#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৬১
#WriterঃMousumi_Akter.
মানুষ ভালোবাসার মানুষকে যেমন ভালোবাসে তেমন ভালোবাসার বিপরীতে ভ**য়ও পায় খুব। হারানোর ভ**য় টা-ই সব থেকে বড়ো ভ**য়। আজ সেই ভ**য়টা আমি অনুভব করতে পারছি। আজ যদি আরিয়ান ভাই-এর জন্য রোশান স্যার আমাকে ভুল বোঝেন, দূরে ঠেলে দেন, কী করব আমি! চিন্তায় পা*গ*ল হওয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে চোখে পানি চলে এলো।আরিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,
‘যদি আপনার জন্য উনাকে হারাতে হয় খু** ন ক * রে ফে ল ব আপনাকে আমি।’
আরিয়ান ভাই পায়ের উপর পা তুলে পা দোলাচ্ছেন আর আমার দিকে অভিজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। বেশ অবাক হয়েই বললেন,
‘এত্ত উইকনেস রোশানের প্রতি!’
‘আবার জিজ্ঞেসও করছেন? জাস্ট বের হন।’
‘আমার থেকেও কী রোশানের প্রতি বেশি উইক তুমি?’
‘আপনার প্রতি কীসের উইকনেস আমার?
রোশান আমার স্বামী ,আমার প্রেম, আমার ভালোবাসা।’
‘আমার প্রতি উইকনেস নেই বলছ?’
কাট কাট গলায় বলে দিলাম, ‘না নেই।’
‘সেটা বুঝতে পারছি। বাট আগে তো ছিল।’
‘আগে ছিল মানে! কী ছিল? আর আপনি অতীত টেনে ধরে আমার বাসায় চলে আসবেন?’
‘বাসায় না এলে তোমাক খুঁজে পাওয়া সম্ভবপর হচ্ছিল না।’
‘আমাকে খুঁজছেনই বা কেন?’
‘ভুল করেছিলাম সারাহ! মাফ চাইতে…..’
‘আপনার মাফ চাওয়াতে আমার উপর কি কোনো প্রভাব ফেলবে আরিয়ান ভাই?’
‘জানি ফেলবে না। অন্তত আমার মনটা তো হালকা হবে। নিজের ভালো লাগবে।জীবনে হীরা রেখে কাঁচ বেছে নিয়েছিলাম বলে আজ কপালে এত কষ্ট।’
তাচ্ছিল্যর সুরে হেসে বললাম,
‘আর আল্লাহ নিজে আমার জীবন থেকে কাঁচ সরিয়ে হীরা এনে দিয়েছেন। লাখ লাখ শুকরিয়া জানাই তাঁর প্রতি। তাই এখন আপনি আসতে পারেন। উনি চলে এসেছেন। আপনি কি বুঝতেছেন না উনি আপনার আর আমার বিষয় জানলে কষ্ট পাবেন?’
‘রোশানের প্রতি বিশ্বাস এত নড়বড়ে কেন?’
‘কোনো নড়বড়ে না। কারোর-ই ভালো লাগে না নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য কাউকে জড়িয়ে কিছু শুনতে।’
‘আচ্ছা আসুক তোমার স্বামী। ভুল বুঝলে তো আমারই ভালো। তোমাকে নিয়ে পালাতে পারব।’
‘ভাবলেন কী করে আমি আপনার সাথে পালাব?’
এরই মাঝে রোশান স্যার হাতে হেলমেট নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। আমার হৃৎপিণ্ড থরথর করে কাঁপছে। আমি কী বলব উনাকে! আরিয়ান ভাই উনার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। আর উনিও বেশ অবাক হয়ে আরিয়ান ভাই-এর দিকে তাকালেন। রোশান স্যার-এর চোখ-মুখে কেমন একটা কালো ছায়া পড়েছে। মনে হচ্ছে আরিয়ানকে দেখে উনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। আরিয়ান ভাই উনাকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে মিষ্টি সুরে বলল,
‘হেই ব্রো।’
‘তুই এখানে!’
