মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ৪

0
964

#মেঘফুল_ফুটলো_মনে
#লেখনিতে- আবরার আহমেদ শুভ্র
~পর্ব- ০৪

.

– ফুয়াদ ভাই আপনি এখানে? কখন এলেন?

সারাহ-র কণ্ঠ শোনে ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে একপলক তাকালো সেদিকে। স্ফীত হাসলো সে। সারাহ-র সাথে তানজিমও আছে। তানজিমও একপলক তাকালো ফুয়াদের দিকে। খুব অদ্ভুত দেখতে লাগছে তাকে আজ। সেটা দেখে মনে মনে হলকা হাসলো ফুয়াদ।
সারাহ-র কথায় খানিকটা ভ্রুকুচঁকে গেলো ফুয়াদের,

– হা, হলো তো কিছুক্ষণ। তা তোর বার্থডেতে আসবো না? আমাকে কি তোর ইরেস্পন্সিবল বলে মনে হয়?

– না না, তা হবে কেন? এই গত ৫ বছর ধরে তো একটিবার ও কি এসেছিলে? তাই বললাম আরকি। বাই দ্যা ওয়ে, খালা মনি আসলো না?

ফুয়াদ জানে আর কিছু বললেই সে কথা বাড়াবে এর চেয়ে ব্যপারটা সংক্ষেপে ক্লোসড করে দিল সে,
– না, মা ফাইজার শ্বশুর বাড়ি গেছে গতকাল।

-ওহ্। আচ্ছা তোমরা গল্প করো আমি আসছি।.. বলে সারাহ্ ভেতরের দিকে চলে এলো।

ফুয়াদ এতক্ষণ সারাহ্-র সাথে কথা বললেও তার চক্ষু তানজিমের দিকেই স্থির ছিল। তবে সেটা সবার অগোচরেই ছিলো। তানজিম এখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে যেমন সে সারাহ-র সাথে দাঁড়িয়ে ছিলো।

খানিকটা গলা খাঁকারি দিলো ফুয়াদ।
– এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন স্ট্যাচুর মতোন? সামনে চেয়ার আর সোফা দুটোই আছে। একটাতে বস।

ভদ্র মেয়ের মতো সোফায় বসে পড়ল সে। ফুয়াদ বুঝতে পারলো না যে মেয়ে সারাক্ষণ দুষ্টুমির মাঝে থাকে সেই মেয়ে কেমনে এখন এতো শান্ত সরল হয়ে গেলো!

– তানজু তুই কি আসলেই ঠিক আছিস? নাকি আমি চোখে নবমাশ্চর্য কিছু দেখছি?

ফুয়াদের কথা শোনে চোখ বড়বড় করে তাকালো তানজিম।

– আমি তো ঠিকই আছি ফুয়াদ ভাই। এখানে নবম আশ্চর্য দেখার কি আছে?

– আছে আছে, যে মেয়ে একমুহূর্তেও শান্তিতে থাকে না সেই মেয়ে কেমন করে এতক্ষণ সময় এতো শান্ত হয়ে বসে আছে! আশ্চর্যের বিষয় নেয় কি এটা?

– তুমি কিন্তু আমায় কটাক্ষ করছো ভাইয়া৷.. বলে ছোট বাচ্চার মতো রাগ করে মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল সে।

তানজিমের এহেন কান্ড দেখে শব্দ করে হেসে ফেললো ফুয়াদ। তানজিম আঁড়চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইল। আর মনে মনে বলল,

– ফুয়াদ ভাই এতো সুন্দর করে হাসে কেমনে? কি সুন্দর তার হাসিটা! যে তার বউ হবে সে নিশ্চয়ই খুব লাকী হবে! সব সময়ই এই সুন্দর হাসিটার সাক্ষী হবে সে! পরক্ষণেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সেই চিন্তা।

তাদের কথা হাসির মাঝেই প্রবেশ করলো ধ্রুব,
– হেই ব্রো! কি খবর?

