তুমিময় আসক্তি ২ পর্ব ২৭

0
774

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“২৭”

— কেটে যায় দুইমাস। এই দুই মাস রুদ্র বা দোলা কারো দেখা হয়নি। কিন্তু রুদ্রর পরিবারের সাথে প্রতিদিনই যোগাযোগ করা হয় দোলার। তানিয়া, রত্না চৌধুরী, তানভীর আহমেদ সবার সাথে কথা হয়৷ এমনকি তারা এসে এসে দেখে গেছে দোলাকে। কিন্তু দোলা একবারের জন্যও যায়নি রুদ্রর বাড়ি। আজ আশা আর রাজের বিয়ে৷ রাজ আর আশা দুজন দুজনকে প্রথম থেকেই পছন্দ করতো। এটা যখন সবাই জানতে পারে তখন সেটা বিয়েতে পরিণত দেয়। রাজের বাবা-মা নেই। অনেক আগেই মা/রা গেছেন তারা। রাজ তার চাচা-চাচির সাথে থাকতো। কিন্তু রাজের চাচিও গত হয়েছেন কয়েকবছর আগে। এখন মা হিসেবে সব দায়িত্ব রত্না চৌধুরীরই। রাজ দেখতে শুনতে ভালো, নিজস্ব ব্যবস্থা সব মিলিয়ে আশার পরিবার সন্তুষ্ট। তাই আর কোনো রকম আপত্তি জানাননি তারা।

– দুদিন বেশ হাসি আনন্দ! জমজমাট ভাবে কেটেছে। গায়ে হলুদ, মিষ্টি মুখ সব মিলিয়ে বেশ ভালো সময় যায়। দোলা দুদিন আগেই চলে এসেছে আশার বাড়ি। সাথে সজল ও রোকনও আছে। যেহেতু তারা কনে পক্ষ তাই এখানেই অবস্থান করছে। তানিয়া একসাথে দুটো বিয়ে উপভোগ করছে৷ কখনো রাজের বিয়ের উৎসব তো কখনো আশার বিয়েতে। একদিকে ভাইয়া আরেক দিকে ফ্রেন্ডের বিয়ে দুটোই যেনো ইঞ্জয় করছে খুব। রাজের বিয়েটা রুদ্রর বাড়ি থেকেই আয়োজন করা হয়। এই দুদিনে সজল আর তানিয়ার বেশ ভাব জমে উঠে। দেখামাত্র তারা দুজন দুজনকে একটা করে মুচকি হাসি উপহার দিয়ে গেছে প্রতিবারই। হয়তোবা ভালো লাগাও শুরু হয়ে গেছে দুজনের মধ্যে।

— আশাকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। লাল টকটকে বেনারসি শাড়ি, ভারী গহনার ভার সাথে গাঢ় মেকাপের প্রলেপ। দোলাও আজ লাল শাড়ি পড়েছে। কারণটা আশা। আশার আবদারে লাল শাড়ি পড়ে দোলা। তাছাড়া দোলার লাল রং একদমই পছন্দ না(আমারও)। অনেক সুন্দর লাগছে দোলাকে লাল শাড়িতে
বর আসার অপেক্ষা এখন। হৈচৈ হট্টগোল বিয়ে বাড়ি জাঁকজমকপূর্ণ। বাচ্চাদের দৌড়ঝাপ বড়দের ছোটাছুটি সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ বিয়ে বাড়ি একটা। ব্যস্ত সময় যাচ্ছে সবার। বর যাত্রী আসবে তার আয়োজন চলছে। দোলার মধ্যে যেনো অস্থিরতা ভাব একটা। কারো জন্য দীর্ঘ প্রতিক্ষা৷ এই দুই-মাস রুদ্রকে না দেখতে পেয়ে দোলা যেনো মিস করতে শুরু করে। অপেক্ষা করছে রুদ্রকে একটিবার দুচোখ ভরে দেখার। রুদ্র আজ আসবে এই আশায় প্রতিক্ষীত দোলা। আচ্ছা উনি সত্যি আজ আসবেন তো? নিজের মধ্যেই প্রশ্নটা আওড়াই দোলা। নাহ আসবেন উনি! উনার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর বিয়েতে আসবে না এটা কি কখনো হয়। এইসব ভাবনায় মশগুল দোলা। কি রে এতো কি ভাবছিস শুনি? আশার কথায় ভাবনাচ্যুত হয় দোলার। মুখে মিষ্টি একটা হাসি নিয়ে বলে তোকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে রে আশা। দোলার কথায় লাজুক হাসে আশা। এরপর আশাও মুচকি হেসে বলে লাল শাড়িতে দারুণ মানিয়েছে তোকে৷
– আচ্ছা বরযাত্রী কখন আসবে? হুট করে বলে উঠে দোলা। আশা ভ্রু কুচকে তাকায়৷ ওর তাকানো দেখে দোলা চকচকিয়ে উঠে বলে না মানে তানিয়া এখনো আসলো না৷ বর না আসলে তো সেও আসবে না। আশা দীর্ঘশ্বাস রেখে বলে মিস করছি তানিয়াটা কে। এরই মধ্যে পুরো বাড়ি জুড়ে একটি শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে। বর এসেছে বর এসেছে। সবাই যেনো নতুন করে ব্যস্ততার রঙে রঙ্গিন হয়। ছোট বড় সবাই বর দেখতে ছুটে। বরযাত্রীদের বসতে দেওয়া তাদের জন্য খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা এইসবে সবাই নতুনভাবে মেতে উঠে।

