শৈবলিনী পর্ব ৪৯

0
715

#শৈবলিনী—-৪৯
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★গালে হাত দিয়ে বসে আছে আদিত্য। অসহ্য বিরক্তিতে চিড়বিড় করছে সারা শরীর তার। এতোদিন পর নূরকে কাছে পেয়েছে। কোথায় সে তার বউয়ের সাথে একটু একান্ত মুহুর্ত কাটাবে। তানা এই ডাকাত দল এসে ওর শান্তি কেঁড়ে নিলো। সবগুলো কেমন আড্ডায় মেতেছে দেখ। তারা নাকি আজ এখানেই আস্তানা করার প্ল্যান করে এসেছে। পিকনিক করবে,আনন্দ উল্লাস করবে আজ সারাদিন। মানে আদিত্যর রোমাঞ্চের পুরো ফালুদা করার পরিকল্পনা করে এসেছে এরা। মন তো চাচ্ছে এদের রেখে আমিই নূরকে নিয়ে পালিয়ে যাই এখান থেকে। কিন্তু সেটারও উপায় কই! আমার মহান বিবিজানও এদের সাথে কি সুন্দর আড্ডায় মেতে গেছে। এখানে যে তার বরটা পুড়ছে তার কোনো খেয়ালই নেই জনাবার। আমাকে রেখে তার বান্ধবীর সাথে আলাপে মগ্ন। আমাকে যেন তার চোখেই পড়ছেনা। কি একটা বউ কপালে জুটলো। এমনে চলতে থাকলে আমার আর বাবা ডাক শোনার কপাল হবে বলে মনে হচ্ছে না।

নূর আহানা আর শিখার সাথে বসে কথা বলছে।তবে আরচোখে সে বারবার তাকাচ্ছে আদিত্যর পানে। আদিত্যর এই বেচারাপন দেখে হাসিতো অনেক পাচ্ছে নূরের তবে আবার মায়াও লাগছে। লোকটা কেমন মুখ গোমড়া করে বসে আছে। কিন্তু নূর কি করবে? এভাবে সবার সামনে তো আর উঠে গিয়ে তার কাছে যেতে পারছেনা। নূরের অবস্থা দেখে শিখা মুখ টিপে হেসে আহানার উদ্দেশ্যে নূরকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,
–আহানা,আমরা বোধহয় এসে ভুল করেছি। বেচারা লাভ বার্ডস দুটোর রোমাঞ্চে ব্যাঘাত ঘটলো তাইনা?

আহানাও শিখার কথায় সায় দিয়ে নূরকে টিজ করতে লাগলো। নূর অপ্রস্তুত হয়ে আমতাআমতা করে বলল,
–আরে না না, কি যে বলিসনা তোরা! এমন কিছুই না।

–তোদের দেখেত তাই মনে হচ্ছে।

শিখা হঠাৎ উচ্চস্বরে জিদানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
–এই শোনো না। চলতো একটু ছাঁদে যাই। ছাঁদ থেকে পুরো ফার্মহাউসটা দেখতে নিশ্চয় আরও ভালো লাগবে।

শিখার কথায় বাকিরাও উৎসাহ দিয়ে বলল,
–হ্যাঁ চলো ছাঁদে যাই।

ছাঁদে যাওয়ার কথা শুনে একপ্রকার আৎকে উঠলো নূর আর আদিত্য। দুইজন একসাথে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
–নাআআআআআ…

ওদের চিল্লানিতে সবগুলোর পিলে চমকে গেল। চোখ বড় বড় করে আতঙ্কিত চোখে সবাই তাকালো আদিত্য নূরের দিকে। জিদান বুকে এক দলা থুতু ছিটিয়ে আচম্বিত কন্ঠে বলল,
–এহনি আমার পরাণ ডা জাম্প দিয়া বেড়িয়ে আসতো স্যার। এভাবে চিল্লানোর কি হলো স্যার? ছাঁদেই তো যেতে চেয়েছে, মঙ্গলগ্রহে তো যেতে চায়নি। এভাবে উত্তেজিত হওয়ার কি আছে?

আহানাও বলে উঠলো,
–হ্যাঁ ভাইয়া, ছাঁদে যেতে মানা করছ কেন তোমরা?

