#তুমি_নামক_প্রশান্তি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_ছাব্বিশ
ড্রাইনিং টেবিলে থমথমে মুখে বসে আছে নীলাভ্র। চেহারাপানে দুশ্চিন্তার ছাপ। ভালোবাসার মানুষটাকে হারানোর ভয় ঝেঁকে বসেছে মস্তিস্কে। বুকের ভেতর মৃদু কম্পন হচ্ছে। অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। মুখ ফুটে প্রশ্ন করার ভাষা নেই। ভাষাহীন শব্দ গুলো গলায় বিঁধে আছে কা’টার মতো। নিরব দর্শকের মতো প্রশ্নোত্তর চোখে তাকিয়ে রইলো সীমার দিকে। কিছু বলার জন্য ঠোঁট নাড়ালো। সাহসের অভাবে দমে গেলো। যদি বিয়েতে বাঁধা দেয়? তখন কী হবে? বেলীকে নিয়ে এখনো কিসের সমস্যা? হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আচ্ছা নীলাভ্র কী বেলীকে হারানোর ভয়ে নিস্তব্ধ? না-কি মায়ের প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার সাহস পাচ্ছে না? হাত-পা কেমন যেন শীতল হয়ে আসছে! এমন হওয়ার কারণ কী? সব চিন্তা মাথা ঝাড়া দিয়ে ফেললো আপাতত। অস্পষ্ট, শান্ত, শীতল কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“বেলী ডিভোর্সি বলে তোমার এখনো সমস্যা রয়েছে, মা? ”
নীলাভ্রর প্রশ্ন শুনে সীমা আঁতকে উঠল। পরক্ষণেই হাসলো। তবে সামান্য। ঠোঁটের কোনে সেই হাসি। নীলাভ্র খেয়াল করলো কি-না কে জানে? ছেলের দিকে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তৃপ্ত স্বরে বলল,
“না বাবা! বেলীকে নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই।”
কথাটা শুনে নীলাভ্রর ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো। অদ্ভুত স্বরে পাল্টা প্রশ্ন করল,
“তাহলে বিয়ে করতে বারন করছ কেন?”
সীমা হাসলো। ঠোঁটের কোনের মৃদু হাসিটা চওড়া হলো। হয়তো এটা তৃপ্তির হাসি? ভীতিগ্রস্ত মুখটা হাস্যজ্বল হয়ে উঠল, মুহূর্তেই। নীলাভ্র থমকালো, হকচকালো। মুখপানে বিস্ময় হানা দিলো। বুঝার চেষ্টা করল। কিন্তু পারলো না। এমন ব্যবহারের মানে কী? মজা না-কি অন্য কিছু? প্রশ্নগুলো মস্তিষ্কে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। তবুও যেন উত্তর পেলো না। ছেলের বিস্ময় মাখা মুখ দেখে সীমা গম্ভীর ভাব করে বলল,
“বিয়ে করতে বারন করলাম? কবে? ”
নীলাভ্র এবার বিরক্ত হলো। তার মা তার সাথে মজা নিচ্ছে? এটা কী মজা করার বিষয়? একটু রাগ হলো। সীমা ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পারলো। সময় নিয়ে বলল,
“আহা! আমাকে পুরো কথাটা শেষ করতে দিবি তো না-কি?”
বিস্ময়ে চোখ ঝাপটালো নীলাভ্র। রাগ, বিরক্ত, অনুভূতিগুলো দমিয়ে রাখলো। কিছুক্ষণ, কিছুসময়ের জন্য। বেশ অধৈর্য গলায় বলল,
“যা বলার তাড়াতাড়ি বলো মা।”
সীমা ঠোঁট টিপে হাসলো। বেশ রুষ্ট স্বরে বলল,
“বেলীকে আমার ঘরের বউ করে নিয়ে আসবি না।”
সীমার কথা শুনে নীলাভ্রর চোখ জোড় মার্বেল আকৃতির হয়ে গেলো। অবাক, বিস্ময় মিশ্রিত হয়ে কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো। জোরে বলে উঠল,
“কি বলছো মা?”
