তুমিময় আসক্তি ২ শেষ পর্ব

0
1326

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“২৯”

— দোলা পুনরায় রুদ্রর দিকে তাকালে রুদ্র সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয় দোলার দিক হতে! অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে যায় সে। বুকের মধ্যে উথাল পাথাল ঢেউ। প্রিয় মুখ, প্রিয় মানুষকে এতটা কাছ থেকে দেখার যে অনুভূতি দীর্ঘ সময় পর। সেটা প্রকাশ করা সম্ভব না। রুদ্র দ্রুত পায়ে উপর চলে যায়। দোলার সামনে তো পড়তে চাইনি এইভাবে। তাহলে আজ কেনো নিয়তি এমন একটা পরিস্থিতিতে তাকে দাঁড় করালো। রুদ্রকে চলে যেতে দেখে দোলা একটা তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করে। সবার মধ্যে যে খুশির আমেজটা ছিলো রুদ্র উঠে যাওয়াতে তারা একটু মনোক্ষুণ্ণ হয়। মুখটা মলিন হয়ে আসে।
– দোলা মা কেমন আছিস তুই? রত্না চৌধুরী বলেন। দোলা রত্না চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে আমি ভালো আছি মা। আচ্ছা তোমার শরীর কেমন আছে এখন? কিছুক্ষণ বাক্য বিনিময় হয় সবার মধ্যে।
– ভাবি তুমি আসবে সত্যি ভাবিনি। একা একা বোর হতাম তাছাড়া মামিও কতটা খুশি তোমাকে দেখে। দোলা শুধু মুচকি হাসে আর বারবার উপরের দিকে তাকায়। তানিয়া বিষয়টা লক্ষ্য করলেও কিছু বলে না।

– দোলা মা আজ তোর হাতের রান্না খাওয়ার সৌভাগ্য কি হবে আমাদের? কতদিন হলো তোর হাতের রান্না খাইনা। জানিস দোলা মা তুই যে এত মজা করা সবজি রান্না করিস এমন ভাবে কেউ পারে না৷ খুব মিস করি তোর হাতের সবজি রান্না কিছুটা হীনকন্ঠে বলে তানভীর আহমেদ।
— আমি আজ সবার পছন্দ মতো রান্না করবো ফুপা চিন্তা করবে না। দোলা মুচকি হেসে বলে।
– সত্যি মা? তার মানে আমাদের পছন্দের চিকেনও হবে আজ? রাদ বলে উত্তেজিত কন্ঠে। দোলা রাদের মাথায় হাত রেখে বলে হ্যাঁ মা আজ সবার পছন্দের রান্না করবো আমি।

– আর বাবার? বাবা তো মুগের ডাল-ঘন্ট খুব ভালোবাসে! সেটাও কি করবে মা? রোদ প্রশ্ন ছুড়ে দেয়৷ রোদের প্রশ্নে দোলা এখন আর অবাক হয়না বা এড়িয়েও যায়না। মুচকি হাসিটা বজায় রেখে বলে হুম তোর বাবার পছন্দ অনুযায়ীও রান্না হবে আজ। দোলার কথা শেষ হতেই সবাই যেনো অতী বিস্ময় নিয়ে তাকায়। সবার অদ্ভুত চাহনি দেখে দোলা ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে কি হলো! তোমার সবাই এইভাবে দেখছো কেনো আমায়?

— তোমাকে আজ অন্য রকম লাগছে ভাবি। সেই পুরাতন দোলাকে যেনো দেখছি আজ। তানিয়ার কথায় দোলা মৃদু হাসে শুধু।
– আচ্ছা তোরা কি আজ মেয়েটাকে দিয়ে শুদু কাজই করিয়ে নিবি নাকি? অনেকদিন পর মেয়েটা বাড়িতে আসলো। কোথায় বসে কথাবার্তা বলবে সবার সাথে তা না করে সবাই রান্নার লিস্ট ধরাই দিচ্ছিস। রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে তাতে কি মা। এটা তো আমারই পরিবার। দোলার কথায় সবাই অবাক হয়। অনেকটা অবাক। সত্যি দোলাকে আজ অন্য রকম লাগছে। কি হয়েছে দোলার?

