#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_১৩
#লেখক_দিগন্ত
নিলা আর রুশা একসাথে সকালে হাটতে বেরিয়েছিল।কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর নিলা দেখতে পায় তাদের সামনে দাড়িয়ে আছে নিহান চৌধুরী।
নিহানকে দেখে নিলার খুব রাগ হয়।কিন্তু সে ভাবে কালকের ঘটনার জন্য আজ নিহানের উপর প্রতিশোধ নেবে।নিলা তখন রুশার কানে কানে কিছু বলে।নিলার কথা শুনে রুশা নিজের মাথায় হাত দিয়ে বলে,
-“তোর মাথাতে রাজ্যের যত কূটবুদ্ধি আসে।এখন তোর জন্য আমার না কোন বিপদ হয়।”
-“আরে কিছু হবে না।আমার উপর বিশ্বাস রাখ রুশা।”
রুশা নিলার কথামতো নিহানের সামনে গিয়ে বলে,
-“আমার বোনকে কোথায় খুঁজে পাচ্ছিনাসকাল থেকে খুঁজে যাচ্ছি আপনি আমায় একটু সাহায্য করতে পারবেন?”
নিহান যেহেতু একজন সিআইডি অফিসার ছিল তাই সে সাথে সাথে রাজি হয়ে যায় এবং রুশার সাথে তার বোনকে খুঁজতে যায়।
নিলা এই সুযোগে গিয়ে নিহানের গাড়ির ট্রায়ার পামচার করে দেয়।আর অট্টহাসি হেসে বলে,
-“এবার আপনি বুঝছেন মিস্টার নিহান চৌধুরী নিলার সাথে পা*ঙ্গা নিলে কি হয়।”
রুশা নিহানকে একটু দূরে নিয়ে যায়।নিলা রুশাকে ফোন দিয়ে বলে,
-“কাজ হয়ে গেছে।এখন তোকে যা করতে বলেছি তাই কর।”
রুশা কলটা কে*টে দিয়ে নিহানকে বলে,
-“আমার মা ফোন করেছিল।উনি বললেন আমার বোন নাকি বাড়িতে পৌঁছে গেছে।আমাদের আর খুঁজতে হবে না।আমাকে বাড়িতে ফিরতে হবে।আপনি যান আচ্ছা অনেক ধন্যবাদ।”
কথাটা বলে রুশা তাড়াতাড়ি করে চলে যায়।রুশার ব্যবহারে নিহানের বেশ খটকা লাগে।নিহান বলতে থাকে,
-“মেয়েটাকে কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে।”
নিহান ব্যাপারটাকে আর পাত্তা না দিয়ে ফিরে আসে।নিজের গাড়ির কাছে গিয়ে দেখে ট্রায়ার পামচার হয়ে গেছে।নিহান তখন পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারে যে ঐ মেয়েটাই তার সাথে কোন প্ল্যান করেই এমন করেছে।
তখনই নিহানের কাছে কল আসে।একজন সিআইডি অফিসার তাকে কল করে বলে,
-“নিহান কোথায় তুমি? তোমাকে না বলেছিলাম সাভারের দিকে নজর রাখতে।সাভারে আজ একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান ছিল পা*চারকারীদের।আমি এখুনি খবর পেলাম একটা মেয়েকে নাকি সাভার থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।তুমি কি করছিলে?”
নিহান তখন বলে,
-“সরি স্যার, ভুল হয়ে গেছে।কিন্তু কোন চিন্তা করবেন না।অপরাধীরা যতই চালাক হোক নিজের অপরাধের প্রমাণ রেখেই যায়।আমাকে কিছুটা সময় দিন।আমি অপরাধীদের কাছে পৌছানোর উপায় পেয়ে গেছি।”
নিহান তার গাড়িতে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসে।এই সিসিটিভি ক্যামেরাতে নিশ্চয়ই সব রেকর্ড হয়েছে।
নিহান সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে যা দেখে তাতে আরো বেশি অবাক হয়।ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নিলা তার গাড়ির চাকা পামচার করে দিচ্ছে।
নিহান বলে,
-“তাহলে আমার সন্দেহই ঠিক ছিলো।নিলা হক এসবের সাথে জড়িত।তাইতো বলি যার বাবা-দাদা এরকম কাজের সাথে যুক্ত ছিল তাদের মেয়ে আবার কত ভালো হবে।”
___________
নিলা আজ আকাশের কাছে এসেছে।সামনে তার পরীক্ষা।এই পরীক্ষা তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।কারণ এই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারলে তবেই একমাত্র সে উকিল হতে পারবে।
আকাশ নিলাকে পরীক্ষার ব্যাপারে সবকিছু বুঝিয়ে দেয়।নিলাও মনযোগ দিয়ে সব বোঝার চেষ্টা ছিল।হঠাৎ আকাশের দরজায় কেউ কলিং বেল বাজায়।দরজা খুলে নিহানকে দেখে আকাশ খুশি হয়।
আকাশ নিহানকে বলে,
-“আকাশ তুই? এতদিন পর।আয় ভেতরে আয়।”
আকাশ আর নিহান স্কুল থেকে একে অপরের বন্ধু।নিহান ভেতরে ঢুকেই নিলার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি এখানে তোর সাথে দেখা করতে আসিনি আকাশ।আমি এসেছি অন্য কাজে।”
নিলার কিছুটা ভয় লাগে।নিলা মনে মনে বলতে থাকে,
-“উনি কি সকালের ঘটনাটার ব্যাপারে কোনভাবে আমায় সন্দেহ করছেন।”
পরক্ষণেই তার মনে হয়, আমিও কিসব ভাবছি।উনি কিভাবে আমার ব্যাপারে জানবেন? আমাকে তো উনি দেখেনই নি।
নিহান নিলার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
-“চলো আমার সাথে।তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।”
নিলা ভয়ে চুপসে যায়।তাহলে কি উনি সব যেনে গেলো? জানলেই বা-কি? আমি ভয় পাইনা।নিলা নিহানকে বলে,
-“কি ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেব জানতে পারি কি?”
