#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_৪
#লেখক_দিগন্ত
নিলয় ও মেঘলা সিসিটিভিতে দেখে নিলয়ের গাড়িতে করেই কেউ নিলাকে নিয়ে গেছে।তখন মেঘলা রাগী চোখে নিলয়ের দিকে তাকায়।
নিলয় বলে,
-“এই গাড়িটা তো আমি গ্যারেজে ছিল।সেখান থেকে কেউ হয়তো নিয়ে গেছে।তুমি বিশ্বাস করো মেঘলা আমি কিছু করিনি।”
তখনই রুদ্র নিলাকে নিয়ে সেখানে চলে আসে।নিলাকে সুস্থ দেখে মেঘলা যেন প্রাণ ফিরে পায়।নিলয়ও স্বস্তি পায়।
নিলা বলে,
-“রুদ্র আঙ্কেল আমায় ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল।”
-“রুদ্র তুই আমার গাড়িটা পেলি কিভাবে?”
-“আমার গাড়িতে কিছু সমস্যা ছিল তাই গ্যারেজ থেকে তোর গাড়িটা নিয়েছিলাম।নিলার স্কুলের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলাম।নিলার কথা খুব মনে পড়ছিল তাই ওকে নিয়ে গেছিলাম।”
মেঘলা বলে ওঠে,
-“আপনার এভাবে আমাকে না জানিয়ে নিলাকে এভাবে নিয়ে যাওয়া উচিৎ হয়নি।”
-“দুঃখিত বৌদি।আসলে আমার খেয়াল ছিল না।যাইহোক আপনার আর নিলয়ের মধ্যে কিসব সমস্যা হয়েছে শুনলাম।নিলয় কিন্তু সত্যি আপনাকে ভালোবাসে।আপনি নিলয়ের সাথে সবকিছু ঠিক করে নিন না।”
-“আমি এই ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাইনা।”
কথাটা বলে মেঘলা চলে যায়।রুদ্র অদ্ভুতভাবে মেঘলার দিকে তাকিয়ে থাকে।
_______________
মেঘলার ভাই মেহেদী আজ অনেকদিন পর বিদেশ থেকে ফিরল।নিজের বোনের ব্যাপারে সব শুনে সে আর শান্তিতে থাকতে পারে নি।
এতদিন পর মেহেদীকে দেখে মেঘলা নিজেও খুব খুশি হয়।মেহেদী এসেই মেঘলাকে বলে,
-“ঐ কু*লা*ঙ্গারটা কোথায়? আজ আমি ওকে মে*রেই ফেলব।এত বড় সাহস আমার বোনকে ধোকা দেয়।”
-“তুই শান্ত থাক মেহেদী।নিলয় যা যা অপরাধ করেছে তার জন্য ওকে শাস্তি পেতেই হবে।”
মেহেদী কিছুটা শান্ত হয়।তখন হঠাৎ মেহেদীর ফোনে একটা কল আসে।কলটা দেখে মেহেদী খুশি হয় এবং ছাদে চলে গিয়ে রিসিভ করে।
-“তুমি নাকি দেশে ফিরেছ মেহেদী।আমি খুব খুশি হলাম খবরটা শুনে।কতদিন পর তোমায় দেখতে পারবো।”
-“হুম।এবার আমি যখন দেশে ফিরেছি তখন তোমাকে বউ করতে ঘরে তুলবই।খুব শীঘ্রই আমি আমার পরিবার নিয়ে তোমাকে দেখতে যাব সুমি!”
