#অপ্রিয়_আশালতা (০৩)
-ওম্মাহ! ছে*ম*রি তোর এত বড় চো*পা কবে হইলরে? তোরে তো ভালো ভাবতাম আগে!
-ভালো আর থাকতে দিচ্ছো কই চাচী? চারদিকের সবাই যদি একই রূপই দেখাতে থাকো তবে আমার তো আর ভালো হয়ে থাকা সাজে না তাইনা? (আশালতা)
-আজকে বুঝলাম ভালো তুই কোনোদিনই ছিলিনা। নাইলে কি তোরে ওই বাড়ির দিয়া ঘা*ড় ধা*ক্কা দিয়া বাইর কইরা দিতো? তিন তিনটা বছর সংসার কইরা স্বামীর মনে এট্টু ভালোবাসার তৈরি করতে পারলিনা। পারবিও বা কেমনে ক? চেহারা তো নাই। খালি কি চেহারার ঢক ভালো হইলে হয়? রঙ ও লাগে বুঝলি। তোরে তো আর কেউ বিয়াও করবেনা দেখিস।
-একদিক থেকেই চেষ্টা করলে আর ভালোবাসা তৈরি হয়না চাচী। দুইদিক দিয়েই চেষ্টা থাকা চাই। যাই হোক তোমাকে ধন্যবাদ বাড়ি এসে এতো মায়া দেখিয়ে যাওয়ার জন্য। আমারও তোমার জন্য অনেক মায়া হয় চাচী। দুঃখিত তোমার জন্য না, তোমার মানসিকতার জন্য মায়া হয়।
আশালতা কথাগুলো শেষ করতেই মারজানা তে*ড়ে এসেই সজোরে একটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দেয় গালে। আশালতা নির্বাক হয়ে ছলছল চোখে মারজানার দিকে তাকিয়ে থাকে। নিজের ভাবি হয়ে কিভাবে সে অন্য মানুষের পক্ষ হয়ে তার গায়ে হাত তুলতে পারে? যেখানে সেই মানুষটা তাকে বাড়ি বয়ে এসে অপমান করেছে? অবশ্য অবাক হয়েও আশালতার কি লাভ? নিজের ঘরের মানুষই যদি টি*ট*কারি মারতে দুইবার না ভাবে তবে বাইরের মানুষের আর এই ক্ষেত্রে কি দোষ?
-সাহস কিভাবে হয় তোর চাচীর মুখে মুখে জবাব দেয়ার? সে কি ভুল কিছু বলছে? (মারজানা)
-না বড় ভাবি একদম ভুল কিছু বলেনি। একদম ঠিক কথা বলছে। আর তুমি এই থা*প্প*ড়টা দিয়ে আমার চোখ খুলে দিলে যে অনেক সময় আপন মানুষই সবচেয়ে বেশি পর হয়ে যায়।
চোখ মুছতে মুছতে আশালতা দৌড়ে হাফসা বেগমের রুমে চলে যায়। আশাকে দৌড়ে রুমে যেতে দেখে হাফসা বেগমও দ্রুত রুমে চলে যান।
-কি হইছেরে আশা? ওই ঝিনুক বুজি তোরে কি বলছে এতক্ষণ? বড় বউ কিছু বলতে তোরে? (হাফসা বেগম)
মাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত কন্ঠে আশালতা বলতে আরম্ভ করে,
-না মা কেউ কিছু বলেনি আমাকে। মা জানো নিজেকে না একদম শেষ করে দিতে মন চায়। কিন্তু পারিনা তোমার আর আমার নিষ্পাপ অনাগত সন্তানটার জন্য।
-কিসের জন্য নিজেরে শেষ করবি আশা? কার জন্য শেষ করবি? যারা তোর মূল্যই দেয় না তাদের জন্য? তুই ম*রে গেলে কি তাদের কিছু যায় আসবে? খোজ নেবে তোর? তুই বাচবি তোর নিজের জন্য। আমার কথা বাদ দিলাম। তোকে বাঁচতে হবে তোর অনাগত সন্তানের জন্য। তোর ভাবির কথায় ক*ষ্ট পাবিনা মা। সবাই সমান হয়না। (হাফসা বেগম)
আশালতা চুপ করে মায়ের বু*কের মাঝে মিশে থাকে সারাটা বিকাল। হাফসা বেগম নিরবে অশ্রু বি*স*র্জ*ন দেন।