নিহান তখন বলে,
-“নারী পা*চারের ব্যাপারে।”
-“আপনাকে তো যা বলার সব বলে দিয়েছি।আর কি জানতে চান?”
আকাশ বলে ওঠে,
-“এসব তুই কি বলছিস নিহান? নিলা এসব ব্যাপারে কি জানে? ও তো একজন সাধারণ মেয়ে।আমি ওকে চিনি ও এসবে কোনভাবে জড়িত থাকতে পারে না।”
-“আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে।তাই আমি কারো কথা শুনতে বাধ্য নই।মিস নিলা হক তাড়াতাড়ি চলুন আমার সাথে।আপনার বোন রুশাকে নিয়ে আসার জন্যেও লোক পাঠিয়েছি।”
নিলা রেগে গিয়ে বলে,
-“আপনার সাথে আমার শত্রুতা থাকতেই পারে।আমার বোনকে এসবের সাথে জড়াচ্ছেন কেন?”
-“আমি ব্যক্তিগত কারণে কিছু করিনা।আমি যা করি ভালোর জন্যই করি।”
নিহান আর কোন কথা না বলে নিলাকে চুপচাপ তার সাথে আসতে বলে।নিলাও তাই করে।
আকাশ নিলাকে অভয় দিয়ে বলে,
-“কোন চিন্তা করবে না।আমি দেখছি কি করা যায়।”
________________
সিআইডি অফিসারেরা নিলা ও রুশাকে সামনাসামনি বসিয়ে জেরা করতে থাকে।নিলা বেশ স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিলেও রুশা খুব ভয় পেয়ে ছিল।
নিলা রুশাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে শান্ত থাকতে বলে।সিআইডির হেড অফিসার আনোয়ার হোসেন নিলাকে জিজ্ঞাসা করেন,
-“তোমরা সত্য করে বলো তোমরা কি সত্যি নারী পা*চারের সাথে কোনভাবে জড়িত নও?”
-“আমি তো সেই কখন থেকে এই কথাই বলছি স্যার।আমরা কেউ এ-ব্যাপারে কিছুই জানি না।”
-“তাহলে তোমরা নিহান চৌধুরীর গাড়ি পাম*চার করে দিলে কেন?”
নিলা অফিসারকে সব ঘটনা খুলে বলে।সব শুনে আনোয়ার হোসেন হেসেই ফেলেন।তিনি নিহানকে বলেন,
-“মেয়েটা যা বলছে তা কি ঠিক? নিহানের সাথে কি তোমার ব্যক্তিগত শত্রুতা আছে? আর আমি এসব কি শুনছি তুমি ট্রাফিক রুলস ব্রে*ক করেছ।এটা কিন্তু একদম ঠিক নয়।”
-“না আসলে স্যার….সেদিন তাড়াহুড়োয় ছিলাম।ইন ফিউচার এই ভুল আর করবোনা।কিন্তু আপনি এই মেয়েটাকে একদম বিশ্বাস করবেন না।ভালো করে জেরা করলে সব সত্য জানা যাবে।”
নিলা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে,
-“আমি এসবের সাথে জড়িত নেই।আমাকে হাজারবার জিজ্ঞাসা করা হলেও আমি এই একই কথা বলব।কারণ এটাই সত্য।”
আনোয়ার হোসেন তখন বলেন,
-“ঠিক আছে।এবারের মতো তোমাদের ছেড়ে দিচ্ছি।আর কোনদিন নিহানের পেছনে লাগতে এসোনা।ও কিন্তু একজন সিআইডি অফিসার।আর তোমরা কিন্তু এখনো সন্দেহভাজনের তালিকায় আছো।তাই আমাদের না জানিয়ে দেশ বা শহরের বাইরে কোথাও যেতে পারবে না মনে রেখো।এখন তোমরা আসতে পারো।”
নিলা আর রুশা তখন চলে যায়।
রুশা নিলাকে বলতে থাকে,
-“দেখলি তো আমি তোকে আগেই বলেছিলাম এমন না করতে।তোর জন্য করতব বিপদ হয়ে গেল।”
-“তুই কোন টেনশন করিস না।আমি আছি তো।জাস্ট রিলাক্স কর।”
এদিকে নিহান আনোয়ার হোসেনকে বলে,
-“এটা আপনি কি করলেন স্যার? ওদের এভাবে যেতে দিলেন? আমার তো ওদেরকেই সন্দেহ হয়।”
-“আমি সুদীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সিআইডিতে আসি।মানুষের চোখ,মুখ দেখেই বলে দিতে পারি কে কেমন।ওদেরকে দেখে আমার অপরাধী মনে হয়নি।তবুও আমি ওদের নজরদারির মধ্যেই রাখব।”
-“তাহলে অপরাধী কে স্যার?”
-“সেটাই তো বড় প্রশ্ন।”
(চলবে)