সীমা আদুরে হাতে হাত রাখলো ছেলের গালে। কপালের এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিলো। গালে হাত বুলিয়ে মুখে চওড়া হাসি এঁটে বলল,
“বেলীকে তুই আমার ঘরের বউ না। আমার মেয়ে করে নিয়ে আসবি। বুঝলি?”
কথাটা নীলাভ্রর কানে যেতেই কিছুক্ষণের জন্য ‘থ’ হয়ে গেলো। কয়েক সেকেন্ডের নিরবতা ভঙ্গ করে ফিক করে হেসে দিলো। মনে হলো বুকের উপর থেকে হাজার মণ ওজনের পাথরটা নেমে গেলো। মায়ের হাতটা জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। হাতের উল্টো পাশে চুমু খেয়ে বলে উঠল,
“উফফ! মা ভয় দেখিয়ে দিয়েছিলে তো?”
সীমা এবার সশব্দে হেসে উঠল। মা ছেলে তাল মিলিয়ে হাসছে। হাস্যজ্বল স্বরে বলল,
“দেখতে হবেনা? আমার ছেলেটা কত ভালোবাসে তার হবু বউকে। তাই একটু-আধটু ভয় দেখিয়ে চেক করিয়ে নিলাম।”
নীলাভ্র আর কিছু বলতে পারলো না। হাসলো। লাজুক হাসি। তৃপ্তিময় হাসি। অবশেষে সবটা ঠিক হতে চলেছে। মা, ছেলে মিলে কিছুক্ষণ কথা বললো। নীলাভ্র খাবার খেয়ে রুমে চলে গেলো। কালকেই যাবে বেলীদের বাসায়। বিয়ের দিন ঠিক করতে হবে তো? নিশ্চিন্তে খাটের উপর ধপাস করে সুয়ে পড়লো। কোল বালিশটাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল,
“খুব শিঘ্রই এই বুকে তোর স্থান হবে, বেলীপ্রিয়া। যাকে জড়িয়ে ধরে আমি দুনিয়ার সব চিন্তা ভুলে গভীর ঘুমে মগ্ন হবো। ইস! তুই যে কবে আমার হবি? আমার যে তর সইছে না। খুব ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে তোর কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলি ‘ভালোবাসি বেলীপ্রিয়া’।”
খুশিতে নীলাভ্রর নাচতে ইচ্ছে করছে। ঠোঁটের কোনে হাসি যেন সরছেই না। মন খুলে হাসতে ইচ্ছে করছে। অনেক সাধনার পর ভালোবাসার মানুষটাকে পেলে বুঝি এমনি খুশি হয়? এমন ভাবেই হৃদয়ে শান্তি অনুভব হয়? কে জানে? কালকে অনেক কাজ বাকি? তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো।
—
হুট করে কানে জোড়ালো কিছুর শব্দ ভেসে আসতেই বেলীর তন্দ্রা কে’টে গেলো। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে পড়ল। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকালো। জানালার পর্দা ভেদ করে এক চিলতে রোদ উঁকি মা*রছে। মাথার উপর ফ্যানটা শব্দ করে ঘুরছে। বুকের ভেতর ধকধক করছে। একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছে। ভোরের স্বপ্ন না-কি সত্যি হয়? ভেবেই বুক কেঁপে উঠল। হৃদ পিন্ড লাফাচ্ছে। বেশ শব্দ করে লাফাচ্ছে। অজানা ভয় এসে গ্রাস করে নিলো সর্বাঙ্গ। হাত পা অদ্ভুত ভাবে কাঁপছে। শীতল রক্ত বইছে শিরা-উপশিরায়। মাথাটাও ভনভন করছে। এমন কেন হচ্ছে? খারাপ কিছু? সবাই ঠিক আছে তো? এইসব ভেবেই উঠে দাঁড়াল বেলী। খাটের থেকে নেমে ওড়না না নিয়েই দৌড়ে গেলো রিতার রুমে। রুম খালি দেখে ভয়টা যেন আরো ঝেঁকে বসল। উচ্চৈঃস্বরে ডাক শুরু করল,
“মা? মা তুমি কোথায়? মা?”