– আশার বুকের মধ্যে ধক করে উঠে কথাটা কর্ণপাত হতেই৷ দোলার মধ্যে আলোড়ন ফেলে দেয়। বর এসেছে কথাটা শুনে সে নড়েচড়ে বসে। কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা দেখার অপেক্ষার অবসান হয় যেনো। আশার আশেপাশে থাকা আত্মীয় বা মেয়েরা ছুটে যায় বর দেখার জন্য। আশা লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠে আরো৷ নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিয়ে বসে।

– তুই বস আমি আসছি কথাটা বলে দোলা বেরিয়ে আসতে চাইলে আশা হাত চেপে ধরে দোলার। কৌতুহলী হয়ে বলে কোথায় যাচ্ছিস? দোলা হাসার চেষ্টা করে বলে বর সাঁজে রাজ ভাইয়াকে কেমন লাগছে দেখে আসি।
– রাজকে দেখার জন্য ছুটছিস নাকি অন্য কাউকে দোলা? চমকে উঠে দোলা আশার কথায়। ঘাবড়ে যাওয়া চোখে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলে কা-কাকে দেখার জন্য যাবো আবার? আমি তো রাজ ভাইয়াকে দেখতেই যাচ্ছি। নিজেকে শক্ত করে প্রকাশ করার চেষ্টা।

– তুই কেনো মিথ্যা বলছিস দোলা। আমি তোকে জানি তোকে বুঝি৷ তুই যে রুদ্র ভাইয়ার জন্য যাচ্ছিস এটা আমি খুব ভালো করে বুঝতে পারছি৷ আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড দোলা। সেই ছোট থেকে তোকে দেখছি আমি। তোকে চিনতে আমার অবশিষ্ট নেই।
– কি যা-তা বকছিস আশা তুই? এমন কিছুই না৷ আমি তো জাস্ট.. তুমি রুদ্র ভাইয়াকে মিস করছিস এবং তুই ভালো নেই রুদ্র ভাইয়াকে ছাড়া। তুই যে রুদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসিস এটা কখনোই লুকাতে পারবি না তুই। দোলা অবাক চোখে তাকায় আশার দিকে।

– তুই যেমন ভালো নেই তেমন রুদ্র ভাইয়াও ভালো নেই তোকে ছাড়া। কেনো এমন করছিস দোলা। সবটা ঠিকঠাক করে নে-না৷ দেখ সবাই চাই তোরা একসাথে থাক আবার। সবার মধ্যে একটা হতাশার ছাপ তোদের জন্য। তুই কিন্তু চাইলেই সবটা মিটমাট করে নিতে পারিস৷ ভাইয়া তো অনুতপ্ত তার কাজের জন্য তাহলে কেনো এমন শাস্তি দিচ্ছিস৷

– চুপ কর আশা৷ দয়া করে এই ব্যাপারে আর কোনো কথা বলিস না। জীবনটা আমার তাই আমাকেই বুঝতে দে সব কিছু। আশা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে একটা দোলার কথায়৷ এর মাঝে তানিয়া উপস্থিত হয় সেখানে। তানিয়া সাদা শাড়ি পড়েছে আজ। তানিয়াকে দেখে দোলা একটা হাসি রাখে৷ আশাও মুচকি হাসে। তানিয়া মুখের হাসিটা গাঢ় করে বলে কি অবস্থা কনের?