এমনই এক বিকালে আশালতার শাশুড়ি ডিভোর্স লেটার নিয়ে হাজির হয় আশালতাদের বাড়ি। হাফসা বেগম কতশতভাবে অনুরোধ করেন আশালতার সংসার বাঁচানোর জন্য। কিন্তু কোনো কাজ হয়না। আশালতার শাশুড়ি জোরপূর্বক তার স্বাক্ষর নিয়ে চলে যায়। আশালতা চি*ৎ*কা*র করে উঠানে কাঁদার মধ্যে গ*ড়া*গ*ড়ি করে কা*ন্না করতে থাকে। আশালতার মা আর ছোট ভাবি মিলে শত চেষ্টা করেও আশালতাকে শান্ত করতে পারেনা। আশেপাশে মানুষ জড়ো হয়ে যায় আশালতার আ*র্ত*না*দ করা দেখতে। আশালতার বু*ক ফা*টা কা*ন্না দেখে কেউ কেউ অশ্রুশিক্ত হয়ে পড়ে। এমন সময়ে আশালতার বড় ভাই বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। ছোট বোনকে কর্দমাক্ত অবস্থায় আ*র্ত*না*দ করতে দেখে শি*উ*রে ওঠেন। দৌড়ে গিয়ে আশালতাকে উঠিয়ে বুকে টেনে নেন।
-কি হইছে আশা এমন পা*গ*লের মতো কা*ন্না কেন করছিস? (আশরাফ মোল্লা)
-ভাইজান আমি পারলাম না আমার সংসার টিকাতে। জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে গেল উনি ভাইজান। আমি কিভাবে বাঁচব? আমার সন্তান কার পরিচয়ে বাঁচবে ভাইজান? (আশালতা)
উপস্থিত সকলে আশালতার মুখে ‘সন্তান’ শব্দটি শুনে চমকে ওঠে।
-সন্তান মানে? (মারজানা)
-আমার গর্ভে যে সাদের সন্তান রয়েছে। ওর কি দোষ? কেন ওকে ওর বাবা-মায়ের বি*চ্ছে*দ দেখতে হবে এসে? ও যখন ওর বাবার কথা জিজ্ঞাসা করবে তখন কিভাবে আমি বলব ওর বাবা থেকেও নেই? (আশালতা)
-চুপ কর আশা চুপ কর। তোর ভাইরা যতদিন আছে তোর চিন্তা কিসের? কা*ন্না করিস না বোন আমার। তোকে আর তোর সন্তানকে দেখতে তোর ভাইদের কোনো কষ্ট হবেনা।
বোনের চোখের অশ্রু মুছে দিয়ে কথাগুলো বলে ওঠে আশরাফ মোল্লা। নিপা আর তার মাকে ইশারা দেয় আশালতাকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আশরাফ ক্ষু*ব্দ হয়ে ওঠে মারজানার ওপর। কেন সে একটাবার আশরাফকে কল দেয়নি সেই মুহূর্তে। বেচারা আশরাফ এটুকুও বুঝতে সক্ষম হয়না যে, তাকে ইচ্ছা করেই কিছু জানায়নি মারজানা।
আশেপাশের মানুষ কথা রকমের আলাপ-আলোচনা করতে থাকে আশালতার সম্মুখেই। যার ফলস্বরূপ আশালতা দিন দিন মানসিকভাবে ভে*ঙ্গে পড়তেই থাকে। রাত নেই দিন নেই হা*উ*মা*উ করে অনবরত কা*ন্না করেই যায় আশালতা। কতশত নাম্বার দিয়ে সে সাদকে কল দিয়েছে কিন্তু সাদ আশার কন্ঠ টের পেয়েই কল কে*টে দিয়ে নাম্বার ব্লক করে দেয়।
