#শৈবলিনী—৪৩
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★আদিত্যদের বাড়ি আসার এক সপ্তাহ এরই মাঝে পার হয়ে গেছে। নূর চেয়েও এখনো পর্যন্ত কিছু ভাবতে পারেনি। সবকিছু বরং দিনদিন ওরজন্য আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এবাড়ির সবার সাথে মিশে যাচ্ছে ও। সবার মায়ায় পড়ে যাচ্ছে। এদের সবাইকে কষ্ট দিয়ে কীভাবে যাবে ও, এসব ভাবতেই মন ভারী হয়ে যায় নূরের। সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক লাগে আদিত্যর কথা ভাবলে। যাকে জুড়ে ওর সব অনুভূতির মেলা তাকেই কাছে টেনে পারছেনা ও। আর না পারছে তার মায়াজাল ছিঁড়ে বেড়িয়ে যেতে। দিনদিন যেন আরও অপারগ হয়ে যাচ্ছে সে এই কাজে। খুব করে মন চায় আদিত্যর সামনে নিজের সব রকমের অনুভূতির ঝুলি খুলে বসতে। শোনাতে মন চায় তাকে তার কাঙ্খিত বাক্যটা। তার বাহুডোরে নিজেকে দ্রবীভূত করতে মন চায়। কিন্তু চেয়েও পারেনা সে। কোথাও একটা বাঁধা কাজ করে। আদিত্যর সেই ধোঁকা তাকে আবার পিছিয়ে আনে। এই দোটানা থেকে মুক্তি চায় নূর। মুক্ত নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচতে চায় সে। এভাবে যে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে তার কাছে।
পরশুদিন মায়ের কাছে গিয়েছিল নূর। তাদের ভালোমন্দ দেখতে, বাড়িতে বাজার, ঔষধ সহ প্রয়োজনীয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখতে। যদিও লতিকা বেগম নূরকে দেখে প্রথমে ঘাবড়ে যান। ভাবেন হয়তো নূর শশুর বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে। মায়ের এই ভয়ার্ত চেহারা দেখে নূরের যাও বা ওর মাকে বুঝানোর মনস্তাপ করে এসেছিল তাও চেপে যায় সে। বুঝতে পারে ওর মা মেনে নিতে পারবেনা। তাই মুচকি হেঁসে মাকে আস্বস্ত করে বলে,”ভয় নেই মা। শশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে আসিনি। তোমাদের দেখতে এসেছি শুধু। ” নূরের কথায় স্বস্তি পায় লতিকা বেগম। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মমতাময়ী কন্ঠে বলেন,”কখনো সে কাজ করিসও না মা।জানি তোর মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলছে। দেখ আমার কথা মান, পেছনে যা হয়েছে সেসব ভুলে যা। নতুন করে সব শুরু কর। আদিত্যকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে ওই বাড়িকে নিজের বাড়ি মনে কর নূর। তাহলে দেখবি তোর মনের সব অশান্তি দূর হয়ে গেছে। নাহলে তুই কখনো মনে শান্তি পাবিনা। আর তোকে এভাবে দেখে আমি মরে গিয়েও শান্তি পাবোনা। তাই বলছি নূর। ওই সংসার টাকে নিজের করে নে। সব আবার নতুন করে শুরু কর।”
সেদিনের মায়ের কথাগুলো নূরকেও ভাবাতে বাধ্য করে। সত্যিই কি সে সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু করবে? আদিত্যকে কি সে আরেকটা সুযোগ দিবে? আবার নতুন করে বিশ্বাস করবে তার ওপর? আদিত্য কি এবার ওর বিশ্বাস অটুট রাখতে পারবে?
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে এসব ভাবনায় ডুবে ছিলো নূর। আদিত্য শুটিংয়ে গেছে। হঠাৎ আহানার ডাকে সম্ভূতি ফিরলো নূরের। মেয়েটা অনেক বেশিই নূরের সাথে এটাচ হয়ে গেছে।যতক্ষণ বাসায় থাকি সবসময় শুধু ওর আগে পিছেই থাকে আহানা। নূর মুচকি হেঁসে বলল,
–কি হলো আবার?