– তোমাকে তো শুভ্র পরী লাগছে তানিয়া। হেসে বলে দোলা। আচ্ছা! আর তোমরা যে লাল পরী হয়ে আছো এটা বলো। ভাবি তোমাকে কিন্তু দারুণ লাগছে লাল শাড়িতে৷ তানিয়ার কথায় আশা মুখটা মলিন করে বলে শুধু দোলাকেই ভালো লাগছে আর আমি? ওর কথায় তানিয় আর দোলা ফিক করে হেসে উঠে।

– তুমি আজকে সবচেয়ে সুন্দরী হয়ে আছো। বিয়ের কনে বলে কথা৷ আশা লজ্জায় নুয়ে পড়ে যেনো। আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসছি একটু বলে দোলা বেরিয়ে আসে ঘর থেকে । কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।

– রাজকে তার আসনে বসানো হয়েছে৷ কিছুক্ষণ পর আশাকেও নিয়ে আসা হবে। দোলা দূর থেকে রুদ্রকে খুঁজছে৷ কিন্তু রুদ্রকে কোথাও দেখা যায়। রাজ আর তার কিছু বন্ধুরা কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে৷ রাজ যেনো শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনে মুখে হাসিটা বজায় রেখেছে। তার হাসির মধ্যে শুভ্রতা নেই আছে শুধুই মলিনতা। কিন্তু কেনো?

– উনি কি তাহলে আসেনি? দেখতে পাচ্ছি না কেনো?

পরোক্ষে হকচকিয়ে উঠে দোলা! কি হয়েছে আমার? আমি উনাকে নিয়ে এতো ভাবছি কেনো? আমার তো উনাকে নিয়ে ভাবার কথা নয়। তাহলে কেনো হচ্ছে এমন আমার সাথে। না না এমন ভেঙে পড়লে চলবে না৷ আমি কারো জন্য অপেক্ষা করবো না। নিজেকে নিজেই বোঝায় দোলা। নিজের কাছেও যেনো ধরা দিতে চাইনা সে৷
– ব্রোকে খুঁজছো ভাবি? হঠাৎ তানিয়ার এমন কথায় পিলে- চমকে পিছে তাকায় দোলা।
– ব্রো আসেনি ভাবি। আমরা অনেকবার বলেছি রাজ ভাইয়া অনেক রিকুয়েষ্ট করে কিন্তু লাভ হয়নি। ব্রো তোমাকে কথা দিয়েছে তোমার সামনে আসবে না তুমি না বলা পর্যন্ত! তাই সে আজ বিয়েতেও আসেনি।।কারণ ব্রো জানে এখানে আসলে তোমার মুখোমুখি হতে হবে৷ ব্রো দুর্বল হয়ে যাব তোমাকে দেখে। নিজেলে সামলাতে পারবে না। তাই সবচেয়ে কাছের বন্ধু তার বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়েটাও আসেনা সে। রাজ ভাইয়াকে দেখো ভাবি! আজকের দিনেও পুরোপুরি খুশি না মানুষটা৷ কারণ তার প্রিয় বন্ধুটাই কাছে নেই। আজকের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন তার প্রিয় বন্ধুটাকে বাদেই কাটাতে হচ্ছে।

– তানিয়ার কথায় দোলা আশাহত হয়। নতুন করে ভেঙে পড়ে আবারও। অপেক্ষার অবসান এইভাবে হবে ভাবেনি দোলা। চোখের মধ্যে পানি, নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা তার। চাপা আর্তনাদ হৃদয় জুড়ে।

— সুষ্ঠুভাবে বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে যায়। পুরোটা সময় দোলা চুপচাপ আর মনোক্ষুণ্ণ হয়ে ছিলো। কোনো কিছুই যেনো ভালো লাগছিলো না। তবে রুদ্রর প্রতি তার অনুরাগের জন্ম হয় নতুন করে। রুদ্রর এমন বিহেভ এই সিদ্ধান্ত নতুন করে অভিমানের সৃষ্টি করে দোলার মধ্যে। অভিমান বড়ই প্রকট। রাগের কিনারা থাকলেও অভিমান যেনো শক্ত ভীত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।

—————————————————–

– প্রায় ১৬টা বছর অতিবাহিত হওয়ার পর!!

