#আমার_অবেলায়_তুমি
#সানজিদা_বিনতে_সফি(সাথী)
#পর্ব_ ১৯
মাহতাব জয়নাল বেপারীর সামনে সোজা হয়ে বসে আছে৷ শান্ত চোখে তার হাজার ক্রোধ। জয়নাল বেপারীর পাশেই তার দুই ছেলে দাঁড়িয়ে। তারা কপাল কুচকে মাহতাবের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ এতো রাতে মাহতাবের আগমন আর এমন শান্ত ভয়ংকর দৃষ্টির মানে কিছুই তাদের মাথায় ঢুকছে না। জয়নাল বেপারীর বড় ছেলে জাবির আজ বাড়িতেই আছে। তারা তিন ভাই জয়নাল বেপারীর প্রথম স্ত্রী মরিয়মের সন্তান। মরিয়ম বিবি বেচে থাকতেই জয়নাল বেপারী আলেয়া বেগমকে বিয়ে করেন। স্বামীর এই বেঈমানী মেনে নিতে পারেননি তিনি। তাই এক কাপড়ে সংসার ছেড়েছেন। জাবির বেশিরভাগ সময় তার সাথেই থাকে। বাবার প্রতি তেমন একটা টান নেই তার। কিন্তু ছোট দুই ভাই একেবারে তার বাবার মতো হয়েছে। দয়া মায়াহীন নিষ্ঠুর প্রকৃতির। মধুরিমা কে সে ছোট বোনের মতো স্নেহ করে। যতদিন জাবির এই বাড়ি থাকতো মধু অনেকটা স্বস্তিতে থাকতো। জয় আর সামির তার উপর হাত উঠাতে পারতো না। অন্তত প্রতিদিনের মারধর থেকে বেচে যেতো সে। জাবির চেয়েছিলো মধুকে তার সাথে নিয়ে যেতে। কিন্তু তার মায়ের ঘরে সতীনের মেয়ের জায়গা হবে না। তাছাড়া মধুকে দেখলেই তার মায়ের পুরনো ঘা তাজা হয়ে উঠবে। তাই সেও নিয়ে যায়নি। মাহতাব জয়নাল বেপারী আর বাকি সবাইকে জেলে ঢুকালেও জাবির চুপ ছিল।
— মধু এ বাড়িতে বড় হয়েছে। আপনারা ওকে ছোট থেকে নিজেদের সাথে রেখেছেন। তাই প্রশ্নটা আপনাদের কাছেই করছি। মধুর সাথে কে অস*ভ্যতা করেছে? এক কথায় উত্তর চাই। বেশি কথা শোনার ধৈর্য আমার মধ্যে অবশিষ্ট নেই। তাই তাড়াতাড়ি উত্তর দিন।
জয়নাল বেপারী কুলকুল করে ঘেমে যাচ্ছেন। আলেয়া বেগম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। মাহতাবের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না সে। মাহতাবের শান্ত চোখে ক্রোধের মাত্রা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আলেয়া বেগম জয়নাল বেপারীর দিকে তাকিয়ে সন্দিহান গলায় বলল,
— জামাই এসব কি বলছে জয়নাল? আর তুমি কেন চুপ করে আছো? মধুর সাথে এই বাড়িতে কেউ অসভ্যতা করেনি বলছো না কেন? ওই মুখপু*ড়ি এখানে থাকতেও শান্তি দেয়নি এখন শ্বশুর বাড়ি গিয়েও শান্তি দিচ্ছে না।
শেষের কথা গুলো বলে আলেয়া বেগম রাগে গজগজ করতে । জাবির এক দৃষ্টিতে তার বাবা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহতাব হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে। তার ইচ্ছে করছে এখনি এই সব ক’টা কে মাটিতে পু*তে দিতে। আর আলেয়া বেগমের দিকে তাকাতে গা গোলাচ্ছে। এ কেমন মা! মা রা কি এরকম হয়? উহু,মা কখনো এমন হতে পারে না। মায়েরা হয় মমতাময়ী। তারা শুধু হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসতে জানে। এ মহিলা কারো মা হওয়ার যোগ্য না। মাহতাব নিজের ফোন থেকে মেহরাব কে এস এম এস করে এখানে আসতে বললো। তার আবার একটাই সমস্যা,অতিরিক্ত রাগ উঠলে মুখ থেকে কথা বের হতে চায় না। যেমন এখন সে মূর্তিমান মানবের মতো জমে বসে আছ।