ডাকতে ডাকতে রুম থেকে বের হতেই কিচেন থেকে রিতার শব্দ ভেসে আসলো। দ্রুত ছুটলো সেদিকে। রিতাকে সুস্থ সবল ভাবে রুটি বানাতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। কিছুসময়ের ব্যবধানে রিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মেয়ের এহেন কান্ড বুঝতে না পেরে বেশ আদুরে স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“কী হয়েছে মা?”
বেলী উত্তর দিলো না। নিশ্চুপ হয়ে রইল। এবার রিতা ভয় পেলো খানিকটা। চিন্তিত স্বরে বলল,
“শরীর খারাপ লাগছে? না-কি মন খারাপ?”
মাথা উঠিয়ে বেলী তৎক্ষনাৎ জবাব দিলো,
“একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি মা। আমার খুব ভয় লাগছে। আবার কিছু হবে না তো?”
ভয়ে বেলীর আঁখিতে অশ্রু ফোটা জমাট বাঁধল। টলমল করছে আঁখি জোড়া। ঠোঁট জোড়া তীব্র বেগে কাঁপছে। মেয়ের চিন্তিত, ভয়ার্ত মুখটা দেখে রিতার ভয় হলো। তবুও বেশ হাসি খুশি মুখে বেলীর মাথায় হাত রাখল। শুধাল,
“ধুর! এইসব কিছু না৷ দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে ফেলিস। ভয় কে’টে যাবে। এইসব নিয়ে এত ভাবিস না। কিছু হবে না। আল্লাহ ভরসা।”
বেলী মাথা নাড়ালো। মুখ ফুটে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। ভয়টা কিছুতেই কমছে না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। নড়লো না। তা দেখে রিতা তাড়া দিয়ে বলে উঠল,
“যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আজকে বাসায় মেহমান আসবে। সব কিছু গুছানো বাকি। যা না মা। দাঁড়িয়ে থাকিস না। বহুত কাজ পড়ে আছে।”
কে আসবে? জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু করলো না। একটা বড়োসড়ো নিঃশ্বাস ফেলল। ধীর পায়ে স্থান ত্যাগ করলো। রুমে এসে বিছানা গুছিয়ে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। মনের মধ্যে ‘কু’ গাইছে। ফোনটা হাতে তুলে নীলাভ্রকে ফোন দিলো। কয়েকবার রিং হয়ে কে’টে গেলো। ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করলো না। এতে ভয়টা যেন দ্বিগুণ হয়ে গেলো? দ্বিতীয় বার ডায়াল করতেই সেকেন্ডের মাথায় ওপাশ থেকে ঘুমকাতুরে কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। কন্ঠটা শুনেই বেলীর সব ভয় নিমিশেই উবে গেলো। হৃদযন্তটা এতক্ষণে থামলো। ভালো লাগা ছেয়ে গেলো মুহূর্তেই। প্রিয় মানুষের কন্ঠস্বরে বোধয় মাদ-ক মেশানো থাকে। হায়! যখনি কানে আসে, তখনি অদ্ভুত নে’শা হয়ে যায়। এই নেশা কা’টানো সহজ না। বড়ই কঠিন! ইস! ছেলেটার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটল। রাগ হলো নিজের উপর। নিরবতা কা’টিয়ে ওপাশ থেকে পুনরায় ঘুম কাতুরে স্বরে ভেসে আসল,
“চুপ করে আছিস কেন, বেলীপ্রিয়া? এত সকালে ফোন দিলি যে? কোনো সমস্যা?”