ফুয়াদ তাকে দেখে খানিকটা হাসলো।

– আরে দুলাভাই যে? এই তো চলে৷ তোর খবর জিজ্ঞেস করলাম না। কারণ তুই এমনেও ভালো আছিস।

– হাতে ভালোই, তো তোর কেশবত… ধ্রুবকে বলতে না দিয়ে

– আরে এইসব থাক। বল তোর অফিস ব্যবসা কেমন চলে?

ধ্রবকে কথা বলতে না দেয়াটায় খানিকটা সন্দেহ হলো তানজিমের। তবে সে কিছু বললো না। কারণ, তাদের মাঝে সে নিতান্তই ছোট। ধ্রুবও সেখানে তানজিমের উপস্থিতি টের পেয়ে বলল,

– হাতে ভাই ভালোই চলে। তবে সারাহ্কে সময় দেয়া যায় না।

– টেক ইট ইজি ব্রাদার। সব কিছু ঠিকই হয়ে যাবে৷ আর সারাহ্ বেশ ভালো মেয়ে সে তোকে অবশ্যই বুঝবে।

– হুম। চল একটু ছাদে যায়।.. বলে তারা ছাদে চলে গেলো। আর সেখানে বসে তানজিম তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

সম্পর্কে ফুয়াদ, অথৈ আর সারাহ্ একে অন্যের খালাতো কাজিন। আর তানিম ও তানজিম একে অন্যের চাচাতো কাজিন। তানিম তানজিমের বড়চাচার ছেলে। এদিকে তনয়া হলো তানিমের ছোট বোন। তানজিমেরও একজন ছোট বোন আছে নাম তার তানভিন। সাথে একজন ভাইও আছে তিয়াশ৷ ফুয়াদ, ফাইজা আর সারাহ্ তানজিমের ফুফাতো কাজিন হয় সম্পর্কে। ফাইজা ফুয়াদের বড় বোন হয়৷ তবে তানিম আর ফুয়াদের মধ্যাকার ফুয়াদ তানিমের চেয়ে হাতে গুণা ১বছর ২৭ দিনের ছোট। তবে তার চলাফেরা তানিমের চেয়েও বেশ ভালো। আর ধ্রুব হলো ফুয়াদের বেস্টফ্রেন্ড।
_____ 🌸

কুয়াশাচ্ছন্ন পাতলা একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে ছাদের কার্নিশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে ফুয়াদ। আকাশের দিকে একমনে তাকিয়ে রয়েছে সে। কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে অথচ চাঁদটা থালির ন্যায় গোলাকার হয়ে কিরণ ছড়াচ্ছে চারদিকে। সে আপন মনে বলে উঠল,

– চাঁদ তুমি কত সুন্দর তাইতো চেয়ে থাকি একি মোর অপরাধ। চাঁদের আলোর মত লিনোভো তোমার দুটি নয়ন খোঁজে আছে ঘন কুয়াশায়। মধ্যরাতে পূর্ণিমার পৃথিবী যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, আমি তখন একলা ছাদে চুপটি করে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন! নিঃশব্দ রাত জোছনা মাখি মুঠো ভরে, তবুও মনে আমার ভীষন উদ্বিগ্ন, ভালোবাসায় গাঁথা এই হৃদয়ের পাতা তোমার অবহেলার আঁচড়ে যে শতচ্ছিন্ন!.. বলে ফোনের স্ক্রিনে জ্বলতে থাকা ছবিটার দিকে একপলক তাকিয়ে স্বযত্নে বুকে জড়িয়ে নিলো সেটিকে।
_____ 🌸

– তানজু, রেডি হয়ে নেই আমরা রাজশাহী যাবো তোর ফুফির বাসায়। আর তোর বাবা তোকে ডেকেছে কেন দেখে আয়।

– যাচ্ছি, কিন্তু হঠাৎ রাজশাহী কেন যাবো? কোনো ওকেশনে নাকি?

