#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸
#পর্ব- ১৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরফান অর্ষাকে হিচকে টেনে ধরে,মিরা এসে তা দেখে ফেলে।বর্ণ তা দেখে আরফানের থেকে সরিয়ে থেকে,অর্ষাকে পুনরায় কোলে তুলে চেচানো সুরে বলে, ‘ বলেছিলাম না?আপনি হাঁটতে পারবেন না। পরে যাবেন। তবে কেন আগ বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নামতে গেলেন। যদি কিছু হয়ে যেতো। ‘
অর্ষা কিছু বলার পূর্বেই মিরা এগিয়ে এসে অস্হির হয়ে বর্ণকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে, ‘ কি হয়েছে অর্ষার? ‘
‘ আমার গাড়ির সাথে উনার বাইকের ছোট্ট একটা এক্সি/ডেন্ট হয়েছিলো, ডোন্ট ওয়ারী আমি উনাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে, ওয়াশ করিয়ে এনেছি। রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। ‘
বর্ণের উত্তরে মিরা আরফানের দিকে আড়চোখে তাঁকিয়ে ফের অর্ষাকে প্রশ্ন করে, ‘ কোথায় ছিলি তুই? ‘ অর্ষা মিরাকে আসস্হ করে বলে, ‘ আমি কাউন্সালারের মিটিং এ ছিলাম, তিনি ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ফিরে আসার পথে হুট করে অঘ/টন ঘটে যায়। ‘
মিরা বর্ণকে উদ্দেশ্য করে দ্রুততার সাথে বলে,’ বর্ণ ভাইয়া আপনি ওকে নিয়ে গিয়ে বসানোর ব্যবস্হা করুন। আমি দুধের ব্যবস্হা করছি। দুধ খেলে কিছুটা দূর্বলতা কাটবে। ‘
মিরার কথায় সায় জানিয়ে বর্ণ অর্ষাকে ভেতরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। অর্ষা এবং বর্ণের কথায় মিরার ভিতরে থাকা সমস্ত সংদেহ নিমিষেই দূরে ঠেলে অপরাধবোধের জন্ম দেয়। মনে মনে কয়েকবার ক্ষমা চেয়ে নেয় অর্ষার কাছ থেকে।আরফান মিরাকে এড়িয়ে ভিতরের দিকে যাচ্ছিলো। মিরার একটা প্রশ্ন শুনে সে থেমে যায়। মিরা আরফানের হাত ধরে, নিজের সামনাসামনা দাঁড় করিয়ে বলে, ‘ তুমি এতো লেট করেছো কেন আরফান? সবকিছু নিয়ে কিসের এতো অনীহা তোমার? তুমি কি আদোও বিয়েতে ইন্টেরেস্টেড? ‘
আরফান নিষ্চুপ হয়ে গেলো। অপরদিকে বর্ণ ছাদে অর্ষাকে কোলে তুলে সকলের সামনে নিয়ে আসলো। অরু মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। রোজিয়ানাও আড়চোখে দেখে নিলো। সকলে কেমন ভাবে আড়চোখে দুজনকে দেখে যাচ্ছে। অর্ষার কেমন একটা অস্বস্হি লাগলো। শার্ট খামছে চোখের ইশারায় বর্ণকে বুঝাতে চাইলো, তাকে যেন নামিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু বর্ণ আদোও কি বুঝলো? সে কোনপ্রকার কেয়ার না করে, অর্ষাকে কোলে করে একটি চেয়ারে বসিয়ে দিলো এবং সকলকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ ওয়াট?এখানে ড্রামা চলছে? এইটা ব্যাচালার পার্টি,কোন নাট্যমঞ্চ না। ‘
বর্ণের কথায় সকলে চোখ নামিয়ে ফেললো। রোজিয়ানা নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। বর্ণ পাশে বসে পরলো অর্ষার। কয়েকজন ওয়েটার এসে সকলকে ড্রিংক পরিবেশন করলো। বর্ণকে নিজ পাশ বসতে দেখে, কিছুটা সরতে চাইলো অর্ষা। কিন্তু পারলো না। নীচের দিকে তাকিয়ে দেখে বর্ণ বেশ ভাব নিয়ে তার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। যেন হাত ছেড়ে দিলেই অর্ষা কোথাও পালিয়ে যাবে। অর্ষা কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে তেজি গলায় বলে, ‘ আপনি শুরু করেছেন টা কী? দেখুন! আমাকে এইভাবে টাচ করলে, আপনাকে আমি। ‘
