#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৭
প্রিয়ার মা এসে তড়িঘড়ি করে বলেন,
“প্রিয়া জলদি তৈরি হ। একটা শাড়ি পর নাহয় ভালো থ্রিপিস পর। তোকে দেখতে এসেছে।”
প্রিয়ার অক্ষিগোলক বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। হতবাক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে একবার রাহার দিকে তাকায়। রাহাও গোল গোল চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ার মা নিজেই মেয়ের আলমারি খুলে একটা স্কাই ব্লু রঙের জর্জেটের থ্রিপিস বের করেন। প্রিয়ার হালকা ফর্সা বর্ণের সাথে খুব মানাবে আজকের দিনের জন্য। থ্রিপিসটা প্রিয়ার কাছে এনে বলল,
“এটা পরে নে। তোর ভাইয়ের বন্ধুর বাবা-মা, ভাবি এসেছেন। তাদের ছেলেতো এখন ট্যুরে আছে। ছেলে দেশে এসেছে এই এক মাসের মতো হলো। শুনেছি ভার্সিটির লেকচারার সে। ছেলেকে বিয়ে দিতে চায়। তারা এমনিতেই দেখতে এসেছেন। পরে ছেলে সহ আসবেন।”
প্রিয়া রাহার হাতে একটা চি*মটি কা*টলো। রাহা হালকা চিৎকার করে উঠলে প্রিয়ার মা ধ*মক দিয়ে উঠেন।
“যা তৈরি হ।”
“কিন্তু মা, ছেলে না দেখেই বিয়ে? আমারও তো একটা পছন্দ অপছন্দ আছে।”
“ছেলেরও একটা পছন্দ অপছন্দ আছে। তাই জন্যই ছেলে ট্যুর থেকে আসলে আবার ছেলেকে নিয়ে আসবেন।”
প্রিয়ার মা কথাটা বলে চলে যান। প্রিয়া মুখ লটকে বসে আছে। রাহা প্রিয়ার সামনে গোল হয়ে বসে বলে,
“আপু, তুমি না একটু আগে বললে যে এবার কোনো বিয়ের প্রস্তাব এলে মানা করবে না। তো এবার তোমায় বিয়ে করতেই হবে। আমি এখন থেকেই সব প্ল্যানিং করে ফেলব। ইয়ে!”
প্রিয়া রাহার কথায় বিরক্ত হয়ে ধ*মক দিয়ে বলে,
“চুপ! খালি পটরপটর। ছেলে কেমন না দেখে বিয়ে করব নাকি! ছেলে যদি বু*ড়ো হয়?”
রাহা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“একটু আগে না ফুপি বলে গেলো ছেলে প্রিয়ম ভাইয়ার ফ্রেন্ড!”
প্রিয়া দুঃখী কন্ঠে বলে,
“যদি পছন্দ না হয়? আমায় কি বিয়ে করতেই হবে? কতো শখ ছিল, বিয়ের প্রথমরাতে আমি তার দিকে মুগ্ধদৃষ্টিতে চেয়ে থাকব।”
রাহা কিছুক্ষণ ভেবে ভাবুক কন্ঠে বলল,
“এক কাজ করো। তুমি মনে মনে ভেবে নেও সে সুদর্শন। বিয়ের আগ পর্যন্ত তাকে দেখবে না।”
“এ্যাঁ! না দেখে বিয়ে করব নাকি? বিয়ের রাতে স্বপ্ন কাঁচের মতো ঠু*স করে ভেঙে যাওয়ার জন্য! আর মিছেমিছি ভাবব কেনো সে সুদর্শন!”
রাহা প্রিয়াকে বুঝানোর মতো করে বলে,
“আরে না। মানে আমার পছন্দে তোমার ভরসা আছে তো? এতোদিনে একটা মুভিও দেখার সময় কি তোমার আমার মতের পার্থক্য হয়েছে? আমরা একই নায়কদের ওপর ক্রা*শ খেয়েছি না?”
“হ্যাঁ তো?”