আহানা মিষ্টি করে হেঁসে বলল,
–হয়নি কিছু। তবে হবে এখন। তুমি চলো আমার সাথে।
–মানে?
–মানে আমি বোর হচ্ছি, চলো কোনো মুভি দেখি।
–আহানা তোমাকে তো বলেছিই আমার এসব মুভি টুভি দেখা পছন্দ না। তুমি গিয়ে দেখনা।
–আচ্ছা মুভি না দেখলে। তুমি এমনি আমার পাশে বসে থেকো। তাও চলো।
বলেই নূরের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল নূরকে। নূরও আর পেরে না উঠে অগত্যা আহানার সাথে গেল। লিভিং রুমে এসে টিভিতে একটা মুভি ছাড়ল আহানা।তাও আবার আদিত্যর মুভি। কি একটা অবস্থা! এখন কি বসে বসে এই লোকের আজাইরা এক্টিং দেখতে হবে! এটাতো রিতীমত মেন্টাল টর্চার। কিন্তু কি আর করার! এই মেয়েটার জন্য এখন বসে থাকতেই হবে এখানে।নাহলে আবার মন খারাপ করবে মেয়েটা। মুভি শুরু হলো। আহানা অনেক উৎসাহ নিয়ে দেখছে আর ভাইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছে। নূর বিরক্ত হয়ে মোবাইল বের করে একটু টাইম পাস করতে লাগলো। হঠাৎ আহানা শিস বাজিয়ে উঠে নূরকে বলল,
–ভাবি এই সীনটা দেখনা। দেখ ভাইয়া কি এ্যাকশন দেখাচ্ছে।
আহানার কথা রাখতে টিভির পর্দায় চোখ রাখলো নূর। সে চেষ্টা করেও আহানার মতো মজার কিছুই পেলনা। অগত্যা আবারও চোখ সরিয়ে আনলো। হঠাৎ চোখ নামিয়ে আবার ঝট করে চকিত নজরে তাকালো টিভির পর্দায়। কিছু একটা দেখে কপাল কুঁচকে এলো তার। টিভিতে আদিত্য এ্যাকশন সীন করছে। বিস্ময়ের কারণ সেটা না। কারণ হলো আদিত্যকে ধরে নিয়ে যেতে আসা পুলিশের পোশাকে থাকা লোকগুলো। নূরের চিনতে ভুল হলোনা। এটাতো সেই লোকটাই যে সেদিন ওদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল।আরে তার পাশের লোকগুলোও সেদিনের সেই কনস্টেবল গুলো। যার কারণে ওদের ওই সময় বিয়ে করতে হয়েছিল। কিন্তু এরা ছবিতে কী করছে? এরাতো রিয়েল লাইফ পুলিশ। এরা ছবিতে এক্টিং করছে কেন? সবকিছু কেমন ঘোলাটে লাগছে নূরের। দেখতে দেখতে সীনটি চলে গেল। নূর দ্রুত আহানার হাত থেকে রিমোট নিয়ে আবার সেই সীনে গিয়ে পজ করলো। আহানা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–কী হয়েছে ভাবি? ভাইয়াকে কি এখানে বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে নাকি?
নূর আহানার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে বলল,
–তোমার ভাইয়ের পাশে দাঁড়ান এই পুলিশের বেশে থাকা লোকগুলোকে চেনো তুমি?