কারোর ঘুমন্ত কন্ঠস্বর বুঝি এত সুন্দর হয়? কই আগে তো জানা ছিলো না? না-কি প্রিয়তম ব্যক্তির কন্ঠস্বর বলে এত ভালো লাগছে? কে জানে? উত্তর খুঁজে পেলো না বেলী। শীতল স্বরে জবাব দিলো,
“কিছু হয়নি। আপনি ঘুমান। আমি বরং রাখছি।”
কথাটা বলে রাখার জন্য প্রস্তুত হতেই কানের মধ্যে ভেসে আসল জাদুকরী শব্দ। প্রিয়তম ব্যক্তি ফোনের ওপাশ থেকে ঘুমন্ত স্বরে শুধাল,
“ভালোবাসি বউ।”
‘বউ’ শব্দটা ম্যাজিকের মতো লাগল বেলীর কাছে। শরীরটা অসাড় হয়ে পড়ল। লজ্জায় গাল দুটো বোধহয় ফুলেছে হালকা? ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসছে। চোখে ভালোবাসার খুশি। কান গরম হয়ে উঠছে লজ্জায়। বেলী তো লাজুক না৷ তবে আজ কেন এত লজ্জা লাগছে? সামান্য ‘বউ’ শব্দটা এত লজ্জাজনক! জানা ছিলো না-তো? উত্তর দিলো না। ফোনটা কে’টে দিলো। ফোনটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিজে নিজেই হেসে উঠল। লজ্জামাখা হাসি। কিছুক্ষণ আগের সব ভয়, দুশ্চিন্তা মুছে গেছে। তার বদলে একরাশ ভালো লাগা বাসা বেঁধেছে হৃদয়ের অন্তস্থলে।
—
ঘড়ির কা’টায় দুপুর একটা। বাইরে কাঠফাটা রোদ্দুর। মাথার উপরে ফ্যান চলছে। তবুও যেন গরমের হাত থেকে নিস্তার নেই। গরমে কপালে বিন্দু বিন্দু জলরাশি জমে আছে, বেলীর কপালে। মুখে তীব্র খুশির ঝংকার । ইশু আর মেরিনা একের পর এক লজ্জাজনক কথা বলে বেলীকে জ্বালাছে। নীলাভ্র বসার ঘরে সবার সাথে বসে আছে। আইরিন, আয়েশা খাতুন, সীমাসহ সবাই এসেছে আজ। কারণটা অবশ্য বেলী জানে। তবুও মুখের ভাবভঙ্গি এমন যে, সে কিছুই জানেনা। হুট করে ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের রিংটনের শব্দে বেলী একটু হকচকালো। বেলী ফোনটা রিসিভ করতেই ইশু আর মেরিনা রুমের বাইরে চলে গেলো। ফোনের ওপাশ থেকে তানিশা বেশ শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছিস, দোস্ত?”
তানিশার কন্ঠস্বরটা আজ শান্ত। কেন? এতদিন তো ঠিক ছিলো। এই কন্ঠস্বরে হতাশা, বিষাদের গন্ধ পাচ্ছে বেলী। কিছু কী হয়েছে? এসব প্রশ্ন গুলো সাইডে রেখে জবাব দিলো,
“আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?”
তানিশা বোধহয় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল? স্পষ্ট নিঃশ্বাসের শব্দ শুনল বেলী। হুট করে সকালের স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে গেলো। ভয়টা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। অস্থির হয়ে প্রশ্ন করল,
“কী হলো? চুপ করে আছিস কেন? বল?”
তানিশা কেমন নুইয়ে যাওয়া কন্ঠেস্বরে বলল,
“ভালো আছি। তুই এত অস্থির হইতাছোস কেন?”
বেলীর বিশ্বাস হলো না। সাথে সাথে বলল,
“কী হয়েছে তোর?”