প্রিয়ার তীক্ষ্ম দৃষ্টি দেখে রাহা বলে,
“আরেহ! আমি দেখব জিজুকে। আমি যদি বলি পারফেক্ট তোমার জন্য তবে চোখ বন্ধ করে বিয়ে করে নিও। আফটারঅল আমার বিয়ের সময়ও তোমাকে এমনি করতে হবে।”
প্রিয়া ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
“যদি তোর পছন্দ বাজে হয়?”
রাহা সন্দেহের দৃষ্টিতে চাইলো।
“মোটেই না। দেখবে পরে আমাকে ধন্যবাদ দিবে। এটা করাতে একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করবে।”
প্রিয়া হতাশ স্বরে বলে,
“যদি কোনো গণ্ডগোল হয় তো দেখিস….! থাক পরে বলবনে।”
প্রিয়া মায়ের বের করা থ্রিপিসটা পরে পরিপাটি হয়ে নিলো। রাহা প্রিয়াকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে গেলো। প্রিয়া সকলের উদ্দেশ্যে সালাম দিলে উনারা সালামের জবাব দেয়। জারিফের ভাবি তামান্না এগিয়ে এসে প্রিয়াকে নিজের পাশে বসালো। জারিফের মা ও ভাবি তো প্রিয়ার ছবি প্রিয়মের ফোনেই গতকাল রাতে দেখেছিল। প্রিয়ম তখন প্রিয়ার আসতে না দেওয়ার কাহিনী বলার সময় জারিফের ভাবি কি মনে করে প্রিয়ার ছবি দেখতে চায়। তখনই প্রিয়াকে জারিফের মা ও ভাবির পছন্দ হয়ে যায়। তাই বুদ্ধি করে বাড়ির ঠিকানা রাখে। জারিফের মা বলেন,
“কেমন আছো মা?”
প্রিয়া লাজুক কন্ঠে জবাব দেয়,
“আলহামদুলিল্লাহ্। আপনারা কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ্ মা। তুমি কী ভয় পাচ্ছ?”
প্রিয়া ঘার না বোধক নাড়ায়। জারিফের ভাবি হেসে বলেন,
“ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। আমাকে যখন দেখতে গিয়েছিল তখন আমিও অনেক ভয় পেয়েছিলাম। জায়ানকে চিনতাম তারপরেও। আর তুমি তো আমার দেবরকে চিনোই না। ওর নাম হলো..”
রাহা তামান্নাকে থামিয়ে হড়বড়িয়ে বলে উঠলো,
“না ভাবি! আপুকে এখনই জিজুর নাম বলবেন না। জিজুর নাম বললে তো ফেসবুক ঘেটে আইডি বের করে ফেলবে। আপু বিয়ের আগে তার বরকে দেখবে না বলেছে। আমি যদি দেখে পছন্দ করি তবেই হলো।”
প্রিয়া রাহার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো। প্রিয়া ক্যাবলা মার্কা হাসলো। জারিফের বাড়ির লোক রাহার কথায় হেসে উঠল। তরুণীমা বেগম প্রিয়ার মা পিয়ালি বেগমকে বলে উঠলেন,
“তবে তাই হোক। আপনার মেয়ের এই ইচ্ছে পূরণ করলাম। আগেকার দিনে এমন দেখা যেতো তাও কম। আমার ছেলেকে নাহয় প্রিয়ার ছবি দেখাবো।”
প্রিয়ার মা জোরপূর্বক হাসলেন। বাড়িতে প্রিয়ার বাবাও নেই। কী আর বলবেন তিনি? দুই মেয়ের কথাবার্তায় ভীষণ বিব্রতবোধ করলেন। তামান্না প্রিয়ার দিকে নিজের ফোন বাড়িয়ে বলে,
“এটা আমার স্বামী ও ছেলে। ছেলেকে রেখে এসেছি বাড়িতে আমার মায়ের কাছে। যাওয়ার পথে নিয়ে যাবো। আমার স্বামী যেমন সুন্দর আমার দেবরও তেমন সুন্দর।”
রাহা উচ্ছাসিত কন্ঠে জোরে বলে উঠে,
“তাহলে শিউর থাকো আপু! তোমার ঠিক জিজু পছন্দ হবে।”
পিয়ালি বেগম রাহাকে ইশারায় থামতে বলছেন। রাহার কথায় রুমে উপস্থিত বাকিরা হেসে উঠলো। প্রিয়া জোরপূর্বক হাসলো। রাহার পটরপটরে সেও এখন বিব্রতবোধ করছে।
সন্ধ্যার সময় জারিফের পরিবার চলে গেলো। প্রিয়া রুমে গিয়ে রাহাকে দৌঁড়ানি দিচ্ছে। রাহা পুরো ঘরময় দৌঁড়াচ্ছে আর বলছে,
“আরে আপু, জিজুর ভাইটা তো সুন্দর। তুমি নিশ্চিত থাকো জিজুও সুন্দর হবে।”
প্রিয়া দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
“তাই বলে তুই ওখানে পটরপটর করবি? আরে ছেলের তো আমাকে পছন্দ নাও হতে পারে। তখন কী একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পরব!”