সবার স্তব্ধতা দেখে মুখ খুললো জাবির। জয়নাল বেপারীর দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলল,
— ভাইয়ার প্রশ্নের জবাব দাও বাবা। সে এতো রাতে এখানে নিশ্চয়ই আমাদের সাথে মজা করতে আসেনি। নিশ্চয়ই এমন কিছু হয়েছে যে কারণে তার এতো রাতে এখানে আসতে হয়েছে। তাই সময় নষ্ট না করে জবাব দাও। আমাদের সকালে অফিস আছে।তুমি আর তোমার ছেলেদের মতো বসে বসে খাই না।
ছেলের কর্কশ গলায় দমে গেলো জয়নাল বেপারী। ভীতু চোখে তাকালো ছোট দুই ছেলের দিকে। জয় আর সামির ভয়ে কাপছে। জাবির কে তারা ভালো করেই চেনে। সত্যি টা জানতে পারলে মে*রে হাত পা ভে*ঙে দিতে দু’বার ভাববে না।
আলেয়া বেগম বুঝলেন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। আগের বার জেল থেকে আসার পর পাড়াপ্রতিবেশি তাদের উপর ছিঃ ছিঃ করেছে। এখনো কেউ খুব একটা মিশতে চায় না। গলির চায়ের দোকানে তাদের নিয়ে নিত্যদিনের বৈঠক বসে। এর মধ্যে আবার কিছু হলে এ পাড়ায় আর থাকা হবে না। সবাই এক*ঘরে করে দিবে তাদের।
জয়নাল বেপারী এবার গলা পরিস্কার করে একটু গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করলেন। মাহতাবের দিকে তাকিয়ে না জানার ভান করে বললেন,
— আপনি কি বলছেন বুঝতে পারছি না। এখানে আমরা মধুর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি ঠিক তবে তার সাথে অসভ্যতা করার কেউ নেই এ বাড়িতে। আমরা সবাই তার আপনজন। বাবা ভাই হই। এসব মুখে আনাও পাপ জামাই।
জয়নাল বেপারীর ভোলা ভালা চেহারা দেখে মাহতাবের মেজাজ খারাপ হলো। চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে রইলো জয়নাল বেপারীর মুখের দিকে। কয়েকটা শক্ত ঘু*সি বসিয়ে চোয়াল ভে*ঙে দিতে পারলে মনটা একটু শান্ত হতো। জয়নাল বেপারীর থেকে চোখ সরিয়ে মাহতাব ঘড়ির দিকে তাকালো। এতক্ষণে মেহরাবের চলে আসার কথা। ছোট ভাই ডাক্তার হলেও হাড় ভা*ঙ্গার অভিজ্ঞতা তার কম নেই। স্কুল কলেজে এজন্য অনেকবার ই মাহতাব কে জরিমানা গুনতে হয়েছে। আজ ভাইয়ের এই গুপ্ত প্রতিভা কাজে লাগানোর সুযোগ হাতছাড়া করবেনা মাহতাব। মাহতাব কে দিয়ে ভাঙ্গবে আবার তাকে দিয়েই পট্টি করাবে। সে নিজে কিছু করবে না। শ্বশুরের গায়ে হা*ত তো*লা টা ভালো দেখায় না।
জাবির হতভম্ব চোখে বাপ ভাইদের দিকে তাকিয়ে। এই ছোট ভাই দুটো কিছুদিন আগেও তার কাছে চকলেটের বায়না ধরেছে। মনে হচ্ছে এই তো সেদিন সে তার বাবার কাধে চড়ে বাজারে গিয়েছে। তার চেনাজানা মানুষ গুলো কিভাবে এতো বদলে গেলো! এটা কি তার নিজের পরিবার! জাবির আলেয়া বেগমের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো। এই মহিলা তাদের পুরো পরিবারটা কে ধ্বং*স করে দিয়েছে। জাবিরের মন চাইলো নিজেই নিজের গলা চে*পে ম*রে যেতে। লজ্জায় চোখ তুলে মাহতাবের দিকে তাকাতে পারছে না সে। কে এমন নিকৃষ্ট কাজ করেছে তা শোনার সাহস হচ্ছে না তার। ঘৃণায় পেট মুচড়ে উঠছে।