আহানা পুলিশ গুলোকে খেয়াল করে হাসিমুখে বলল,
–আরে এরা! চিনবো না কেন! এরাতো জুনিয়র আর্টিস্ট। ভাইয়ার মুভিতে ছোটমোটো রোল করে।কখনো পুলিশ, কখনো ডাক্তার এইসব রোল করে। ভাইয়াই এদের কাজ দিয়েছে।
নূরের মাথা ৩৬ ডিগ্রি ঘুরে উঠলো। তীব্র বেগে ধাক্কা খেল সে। তবে কি আদিত্য ওকে আবারও ধোঁকা দিলো? কিন্তু সেদিন তো সত্যি সত্যিই পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের। সেই পুলিশ স্টেশন তাহলে কোথাথেকে আসলো? নূর হঠাৎ ঝট করে দাঁড়িয়ে আহানার উদ্দেশ্যে বলল,
–আমার একটা জরুরী কাজ মনে পড়ে গেছে আহানা। আমি এখুনি আসছি।
বলেই আহানাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের পারস টা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো নূর। সিএনজি নিয়ে সোজা সেই জায়গায় এলো যেখানে সেদিন ওই লোকগুলো পুলিশ স্টেশনে নিয়ে এসেছিল ওদের। কিন্তু একি! এখানে তো পুলিশ স্টেশনের কোনো সাইনবোর্ড নেই। শুধু ছোট্ট একটা একতলা বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে। নূর ভেতরে যেতে নিলেই কর্মরত দারোয়ান তাকে আঁটকে দিয়ে বলল,
–আরে আরে ম্যাডাম কোথায় যাচ্ছেন? আপনিও কি শুটিংয়ের এর জন্য এটা ভাড়া নিতে চান? তাহলে আমার স্যারের সাথে কথা বলুন আগে।
আরেক দফা ঝটকা খেল নূর। অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
–শুটিংয়ের জন্য ভাড়া নিবো মানে? এটাতো পুলিশ স্টেশন তাইনা?
–না ম্যাডাম এটা কোনো পুলিশ স্টেশন না। এটাতো খালি বিল্ডিং। মাঝে মধ্যে শুটিংয়ের জন্য ভাড়া নেয়। আপনিও কি ভাড়া নিবেন?
স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ হয়ে গেল নূর। কড়া সুচালো রোদের মাঝেও তীব্র বেগে বাজ পড়লো তার ওপর। হঠাৎই যেন সব অনুভূতি দুমড়ে মুচড়ে দলা পাকিয়ে গেল। তার সামনে সব আয়নার মতো পরিষ্কার হয়ে গেল। তারমানে ওই পুলিশ, বিয়ের নাটক সবই আদিত্যর পূর্ব পরিকল্পিত নাটক! যার স্বীকার আরও একবার আমি হলাম! আবারও ধোঁকা! আবারও ছলচাতুরী! আবারও আমার ইমোশন নিয়ে খেললো সে! আবারও, আবারও আবারও…..। নূর অসার হয়ে আসা শরীরে ব্যালেন্স হারিয়ে পেছন দিকে দু কদম পিছিয়ে গেল। কেমন অনুভূতি শূন্য হয়ে হাঁটতে লাগলো সে। মাত্রই তো সব ভুলে নতুন করে শুরু করতে চাইছিল নূর। কিন্তু সে আরও একবার ধোঁকা খেল। আরও একবার ওই বিছানো জালে পা দিলো। এবার কী করবে ও? কীভাবে নিজের কাছে মুখ দেখাবে ও? এই বেহায়া মনটাকে কীভাবে গলা টিপে মেরে ফেলবে? কেন ওর সাথেই বারবার এমন হয়? এখনতো নিজের কাছে নিজেই ঘৃণিত হয়ে গেল। মানুষ খু,ন করলে তার বিচার হয়। তাহলে এই মনের দুই দুই বার খু,ন হলো তার বিচার কে করবে?