কথাটা শুনে সুমি মুচকি এসে কলটা কে*টে দেয়।সুমিকে এভাবে হাসতে দেখে তার মা এগিয়ে এসে বলে,
-“কিরে এভাবে হাসছিস কেন? রাসেল কল দিয়েছিল।”
-“না আম্মু।আমিই ওকে কল দিয়েছিলাম।ও বলল ওর পরিবারের সাথে আমাকে দেখা করাবে।রাসেল বিদেশে থাকাকালীন সময়েই তো আমরা ম্যাসেঞ্জারে কথা বলতাম।আর এভাবেই একে অপরের প্রেমে পড়ে গেলাম।”
-“জানিনা তুই সুখী হবিনা।কারণ অন্য কারো সংসার নষ্ট করে কখনো সুখী হওয়া যায়না।কিন্তু হাজার হোক তুই আমার মেয়ে তাই আমি চাইব তুই সুখে থাক।”
-“এসব কথা বলোনা তো আম্মু।তাছাড়া ঐ নিলয়ও ধোয়া তুলসীপাতা নয়।উনি নিজেই আমার জালে ফেসে গেছেন নিজের দোষে।প্রথমে আমার সাথে প্রেমের নাটক করল,তারপর কোন বরযাত্রী না নিয়েই বিয়ে করতে চলে এলো আর তারপর….।”
-“আচ্ছা থাক।কাল খুব সুন্দর করে সেজেগুজে চলে যাবি কিন্তু।যাতে তোকে প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে।”
-“ওকে।”
_________________
দিশা বসে বসে ফল কা*টছিল।রুদ্র তখন দিশার রুমে চলে আসে।রুদ্রকে দেখে দিশা বলে,
-“মিশন কমপ্লিট?”
-“উহু।নিলয় তো না পড়ে প্রোপার্টির পেপারে সই করে দিয়েছে কিন্তু এখন সেই পেপারটাই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।”
-“হোয়াট! কি বলছ এসব তুমি।আমি কত কষ্ট করে এত সুন্দর পরিকল্পনা করলাম আর সব ব্যর্থ হয়ে যাবে।”
-“আমার মনে হয় নিলয়কে আগে আরো জোরালোভাবে কষ্ট দিতে হবে।তারপর ও এমনিতেই পাগল হয়ে যাবে।তখন তুমি কোন কিছু না করে সব সম্পত্তির ভাগ পেয়ে যাবে।আর নিলয়ও তার পাপের শাস্তি পাবে।”
-“কি করলে নিলয়কে আরো জোরালোভাবে ভে*ঙে দেওয়া যাবে?”
-“বলছি আগে বলো তুমি রাগ করবে না।”
-“আচ্ছা করবোনা।বলো।”
-“মেঘলার সাথে নিলয়ের ডিভোর্স হলেও মেঘলাকে পাওয়ার জন্য কিন্তু নিলয় এখনো চেষ্টা করছে।তাই মেঘলাকে চিরকালের মতো নিলয়ের থেকে সরাতে হবে।”
-“এটা কিভাবে করা যাবে?”
তারপর রুদ্র দিশাকে এমন কিছু বলে যেটা শুনে দিশা খুব রেগে যায়।
_______________
মেঘলা অনেক রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে কারো সাথে দেখা করে।মেঘলা একজন মহিলার সাথে গোপনে দেখা করে তাকে বলে,
-“সবকিছু রেডি তো।”
-“ইয়েস ম্যাম।এখন শুধু আর কিছু সময়ের অপেক্ষা।”
-“গুড।আসল অপরাধীরা এবার শাস্তি পাবেই।ওরা কি নিজেকে খুব চালাক ভাবে? ওরা যদি চলে ডালে ডালে তাহলে আমি চলি পাতায় পাতায়।এবার ওদের সবার মুখোশ খুলে দেব সবার।”
মেহেদী বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল।মেঘলাকে একা বাইরে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করতে দেখে মেহেদী নিচে নেমে আসে।তারপর মেঘলাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“এত রাতে কার সাথে কথা বলছিলি তুই?”
