#প্রণয়
#পর্বঃ২২
#তানিশা সুলতানা
পৃথিবীর সব থেকে কষ্টের কাজ হচ্ছে নাক ফুটো করা। তাও আবার যদি হয় পার্লার তাহলে তো কথাই নেই। একটু উহহহ আহহহ করার সময়টাও দেয় না।
পার্লারে ঢুকলো। আন্টিটা জিজ্ঞেস করলো কি করবেন? বৃষ্টি তানহাকে দেখিয়ে বললো ও নাক ফুটো করবে।
তানহা চেয়ারে বসে পড়লো। আর আন্টিটা ঠাস করে নাক ফুটো করে নাক ফুল পড়িয়ে দিলো। একটু শ্বাস নেওয়ারও সময় দিলো না।
তখন একটু ব্যাথা পেয়েছিলো। কিন্তু এখন প্রচুর ব্যাথা করছে।
বৃষ্টি আর তোহা নাক ফুটো করে নি। ফার্মেসির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ওরা। সূচক ঔষধ কিনছে। একটা নাপা এক্সর্টা নিয়েছে। যে নরম তানহা। জ্বর যে আসবে এতে নিশ্চিত সূচক। তানহা কটমট চাহনিতে তাকিয়ে আছে সূচকের দিকে।
আগে যদি জানতো বিয়েতে এতো কষ্ট তাহলে বিয়েই করতো না।
“চল
সূচক বলে।
” চল কি? তুই অটো নিয়ে আয়। আমি আর এক পাও হাঁটতে পারবো না। এই বুচির জন্য এমনিতেও অনেক হেঁটেছি।
তোহা চোখ মুখ কুঁচকে বলে।
“তোমরা দুই ভাই বোন আমাকে বুচি কেনো বলো? আমার নাক যথেষ্ট উঁচু।
তানহা রাগে গজগজ করতে করতে বলে।
” হ্যাঁ এতোই বড় যে সারাক্ষণ পানি পড়তে থাকে।
বলতে বলতে সূচক চলে যায়। তোহা আর বৃষ্টি মুখ চেপে হাসে। তানহা কাঁদো কাঁদো ফেস করে সূচকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
একটু পরেই একটা সিএনজি নিয়ে চলে আসে সূচক। বৃষ্টি তোহা তানহা তিনজন পেছনে বসে। আর সূচক ড্রাইভারের সাথে সামনে বসে।
বাসায় পৌছাতে পৌছাতে মাগরিবের আজান দিয়ে দেয়। তানহার প্রচন্ড খিধে পেয়েছে। বিয়ে করলো সবাই খেলো কিন্তু তানহাকে খেতে সাধলো না। কতো বড় হনুমান লোকটা।
ভাড়া দিয়ে ভেতরে ঢোকে সবাই।
সাদিয়া বেগম আর তার দুই ভাই বউ মিলে রান্না করছে। মামারা আর নানা হাঁটতে গেছে। বৃষ্টি নিজের রুমে চলে যায়। তোহা আর তানহা এক রুমে থাকবে।
সূচক মায়ের কাছে যায়। তানহা আরও তোহাও নিজেদের রুমে ঢুকে পড়ে।
চেঞ্জ করে দুই বোন বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তানহা কিছুখন মা বাবা ভাইয়ের সাথে কথা বলে।
“তানহা কিছু বলতে চাই তোকে।
তোহা গোল হয়ো বসে বলে।
” আমিও তোকে কিছু বলতে চাই।
তানহা তোহার মতো গোল হয়ে মুখোমুখি বসে বলে।
“কি বলবি বল।
” তোহা আমরা সবাই জানি তুই ইমন ভাইয়াকে খুব পছন্দ করিস। তোর ভাইও জানে।
আগে তো ইমন ভাইয়ার সাথে কথা বলার জন্য পাগল ছিলি। তাহলে এখন কেনো ওনার কল রিসিভ করছিস না?
উনি কতোবার কল করেছে তোকে। তারপর আবার আমাকেও কল করেছে।
দেখ তোহা তুই আমার বোন আবার বেস্টফ্রেন্ড। তোর কথা আমাকে বলবি আমার কথা তোকে বলবো।
তুই আমার সাথে ফ্রী হতে পারিস না?