___
আজও অনেক রাতে বাড়ি ফরতে হলো আদিত্যকে। আদিত্য দ্রুত সব মুভির কাজ কমপ্লিট করতে চায়। যাতে এরপর নূরকে সে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারে। তাই বেশি বেশি কাজ করে এসব ভেজাল শেষ করতে চায়।আর একারণেই বেশি বেশি করে সময় দিতে হচ্ছে আদিত্যর। এরপর সে মুভির আর কোনো কাজ করবেনা। যে কাজে ওর নূর নাখুশ থাকবে সেই কাজ করতে পারবেনা আদিত্য। দরকার হলে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করবে তবুও নূর অপছন্দ করে সেই কাজ করবেনা। আদিত্য দ্রুত সিড়ি বেয়ে উঠে নিজের রুমের দরজা খুলে দেখলো রুম অন্ধকার হয়ে আছে। আদিত্য ভাবলো হয়তো নূর লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। সে হাতড়িয়ে সুইচ অন করলো। সুইচ অন করে সামনে তাকাতেই থতমত খেয়ে গেল আদিত্য। ওতো ভেবেছিল নূর ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু একি! নূরতো ওর সামনে বিছানায় বসে আছে। তাও কেমন অদ্ভুত ভঙ্গিতে। সবচেয়ে আশ্চর্যকর লাগছে তার পোশাক। সে একটা নাইটি পড়ে বসে আছে। নূরকে এভাবে দেখে কপাল কুঁচকে এলো আদিত্যর। সে নূরের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–এসব কি নূর? এমন পোশাক কেন পরেছ?
নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো আদিত্যর পানে। ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে আদিত্যর সামনে এসে বলল,
–কেন? পছন্দ হয়নি আপনার? আপনার জন্যই তো এসব। আপনি এতো বড়ো মহান কাজ করলেন। সেটারই ট্রফি হিসেবে নিজেকে প্রেজেন্ট করলাম। পছন্দ হয়নি ট্রফি?
আদিত্যর কুঁচকান কপাল আরও কুঁচকে এলো। নূরের আচার আচরণ কিছু ঠিক লাগছেনা ওর কাছে। হঠাৎ এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন? আদিত্য জিজ্ঞেস করলো,
–কি বলছ এসব নূর? হয়েছে টা কি তোমার? এমন অদ্ভুত বিহেব করছ কেন?
নূর অপরাধী সুরে বলল,
–ও সরি সরি মালিক। আমার বিহেভিয়ার আপনার পছন্দ হয়নি? তাহলে বলুন কি করলে আপনি খুশি হবেন? আফটার অল আপনি আমার মালিক। আর মালিক কে খুশি রাখা তো এই দাসীর জীবনধর্ম। তো বলুন কীভাবে সেবা করবো আপনার? আপনার জুতো পরিষ্কার করে দিবো?
বলেই নূর আদিত্যর পায়ের কাছে বসে নাইটির কাপড় দিয়ে আদিত্যর জুতো পরিষ্কার করতে গেল। ছিটকে সরে গেল আদিত্য। রাগে মাথা গরম হয়ে গেল তার। আদিত্য নূরের বাহু শক্ত করে ধরে নূরকে দাঁড় করিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলল,
–স্টপ ইট নূর। হোয়াট দ্য হেল আর ইউ ডুয়িং? হ্যাভ ইউ গন ম্যাড?