আদিত্য থতমত কন্ঠে বলল,
–ওই আসলে, বৃষ্টিতে ছাঁদে পিচ্ছিল হয়ে আছে। পড়ে যেতে পারিস তোরা। তাই ছাঁদে যাওয়া যাবে না।

নূরও আদিত্যর সাথে সায় দিয়ে বলল,
–হ্যাঁ হ্যাঁ, ছাঁদে যাওয়ার দরকার নেই। তারচেয়ে বরং বাইরে সুইমিং পুল আছে,বিশাল গার্ডেন আছে সেখানে ঘোর। ছাঁদে দেখার কি আছে। ওখানে যাওয়ার দরকার নেই।

এই পর্যায়ে দুই হাতে ভীড় ঠেলে দ্য মহান আবির এগিয়ে এলো আদিত্যর সামনে। এক ভ্রু উঁচু করে তীব্র সন্দেহের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো আদিত্যর দিকে। সিআইডির এসিপি প্রদিয়মান-এর মতো আদিত্যর মুখের সামনে হাতের পাঁচ আঙুল নাচিয়ে বলল,
–কুছ তো গড়বড় হে দয়া। তুই ছাঁদে কেন যেতে দিচ্ছিস না আমাদের? সত্যি করে বল আসল ঘটনা কী? তুই কাউকে খু,ন করে ছাঁদে লুকিয়ে রাখিসনি তো? সেই কারণে আমাদের যেতে নিষেধ করছিস তাইনা? এখনতো আমরা যেয়েই ছাড়বো। তদন্ত তো করতেই হবে তুই কী ঘোটালা করেছিস?

আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
–ফালতু প্যাচাল বন্ধ কর।বললাম না ছাঁদে যাওয়া যাবে না, ব্যাস যাবে না।

আবির এবার তার সেনাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–সৈন্যরা? রেডি? ওয়ান, টু,থ্রি এন্ড হামলা…….
বলেই একসাথে সবগুলো রেসের মতো প্রাণপণে দৌড়ালো ছাঁদের দিকে। আদিত্য আর নূর তাদের থামানোর উদ্দেশ্যে পিছে পিছে ছুটলো। কিন্তু ওই হামলাকারীদের থামাতে পারলোনা তারা। সেনার দল ছাঁদে এসেই থামলো। ছাঁদে এসে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে যা দেখলো তাতে সবগুলোর মুখে দুষ্টু হাসি প্রতীয়মান হলো। আদিত্যর মাথায় হাত। নূরতো লজ্জায় পারেনা ছাঁদ ভেঙে মাটির নিচে ঠেসে যেতে। আবির বাঁকা হেঁসে বিদ্রুপের সুরে বলল,
–ওওওও আচ্ছা? তো এই কথা?

জিদান তার বুদ্ধিমত্তার প্রণাম দিয়ে বলল,
–কি কথা স্যার? আর আপনার কথা অনুযায়ী তো এখানে কোনো খু,ন টুন হয়েছে বলে মন হচ্ছে না।

আবির দুষ্টু হেঁসে বলল,
–আরে জিদান মিঞা খু,নতো হয়েছে। এখানে কাল রাতে বিড়াল মারা হয়েছে বুঝেছ?

–কেন স্যার? বেচারা বিড়াল কি দোষ করেছে যে সবাই তাকে মারতে বলে? জানেন আমার বন্ধুরাও না আমার বিয়ের রাতে বিড়াল মারতে বলেছিল। কিন্তু সারারাত খুঁজেও একটা বিড়াল পেলাম না স্যার। সকালের দিকে যাও একটা পেলাম তাকে দেখে আমার খুব মায়া হলো। তাই আর মারতে পারলাম না। আমার আবার অনেক দয়ার মন।

–আরে জিদান মিঞা তুমি গর্দভের গর্দভই থেকে গেলে। বিড়াল খোঁজার চক্করে বাসর রাত পার করে দিলে? তোমারে যে তোমার বউ এহোনো ল্যাংড়া, লুলা কইরা দেইনাই এইডাই হাজার শুকুর।