তানহা তোহার হাতের ওপর হাত রাখে।
তোহা মাথা নিচু করে ফেলে।
“কি করে বলবো তোকে? তুই যে ইমনকে ভাইয়া ডাকিস। কতো সম্মান করিস। আমি কি করে তোর চোখে ওকে ছোট করবো??
মনে মনে বলে তোহা।
” সব কথাই তো বলি তোকে। বিজয় স্যার ডিস্টার্ব করছে সেটাও তো এখন বলতে চাইছি।
তোহা একটু হেসে তানহার গালে হাত রেখে বলে। তানহাও মুচকি হাসে।
“আচ্ছা বিজয় স্যারের ঘটনা পরে শুনবো। আগে যা ইমন ভাইয়ার সাথে কথা বলে আয়।
তোহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বেলকনিতে চলে যায় ইমনের সাথে কথা বলতে।
তোহা বিছানায় গালিয়ে দেয়। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। ঘুমতে ইচ্ছে করছে। এদিকে খিধেও পেয়েছে। কেউ খেতেও ডাকছে না।
কি একটা অবস্থা?
টুংটাং আওয়াজে মেসেজ আসে। তোহা জিপি অফার ভেবে ইগনোর করে ফোন দেখে না।
পর পর আবারও মেসেজ আসে।
এবার বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফোনটা হাতে নেয়।
সূচকের মেসেজ
” জলদি আমার রুমে আয়। বৃষ্টি তোর একমাত্র জামাইয়ের ইজ্জত লুফে নিয়ে গেলো”
মেসেজ দেখে মাথা গরম হয়ে যায়। এই লোকটা সত্যিই অসব্ভ সাথে হনুমান। আরে ভাই বৃষ্টিকে একটা থাপ্পড় মেরে আকাশে পাঠিয়ে দিতে পারিস না কি?
ওড়না বের করার সময় নাই। তাই গামছা গলায় পেচিয়ে চলে যায় সূচকের রুমের দিকে।
🥀🥀
তোহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বেলকনির দরজা ঠেসে বসে পড়ে। হাতের ফোনটা অন করে কল লিস্টে ঢুকে। সেখানে ইমনের অসংখ্য কল দেখতে পায়। তাচ্ছিল্য হাসে তোহা।
কল করে ইমনকে। কেটে দেয় ইমন। আগে হলে কখনোই কেটে দিতো না। রিসিভ করতো।
“বাহহহ ভালোই উন্নতি হয়েছে দেখছি।
বিরবির করে বলে তোহা।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কল ব্যাক করে ইমন।
তোহা সাথে সাথেই রিসিভ করে।
” কল বার কল দিচ্ছি তোমাকে? রিসিভ কেনো করছো না? পবলেম কি তোমার? ডানা গজিয়ে গেছে? ভাব দেখাচ্ছো আমাকে? ইউ নো হোয়াট তোহা আমি তোমার ভাব দেখার জন্য বসে নেই।
সামনে পেলে একটা আছাড় মারতাম তোমায়।
ইমন একদমে কথা গুলো বলো।
“কিছু কি বলবেন?
তোহা উওরে শুধু এটুকুই বলে। ইমন দাঁতে দাঁত চেপে।
” তোকে আর কিচ্ছু বলার নাই আমার। এবার যা বলবো তোর বাবা মাকে। অনেক ভেবেছিলাম ঠান্ডা মাথায় ডিসকাস করবো। কিন্তু তুই আমার মুডটা নষ্ট করে দিলি।
প্রচন্ড রেগে চিৎকার করে বলে ইমন।
“এটা বলার জন্য কল দিছেন?
তোহা শক্ত গলায় বলে।
” কল কাট তুই।
ইমন ধাপ করে কল কেটে দেয়। তোহা বুক ভরে শ্বাস টানে। এখানে রেগে যাওয়ার মতল কিছু বলেছে কি?