– মা আমি আসছি হঠাৎ করে কথাটা বলে দোলা কারো উত্তরের আশা না করে উপরে উঠে যায়। সবাই বিস্মিত, বিস্ময়, কৌতুহল ভীষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে। কারণ দোলা এই বাড়ি যতবার এসেছে আগে রুদ্রর ঘর মুখো হয়নি। আর আজ দোলা রুদ্রর ঘরের দিকেই যাচ্ছে।

— রুদ্র ঘরে আসার পর বারান্দায় দাঁড়ায়। দম বন্ধ কর পরিবেশ রুদ্রর মধ্যে। দোলা ঘরে এসে রুদ্রকে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় আসে। রুদ্র উল্টো পিঠ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। দোলার উপস্থিতি জানান দেওয়ার জন্য দোলা গলা দিয়ে শব্দ করে। রুদ্র চমকে উঠে পিছু তাকায়।
– দোলাকে দেখে পুনরায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে। ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে আমি জানতাম না তুমি আজ আসবে। তাহলে আমি কখনোই তোমার সামনে পড়তাম না। রুদ্র এমন অবান্তর কথায় দোলার ভ্রু কুচকে আসে। কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলে আমাকে দেখে যখন এতই সংকোচ তোমার মধ্যে তাহলে প্রতিদিন আমার অফিস যাওয়ার পথে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে কেনো? আসার সময়ও কেনো একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সেখানে? দোলার কথায় চোখ কপালে উঠে যায় রুদ্র। কপালে ভাঁজ, ঘাবড়ে যাওয়া দৃষ্টি।
– রোদের সাথে যখন ভিডিও কলে কথা বলতে তখনই বা ক্যামেরাটা কেনো আমার দিকে থাকতো? দোলার একের পর এক প্রশ্নে রুদ্র তলিয়ে যায়। যেগুলো দোলার জানার কথা নয় সেগুলো দোলা কীভাবে জানে এটাই ভাবনা রুদ্রর।
– অবাক হচ্ছো তো আমার কথায়? ভাবছো নিশ্চয় আমি কিভাবে জানি? আমি প্রতিদিন তোমায় দেখতাম অফিসে যাওয়া এবং আসার পথে। যখন রোদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে তখন যে রোদ ক্যামেরাটা আমার দিকে রাখতো এটাও জানতাম আমি।।কারণ রোদ একদিন কথা বলার সময় আমি আয়নার দিকে তাকাতেই দেখি ফোনের ক্যামেরা আমার দিকে। আর সেদিনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম।

– রুদ্র বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে যেনো।
– আমি ভাবতাম এই বুঝি তুমি আমার সামনে আসবে আর বলবে অনেক তো হলো চলো এবার। সেই আগের মতো জোর খাটিয়ে নিয়ে যাবে আমায়। কিন্তু আমার অপেক্ষা শেষ হয়নি। ভুল তোমার না রুদ্র! ভুল আমার। তোমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে নতুন করে ভুল আমি করে ফেলেছি। অ/ন্যা/য় আমি করেছি তোমার সাথে। মিথ্যা অভিমান জেদ নিয়ে ১৬ টা বছর আমি দূরে কাটিয়ে দিয়েছি তোমাকে অ/প/রা/ধী করে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি এমনটা চাইনি। কিন্তু আমি জানি না আমার মধ্যে কি হয়েছিলো আমি কেনো তোমার সামনে আগে আসতে পারিনি। আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি তোমার সাথে আমার পরিবারের সাথে আমার সন্তানের সাথে। একটা অ/ন্যা/য়ের শা/স্তি দিতে গিয়ে আমি নিকৃষ্ট ভুল, অ/ন্যা/য় করে ফেলেছি যেটা আমি এখন উপলব্ধি করতে পারি। আমার এই ভুল এই পাপের ক্ষমা হয়না। রাদ আর রোদের কথায়! ওদের চাওয়া পাওয়া গুলো যখন আমাকে খুব করে ভাবাতে শুরু করে তখনই আমি বুঝতে পারি জীবনে কত বড় পা/প আমি করে ফেলেছি। যেটা কখনোই উচিত ছিলো না। তুমি অ/প?রা/ধ বোধ থেকে সামনে আসতে পারোনি। অপেক্ষা করেছো আমার জন্য। কিন্তু আমি সেই অপেক্ষার অবসান করতে পারলাম না। এর জন্য তুমি আমাকে যে শা/স্তি দিবে আমি মেনে নেবো। আমি মাফ চাওয়ারও যোগ্যতা হারিয়েছি। সত্যি বাড়াবাড়িটা বেশি আমি করেছি। সবাইকে কষ্ট দিয়েছি। তোমার এতগুলো দিন,মাস,বছর নষ্ট করেছি। আমাকে শা/স্তি দাও রুদ্র। যা শা/স্তি দাও আমার কোনো অভিযোগ নেই কথাগুলো বলে দোলা কান্নায় ভেঙে পড়ে। রুদ্র শুধু সাবলীল ভাবে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। মনের মধ্যে কালবৈশাখী ঝ/ড় বয়ছে। এই দিনটার জন্য কত অপেক্ষা করেছে রুদ্র। দোলার ফিরে আসার জন্য ব্যকুল হয়ে থেকে। একে একে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছে। শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যে সেদিনটা দেখার সৌভাগ্য হলো। মনের বাসনা অবশেষে পূরণ হলো।