তানিশা কিছু সময় নিশ্চুপ রইল। ভয়টা বেলীকে এবার আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল। একটু জোরগলায় পুনরায় প্রশ্ন করল,
“বলবি? কী হয়েছে তোর? শাকিল কিছু বলছে? তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে? বল না? কী হয়েছে তোর? আমার টেনশন হচ্ছে।”
বেলীর আঁতঙ্কিত কন্ঠস্বর শুনে তানিশা ধমকে উঠলো। বিরক্তির স্বরে বলল,
“আরে চুপ! কইতাছি না শাকিল কিছু কয়না আমারে। আমারে তোর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার লেইগা সময় তো দিবি না-কি? আ*বাল মাইয়া।”
বেলী দমিয়ে গেলো। একটু থামলো। কিন্তু অস্থিরতা কমলো না। ছটফটাতে লাগল। শান্ত স্বরেই শুধাল,
“আচ্ছা, এবার বল?”
তানিশা একটু থেমে হুট করে বলল,
“আমার না তোরে দেখতে মন চাইতাছে রে। তুই কি গ্রামে আইবি না? কেন জানিনা তোর লেইগা মনডা ছটফট করতাছে?”
তানিশার কথায় বেলীর বুক ধক করে উঠল। এমন করে কেন কথা বলছে মেয়েটা? কেমন শুনতে লাগছে কন্ঠটা? মন খারাপ বোধহয়? অনেক দিন ধরে দূরে আছে তাই হয়তো? তানিশার মন ভালো করার জন্য বেলী ফোনটা কে’টে দিলো। তড়িঘড়ি করে ভিডিও কল দিলো। বেলীর গায়ে লাল, সাদার সংমিশ্রণের শাড়ি। মুখে হালকা সাঁজ। খোঁপায় বেলীফুলের মালা। দেখতে কী মিষ্টি লাগছে! তানিশা অবাক স্বরে বলল,
“হায়! হায়! নজর না লাগুক দোস্ত। তোরে কী সুন্দর লাগতাছে রে? আমি পোলা হইলে এক্ষুনি তোরে লইয়া দৌড় দিতাম। নীলাভ্র ভাই যে, কেমনে সামলায় নিজেরে?”
তানিশার কথায় বেলী লজ্জা লজ্জা মুখ করে হাসলো। তানিশার দিকে নজর দিতেই দেখল, মেয়েটা শুকিয়ে গেছে অনেক। মুখের হাসিটা তৎক্ষনাৎ মিইয়ে গেলো। প্রশ্ন করল,
“তুই এমন শুকাইছোস কেন? শরীর খারাপ না-কি? চোখ, মুখের এই অবস্থা কেন?”
তানিশা মুখশ্রীতে রাগী ভাব এনে তাকালো বেলীর দিকে। বলল,
“তোর চোখ কি অন্ধ রে? সবাই কয়, শুশুড় বাড়ির ভাত খাইয়া আমি মোটা হইছি। আর তুই কস শুকাইছি? কা’না মাইয়া লোক।”
বেলীর মুখটা এবার চুপসে গেলো৷ ভয়ে চুপসে গেলো। তানিশার মুখশ্রীতে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে রইল। তানিশার চোখ গুলো কোটরে ঢুকে গেছে। মুখটা কেমন ম*রা ম*রা লাগছে? ঠোঁটের হাসিটাও প্রানবন্তর লাগছে না। কৃত্রিম হাসি রয়েছে ঠোঁটের কোনে তা বেশ বুঝতে পারল বেলী। তানিশা কী কিছু লুকাচ্ছে সবার কাছের থেকে? সত্যিই কী ভালো আছে? না-কি ভালো থাকার নাটক? হঠাৎ বেলীকে দেখতে চাইলো কেন? সব প্রশ্ন একত্রিত হয়ে বেলীর মাথায় জট পাকিয়ে গেলো। ভয়ে শরীরটা কেমন কম্পিত হলো এক-দুইবার। ভয়ে ঢিপঢিপ করে হৃদস্পন্দনের অনুকার শব্দ বেড়ে গেলো। মস্তিষ্ক প্রশ্ন করল,
“তানিশা ঠিক আছে তো? না-কি ঠোঁটের কোনের হাসিটার মতো ভালো থাকাটাও কৃত্রিম?”
#চলবে