‘ আপাতত আপনার পায়ে চ/ট লেগেছে, সুতরাং মা/রা/মা/রি। আপনাকে দিয়ে হবে না। খেয়ে নিন চুপচাপ। ‘
কথাটি বলে অর্ষার দিকে দুধের গ্লাস এগিয়ে দেয়। একদম গরম গরম। অর্ষা বর্ণের দিকে তাঁকাতেই, বর্ণ
নিজের কলার ঝাড়তে ঝাড়তে বলে, ‘ সার্ভেন্টকে দিয়ে গরম করিয়ে এনেছি। খেয়ে নিন। চটপট ভালো লাগবে। বেশি গরম। ফু দিয়ে দেই কেমন? হাল্কা ঠান্ডা হবে তাহলে। ‘
বর্ণ দুধের গ্লাসে হাল্কা ফু দিতে থাকে। অর্ষা অবাক পানে শুধু নিষ্পলক তাঁকিয়েই থাকে। তার মনের সুপ্ত গহীনে শুধু একটাই প্রশ্ন উঁকি দেয়, ‘ এতো খেয়াল রাখেন কেন আমার? আমি আপনার কে হই? আপনি তো অচেনা কেউ, তবে কেন এতো চেনা? কেন এতো আপন? ‘
বর্ণ অর্ষার দিকে দুধের গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
‘ জানেন মিস ঝাঁঝওয়ালী? ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার সাধ্য হয়তো আমাদের থাকে না, কিন্তু আড়ালে তাকে আগলে রাখার সাধ্য থাকে। ভালোবাসা না হোক, তাকে আগলে রেখে আজীবন ভালোবাসাতেই তো প্রাপ্তি পাওয়া যায়। তাই না? ‘
বর্ণের প্রশ্নের কোনরুপ উত্তর দিতে পারলো না অর্ষা।
_________________
অন্যদিকে মিরার প্রশ্নে আরফান মিরার গালে হাত রেখে, কোমল সুরে বলে, ‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি মিরা। আমি কেন বিয়ে করতে চাইবো না। হ্যা অনেক কারণে অকারণে তোমাকে আমি সময় দিতে পারছি না। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি, এন্ড ট্রাস্ট মি!
বিয়ের পরে ভালোবাসার কোন কমতি আমি থাকতে দিবো না। একটিবার শুধু আমায় ভরসা করে দেখো।’
মেয়েদের স্বভাবই, একটি মধুর কথা শুনলেই, অপর পাশের মানুষকে সহজে বিশ্বাস করে নেওয়া। সে যদি ভালোবাসার মানুষ হয়, তখন জেনে না বুঝে নির্দ্বিধায় তাকে বিশ্বাস করে ফেলে, তাকে ভরসা করে ফেলে, কিন্তু অপরপ্রান্তের থাকা ব্যাক্তি কী আদোও সেই ভরসার যোগ্য? মিরা আরফানের বুকে মাথা রেখে অনুনয়ের সুরে বলে,
‘ আমাকে যদি তুমি মে/রেও ফেলো ।কোনরুপ অভিযোগ করবো না। মৃ/ত্যুর যন্ত্রনা সহ্য কটা যায়, কিন্তু আমাকে কখনো ধোঁ/কা দিও না। ভালোবাসার মানুষের ধোঁ/কা সহ্য করা যায় না। বড্ড কষ্ট হয়। ব্যাথা করে বুক। তখন সেই ব্যাথা আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। ‘
আরফান ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মিরাকে। ছাদের উপর থেকে রোজিয়ানা তা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসঁলো।
মিরা এবং আরফান ছাঁদে আসতেই, সকলে তাদের ঘিড়ে ধরে।
অরু না চাইতেও বার বার অর্ষা এবং বর্ণকে দেখে যাচ্ছে। তার কিছুতেই দুজনকে একসাথে সহ্য হচ্ছে না। সে বর্ণের দিকে এগিয়ে এসে, মিষ্টি হেসে বললো,
‘ বর্ণ ভাইয়া, গাঁয়ে হলুদের দিন তো আসর জমিয়ে দিয়েছিলে, আজকেও কিন্তু গাইতে হবে, তাও আমার সঙ্গে। আপনার বেয়ানের এইটুকু আবদার তো রাখতে হবে। আপনাকে। কি বলো সবাই?’