– বদলে গেছে সময় সেই সাথে বদলে গেছে অনেক কিছু৷ সময়ের হাত ধরে পরিবর্তীত সব কিছু। প্রকৃতি তার নতুন রুপে সেজে উঠেছে। শহর গুলো তাদের চাকচিক্যের ভীড়ে পুনরায় রঙ বদলাচ্ছে। সবাই এখন যে-যার মতো ব্যস্ত ঘর সংসার নিয়ে। পরিবার, কাছের মানুষগুলোর খেয়াল রাখা এইভাবে চলছে বেশ দিনগুলো। সময়ের হাত ধরে পরিবর্তন এসেছে দোলার মধ্যেও। চোখে গোল ফেমের চশমা জুড়ে গেছে, মাতৃত্ববোধ, আর দায়িত্বের ভার সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ একজন নারীতে গড়ে উঠেছে৷ রাশেদ মিয়া দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন বছর দুই আগে৷ রোকন, দোলা আর তার মেয়ে রোদ এই নিয়ে বেশ চলছে দোলার সংসার । দোলা সজলের অফিসে চাকরি করে। সজল নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য ছোটোখাটো একটা ব্যবস্থা শুরু করেছিলো। যেটা আজ বৃহৎ আকার নিয়েছে। সফল ব্যবসায়ীদের মধ্যে সে একজন হয়ে নাম লিখিয়েছে। দোলা সজলের অফিসের ম্যানেজার পোস্টে আছে। তার কাজের দক্ষতায় আজ এতদুর পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।

— মা! হঠাৎ চেনা কন্ঠস্বর পেতেই দোলা চমকে উঠে। সামনে তাকাতেই রাদের হাসিমুখ দেখতে পাই। দোলা সবে একটা ফাইল নিয়ে বসেছে চেক দেওয়ার জন্য। সময়টা দুপুরের পর। দোলা লাঞ্চ সেরে ফাইল নিয়ে বসে আর তখনই আগমন হয় রাদের৷
– রাদ মা তুই? চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরে দোলা রাদকে। এতদিন পর মায়ের ছোঁয়া পেয়ে রাদও যেনো আপ্লুত হয়ে যায়। মায়ের সংস্পর্শ পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠে।

– তোমাকে অনেক মিস করছিলাম মা তাই চলে আসলাম। দোলা রাদকে ছেড়ে দিয়ে ভালো ভাবে দেখে বলে তুই আজও স্কুল থেকে এসেছিস রাদ? তোকে না কতবার বারণ করেছি এইভাবে আসবি না তুই। তোর আমার কাছে আসার হলে আমাকে বলতি নয়তো বাবাকে বলতিস৷ পাঠিয়ে দিতো গাড়ি করে। এইভাবে না বলে হুটহাট আসাটা ঠিক বল তুই? দোলার কথায় রাদ যেনো আনন্দ পাই৷ তাই মুখের হাসিটা গাঢ় করে বলে তুমি কি খুশি হওনি আমাকে দেখে৷ আমি যে তোমাকে মিস করছিলাম এটা দেখবে না। মুখটা এবার ফ্যাকাসে করে কিউট একটা ফেস ধরে বলে রাদ। দোলা আর মুখটা গম্ভীর করে রাখতে পারে না৷ হেসে উঠে বলে আচ্ছা যা হয়েছে হয়েছে। টিফিন খেয়েছিস তুই? মায়ের কথায় চমকে উঠে রাদ৷ ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলে আসলে মা ইয়ে মানে! রাদের এই আমতাআমতা দেখে দোলা যা বোঝার বুঝে যায়।

– এবার আমি তোমায় খুব করে বকবো রাদ। আমি বলেছি তোমাকে এইভাবে আসবে না আমার কাছে৷ আর এসেছে ভালো কথা টিফিন খেয়ে তবে আসবে। কতটা সময় চলে গেছে খেয়াল আছে আর তুমি এখনো টিফিন খাওনি। রাদ বুঝতে পারছে দোলা প্রচন্ড রেগে গেছে এবার। কারণ দোলা যখনই রেগে যায় তখনই তুমি করে বলে।

– টিফিন খেতে গেলে তো দেরি হয়ে যেতো তোমার কাছে আসতে৷ তাছাড়া টিফিন পিরিয়ড শেষ হলে আমাকে কি আর বের হতে দেবে স্কুল থেকে। অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে রাদ। দোলা কিছুক্ষণ রাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে অনেক কথা হয়েছে এবার এসো খেয়ে নেবে। তোমাকে নিয়ে সত্যি আর পারিনা৷ দোলার কথায় রাদ খুশিতে উত্তেজিত হয়ে বলে আমি না ঠিক এই জন্য আরো খাইনি! কারণ আমি জানি তোমার কাছে আসলে তুমি আমায় খায়ে দেবে রাদের কথায় দোলা এবার সত্যি হেসে দেয়। এরপর রাদকে নিয়ে অফিসের ক্যানটিনে চলে যায়।