– আমার ভুলের শা/স্তি স্বরুপ জিবন থেকে ১৬টা বছর চলে গেছে! এবার তোমার ভুলের জন্য আরও ১৬টা বছর তাহলে অতিবাহিত করি। হঠাৎ রুদ্রর এমন কথায় দোলা হকচকিয়ে উঠে। বিমুঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
– দোলার এমন চাহনি দেখে রুদ্র হেসে উঠে। রুদ্র কৌতুহলী হয়ে সে হাসির দিকে তাকায়।
– কি এমন কিছু বলবো তাই ভেবেছিলে? না দোলা। আমি এই দিনটার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছি। কতটা প্রহর আমি অপেক্ষায় কাটিয়েছি আমি জানি।।আর আজ সেটা হাতের কাছে পেয়ে আবারও দূরে ঠেলে দেবো? তাছাড়া তুমি আমাকে সবচেয়ে বড় উপহার দুটো দিয়েছো আমাদের সন্তান। দুইটা রাজকন্যা আমাকে উপহার দিয়েছো। তোমার অনুপস্থিতি আমাকে যন্ত্রণা দিয়েছে ঠিকই! কিন্তু ওদের মুখের বাবা ডাক তার পরোক্ষণে প্রশান্তিও দিয়েছে।
তাছাড়া আমি যে শুধু একাই কষ্ট পেয়েছি, য/ন্ত্র/ণা ভোগ করেছি এমন তো নয়৷ তুমিও একইভাবে কষ্ট পেয়েছো। শুধুমাত্র মুখ ফুটে কিছু বলতে পারোনি আর না পেরেছো আমায় ক্ষমা করতে। তবে কোনো অভিযোগ নেই তোমার প্রতি আমার আর থাকার কথাও না। জীবন আমাকে নিয়ে এতটা উপহাস করেছে যে আমি প্রতি মুহুর্তে তার মূল্য চুকিয়ে গেছি। যেটা উচিত ছিলো না সেটা করেছি। তোমাকে তার জন্য সাফার করতেও হয়েছে।

– দয়া করে এইসব কথা বলো না। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। আমি সত্যি জানিনা আমার ভুলের প্রাশ্চিত্য কিভাবে আমি করবো। আমার জানা নেই এই অ/ন্যা/য়ে/র “কি” শা/স্তি/তে সমাপ্তি হবে। রুদ্র এগিয়ে আসে দোলার দিকে। দোলার হাত ধরে আশ্বস্ত করে বলে আর মান-অভিমান, ভুল ঠিক নয় দোলা। অনেক তো হলো এবার সত্যি আমাদের জীবনটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। ভুল,অন্যায় কম বেশি দুজনেই করেছি আর তার জন্য দুজনেই শা/স্তিও পেয়েছি। তাই আর নয় এইসব। রুদ্র দোলার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করতে থাকে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর প্রিয় মানুষটাকে বুকে পেয়ে রুদ্র আপ্লুত হয়ে উঠে। চোখ দিয়ে আনন্দ অশ্রুও পড়ে। দূর হতে দাঁড়িয়ে এই সন্ধিক্ষণের সাক্ষি ছিলো তানিয়া আর রাদ, রোদ। বাবা-মায়ের মিলনে তারা ঈদ আনন্দ উপভোগ করে।

