখের উপরেই ফিক্সড করবো কুত্তী।
– তাইলে এমন কথা বলস কেন? আমি আছি আমার চিন্তায়। কি ঝামেলায় পড়ছি জানোস তুই?
– ঝামেলা? ঝামেলা আর তুই? ইম্পসিবল! আচ্ছা বলেন দেখি আপনার ঝামেলাটা কি?
সবটাই সারাহ্ কে বলার পরে সেও আশ্চর্য হয়ে গেলো।
– কি বলছিস তুই এসব? মাথা কি তোর খারাপ হয়ে গেছো বাজে চিন্তাভাবনায়? ফুয়াদ ভাই কেন তোকে চিরকুট আর শাড়ি পাঠাবে? তাও আবার পার্সেলে করে? ব্যাপারটায় বেশ ঝটকা লাগছে আমার।
– কিন্তু তার নাহলে সেদিন তোদের বাসায় ধ্রুব ভাই আর ফুয়াদ ভাইয়ার বলা কয়েকটা কথা আর আজকের চিরকুটের কয়েকটা শব্দের বেশ মিল পাচ্ছি রে।
– আচ্ছা দেখি দুয়ে দুয়ে চার কেমনে মিলে। বাদদে এসব চিন্তা। এখন জাস্ট চিল মুডে থাক। সবটাই দেখবি ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
– হুহ্, বাকি কথা পড়ে বলবো৷ রাখছি৷.. বলে কল কেটে দিল তানজিম।
বিছানায় শোয়া ভাবছে পার্সেলে পাওয়া চিরকুটের কথা। তারপরে উঠে স্বযত্নে চিরকুটটি নিজের আলমিরাতে রেখে দিলো।
.🌸
পূব আকাশে সূর্যের আলোকেও হার মানায় বিকিবিলে শতসহস্র রক্তিম লাল শাপলা। প্রথম দেখায় মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে আসবে সুন্দর! যেন ফুলে ফুলে সাজানো হাওরের লালগালিচা। গাড়ীতে বসে রাজশাহীর প্রকৃতি উপভোগ করছে তানজিম। সে মনের অজান্তেই গুনগুনিয়ে উঠলো, ‘তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল, নাকি আমার মন…’।
– এই গুনগুন করে কি বলছিস রে আপু পাগলের মতো ?
বোনের দিকে বিরক্ত মাখা চাহনি নিক্ষেপ করে,
– তোর মুন্ডি আমার মুল্লুক। আমাকে কি তোর পাগল মনে হয়?
– গুনগুন করছিস তাই ভাবলাম হয়তো তুই পাগল হয়ে গেছোস কিনা!
– তুই পাগল তোর চৌদ্দগুষ্টি, চৌদ্দ’র দুই গুণ আটাশ গুষ্টি পাগল।
– আমার চৌদ্দগুষ্টির মধ্যে থেকে তুই কি বাইরে?
দুই বোনের ঝগড়া দেখে শাসিয়ে উঠলো তাদের মা,
– এই তোরা কি শুরু করলি বলতো? এত্তো বড় হয়েছিস এখনও ছেলেমানুষী করছিস। দেখ তোদের দুই বোনের ছোট তোদের ভাই। সেকি কোনো দুষ্টমি করছে? বড় হয়েছিস কিন্তু দুষ্টমি এখনো ছাড়িস নি?
– আম্মু তুমি গাড়ীতেও রেডিও বাজিয়ে দিয়েছো?… তাদের মা মেয়ের ঝগড়া করতে করতে দুপুরে খানিক পরেই গাড়ী গিয়ে ফুয়াদদের বাড়ীর সামনে থামলো৷ একে একে সবাই ভিতরে প্রবেশ করলো। তাদের আসার খবর পেয়ে দূর থেকে সেই চক্ষুজোড়া আজ মন ভরে তার প্রেয়সীকে দেখায় ব্যস্ত হয়ে গেলো।
____
কিছুক্ষণ আগেই চেম্বার থেকে ফিরেছে ফুয়াদ । আজ খুব একটা ভীড় নেই বলে তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরেছে সে্ । কিন্তু আসা মাত্রই মায়ের কাছে শোনালো আজ বাড়ীতে তার মামারা আর খালারা স্ব-পরিবারে তাদের বাড়ী বাড়ীতে আসছেন কয়েকটি দিন বেড়াতে । সাথে তার বোন ফাইজার শ্বশুড়বাড়ীর লোকজনও আসছে । কেন যেন খুশিতে মন ভরে গেলো তার । সে আজ তার কেশবতীকে দেখবে । মন ভরেই দেখবে সে। হাজার বছরের তৃষ্ণা সে মেটাবে তার প্রেয়সীকে দেখে। তাই সে তারা আসার আগেই দ্রুত শাওয়ার নিয়ে নিলো । তারপরে সে ফাইজার শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে খাবার সার্ভে হাত লাগাতে যাবে এমন সময় বাড়ীর বাইরে গাড়ীর আওয়াজ শোনে বুঝে নিলো যে তারা এসেছে। ভেতরে সর্বপ্রথম তানজিমই প্রবেশ করলো। তার দিকে একধ্যানেই তাকিয়ে রইল সে। আর আনমনে গেয়ে উঠল ,
– কেন লাগে শূন্য শূন্য বলো
তোমায় ছাড়া এত
তুমি কি তা বলতে পারো?
তুমিও কি কাজের ফাঁকে
মনে করো আমার নাম
আমার মতো করে তোমায়
চাবে না কেউ বলে দিলাম….
~ চলবে …