শিখা নূরের কাঁধে খোঁচা দিয়ে বলল,
–তাহলে এই কারণেই বুঝি আসতে দিচ্ছিলি না? রাতে তোদের রাসলীলার চিহ্ন রয়ে গেছে যে।
ব্যস আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা নূর। এই লজ্জাজনক অবস্থা থেকে বাঁচতে দৌড়ে চলে গেল। আদিত্য আবিরের উদ্দেশ্যে বলল,
–নে, দিলিতো আমার বউটাকে লজ্জায় ফেলে। হলোতো এখন শান্তি তোদের? এখন ময়নাতদন্ত শেষ হলে চল সবাই এখান থেকে।

হাসতে হাসতে নেমে এলো সবাই নিচে। শুধু অমালিয়া থেকে গেল। বোনের জন্য তার অনেক প্রশান্তি লাগছে। শেষমেশ ওর বোনটা সুখের ঠিকানা তো পেল। আমার জন্য আপু আর ভাইয়া অনেক কষ্ট ভোগ করেছে। তাদের মাঝে সব ঠিক ঠাক দেখে মন থেকে যেন একটা ভারী বোঝা নেমে গেল অমালিয়ার। আমার জীবন তো যা হওয়ার হয়েই গেছে। কমছে কম আপুতো সুখে থাক। সুখী হওয়াটা ও ডিজার্ভ করে। গত কয়েকদিন তার বোনের কষ্ট দেখে নিজেরও অনেক কষ্ট হচ্ছিল তার। মনে মনে দোয়া চাইছিল আদিত্য নূরের মাঝে যেন সব ঠিক হয়ে যায়।খুব চিন্তা হচ্ছিল বোনের জন্য। তাইতো যখন আবির সবাইকে নিয়ে এখানে আসার প্ল্যান করলো তখন আর মানা করেনি। ওদের মাঝে সব ঠিক হয়ে গেছে কিনা সেটা দেখতেই এখানে এসেছে ও। নাহলে এই ফার্মহাউসে সে কখনোই আসতো না। যেখানে তার জীবনের সবচেয়ে নির্মম স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এই ফার্মহাউসেই তার জীবন লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। যদিও এখানকার কোনোকিছু তার ভালো করে মনে ছিলোনা। তবে পরে ও জানতে পারে এটাই সেই জায়গা। আর এটা জানা সত্বেও এখানে আসাটা ওরজন্য কতো কঠিন ছিলো তা কেবল ওই জানে। তবুও সে বোনের খবর জানতে মন শক্ত করে এখানে এসেছে। এখন সবকিছু ঠিক দেখে মনটা যেন হালকা হলো অমালিয়ার। অমালিয়ার চোখ গেল ফুলে সাজানোর দোলনাটার দিকে। উদাস মনে এগিয়ে গেল সে সেদিকে। দোলনার দড়ির সাথে পেঁচানো ফুলগুলো আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো। মনটা হঠাৎ ভীষণ বিষন্ন হয়ে উঠলো তার। বিয়ে,স্বামী, সংসার নিয়ে তারও কতো শখ, কতো স্বপ্ন ছিল। হঠাৎ ঝড়ে যেন সব তছনছ করে দিলো। এসব ভেবে চোখ ভরে উঠল অমালিয়ার। হঠাৎ ওর দিকে টিস্যু এগিয়ে দিলো কেউ। অমালিয়া তাকিয়ে দেখলো, আদ্র। টিস্যু নিলোনা অমালিয়া। মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আঙুল দিয়ে চোখ মুছে নিলো সে। আদ্র বলে উঠলো,
–জানি আমি তোমার মনের পুরুষ কখনো হতে পারবোনা। তবে একটা কথা বলতে চাই। মন থেকে ক্ষমা চাইলে নাকি উপর আল্লাহও একসময় মাফ করে দেন।আইনও মানুষকে শুধরানোর সুযোগ দেয়। ক্ষমা মহৎ গুণ। একবার আমাকে ক্ষমা করে দেখ। ওয়াদা করছি, দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো হাসব্যান্ড না হতে পারলেও একজন ভালো বন্ধু হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। প্লিজ, একবার শুধু আমাকে রে,পি,ষ্টের নজরে না দেখে সাধারণ একটা ব্যাক্তির চোখে দেখ। দেখবে দুজন দুজনার ভুলগুলোকে কাটিয়ে একটা নতুন জীবন শুরু করতে পারবো। একবার ভেবে দেখ আমার কথা প্লিজ।