– মা বাবা এক হয়ে গেছে ইয়া-হু বলে চিৎকার করে উঠে রাদ। রোদ যেনো সে আনন্দে নাচানাচি শুরু করে। তানিয়া তার এক্সপ্রেশনটা ঠিক কীভাবে প্রকাশ করবে এটাই বুঝতে পারছে না। অতি আবগে শকড তানিয়া। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তারও। আনন্দের কান্না যাকে বলে। অনেক কষ্টে তার আবেগ কাটিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে মামি দেখে যাও কি কান্ড হয়েছে।।ব্রো আর ভাবি এক হয়ে গেছে। ওদের মধ্যে সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি শেষ হয়ে গেছে। বাবা কই তুমি দেখে যাও। তানিয়াও যেনো বাচ্চা হয়ে গেছে আনন্দের চোটে। তানিয়ার কথায় রুদ্র দোলা রসগোল্লার ন্যায় তাকিয়ে থাকে। তানিয়ার পাগলামি দেখছে শুধু।

– সারপ্রাইজ আমি দেবো কি রুদ্র! ভাই তুই তো বিশাল বড় সারপ্রাইজ আমাকে দিয়ে দিলি রে রাজ আসে কথাটা বলতে বলতে। রাজকে দেখে রুদ্র তো ভীষণ অবাক। হঠাৎ রাজ এই সময় এখানে কল্পনাও করেনি।
– রাজ তুই? দেশে কখন ফিরলি? কিছু তো জানাস’নি আমায়।
– আরে বেটা আমি তো তোকে সারপ্রাইজ দেবো ভেবে কিছু জানায়নি। কিন্তু তুই কি কামডা করলি ভাই। আমি তো শক কাটিয়ে উঠতে পারছি না। আমার তো নাচতে ইচ্ছে করছে রে। তানিয়া আসো একটু ডান্স করি খুশিতে বলে রাজ তানিয়ার হাত ধরে সত্যি নাচতে শুরু করে। উপস্থিত হয় তানভীর আহমেদ রত্না চৌধুরীকে নিয়ে। সাথে আশাও আছে আবিরকে ধরে। ওদের কান্ড দেখে সবাই হেসে লুটোপুটি খাই। রোদ আর রাদ তো আছেই সাথে।

– আরে ষ্টুপিড থাম। কি করছিস এইগুলো। বয়স যে কত হয়েছে সে চিন্তা তোর আছে। ছেলেমেয়ের সামনে এইভাবে ধৈধৈ করে নাচছিস। তুই নির্লজ্জই থেকে গেলি রাজ। রুদ্রর কথায় রাজ নাচতে নাচতেই বলে! তুই যাই বল ভাই আমার সেলিব্রেশন চাই কি বলো বাচ্চা পার্টি? রাজের কথায় সবাই বলে হ্যাঁ ঠিক একটা আনন্দ উৎসব চাই-ই চাই। আমাদের দাবী মানতে হবে আন্দোলন শুরু রাদ, রোদের। সাথে আছে তানজিলা আর আবির। ওরা জাস্ট সঙ্গ দিচ্ছে এই যা।

– আচ্ছা হয়েছে হয়েছে। সব হবে এবার থাম তোরা। চল আগে সবাই মিলে বসি আড্ডা দিই। দিল খুশ ভাই আমার। একদিনে বন্ধু আর বউ ফিরে পেলাম। মাস্তি হবে আজ রুদ্রর কথায় সবাই হাসতে থাকে।

– ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে। তানিয়া আর দোলা রান্নাঘরে চলে গেছে৷ দুপুরে সবার জন্য রান্না করবে তার আগে চা আর কিছু নাস্তা করছে।
– রাদ,রোদ, তানজিলা, আর আবির একসাথে খেলছে। এরই মাঝে উপস্থিত হয় রোকন।
– এই-যে শালাবাবু কি অবস্থা? রুদ্রর কথায় রোকন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে অনেক ভালো দুলাভাই। রোকনের মুখে আবারও সেই দুলাভাই শুনে রুদ্রর মুখটা কুচকে আসে। মলিন কন্ঠে বলে তোমাকে না বলেছি আমাকে দুলাভাই বলবে না।
– আমি যদি শালাবাবু হয় তাহলে তো তার বিপরীতে দুলাভাই থাকবেই দুলাভাই।
–” খুব বাড় বাড়ছো আজকাল। ব্যবস্থা করছি তোমার ওয়েট। একটা বউ না নিয়ে আসলে আর হবে না দেখছি। যে তোমাকে টাইট দিয়ে রাখবে রুদ্রর কথায় রোকন লজ্জা পাই। রোকন খবরটা পেয়েই এখানে আসে। দোলা আর রুদ্র যে এক হয়ে গেছে শোনার পর রোকন অনেক খুশি হয়৷ রোদ ফোন দিয়ে তার প্রাণ প্রিয় মামাকে সবটা জানায়।

– এইটা কিন্তু একদম ঠিক বলেছিস রুদ্র তুই। রোকনের সত্যি এবার একটা বিয়ে দেওয়া উচিত। রাজের কথায় রোকন লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠে বলে তোমরা আবার আমাকে নিয়ে কেনো পড়লে বুঝলাম না।
– হবু বর দেখি আবার লজ্জাও পাই রত্না চৌধুরী বলেন ঠোঁট চেপে হেসে।
– আন্টি আপনিও! রোকনের কথায় সবাই হো হো করে হেসে উঠে।
– কি নিয়ে এতো হাসাহাসি হচ্ছে শুনি দোলা আসে নাস্তা আর চা হাতে। সাথে তানিয়াও।
– কি আবার তোমার ভাইয়ের বিয়ের কথা হচ্ছে। রুদ্রর সোজা জবাবে দোলা ভ্রু কুচকে রোকনের দিকে তাকায়। রোকন আর কারো দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না৷

সবার এত আনন্দ করছে আর আমি বাদ বাহ! সজল আসে কথাটা বলতে বলতে।
– অবশেষে ষোলোকলা পূর্ণ হলো বাবা তোমাকে দিয়ে তানভীর আহমেদ বলেন রসিকতা করে।
– কংগ্রেস রুদ্র হাত বাড়িয়ে বলে সজল। রুদ্র মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানায়।
– এই যে অভিমান রাণী এতদিনে সুবুদ্ধি হলো তবে আপনার? সজলের কথায় দোলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। প্রতিটি মুহুর্তের জন্য অনুতপ্ত সে।

– আমি একটা কথা ভেবেছি রুদ্র তোদের নিয়ে। রাজের কথায় রুদ্র ভ্রু উঁচিয়ে বলে কি শুনি তবে উল্টো পালটা কিছু বললে খবর আছে কিন্তু।
– রুদ্র ভাইয়ার কথায় পাত্তা দিওনা রাজ ভাইয়া তুমি বলো আমি সাথে আছি সজল বলে উৎসাহ দিয়ে। সেই সাথে রোকন বলে আমিও।