রাহা এবার হাঁপিয়ে গিয়ে ফ্লোরে এক জায়গায় বসে বলে,
“আমার মন বলছে জিজুর তোমাকে ঠিক পছন্দ হবে। দেখো তোমাদের বিয়েটাও জলদি হবে।”
“ধ্যাত! আমার শান্তির জীবনে অশান্তির ছায়া নামবে। তখন তো আমি এখনের মতো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারব না। কিছু ভালো লাগে না।”
প্রিয়াকে মুখ ভাড় করে বসে থাকতে দেখে রাহাও মুখ ভাড় করে বসে।
রাতে প্রিয়ার বাবা এসে শুনেন। প্রিয়ার বাবা ছেলের ব্যাপারে ও ছেলের পরিবারের ব্যাপারে শুনে ছেলেকে দেখতে চান। প্রিয়ম ফিরলে দেখবেন বলে মনোস্থির করেন।
___________
সকালের বাসে করে ওরা রওনা করে সুন্দরবন থেকে। বিকেলে এসে ঢাকায় পৌঁছায়। লম্বা জার্নি শেষে যে যার বাড়িতে গিয়ে ক্লান্তিতে বিছানায় টান হয়ে শুয়ে পরেছে। রাতে খাবার টেবিলে প্রিয়ার মা-বাবা ও প্রিয়ম। প্রিয়া ও রাহা আগে খেয়ে চলে গেছে। প্রিয়ার বাবা মিস্টার শরিফ হাসান ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“তুমি কি শুনেছ? তোমার বন্ধুর পরিবার গতকাল এসে প্রিয়াকে দেখে গেছ।”
প্রিয়ম খাওয়া থামিয়ে অবাক হয়ে চাইলো অতঃপর বলল,
“কোন ফ্রেন্ড?”
“যে কীনা কানাডা থেকে একমাস হলো দেশে ফিরেছে।”
প্রিয়ম আরও অবাক হয়ে গেলো।
“জারিফ? কই আমি তো জানিনা। জারিফও তো কিছু বলল না।”
শরিফ হাসান বলেন,
“হয়তো জারিফও তোমার মতো জানে না। গত পরশু নাকি তোমার কাছে প্রিয়ার ছবি দেখে তাদের পছন্দ হয়েছে তাই গতকাল এসে দেখে গেছেন। এখন তোমার বন্ধু কেমন তাতো তুমিই ভালো জানো।”
প্রিয়ম বলে,
“জারিফ খুব ভালো ছেলে। সে বই পড়ুয়া আর খুব বেশি একটা কথা বলে না। ব্যাবহারও খুব ভালো।”
“তাহলে কালকে তোমার অফিস ছুটির পর জারিফকে নিয়ে এসো বাসায় যদি তার প্রিয়াকে পছন্দ হয় তবে।”
“আচ্ছা।”
প্রিয়ম খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে দেখে তার ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। চার্জে রাখা ফোনটা। ফোনটা তুলে দেখে জারিফের তিনটা মিসডকল।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,