#প্রণয়
#পর্বঃ২৩
#তানিশা সুলতানা
নাক ফুটো করার জন্য ছোটমোট একটা ইন্টারভিউ দিতে হচ্ছে তানহাকে। সাদিয়া বেগম একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। তানহা আমতা আমতা করছে। আসলে মিথ্যে কথা একদম বলতে পারে না তানহা। তারপর আবার সিরিয়াস বিষয়ে মিথ্যা।
খেতে ডাকতে এসেছিলো উনি। তানহা শুয়ে শুয়ে গান শুনছিলো আর তোহা ভিডিও দেখছিলো। তখনই ওনার নজর যায় তানহার নাকের দিকে।
তানহা কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। তোহাও সিরিয়াস নজরে তানহার দিকে তাকায়। নাক ফুটো করার বিষয়ে ওর ও এখন খটকা লাগছে।
“বড় মা ছাড়ো না। খারাপ তো লাগছে না।
মাথা নিচু করে বলে তানহা।
” বাবুর সাথে কি তোর অন্য রকম সম্পর্ক আছে।
চোখ মুখ শক্ত করে বলে সাদিয়া বেগম। চমকে ওঠে তানহা। তোহাও বড়বড় চোখ করে তানহার দিকে তাকায়।
“তানহা মা কি বলছে?
তানহার এবার কান্না পাচ্ছে। কি করে মিথ্যে বলবে? ও তো মিথ্যে বলতে পারে না।
” মা খেতে দেবে না কি আমি চলে যাবো এ বাড়ি থেকে?
সূচক তানহাদের রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে। সাদিয়া বেগম এবার সূচকের দিকে তাকায়।
“ও নাক ফুটো কেনো করেছে?
শক্ত গলায় বলে সাদিয়া বেগম।
” আমি বলেছি তাই।
সোজাসাপ্টা বলে দেয় সূচক। তানহা মাথা তুলে তাকায় সূচকের দিকে। তোহা মুচকি হাসে। ভাই আর তানহার রিলেশনটা ওর দারুণ লাগে।
“খেতে দিবা?
একেতে তোমার বাটপার ভাই মিথ্যে বলে এখানে এনেছে। তোমার মা তো একদম ফিট। তারপর আবার খেতে দিচ্ছে না।
সূচক বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে।
” আয় আমার সাথে। খেতেই ডাকতে এসেছিলাম।
সাদিয়া বেগম হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। তানহা মাথায় ওড়না চাপিয়ে খাট থেকে নামে।
“মুখ নাই তোর? কথা বলতে পারিস না? সারাক্ষণ শুধু কাঁপা কাঁপি কেনো করিস? ডিরেক্টলি কথা বলতে শিখবি কবে?
ধমকিয়ে বলে সূচক। তানহা সূচকের কথায় পাত্তা দেয় না।
” তোহা চল
বলেই বেরিয়ে যায়। সূচক তানহার যাওয়ার দিকে তৃহ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
দুই মামা দুই মামার তিন ছেলে মেয়ে নানু নানা তানহা সূচক আর তোহা খেতে বসেছে। বাকিরা পরে খাবে।
দুই মামি খাবার পরিবেশন করছে। আর সাদিয়া বেগম খাবার এগিয়ে দিচ্ছে।
“তো সূচক তোমার পড়ালেখার কি খবর?
বড় মামা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করে।
” ছোট মামা সব জানে।
সূচক মুখে খাবার পুরে বলে। থমথমে খেয়ে যায় বড় মামা। ছোট ভাইয়ের দিকে এক পলক তাকায়।
তানহা কোনো দিকে না তাকিয়ে খেয়েই যাচ্ছে। তখন বিরিয়ানি খেয়ে পুরো পেট ভরে নি।
বৃষ্টি খাচ্ছে কম সূচককে দেখছে বেশি। বিহান তোহার সাথে হালকা কথা বলছে আর খাচ্ছে। আর ছোট মামার মেয়ে রিমি খুব ছোট। ফাইভে পড়ে।
সেও খাচ্ছে।
“ভাই বিয়ে সাদির কথা কিছু ভেবেছো?