বাইরে গাড়ির শব্দ পেতেই মাহতাব নড়েচড়ে বসলো। ছোট ভাইয়ের কাছে এসব এক্সপ্লেইন করাও অস্বস্তিকর। তবে তার ভাই যথেষ্ট বুদ্ধিমান। কিছু খুলে বলতে হবে না নিশ্চিত।
মেহরাব শার্টের হাতা গোটাতে গোটাত ঢুকলো। তার পিছনে শামীর। মামার সাথে একপ্রকার জোর করেই এসেছে সে। ভিতরে ঢুকেই জয় কে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। যেন বহুদিনের পুরনো বন্ধুকে খুজে পেয়েছে সে। কেউ কিছু বোঝার আগেই দৌড়ে গিয়ে ঠিক নাক বরাবর কয়েক ঘা* বসিয়ে দিলো। মাহতাব সহ সবাই দাঁড়িয়ে গেছে। মেহরাব হাতা গোটাতে ভুলে ভাগিনার দিকে তাকিয়ে আছে। কি থেকে কি হলো কারোর মাথায় ঢুকছে না। জয়ের নাক ফে*টে ফোয়ারার মতো র*ক্ত বেরুচ্ছে। জয়নাল বেপারী আর্তনাদ করে ছেলে কে আগলে নিয়েছে। শামীর বিজয়ী হাসি হাসতে হাসতে বলল,
— কলেজে থাকতে এই ছেলেই আমার নাক ফা*টিয়ে দিয়েছিলো মামা। মা*ইর খেয়ে বাসায় যাওয়ার অপরাধে মাও আমাকে জুতো দিয়ে মেরেছে। আজ শোধবোধ করে দিলাম। ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।
মাহতাব আবার চুপচাপ নিজের জায়গায় বসে পরলো। মেহরাব শামীরের পিঠ চাপড়ে বলল,
— আমরা মোটেও কিছু মনে করিনি। এরা ও করেনি। তাই না?
জাবির বিষাদ মুখ নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। নিজের পরিবারের সাথে এখন যা হবে তা সে সামনে বসে সহ্য করতে পারবে না। কাল সকালেই সে এ বাসা থেকে চলে যাবে। আর কখনো এখানে আসবে না। ছেলে হিসেবে যতটুকু দায়িত্ব তা দূর থেকেই পালন করবে।
মাহতাব মেহরাব কে উদ্দেশ্য করে বলল,
— এই তিনজন কে ততক্ষণ মা*রবে যতক্ষণ না এরা সত্যি বলছে। সামান্য পরিমাণ দয়া দেখাবে না। সব গুলোর মুখ বেধে নাও। আসেপাশের মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়। যাও শুরু করো।
মেহরাব আর উল্টো জিজ্ঞেস করলো না কোন সত্যির কথা জানতে চাইছে মাহতাব। সে নিজের কাজে লেগে গেলো।
শামীর কিছুটা বুঝতে পারলো ঘটনা। তাই সে চুপ করে মাহতাবের পাশে দাড়িয়ে রইলো। মনে মনে মধুকে নিয়ে শঙ্কিত হলো কিছুটা। অমানুষ গুলো আবার কিছু করেনি তো!
চলবে,,
(আমি আগের থেকে কিছুটা সুস্থ।অনেকদিন পরে গল্প দিলাম। কিছু শারীরিক কম্পলিকেশন্স আছে। চোখে ও কিছুটা কম দেখছি। রক্তশূন্যতা ও আছে।অস্বাভাবিক ভাবে চুল পরছে। দোয়া করবেন আমার জন্য। আপনাদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। তবে এই গল্পটা শেষ হলে হয়তো লম্বা সময় গল্প লেখা হবে না। আল্লাহ ভরসা। রি চেক করা হয় নি। কোথাও ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। ভালোবাসা সবাইকে।)