‘আসব না! এলাম বোনের বাড়ি, বন্ধুর বাড়ি ডাবল আত্মীয়।’
দুজনে হ্যান্ডশেক করল। উনি আমার দিকে তাকালেন। আমি অনিচ্ছাকৃত হেসে বললাম,
‘আমার খালাত ভাই। আর আপনিও চিনেন?’
আরিয়ান ভাই বলল, ‘চিনে মানে, আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড আমাকে চিনবে না!’
‘ওহ, তাই বলুন, আপনারা পূর্ব পরিচিত।’
আরিয়ান ভাই বললেন, ‘ভাই আমি এসেছি ধরেই তোর বউ মানে–আমার খালাতো বোন বলছে, ‘বের হয়ে যান। আমার জামাই এসে আস্ত এক ব্যাটা মানুষ দেখলে ভুল বুঝবে।’ ও যত রে’গে যাচ্ছিল আমার তত ভালো লাগছিল। ইচ্ছাকৃত রাগিয়ে দিচ্ছিলাম। ইচ্ছা করেই বলিনি যে তার মিষ্টার হাজবেন্ড আমার বন্ধু।’
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি এভাবে কাঁপছ কেন? শরীর খারাপ করছে?’
‘না।’
তুমি তো ঠিক মতো কথাও বলতে পারছ না।গলাও কাপছে। কিন্তু কেন?’
‘জানি না, জ্বর আসবে কি না।’
‘আচ্ছা চলো, রুমে চলো।’
উনি আরিয়ান ভাই-এর দিকে তাকিয়ে স্বভাব সুলভ হেসে বললেন,
‘বস, আসছি।’
উনি আমার দুই বাহুতে হাত রেখে রুমে নিয়ে গেলেন। দরজা লাগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘কী হয়েছে? আরিয়ান কিছু বলেছে? তোমার চোখে-মুখে এত ভ”য় কেন? আর এইভাবে কাঁপছ কেন?’
আমি ফ্যাল ফ্যাল করে উনার দিকে তাকালাম। দু’চোখ ভরা পানি। বেসামাল ভাবে কেঁদে দিলাম। আমাকে কাঁদতে দেখে উনি বেশ অবাক হলেন। সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘বলো কী হয়েছে? আমাকে খুলে বলার চেষ্টা করো।’
‘আমাকে আপনি কখনো ছেড়ে দিবেন না তো? আমি তাহলে ম* রে*ই যাব।’
‘এসব কী কথা! আমি তোমাকে কেন ছেড়ে দিব?’
‘আই লাভ ইউ শ্যামসুন্দর পুরুষ। আমার জীবনে আগে পরে কেউ ছিল না, কেউ নেই।আপনি ছাড়া আর কেউ নেই আমার।আপনাকে আমি প্রচন্ড ভালবাসি। আমার উপর রাগ হলে আমাকে ম*রে যেতে বলবেন। আমি হাসি মুখে মেনে নিব। কিন্তু ছেড়ে যাবেন না। আমি সহ্য করতে পারব না।’
উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললেন,
‘এসব কেন বলছ?’
‘কেউ যদি আমার নামে ভুল ভাল বলে আপনি কিন্তু বিশ্বাস করবেন না।’
‘কে কী বলবে বলো তো।’
‘আরিয়ান ভাই এসেছে না? উনি অনেক কিছু বলতে পারে।’
‘কী বলবে সে? আর আমি তা ট্রাস্ট করবই বা কেন?’
‘যদি বলে ওর সাথে আমার রিলেশন ছিল।আসলে ছিল না কিন্তু।’
‘আচ্ছা কী ঘটনা বলো তো?’