🥀🥀
মাথাটা আরও গরম হয়ে যায় তানহার।
সূচক শুয়ে শুয়ে ফোন দেখছে আর বৃষ্টি পাশে বসে বসপ কি যেনো বলছে।
তানহা ধাপ ধাপ পা ফেলে ভেতরে ঢোকে। বৃষ্টি চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় তানহার দিকে। সূচক ফোন দেখছে তো ফোনই দেখছে।
“তুমি এখানে কেনো এসেছো? ক্লান্ত নিশ্চয় তুমি?
যাও রেস্ট নাও।
বৃষ্টি বলে।
তানহা ধাপ করে খাটে উঠে সূচকের পায়ের ওপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে। বৃষ্টি আর সূচক চোখ বড়বড় করে তাকায়।
” ওই রুমের ফ্যান নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এখানেই রেস্ট নেবো।
বৃষ্টি দাঁত কটমট করে তাকায় তানহার দিকে। সূচক মিটমিট করে হাসতে হাসতে আবারও ফোনে মনোযোগ দেয়।
“সূচক ভাইয়া ওকে লাথি মেরে ফেলে কেনো দিচ্ছো না?
বৃষ্টি কটমট করে সূচককে বলে।
” কি করে দেবো বলো?
এতে কিউট বাচ্চাকে লাথি মারতে ইচ্ছে হয়?
এক গাল হেসে বলে সূচক।
“আমি বাচ্চা না। দুই দিন পর বাচ্চার মা হবো।
তানহা সূচকের পায়ে চিমটি দিয়ে বলে।
“বৃষ্টি খাবার নিয়ে আসো যাও।
কখন এসেছি এখনো খাবার দিচ্ছো না?
না খাইয়ে মারার জন্য ডেকেছো না কি?
বৃষ্টি রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়। তানহা উঠে বসে। সূচকে উঠে বসে।
” ডেকেছেন কেনো?
মুখটা গোমড়া করে বলে তানহা।
“নিশ্চয় প্রেম করতে ডাকি নি।
সূচক ধমক দিয়ে বলে।
” জানি তো।
ধমক দেওয়ার জন্য ডেকেছেন।
তানহাও সমান তালে ধমকে বলে।
“সাহস বেরে যাচ্ছে তোর।
তানহা কথা বলে না। সূচক উঠে খাটের সাইডে থেকে প্যাকেট বের করে। প্যাকেট খুলে তা থেকে একটা বক্স বের করে তানহার সামনে ধরে।
” এটা খেয়ে নে। এই বাড়িতে খাবার পেতে দশটা বেজে যাবে।
বিরিয়ানি চামচে তুলে তানহার মুখের সামনে ধরে বলে সূচক। তানহা মুচকি হেসে খেয়ে নেয়।
“খাওয়ার জন্যই ডেকেছি। আর তখনই বৃষ্টি এসেছে।
সূচক বলে।
তানহা গোল হয়ে বসে পড়ে। সূচকও খাওয়াতে থাকে।
খাওয়া শেষ হলে হাত ধুয়ে তানহাকে পানি খাইয়ে দেয়।
তারপর তাকায় তানহার দিকে।
” খুব ব্যাথা পেয়েছিস?
তানহার বা গালে হাত দিয়ে নাকে হালকা স্পর্শ করে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে সূচক।
তানহা চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে মাথা নারায়। মানে ব্যাথা পায় নি।
“নাক ফুলে তোকে খুব সুন্দর লাগছে বুচি
তানহা চোখ খুলে। এটারই অপেক্ষায় ছিলো এতখন।
সূচক এবার তানহার দুই গালে হাত দিয়ে মুখটা এগিয়ে আনে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে তানহা। সূচকের হাতের ওপর নিজের হাতটা রাখে আলতো করে।
সূচক ঠোঁট ছোঁয়ায় তানহার নাকের ওপর।
ব্যাস যে টুকু ব্যাথা ছিলো সেরে গেছে।
” তোহা ঘুমিয়ে গেলে চলে আসবি এখানে।
তানহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে সূচক।
“আর যদি না আসিস তাহলে আমি গিয়ে নিয়ে আসবো কিন্তু।
চলবে