দেশে এসেই লিনাকে বিয়ে করে ঘরে তোলে সাদ। একটাবার মনে প্রশ্নও জাগেনা “কেমন আছে আশালতা?” আশালতার ছোট ভাবি ফোন দেয় সাদের নাম্বারে। কিন্তু রিসিভ করে বসে লিনা। নিপা আশালতার সন্তানের কথা লিনাকে জানাতেই কল কে*টে দিয়েই নাম্বার ব্ল*ক করে দেয় লিনা। অতঃপর সাজেদা বেগমকে সব খুলে বলতেই সাজেদা বেগম সাফ সাফ জানিয়ে দেয় লিনা যেন এই ব্যাপারে সাদকে কিছু জানায়। লিনাও বুঝতে পেরে সম্মতি জানায় সাজেদা বেগমের কথায়।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের পেটের ওপর হাত রাখে আশালতা। ভাবনায় ডুব দেয়। আজ যদি সাদ তার পাশে থাকত তবে এই সময়টা প্রতিটা মেয়ের দেখা স্বপ্নের মতোই সুন্দর হতো। গ*র্ভকালীন সময়ে যে প্রতিটা মেয়েই তার স্বামীর থেকে অতিরিক্ত যত্ন আশা করে। সেই যত্ন তো দূরে থাক আশালতার কপালে জুটলো বিচ্ছেদ!
-আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি যে তোকে তোর বাবার আদরের সম্মুখীন করতে পারব না। তোর শুরুটাই হয়তো হবে ভিষণ রকম সং*গ্রা*ম দিয়ে। কিন্তু তোর জীবনে তোর মা একদিন অসীম সুখ এনে দেবে। আমি তোর মা তোকে কথা দিচ্ছি।
চোখে পানি মুছে নেয় আশালতা। সে যে বেশ বুঝতে পেরেছে দিন দিন সে তার ভাবির সংসারে বো*ঝা*র মতো হয়ে যাচ্ছে। তাকে অ*ব*হে*লা করলে যে তার ভাই তার বড় ভাবির সাথে অ*শা*ন্তি করে। তা যে সে কিছুতেই চায়না। নিজের জন্য অন্যের সংসারের শান্তি ন*ষ্ট হয়ে যাক তা আশালতা কখনো আশাই করেনা। ছোট ভাবি যে তাকে নিজের বোনের মতো ভালোবাসে। কিন্তু আর কতদিন সে এভাবে ভাইদের ওপর নির্ভর থাকবে? অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের জন্যও যে সে কিছুই করতে পারেনি। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় আর কারো ঘা*ড়ে বো*ঝা হয়ে থাকবেনা সে। প্রতিনিয়ত ল*ড়া*ই করেই বাঁচবে তার সন্তান নিয়ে। হাফসা বেগম মেয়ের সিদ্ধান্ত শুনে হা*উ*মা*উ করে কে*দে ওঠেন। যেতে হলে তাকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে নয়ত এই বাড়িতে তাকে একা ফেলে রেখে আশালতা কোথাও যেতে পারবেনা। দ্বি*ধা*য় পড়ে যায় আশালতা। অসুস্থ মাকে নিয়ে সে কোথায় থাকবে? যাবেই বা কোথায়?
ভোর রাতে যখন চারপাশের সকলে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন ব্যাগপত্র গুছিয়ে মাকে নিয়ে বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে আশালতা। ভাই-ভাবিদের জন্য রেখে যায় কা*টা কা*টা অক্ষরে লেখা একটা চিঠি। যাতে হয়তো তার বড় ভাবির জন্য আছে চ*র*ম খুশির বার্তা।
চলবে…
আফিয়া অন্ত্রীশা
[শব্দের মাঝে (*) স্টার ব্যবহার করায় হয়তো অনেকেই বি*র*ক্ত হন। কিন্তু এটা ছাড়া উপায় নেই। কিছু কিছু শব্দ ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস এর বি*রু*দ্ধে চলে যায় তাই বাধ্য হয়ে স্টার ব্যবহার করতে হয়। সকলকে অনেক ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য]