নানা রসিকতা করে বলে। তানহা ধাপ করে তাকায় সূচকের দিকে।
সূচক খাবার মুখে পুরতে যাচ্ছিলো নানার কথায় তার দিকে তাকায়।
“আমি কিন্তু তোমার জন্য মেয়ে পছন্দ করেই রেখেছি।
আবারও এক গাল হেসে বলেন উনি। তানহার বুকটা ধক করে ওঠে।
” তোমার পছন্দ হলে তুমি বিয়ে করে নাও। আমার পছন্দ বিয়ে দুটোই শেষ।
স্পষ্ট গলায় বলে সূচক। আবারও থমথমে খেয়ে যায় সবাই। সাদিয়া বেগম চোখের ইশারায় ছেলেকে থামতে বলছে। তানহার খুব লজ্জা লাগছে। বৃষ্টির চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়।
নানু কিছু বলতে যাবে তার আগেই সূচক বলে ওঠে।
“আপনারা জানেন না খেতে বসে কথা বলতে হয় না?
সূচকের এই কথায় কেউ আর কথা বাড়ানোর সাহস পায় না।
এদের প্রতি খুব রাগ সূচকের। চিটারি করে এখানে এনেছে ওকে। আগে জানলে কখনোই আসতো না। আর এখানে আনার কারণটা জেনে মনটা এদের থেকে একদম উঠে গেছে।
আধখাওয়া প্লেটেই পানি ঢেলে দেয় সূচক।
” কিছুই তো খেলে না তুমি।
বড় মামি বলে ওঠে।
“মা সকালেই বাড়ি চলে যাবো আমি।
বলেই হনহনিয়ে রুমে চলে যায়। তানহারও গলা দিয়ে খাবার নামছে না। নামবে কি করে? সূচকের পেট ভর্তি যে খিধে।
আস্তে করে প্লেট রেখে উঠে যায় তানহা।
রাত দশটা বাজে। তোহা ফোন দেখছে তানহা ছটফট করছে। কখন তোহা ঘুমবে? আর কখন যাবে ও? না গেলে যে থাপ্পড় একটাও মাটিতে পরবে না এইটুকু জানা তানহার।
“ঘুমোচ্ছিস না কেনো?
তোহা ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে।
” ঘুম আসছে না।
তানহা আমতা আমতা করে বলে।
“ভাইয়া অপেক্ষা করছে তোর জন্য যা।
তোহার কথায় চমকে ওঠে তানহা। এক লাফে উঠে বসে পড়ে। তোহা ঠোঁট কামড়ে হাসে।
” ভাইয়াকে বলিস না আমি জেগে আছি। বেচারা খুব লজ্জা পাবে আর তোকে বকবে।
মুচকি হেসে বলে তোহা। তানহা তোহার কপালে চুমু দিয়ে উঠে বসে।
পা টিপে টিপে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। সূচকের রুমের দরজাটা ভেরানো ছিলো। ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। পুরো রুম অন্ধকার।
তানহা বেরিয়ে যাওয়ার পরই ইমন কল দেয় তোহাকে। তোহা না চাইতেও কলটা ধরে।
“বেশি কথা বলবা না। জাস্ট আমার কথা গুলো মন দিয়ে শুনবা। ওকে?
তোহা অবাক হয়ে যায়। মানুষ সাধারণত একটা মানুষকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন আছো?
কিন্তু এ?
তোহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” বলুন
“ইরার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এমনিতেই ফেসবুকে দুই একদিন হাই হ্যালো করছি। তাতেই কান্না কাটি শুরু করে দিছে। আমার কি দোষ? তাই একটু আতটু কথা বলছি।
কিন্তু এখন তোমায় কথা দিচ্ছি কারো সাথে কথা বলবো না। গড প্রমিজ।
তুমি চাইলে আমার ফেসবুক পাসওয়ার্ডটাও নিতে পারো।
ট্রাস্ট মি তোহা আই অলওয়েজ নিড ইউ।
ভীষণ ভালোবাসি।
তোহা কিছু বলে না। চুপচাপ শুনতে থাকে। মন তো চাইছে লোকটাকে আবারও ফিরে পেতে। তার সব কথা বিশ্বাস করতে। কিন্তু???