কথা শেষ করেই চলে গেল আদ্র। অমালিয়া পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো আদ্রর দিকে। সেকি সত্যিই পারবে সব ভুলে নতুন করে শুরু করতে?
__

পুল সাইডে পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছে। মাটিতে চুলো খুঁড়ে, বিশাল পাতিলে গরুর মাংস দিয়ে ভুনা খিচুড়ি রান্নার কাজ চলছে। সবাই মিলেই রান্নার কাজে সাহায্য করছে। সবার মাঝেই এক খুশিময় আমেজ বিস্তার করছে। আদিত্যরও যে এসব খারাপ লাগছে তা না।তবে সে তার বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করার সুযোগ পাচ্ছে না এটাই তার আপসোসের কারণ। আহানা কিছুক্ষণ রান্নার কাজে একটু সাহায্য করে দিয়ে এসে পুলের পানিতে বসে থেকে একটু রিল্যাক্স করছে। কিন্তু আহানার আরাম হারাম করার জন্য সেখানে এসে টপকালো, আবির। আহানার পাশে এসে বসেই বিদ্রুপ করে বলে উঠলো,
–কিরে বয়ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড কে অনেক মিস করছিস নাকি? চাইলে ডেকে নিতে পারিস। হাতে হাতে নাহয় তোদের বিয়েটাও সম্পূর্ণ করে দিবো। কতদিন আর ডেটিং করে শুধু শুধু বিল বাড়াবি?

আবিরের এই বিদ্রুপাত্মক কথায় আজ আহানার রাগ আর ঘৃণার থেকে বেশি কষ্ট হলো। কোথাও খুব তীব্র আঘাত হানলো। আহানা ব্যাথিত চোখে তাকালো আবিরের পানে। বেদনার্ত কন্ঠে বলল,
–আপনি কোন জনমের বদলা নিচ্ছেন আমার কাছ থেকে? আমার জানামতে তো আমি কখনো আপনার সাথে তেমন খারাপ কিছু করিনি। তাহলে আমাকে কীসের শাস্তি দেন এভাবে? জানেন, আমি একটা বইয়ে কিছু পড়েছিলাম। “কোনো এক জায়গায় এক জনগোষ্ঠী বাস করতো। তারা কোন গাছকে মেরে ফেলতে চাইলে, তারা গাছটাকে কাটতো না।বরং সবাই একসাথে সেই গাছের নিচে জড়ো হয়ে যেত। আর ইচ্ছেমতো গা,লি দিতো, অভিশাপ করতো। আর দেখতেই দেখতে গাছটা একসময় নিজেই মরে যেত।” বুঝতে পেরেছেন গল্পের মর্মটা? না বুঝতে পারলেও আপসোস নেই। আপনার কাছ থেকে আর আশাই কি করা যায়!

কথা শেষ করেই উঠে চলে গেল আহানা। আবিরের হঠাৎ কেমন অস্থিরতা অনুভব হতে লাগলো। বুকের বামপাশে কিছু একটা তীব্র ভাবে জ্বলতে লাগলো। গলা শুঁকিয়ে আসছে হঠাৎ। এই আন্নি আজ কীসব আবোলতাবোল বলে গেল। এসব বলার মানে কী হ্যাঁ? তুই আমার কথায় ঘৃণা দেখাবি, তুই কেন এসব বলবি ? বেয়াদব একটা। বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে এসব শিখেছে নিশ্চয়। আবির অস্থির হয়ে সি,গা,রে,ট ধরাতে নিলেও পারলোনা। কেমন যেন সব প্রচন্ড অস্থিরতায় এলোমেলো যাচ্ছে ওর। বুকটা ভীষণ খা খা করছে তার। পানি খাওয়ার জন্য উঠে গেল দ্রুত।