– ওতো কিছু আমি জানি না বাপু। তোর বড়চাচা কাল রাতে খাওয়ার টেবিলে বলছিলো শুনলি না?

– শোনি নাই। আচ্ছা তানভিন কোথায়? কোথাও দেখছি না যে ওকে?

– আছে হয়তো কোথাও। এখন তুই কি যাবি নাকি আমার সাথে বকবক করবি?

– যাচ্ছি যাচ্ছি । এতো রাগো কেন? তুমি কি মা নাকি অন্য কিছু?

– অন্যকিছু, যা এবার। আমার কাজ আছে৷.. বলে বেড়িয়ে গেলেন তানজিমের মা। চোখ ছোট ছোট করে তার মায়ের গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইল সে।

.

বাবার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তানজিম। এই একজন মানুষকে সে ভীষণ রকম ভয় পায়৷ তবে বেশ ভালোও বাসে সে।

– আব্বু আসবো?

র‌্যাকিং চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন তানজিমের বাবা নাবিল আরমান। মেয়ের আওয়াজ শোনে সেদিকে তাকিয়ে বললেন,
– পারমিশন নেয়ার প্রয়োজন নেই মা। বসো এখানে।

– আমায় ডেকেছিলে আব্বু?

– হা, ডেকেছিলাম। তোমার পড়ালেখা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে। সময় হবে তোমার?

– জ্বি আব্বু, বলো তুমি।

– আগামী মাসে তোমার পরীক্ষা। তোমার স্যার ফোন করেছিলেন। তিনি বরাবরের মতোই তোমাকে প্রথম দেখতে চাই।

– জ্বি আব্বু আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো।

– বেশ, যাও। আর হে, জলদি রেডি হয়ে নাও আমরা কিন্তু রাজশাহীর উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণ পর-ই বেরোবো৷

– আচ্ছা, আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।.. বলে তার বাবার রুম থেকে নিজের রুমে চলে এলো সে।

তানজিমের ছোট বোন তানভিন বিছানায় বসে আছে। মুখে তার চিন্তাভাব। তাকে চিন্তিত দেখে খানিকটা ভ্রু কুঁচকালো তানজিম।

– এতো কি নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে তোর?

হঠাৎ করে রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চমকে উঠলো সে।
– ওহ তুই।

– আজিব, আমার রুমে আমি নয় তো কি তুই থাকবি? আর এতো চিন্তা করা হচ্ছে কি নিয়ে?

– তোর রুমে এলাম ঐ পার্সেলটা নিয়ে। তুই কি কোনো কিছু অর্ডার করেছিলি?

– না তো! আচ্ছা এদিকে দে আমায়। আর তুই যা এবার। আমার কাজ আছে।

– আচ্ছা।.. বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো তানভিন।

আর তানজিম দরজাটা অফ করে বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে কাগজে মোড়ানো একটা কিছু একটা৷ খোলার পরে হঠাৎ দেখতে পেলো একটা শাড়ী সাথে ম্যাচ করা প্রসাধনী। অবাক হলো সে।
– মাই গুডনেস! কে দিয়েছে এসব?

সামান্য হাতড়ানোর পরে একটা খামে ভরা চিঠিও পেলো। এবার অবাক হলো সে। কিন্তু পরে যেটা পেলো তাতে যেন অবাকের শেষপ্রান্তে উপস্থিত হলো সে। তার একটি ফটোগ্রাফি। একদমই জীবন্ত লাগছে সেটিকে। এটি সেই দিনের ছবি যেদিন সে আর সারাহ্ সারাহ্দের বাসায় ছিলো জন্মদিনের সময়। আর খামের ওপর যেটা লেখা আছে সেটা তানজিমের মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে এলো,

~ ‘কেশবতী’

~ চলবে …

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here