‘আপনি ভুল বুঝবেন তাহলে।’
‘না, বুঝব না।’
আমাদের কাজিনদের মধ্যে আরিয়ান ভাই একটু বেশি সুদর্শন ছিল দেখতে। আমার খুব ভালো লাগত উনাকে। আমার কিশোরী মনে এক সময় ভীষণ তোলপাড় হয়েছিল উনার জন্য। আমার ওই ভালো লাগা ফ্যামিলির কেউ বুঝত কি না জানি না।হঠাৎ শুনি উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। খালা-খালু আর আম্মু-বাবা। আম্মুর ছেলে নেই বলে বোনের ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিল। দুই ফ্যামিলি ভীষণ খুশী ছিল এই বিয়ে নিয়ে। যাকে পছন্দ করি তার সাথে বিয়ে ঠিক, আনন্দে কয়েক রাত ঘুমোতে পারিনি আমি। খালা আমাকে হাতে একটা রিংও পরিয়েছিল।আমি তখন ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছি মাত্র।সেদিন আরিয়ান ভাইদের বাড়ি একটা অনুষ্ঠান ছিল। আরিয়ান ভাইয়ের বোনের ছেলে হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে আমরা গিয়েছিলাম। খালা আরিয়ান ভাইকে রুমে ডেকে বলেছিলেন,
‘আরিয়ান, বিদেশ যাওয়ার আগে কিন্তু বিয়েটা করে যেতে হবে।’
‘বিয়ে! এখনি আম্মা?’
‘হ্যাঁ, আমরা সারাহ’র সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।’
‘হোয়াট! সারাহ? সারাহ’র মতো বাচাল, ছটফটে, লেখাপড়ায় অমনোযোগী, ইমম্যাচিউরড একটা মেয়েকে আমি বিয়ে করব?’
‘এসব কী বলছ তুমি! সারাহ অনেক আদুরে মেয়ে তাই অমন করে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেছ? এত সুন্দর মেয়ে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
‘সুন্দর দিয়ে কী হবে আম্মা? সারাহ একটা পুচকে মেয়ে। তাছাড়া আমার কোনো দিক থেকে সারাহকে পছন্দ নয়। সারাহ’র কিছুই আমার পছন্দ নয়। কোনো মেয়ের মাঝে পড়ে ও? লাফালাফি, চিল্লাচিল্লি করে বেড়ায় সারাক্ষণ।’
‘আমি তোমার খালাম্মাকে কী বলব এখন? আমি আংটিও পরিয়েছি।’
‘আমার কাছে শুনবে না তুমি?’
‘কী শুনব? আমার পছন্দ সারাহকে। আমি সারাহকে-ই বউ বানাব।’
‘দেখো আম্মা, সারাহকে জাস্ট কাজিন হিসাবে ভালো লাগে। আমার রিলেশন আছে আম্মা। সে এখন ইউ.এস.এ আছে।’
‘বিদেশে থাকা মেয়েকে আমি কোনদিন এ বাড়ির বউ করব না।’
‘আম্মা ও বাংলাদেশি। ফ্যামিলির সাথে বিদেশ গিয়েছে।’
‘যার সাথে গেছে যাক। আমার কিছু জানার নেই। আমি সারাহকে চাই এ বাড়িতে। ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখেছিস মেয়েটা কত সুন্দর?’
‘আম্মা ডেইজিকে দেখলে তুমি বুঝতে কত সুন্দর।’
‘ওসব ডেইজি মেইজি আমি মেনে নিব না।আমার বোনের সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট হলে তোমাকে ত্যাজ্য করব।’
খালা আর আরিয়ান ভাই ব্যাপক ঝ’ গ’ ড়া করে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন। আর বাইরে এসেই দেখলেন দরজার পাশে আমি দাঁড়িয়ে আছি। আমার দিকে ক্রোধান্বিত চোখে তাকিয়ে হাত ধরে টেনে ছাদে নিয়ে গেলেন।
চলবে….