অরুর প্রশ্নে সকলে একসাথে ‘ একদম ‘বলে চেচিয়ে উঠে।
বর্ণ তার শার্টের কলার সামান্য ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ ওকে ওকে লেডিস! আই উইল ট্রাই। স্টার্ট মিউজিক। ‘
সকলে উচ্ছাসে মেতে উঠে। হাত বাড়িয়ে অরুর হাত ধরে নিজের দিকে টেনে ধরে, কিছুক্ষন ঘুড়িয়ে গাইতে থাকে, ‘
আমি তোমাকে আরো কাছে থেকে
তুমি আমাকে আরো কাছে থেকে
আমি তোমাকে আরো কাছে থেকে
তুমি আমাকে আরো কাছে থেকে
অরু লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। সে আলতো করে বর্ণের বুকে হাত রাখে। বর্ণ আড়চোখে অর্ষার দিকে তাঁকায়। কেমন ক্ষিপ্তভাবে মুখ ঘুড়িয়ে বসে রয়েছে। বর্ণ অরুকে ঘুড়িয়ে দেয়৷ বর্ণের আরেকজন ফ্রেন্ড অরুকে নিয়ে নাঁচতে থাকে। অরু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। বর্ণ অর্ষার কাছে হাটু গেড়ে বসে গাইতে থাকে,
‘ যদি জানতে চাও, তবে
ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও
ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও
বর্ণ অর্ষার নিজের অজান্তে গান গাইতে গাইতে অর্ষার গালে হাত রাখে। অর্ষা নেত্রপল্লব জোড়া বন্ধ করে ফেলে। তার অশ্রু এসে বর্ণের হস্তে এসে লিপ্ত হয়। অর্ষা অশ্রুভেঁজা আখির দিকে তাকিয়ে বর্ণ বলে,
‘ আমার দিকে মায়াবী চোখে তাঁকাবেন না, আপনাকে ভালোবাসাতে ইচ্ছে করে খুব। ‘
_________________
আজ মিরা এবং আরফানের বিয়ে। সকাল থেকেই নানা চিন্তায় রয়েছে অর্ষা। আরফানের মতো বাজে ছেলের সাথে তার মরুর বিয়ে হবে,ভাবতেই শরীর শিউরে উঠছে তার। মিরাকে পার্লার থেকে সাঁজানোর জন্যে লোকরা এসেছে। অর্ষা একপলক মিরাকে দেখে নেয়। গাঁয়ে তার লাল লেহেংগা। চোখমুখে তার ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার খুশি যেন উপচে পড়ছে। অর্ষার খুব খারাপ লাগে। যাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলছে মিরা, তার স্বরুপ জানলে কতটা কষ্ট পাবে মিরা? কিন্তু সারাজীবন কষ্ট পাওয়ার থেকে খনিকের কষ্ট পাওয়া অনেক ভালো।
মিরাকে প্রায় সাঁজানো শেষ, এদিকে পাত্রপক্ষরাও চলে আসছে। অর্ষার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে…..
চলবে কি?