– নাও দল ভারী আর ভয় কিসের রুদ্র বলে । রাজ ফোকলা হাসি দিয়ে বলে রুদ্র আর দোলার আবার বিয়ে দেবো আমরা সেই সাথে বাসরও। কথাটা দোলার কর্ণপাত হতেই হাতে থেকে একটা প্লেট পড়ে যায় যেটা সে তানভীর আহমেদকে চায়ের সাথে দিতে যাচ্ছিলো। আর রুদ্র সবে পানি মুখ দিয়েছে সেই সময় এইকথায় তার গলায় পানি আটকে কাশতে শুরু করে।
– বোঝো কান্ড! মনে হচ্ছে ভূমিকম্প বয়ে গেলো এদের উপর দিয়ে ব্যঙ্গ করে বলে রাজ।
– বড়রা আছে এখানে রাজ সেই সাথে বাচ্চারাও। কি বাজে বকছিস তুই নুয়ে পড়া কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলে রুদ্র। দোলা তো লজ্জায় আর কারো দিকে তাকাতে পারছে না। রত্না চৌধুরী শাড়ির আঁচল চেপে হাসেন। তানভীর আহমেদও মুচকি হাসে। বাকিদের মুখে দুষ্টামি হাসি।
– আন্টি আমি কি ভুল বলেছি বলো? রাজের কথায় রত্না চৌধুরী আমতাআমতা করে বলে আমি আর কি বলব বাবা। তোর যা ভালো মনে হয় কর আমি ঘরে যাচ্ছি।
– আমি আপনাকে রেখে আসছি ভাবি বলে তানভীর আহমেদও উঠে যায়।

– বড়রা চলে গেছে এবার স্বস্তি। কিন্তু প্ল্যান যা করেছি হেরফের হবে না হু। একদম তাই রাজের কথা শেষ হতেই তানিয়া বলে। রুদ্র আর দোলা যেনো মাইনকার চিপায়।

– তুমি খুব পঁচা রাদ আপু। শুধু আমার গাল টিপে দাও। একটু ভালো লাগে না তোমায় আমার। আবিরের উচ্চস্বরের কথায় সবার মনোযোগ যায় সেদিকে।
– তোর গাল দুটো এমন টমেটোর মতো দেখতে আর গুলুমুলু যে আমার সব সময় টিপতে ইচ্ছে করে কি করবো আবির বল। আবির সবে চতুর্থ শ্রেণীতে। রাজ আর আশার বিয়ে হওয়ার ছয় বছর পর আবির হয়।আশার কিছু সমস্যা থাকায় আবির আশার গর্ভে আসতে দেরি হয়। তাই সবার থেকে ছোট আবির। আর দেখতে গুলুমুলু।

– শুন আবির আমি যদি বিয়ে করি না তোকে করবো। কারণ তোর গাল গুলো চটকাইতে খুব ভালো লাগে আমার। তাছাড়া অনেক কিউট আছিস তুই। গুলুমুলু কিউট পিচ্চি জামাই হবি আমার। রাদের কথায় আবির নাক শিটকে বলে বয়ে গেছে আমার তোমায় বিয়ে করতে। আমি বিয়ে করলে রোদ আপুকে করবো। অনেক ভালো আর তোমার থেকেও সুন্দর রোদ আপু৷ আবিরের কথায় সবাই হেসে উঠে।

– আর আমি সুন্দর না তানজিলা বলে কান্নারত কন্ঠে। বাচ্চাদের এই তামাশা দেখতেই সে সময় কেটে যায়।

— দুদিন পর! রুদ্র আর দোলাকে রাতে সাঁজিয়ে গুছিয়ে ঘরে পাঠানো হয়। ঘরে এসে দুজন অবাক হয় ঘর সাঁজানো দেখে৷ ওদের বিকেলে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর আর আসতে দেয়নি কেউ।

– ওরা সত্যি সত্যি সব করে তবে ছাড়লো রুদ্র বলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে। দোলা লজ্জা পাচ্ছে ভীষণ। রুদ্র দোলার দিকে তাকিয়ে বলে অনেক সুন্দর লাগছে তোমায়। সেই আগের দোলাকে আমি যেনো আজ দেখছি। তোমার মধ্যে সত্যি কি আছে আমি জানি না। তবে তোমায় প্রথম দেখাতে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। তুমিময় আসক্তি গ্রাস করে আমায়। যার জন্য আমি আর অন্য দিকে হতে পারিনি। তোমার জন্য অপেক্ষার মধ্যেও ছিলো অন্য রকম সুখের অনুভূতি। রুদ্র কথায় দোলা লজ্জা পায় সাথে খারাপও লাগে অনেক তার কাজের জন্য।
– রুদ্র দোলার হাত চেপে ধরলে দোলা চমকে উঠে।
– রুদ্র মুচকি হেসে বলে আজ সারারাত আমরা গল্প করবো। এতদিনের জমানো কথা যত অনুভূতি প্রকাশ করবো একে-অপরের কাছে। আমাদের কখনো এইভাবে বসা হয়নি একসাথে। শোনা হয়নি দুটো হৃদয়ের কথা৷ আজ শুনবো আর বলবো এরপর রুদ্র দোলাকে কোলে তুলে নেয়।
– আরে কি করছো তুমি পারবে না আমায়।
বয়স বাড়তে পারে কিন্তু বউকে বহন করার ক্ষমতা এখনো আছে রুদ্রনীল চৌধুরীর মধ্যে। তাছাড়া বয়স আর হলো কই এখনো অনেকটা ভালোবাসতে পারি দেখবে৷ রুদ্রর লাগামহীন কথায় রুদ্র মুখ লুকায় রুদ্রর বুকে৷ রুদ্র মুচকি হেসে দোলাকে নিয়ে বারান্দায় যায়।