– বিদেশী ক্লায়েন্টের সাথে বড় একটা ডিল হচ্ছে রুদ্রর কোম্পানির। আর তারই মিটিং চলছে। রুদ্রর মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি বরং তার মধ্যে গাম্ভীরতার নতুনত্ব এসেছে। তবে রুদ্রর মধ্যে এখন দুটো মানুষ বাস করে। পরিবার, মেয়ের কাছে খুবই স্বাভাবিক আর সেনসিটিভ একটা মানুষ। কিন্তু বাইরে হার্ডলেস, গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ যেটা বরাবর সবাই জানে। রুদ্র সেই আগের মতোই আছে। তার এটিটুড তার মধ্যেকার যে এক্টিভিটি ছিলো সেটা আজও অক্ষত।

– বাবা” মিটিং চলাকালে রোদ ঢুকে পড়ে মিটিং কনফারেন্স রুমে। রোদকে দেখে রুদ্রর মুখে হাসি ফুটে৷ সবাই তো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রোদের দিকে। রাজের মুখে হাসি ফুটে রোদকে দেখে।

– রোদ মামনী এখানে মিটিং চলছে তুমি বাইরে এসো প্লিজ রুদ্রর পিএ বলে রোদকে। এতখন তিনি প্রাণপণে চেষ্টা করেছিলো রোদকে এখানে আসা থেকে আটকাতে। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়৷ রুদ্রর মেয়ে যে রুদ্রর মতোই জেদি হবে এটাই স্বাভাবিক।
– ওহ আঙ্কেল তুমি যাও তো। আমি বাবার সাথে দেখা করতে এসেছি দেখা করে চলে যাবো। রুদ্র তার পিএ-এর দিকে তাকালে তিনি মাথা নিচু করে বলে স্যার আমি অনেক চেষ্টা করেছি রোদ মামনীকে আটকানোর কিন্তু সে আমার কোনো কথায় শুনেনি। এখানে চলে এসেছে।

– কে বলেছে তোমায় ওকে আটকাতে? রুদ্রর গম্ভীর কথায় ঘাবড়ে যায় তার পিএ।
– না মানে স্যার! আপনি তো বলেছিলেন মিটিং চলাকালীন কেউ যেনো ডিস্টার্ব না করে আপনাকে।
– কেউ মানে অন্য কেউ সেটা আমার মেয়েরা নয়। তোমাকে না বলেছি আমার মেয়েদের কখনো বারণ করবে না আমার কাছে আসতে আমি যেখানেই থাকি।
– সরি স্যার রুদ্রর কথায় আরো মাথা নুয়ে ফেলে।
” শাট আপ এন্ড গো নাউ। রুদ্রর কথায় পিএ চলে যায়।

– রোদের মুখের হাসিটা চওড়া হয়ে আসে আরো। সোজা গিয়ে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে। রুদ্র ও মেয়েকে সাদরে আগলে নেই।
– এটা কি করছেন মিস্টার চৌধুরী। এখানে অনেক বড় একটা ডিল হচ্ছে। কত গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে আর আপনি!
– বাকিটা রাজ সামলে নেবে। আপনারা ওর সাথেই সবটা ঠিক করে ফেলুন৷ রাজ মিটিংটা তুই এটেন্ড কর বলে রুদ্র রোদকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। সবাই যেনো হতভম্ব রুদ্রর কাজে। রাজ দাঁড়িয়ে যায়। এরপর মুচকি হেসে বলে কিছু মনে করবেন না৷ আসলে রুদ্র ওর মেয়েদের অনেক ভালোবাসে। সব কিছুর থেকে ইমপোর্টেন্ট ওর মেয়েরা ওর কাছে তাই কোনো কিছুর সাথে কম্প্রোমাইজ করে না ওদের। এবার মিটিং শুরু করা যাক তবে? রাজের কথায় সবাই একটা বড় নিশ্বাস ত্যাগ করে মিটিং-য়ে মনোযোগী হয়।
বাকিটা পরের পর্বে!!

চলবে….
❌❌কপি করা নিষেধ ❌ রুদ্র আর দোলার যে টুইন বেবি ছিলো সেটা তোমরা ভুলে গিয়েছিলে। তাই মনে করাই দিলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here