নূর এবার আদিত্যকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে উঠলো,
–হ্যাঁ হ্যাঁ পাগল হয়ে গেছি আমি। আপনি এনেছেন আমাকে এই অবস্থায়। সবকিছু আপনারই তো দান।
আদিত্য এবার দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে আবেগী কন্ঠে বলল,
–হুঁশশ, শান্ত হও সোনা।তোমাকে এভাবে দেখতে পারছিনা আমি। কি হয়েছে বলো আমাকে? আই প্রমিজ, সব ঠিক করে দিবো আমি।
নূর আদিত্যকে ছাড়িয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
–ঠিক করে দিবেন! কি ঠিক করে দিবেন! আর কতবার ঠিক করবেন? নিজেই আমাকে মেরে ফেলে আবার নিজেই কীভাবে ঠিক করে দিবেন? বলুন না? আমিও একটু জানতে চাই কীভাবে পারেন আপনি? একটি ব্যক্তির মনকে দুই দুইবার কীভাবে হ,ত্যা করতে পারেন আপনি? একবার ধোঁকা দিয়ে স্বাদ মেটেনি আপনার। তাইতো এই বিয়ের নাটক সাজিয়ে আরও একবার ধোঁকা দিলেন আমাকে।
চমকে গেল আদিত্য। তারমানে নূর সব জেনে গেছে। সেকারণেই এমন করছে ও? এখন কীভাবে সামলাবো নূরকে আমি? আদিত্য ঢোক গিলে নূরের দিকে এগিয়ে গিয়ে নূরকে শান্ত করাট চেষ্টা করে বলল,
–নূর প্লিজ ভুল বুঝোনা আমাকে। আমার কথা শোনো প্লিজ ।
নূর অতিরিক্ত আহত হয়ে আজ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। যার ফলে সে অস্বাভাবিক স্বরে বলতে লাগলো,
–হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন না! আপনিই তো বলবেন। সবই তো আপনার ইচ্ছেতেই হবে। আপনি যা চান সেটাই তো হয়। প্রথমে অমালিয়ার ব্যাপারে আপনি যা চাইলেন সেটাই হলো। তারপর আপনার আবার মন চাইলো আমার জীবনে তুফান করতে চলে এলেন। আর যখন আপনি দেখলেন আমাকে অন্য বিয়ে করতে চায় । তখন আপনি এই বিয়ের ষড়যন্ত্র করলেন।
নূর হাতে তালি বাজিয়ে তিরস্কারের সুরে বলল,
–ওয়াও মিঃ আদিত্য ওয়াও। চ্যালেঞ্জ জিতার জন্য কত নিচে নামলেন। আসল কথা হলো সেদিন চ্যালেঞ্জে হেরে যাওয়াটা আপনি নিতে পারেননি৷ আপনার ইগো হার্ট হয়েছিল। দ্য সুপারস্টার আদিত্যকে কেউ হারিয়ে দিলো সেটা আপনি সহ্য করতে পারছিলেন না। তাইতো এই জঘন্য নাটক করলেন। শুধুমাত্র চ্যালেঞ্জে জিতার জন্য আমার মান সম্মান নিয়ে খেলতেও আপনি একবারও ভাবলেন না। পুরো দেশের সামনে আমাকে বদনাম করতেও পিছুপা হলেন না। আপনার কাছ থেকে আর আশায় কি করা যায়। সম্মান নিয়ে খেলা তো আপনাদের দুই ভাইয়ের হবি। এখন বুঝতে পারছি আদ্রর মাঝে ওই সৎ গুণ কোথাথেকে এসেছে।
আদিত্য নিজেকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করে বলল,
–নূর চুপ করো। রাগের মাথায় এমন কিছু বলোনা যারজন্য পরবর্তীতে অনুশোচনা করতে হয় তোমাকে।
কিন্তু নূর থামলোনা। সে নিজের মতো করে বলে যেতে লাগলো,
–অনুশোচনা আর কি হবে? আমাকে আর কোনো কিছুরই যোগ্য রাখেন নি আপনি। পুরোপুরি হারিয়ে দিয়েছেন আমাকে। অভিনন্দন! জিতে গেছেন আপনি।
নূর দুই হাতে ছড়িয়ে নিজেকে দেখিয়ে বলল,