মেঘলা খুব ঘাবড়ে যায়।কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,
-“কারো সাথে কথা বলছিলাম না।ঘুম পাচ্ছিল না তাই বাইরে একটু পায়চারি করছিলাম।”
মেঘলার কথাটা মেহেদীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়না।কিন্তু সে মেঘলাকে আর কিছু বলে না।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিলয় রুদ্রদের বাড়িতে চলে যায়।তারপর কলিং বেল বাজায়।রুদ্র দরজা খুলতেই নিলয় তাকে কি*ল ঘু*ষি মা*রতে থাকে আর বলে,
-“তোকে আমি কত বিশ্বাস করেছিলি।আর তুই এইভাবে আমার সব বিশ্বাস ভেঙে দিলি।”
দিশা এসে নিলয়কে সারানোর চেষ্টা করলে নিলয় দিশার উপরেরও রাগ দেখিয়ে বলে,
-“তুই আমার বোন।তুই কিভাবে এসব মেনে নিলি? তোর কি একটুও খারাপ লাগে নি।”
দিশা চুপ করে থাকে।তার কি বলা উচিৎ দিশা নিজেই সেটা বুঝে উঠতে পারছিল না।
_______________
মেহেদী সুমিকে নিয়ে তার বাড়িতে আসে।সে মরিয়মের সাথে সুমিকে পরিচয় করিয়ে দেয়।মরিয়মের তো সুমিকে খুবই পছন্দ হয়।
মেঘলা নিলাকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিল।বাড়িতে এসে সুমিকে দেখে মেঘলা অবাক হয়ে যায়।কিন্তু সবার সামনে সুমিকে কিছু বলে না।
সুমিও মেঘলাকে দেখে ততটাই অবাক হয়েছে।কারণ সে জানত না মেঘলা আর মেহেদী ভাইবোন।
কিছুক্ষণ কথা বলে সুমি ওয়াশরুমে যাওয়ার নাম করে মেঘলার কাছে চলে যায়।মেঘলা সুমিকে দেখে খুব রেগে যায়।
সুমি ভয়ে কাপতে কাপতে বলে,
-“আমি সত্যি জানতাম না যে মেহেদী আপনার ভাই।জানলে কখনো ওর কাছাকাছি আসতাম না।”
-“এখন তো জানলে।তাহলে কি এখন মেহেদীকে ছেড়ে দূরে চলে যাবে?”
-“আমি এটা করতে পারবোনা।কারণ আমি মেহেদীকে খুব ভালোবাসি।”
-“আমিও নিজের ভাইকে ভালোবাসার মানুষকে হারানোর বেদনা দিতে চাইনা।তোমার আর মেহেদীর সম্পর্কে আমার কোন সমস্যা নেই।”
-“কিন্তু অনেক বড় সমস্যা হয়ে গেছে ম্যাডাম।”
-“কি সমস্যা? নিলয় কি আমাদের পরিকল্পনার ব্যাপারে সব জেনে গেছে।”
-“না।জানেনি।আর জানলেও উনি রুদ্রকে সন্দেহ করবে।আপনাকে নয়।”
-“তুমি সেইসময় রুদ্রর নাম নিয়ে ভালোই করেছ।এমনিতেও রুদ্র নিলয়ের বিরুদ্ধে অনেক ষড়*যন্ত্র করেছে সেটা আমি আগে থেকেই জানি।তাই রুদ্রর দিকে আঙুল তুলে ভালোই হয়েছে।এতে নিলয় রুদ্রকেই সবকিছুর পেছনে দায়ী মনে করবে।আমাকে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করবে না।”
-“কিন্তু ম্যাডাম সমস্যা তো অন্যখানে।”
-“কি সমস্যা?”
-“আমি তো আপনার কথামতোই নিলয়ের সাথে এতদিন ধরে ভালোবাসার নাটক করেছি।সেদিন আপনাদের বিবাহবার্ষিকীতে মা হওয়ার মিথ্যা নাটকও আপনার কথাতেই করেছি।কিন্তু নিলয়ের সাথে যাতে আমি বিয়ে করি ওনার বোন দিশা সেই ব্যাপারে আমাকে বলেন।এমনকি অনেক টাকাও দেন।আমার তো কোন ইচ্ছেই ছিল না নিলয়কে বিয়ে করার।আমি ভেবেছিলাম আপনার কথামতো মিথ্যা অভিনয় করব।কিন্তু সেদিন দিশা এসেছিল নিলয় আর আমার বিয়েতে।সে আড়ালে লুকিয়ে ছিল।”
-“তাতে কি হয়েছে?”
-“নিলয়ের সাথে সত্যিই আমার বিয়ে হয়ে গেছে।”
(চলবে)