দূর থেকে এসব পর্যবেক্ষণ করলো নূর। কাজের মাঝেই হঠাৎ চোখ যায় ওদের দিকে। এদের মাঝে কোনো কাহিনি আছে বুঝতে পারলো নূর।তবে সেটা যে স্বাভাবিক কিছু না তাও বুঝতে পারলো সে। আহানার চোখের কষ্ট তার নজরে ঠিকই পড়েছে। এদের মাঝে কি সমস্যা হয়েছে জানতে হবে। কারণ দুজনেই যে কষ্টে আছে তা বুঝতে পারছে নূর। কোনোভাবে যদি এদের কষ্ট দূর করা যায় তাহলে খারাপ কি।
__

জিদান একটু ফ্রেশ হওয়ার প্রয়োজনে ভেতরের রুমে এলো। হঠাৎ শিখা জিদানকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিলো। তারপর জিদানের উপর আধশোয়া হয়ে দুষ্টু ভঙ্গিতে তাকিয়ে শিখা চোখ টিপ দিলো। জিদান বেকুবের মতো বলে উঠলো,
–এই শিখা,তোমাকে কি ভুতে ধরেছে? এভাবে আক্রমনাত্মক হলে কেন আমার সাথে? দেখ আমাকে মেরোনা প্লিজ। আমি রোজ তোমার পা টিপে দিবো। তোমার কাপড়চোপড় পরিষ্কার করে দিবো। যা বলবে তাই করবো। তাও আমাকে মেরোনা প্লিজ। চলো তোমাকে মটকা বাবার কাছে নিয়ে যাই। সে তোমার মধ্যে থেকে সব ভূত পে,ত্নী ছুমন্তর করে তাড়িয়ে দিবে।

শিখা রাগতে নিয়েও আবার রাগলো না।সে তো জানেই তার বরটার স্ক্রু ঢিলা। তাই হাসি বজায় রাখার চেষ্টা করে বলল,
–ধ্যাৎ!কি যে বলোনা। আচ্ছা শোনো না,আজ ছাঁদের নূর আর আদিত্য ভাইয়ার রোমান্টিক আয়োজন দেখে আমারও না কিছু কিছু হচ্ছে। তোমার হচ্ছে না?

জিদান বলে উঠলো,
–হ্যাঁ হচ্ছে তো আমার।

শিখা খুশি হয়ে বলল,
–কি হচ্ছে হুম?

–আমার না পিঠে চুলকানি হচ্ছে। আর গ্যাস্টিকও হচ্ছে। সকাল থেকে টক ঢেকুর আসছে। বমি বমিও পাচ্ছে? আমি আবার প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলাম নাতো?

শিখা এবার না রেগে আর থাকতে পারলোনা। মানে এমন একটা পায়জামা মার্কা জামাই ওরই কপালে জোটার ছিলো! শিখা দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
–একটা কথা বলোতো, তুমি কি ছোট বেলায় মাথায় কোথাও চোট পেয়েছিলে নাকি এটা জন্মগত ট্যালেন্ট? পুরো মুডটার রফাদফা করে দিলে। ধুৎ!

বলেই উঠে গেল শিখা। জিদান বেচারা এখনো বুঝতে পারছে না তার বউ হঠাৎ রাগলো কেন? বউটারে সত্যি সত্যিই বোধহয় ভূতে ধরেছে। মটকা বাবার কাছ থেকে তাবিজ আনতেই হবে। শিখা একটা ব্যাগে আজকের পিকনিক পার্টির জন্য কিছু ড্রেস এনেছিল। সেখান থেকে একটা একটা করে জিদানকে দেখিয়ে বলল,
–আচ্ছা বলোতো এর ভেতর থেকে কোনটা পড়বো।

জিদান প্রথমে একটা দেখিয়ে বলল,
–এটা ভালো লাগবে। এটা পড়ো।

শিখা বলল,
–কিন্তু এটার সাথে তো ম্যাচিং ইয়ার রিংস নেই।

জিদান আরেকটা দেখিয়ে বলল,
–তাহলে এটা পড়ো।

শিখা বলল,
–কিন্তু এটাতে আমাকে মোটা দেখাবে।

এভাবে কয়েকটা দেখানোর পর শিখা নিজে একটা সিলেক্ট করে বলল,
–হ্যাঁ এটা ঠিক আছে। আমি বরং এটাই পড়ি।