–তো নিন, এই আপনার উইনিং ট্রফি। সবকিছু তো আমার এই শরীরটাকে পাওয়ার জন্যই তাইনা? তো নিন, প্রস্তুত আপনার ট্রফি। নিজের জয়ের সুখ নিন। নিজের পুরুষত্বকে গর্বিত করুন।
ব্যাস! এতক্ষণ ধরে নূরের সব অপবাদ সহ্য করতে পারলেও এবার আর পারলোনা আদিত্য। রাগ,কষ্ট আর প্রচন্ড রকমের আহত হয়ে আদিত্যর সব বিধ্বস্ত হয়ে গেল। বুকের মাঝের সবজায়গায় যেন অগ্নিকুণ্ড ছড়িয়ে পড়লো। ক্রোধের সর্বসীমা অতিক্রম হয়ে গেল তার। তীব্র আহত হৃদয়ের আর্তনাদ সইতে না পেরে আদিত্য এমন একটা কাজ করে বসলো যা সে তার ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর স্বপ্নেও ভাবেনি। আদিত্য ক্রোধের বিষাক্ততা সহ্য করতে না পেরে তীব্র ক্ষিপ্ত স্বরে “নূরররর” বলে, ঠাসস করে নূরের গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে দিলো। থাপ্পড়ের আঘাতে নূর ছিটকে মাটিতে পড়ে গেল। আদিত্যর চোখে মুখে র,ক্ত উঠে গেছে। সে নূরের কাছে গিয়ে নূরের চুলের মু,ঠি ধরে নূরের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে তীব্র ক্রোধিত স্বরে বলল,
–কি বললি! কি বললি তুই! তোর শরীর চাই আমার! তোর সাহস কি করে হলো এই কথা বলার। ছিহহ্। তুই শুধু আমাকে না, আজ আমার ভালোবাসাকে গালি দিয়েছিস। আমাকে নিয়ে যা খুশি বলতিস।আমি কিচ্ছু বলতাম না। কিন্তু তোর সাহস কি করে হলো আমার পবিত্র ভালোবাসাকে এভাবে নোংরা বলার! হ্যাঁ মানলাম আমি তোকে বিয়ে করার জন্য ওসব করেছিলাম। কিন্তু একবারও জানতে চেয়েছিস কেন করেছি! কারণ এইছাড়া আর কি করতাম আমি। চোখের সামনে তোকে অন্য কারোর বউ হয়ে যেতে দেখতাম?
নূর এবার আদিত্যকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলল,
–তো কি আপনার মতো বেঈমানকে বিয়ে করতাম?
আদিত্য আরও ক্ষিপ্র স্বরে বলল,
–কি একি কথা লাগিয়ে রেখেছিস! বেঈমান বেঈমান। হ্যাঁ মানলাম বেঈমানী করেছি। কিন্তু কি করতাম আমি? নিজের গর্ভধারিণী মাকে চোখের সামনে মরতে দিতাম? সন্তানের সামনে মা মৃ,ত্যু,র হুমকি দিলে সন্তান কী করতে পারে? তুমিও তো এখানে তোমার মায়ের কারণেই বাধ্য হয়ে এসেছ। তাছাড়া কি তুমি আসতে? তারপরও আমি নিজেকে নির্দোষ বলছিনা। আমি দোষ করেছি। আর যার সর্বোচ্চ শাস্তিও পেয়েছি। এখনো পাচ্ছি। প্রয়োজনে সারাজীবনও পেতে রাজি। কিন্তু তুমি আজ যা করলে তাতে নিজের ওপরই ঘৃণা হচ্ছে আমার। কারণ আমি তোমার মতো একটা মেয়েকে ভালোবেসেছি।আজ বুঝতে পেরেছি তুমি আসলে আমার ভালোবাসার যোগ্যই না। পাথরে ফুল ফোঁটানো সম্ভব। কিন্তু তোমার মতো নারীকে ভালোবাসা মানে নিজেকেই ছোটো করা। আজ তুমি আমাকে না। আমার ভালোবাসা টাকেই মেরে ফেললে। এরজন্য তোমাকে কোখনো ক্ষমা করবোনা আমি নূর। কখনো না।
বলেই সামনের টি টেবিলে লাথি মেরে বেড়িয়ে গেল আদিত্য। নূর ধপ করে নিচে বসে পড়লো। আদিত্যর কথায় এতো কষ্ট হচ্ছে কেন ওর? কেন নিঃশ্বাস আঁটকে আসছে? ও কি কোনো ভুল করলো?
চলবে…..