– সন্ধির-সময়টা সত্যি অনেক সুন্দর হয়। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর কিছু পেলে সেটার আনন্দও দ্বিগুণ হয়ে ধরা দেয়। অনেক কিছু ঘটে জীবনে যার প্রত্যাশা আমরা কেউ রাখিনা। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে শুভক্ষণ বা কাঙ্ক্ষিত সময়ের আশা আমরা রাখি। তবে এমন জীবন কারো না হোক। প্রিয় মানুষ সবার সাথে থাক পাশে থাক আর পরিশেষে ভালো থাক ভালোবাসা এবং ভালোবাসার মানুষ গুলো।

“সমাপ্তি”
❌কপি করা নিষেধ ❌ ছোট একটা কথা! গল্প থেকে মানুষ শিক্ষা নেয় আমল করে এই ভ্রান্ত কথা প্রায় দেখা ও শোনা যায়। গল্পে যদি সমাজ প্রেক্ষাপটে কিছু তুলে ধরা হয় তখন বলে এইসব গল্পে দেবেন না বা মানুষকে ভুল কিছু শিখাবেন না। মানে এটায় বোঝায় গল্পে যদি কিছু সত্য তুলে ধরাও হয় সেটা থেকে মানুষ খারাপ হয়ে যায়। আচ্ছা একটা কথা বলুন যদি সত্যি গল্প মানুষকে কু-ইন্ধন দেয় তাহলে এই যে দেশে এতো এতো আলেম-হাফেজ চেষ্টা করছে মানুষকে সুপথে আনতে। তারা প্রতিনিয়ত ইসলামের দিকে আহবান করছে মানুষকে এবং সেগুলো শুনছে কোটি কোটি মানুষ কই তারা তো সেগুলো আমলে আনতে পারছে না। দিন দিন অ/ন্যা/য়, নি/র্ম/মতা বেড়েই চলেছে। যদি কারো কথায় কারো জীবন চলতো তাহলে এইগুলা সত্য কাজে দিতো। মানুষ ভুল পথে থাকতো না৷ আসলে মানুষের কাজ কর্ম থাকে তার মানসিকতায় তার মনোভাবে। কারো কথা বা লেখায় না। “যে” শ/য়/তানের অনুসারী হয় তার জন্য ইবলিশই যথেষ্ট থাকে আর যে আদর্শ জীবন রাখে তার জন্য তার ধর্ম তার নৈতিকতায় যথেষ্ট। কারো বলায়, শোনায়, লেখায় কিছু আসেনা। তাই এসব সো কল্ড কথার কোনো ভিত্তি নেই। আমি সহজ ভাবে সব মানি আর আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ ভালো রাখছে আমাকে। সহজ জীবন যাপন সর্বদায় সুখী হয়। সবশেষে এটাই বলবো সবার চিন্তা ভাবনা এক থাকে না। যদি একই হতো তাহলে দুনিয়ায় ভিন্নধর্মী না হয়ে একভাবে চলতো। তাই আমার ভাবনার সাথে আপনার ভাবনা মিলবে না স্বাভাবিক তেমন আপনারটাও আমার কাছে গণ্য হবে না। অসংখ্য ধন্যবাদ সবাই। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here