জিদান বলল,
–তুমি যখন নিজেই সিলেক্ট করবে তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করলে কেন? শুধু শুধু আমাকে খাটালে।

শিখা বলল,
–আসলে মা বলেছে সবসময় সব বিষয়ে স্বামীর কথা শুনবি। তাই তোমার রায় নিচ্ছিলাম। কিন্তু মাতো আর বলেনি যে স্বামীর কথা মানতেও হবে। সে-তো শুধু শুনতে বলেছিল তাই শুনলাম। বলেই হাসলো শিখা। জিদান কনফার্ম হয়ে গেল তার বউয়ের মধ্যে ভূতের পুরো জনগোষ্ঠী এসে হাজির হয়েছে। মটকা বাবা,আমি আসছি।
__

নূর কিছু মসলা নেওয়ার জন্য বাসার ভেতর রান্নাঘরের দিকে এলো। ওখানে একটু কম পড়ে গিয়েছিল তাই নিতে এসেছে। রান্নাঘরের দরজায় আসতেই হঠাৎ একটা হাত এসে ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেল। নূর হকচকিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো এটা তারই দুষ্টু মিঃ নায়ক টা। আদিত্য নূরকে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। নূর চমকে উঠে বলল,
–আরে কী করছ? এসব কেমন পাগলামি?

আদিত্য নূরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে নেশাময় কন্ঠে বলল,
–এসব ভালোবাসার পাগলামি। নিজের বউকে কাছে পাওয়ার পাগলামি। সেই সকাল থেকে একটুও কাছে পায়নি তোমাকে। আমার কেমন লাগছে তা কেবল আমিই জানি। তুমিতো মনের আনন্দে মজা করছ। একবারও এই অধমের কথা মনে হয়নি তোমার। একটুও মায়া নেই আমার জন্য তোমার।

নূর আমতাআমতা করে বলল,
–আমি কি করবো? সবার সামনে এভাবে তোমার কাছে কীভাবে আসবো? এমনিতেই ছাঁদের ব্যাপার নিয়ে সবাই টিজ করছে। তার ওপর সবার সামনে এভাবে এলে আরও খেপাবে।

–খেপানোর কি আছে? তুমি তোমার নিজের বরের সাথেই রোমাঞ্চ করছ অন্য কারোর সাথে তো আর না। কি একটা কপাল আমার। মানুষ অন্যের বউকে নিয়ে ইচ্ছেমত রোমাঞ্চ করে বেরায়। আর এক আমি, নিজের বউয়ের সাথেও মন খুলে একটু রোমাঞ্চ করতে পারিনা।

আদিত্যর এমন আপসোস পূর্ণ কথা শুনে মুখ টিপে হাসলো নূর। আদিত্য চোখ কুঁচকে বলল,
–অনেক মজা নেওয়া হচ্ছে তাইনা? এখুনি মজা নেওয়া বের করছি। সকালে আমার অসম্পূর্ণ কাজটা এখন পূরণ করবো।
বলেই আদিত্য নূরের অধর পানে ঝুঁকতে লাগলো। নূর চোখ বড় বড় করে বলল,
–এই না না প্লিজ, দেখ কেউ চলে আসবে। পাগলামো করোনা। প্লিজ ছেড়ে দাও।

–আসুক যে আসার। আমার মর্নিং কিস বাকি আছে। সেটা এখন নিয়েই ছাড়বো।
বলেই আবারও এগুতে লাগলো সে। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতেই নিবে, ঠিক তখনই হঠাৎ বাইরে থেকে শিখা নূরের নাম ধরে ডাকতে লাগলো। নূর হকচকিয়ে উঠে ঝট করে সরে গেল ওখান থেকে। আর বেচারা আদিত্যের নাকটা গিয়ে দেয়ালে গুতা লাগলো। আদিত্য নাক ধরে আবারও আপসোস করতে লাগলো। কোন জনমের বদলা নিচ্ছে এরা? সবগুলো যেন আমার রোমাঞ্চের দুশমন হয়ে গেছে। দেখে নিবো সব কয়টারে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here