” এই তোহা
রিলেশনশিপ এ যাওয়ার জন্য ইরার মতো মেয়ে প্রয়োজন। কিন্তু বিয়ে করার জন্য তোমার মতো। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। একজন সফট ভার্জিন মেয়েে।
“জানি আমার কথা বিশ্বাস করছো না। আচ্ছা এক কাজ করো। আমি এখনই ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিচ্ছি তুমি চেক করপ তোমার পাসওয়ার্ডটা আমাকে দিয়ে দাও।
বলেই কল কেটে দেয় ইমন।
তোহা ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
🥀🥀🥀
রুমটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। ড্রিম লাইটটাও জ্বালাই নি। নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছে। মনে মনে খুশিই হয় তানহা। ঘুমিয়ে গেলে ভালোই হবে।
হাতিয়ে হাতিয়ে বিছানা ওবদি যায় তানহা।
“ও গো জেগে আছো? তোমার বউ এসেছে।
তানহা আহ্লাদী সুরে ডাকে। সাথে সাথে রুমের লাইট জ্বলে ওঠে। চমকে ওঠে। পেছনে ফিরে দেখে সূচক বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে।
” আআপনি কোথাও গিয়েছিলেন?
একটু হাসার চেষ্টা করে বলে তানহা।
“হুমম তোকে আনতে গেছিলাম।
দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে দিয়ে বলে সূচক।
ভয় পেয়ে যায় তানহা। এই ভেজা বেড়ালের মতলব সুবিধের ঠেকছে না। গরবর আছে। কিছু একটা খিচুরি পাকাচ্ছে এই লোকটা।
” দদদরজা বন্ধ কককরলেন কেনো?
শুকনো ঢোক গিলে বলে তানহা।
সূচক উওর না দিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
তানহা বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে?
এই সুযোগেই কি ছিটকিনি খুলে পালিয়ে যাবে???
“এখানে চলে আয়।
ছিটকিনি খুলতে পারবি না তুই।
সূচক বারান্দার ফ্লোরে পা ছড়িয়ে বসে ডাকে তানহা।
তানহা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায়। সূচকের পাশে একটু দুরত্ব রেখে বসে পড়ে।
” এখানে থেকে খানিকটা দুরে সমুদ্র আছে জানিস?
সূচক তানহার হাতটা মুঠো করে ধরে বলে।
“হুমম জানি
” সমুদ্রের পাশে বড়বড় হোটেল আছে। ওখানকার বারান্দায় বসে সমুদ্র দেখা যায়। সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়।
যাবি?
“আপনি নিয়ে গেলে যাবো।
তানহা কিছুটা খুশি হয়ে বলে।
সূচক পকেট থেকে ফোনটা বের করে কাউকে কল করে।
” হ্যালো ইমন তোরা পৌঁছে গেছিস?
“হুমম মাএ রুমে আসলাম।
” গুড
এক ঘন্টার মধ্যে সব কিছু রেডি কর। আমি তানহাকে নিয়ে আসছি।
আর শোন ফুল দিয়ে রুমটা জঙ্গল করবি না একদম।
তানহা বড় বড় চোখ করে তাকায় সূচকের দিকে। এতো রাতে কোথায় যাবে?
ফোন রেখে সূচক মুচকি হাসে।
“চল তানহা।
তানহা চমকে ওঠে।
” কোথায় যাবো?
“যেখানে আমি নিয়ে যাবো।
” সবাই জেনে গেলে সমস্যা হবে।
ভয়ে বলে তানহা।
“কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো।
চলবে