#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“২১”
— রুদ্র রোজার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে রাগে ফুসতে থাকে৷ রোজা যেনো অবিশ্বাস্য চোখে রুদ্রকে পর্যবেক্ষণ করছে৷ রুদ্র তার সাথে এমন একটা কাজ করবে ভাবতেই পারিনি৷ অসহ্য বিস্ময় ঠেলে তাকিয়ে আছে দোলা৷ হাতের কনুইয়ে ব্যথা পেয়েছে সে। তানিয়া ছুটে যাবে দোলাকে তুলতে তার আগের রুদ্র হাত বাড়ায় রোজার দিক হতে নজর সরিয়ে। দোলা চমকপ্রদ চক্ষু বিসর্জন দিচ্ছে রুদ্রর দিকে। রুদ্র এবার ঝুকে বসে দোলার দুই বাহু ধরে তোলে। পুনরায় হাতের ব্যথায় দোলা কিঞ্চিৎ আহ শব্দ করে এতে যেনো রুদ্রর হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়৷ রোজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রস্তুতি আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে মনের আশ মেটানো। রোজা এখনো স্থীর চাহনিতে তাকিয়ে৷ এই রুদ্র অচেনা তার। সম্পুর্ণ আলাদা মানুষ। রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলে তোর সাহস কি করে হয় দোলার গায়ে হাত দেওয়ার? দোলা আমার ওয়াইফ। রুদ্রর এই কথাটা রোজার মধ্যে বারবার রিপিট হয়। কেনো জানি এই শব্দটা আজ খুব কষ্ট দিচ্ছে তাকে৷ সে-তো চায়না রুদ্রকে। তো যা ইচ্ছে হোক তার সমস্যা থাকার কথা না। তাহলে কেনো এই অচেনা ব্যথা মনে।
– এতখন চুপচাপ ছিলাম কেনো জানিস? রুদ্রর কথায় সবাই বিস্ময় চাহনি রাখে।
– দেখছিলাম তুই কতটা নাটক করতে পারিস৷ তোর অভিনয়ের পরিপক্বতা কতটা হয়েছে। আমি দেখছিলাম তুই আর কত রকম ন্যাকামি করতে পারিস৷ কিন্তু তুই সব কিছুর লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস। দোলাকে ধাক্কা দেওয়ার সাহস হয় কি করে তোর কথাটা বলে রুদ্র আবারও হাত তুলে মারার জন্য তখন দোলা রুদ্রর হাত ধরে থামিয়ে দেয়। রোজা ভয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে খিচে চোখ বন্ধ করে আছে। সবাই আতংকিত চোখে তাকিয়ে থাকে। রুদ্র যে ভীষণ পরিমাণে রেগে আছে বোঝায় যাচ্ছে।
– আমার জীবন’টা তুই শেষ করেছিস। তোর মতো ঠক প্রতারক নোংরা মানসিকতার মেয়েকে ভালোবেসে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলেছি। আমার স্বপ্ন, আমার আশা আকাঙ্খা, আমার সুখ, আনন্দ, হাসিখুশি সব কিছু কেড়ে নিয়েছিস তুই। আবার সেই ভালোবাসার দাবী নিয়ে আমার কাছে ফেরার কথা বলিস। আমার ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ করছিস। আমার ভালোবাসার দিকে আঙ্গুল তুলিস। হ্যাঁ তোকে ভালোবাসতাম আমি। পাগলের মতো ভালোবাসতাম। যার প্রতিদানে তুই আমাকে সস্তা ভেবে ছুড়ে ফেলেছিস। ঠকিয়ে গেছিস আমায়। আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলা করেছিস। আমায় নিঃস্ব করে দিয়ে আরেকজনের হাত ধরে… বাকিটা বলার আগে থেমে যায় রুদ্র৷ নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে তার। সবাই নিরব হয়ে রুদ্রর কথা শুনছে৷ রুদ্রর মধ্যে যে হতাশা, কষ্ট সেটা সবার সামনে নিঙড়ে দেয় আজ।
— রুদ্র এবার দোলার হাত চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়৷ রোজা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে শুধু৷ দোলাও চমকে উঠে হঠাৎ এমন হওয়াতে। বিমুঢ় হয়ে রুদ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে সে৷
–শী ইজ মাই ওয়াইফ! আর আমি আমার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসি। কোনো বেইমানের জায়গা আমার কাছে নেই৷ আমি যদি কাউকে ঘৃণা করি এই মুহুর্তে সেটা তুই। শুধুমাত্র তুই সেটা। বেরিয়ে যা বলছি। নেক্সট টাইম আমার সামনেও আসার চেষ্টা করবি না। তোর মুখও আমি দেখতে চাইনা৷ তোর মতো বেইমানের ছায়াও আমার জীবনে অভিশাপ।
— রোজা ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠে। দাঁতে দাঁত চেপে গম্ভীর দৃষ্টি রেখে বলে দোলা মা হবে তার জন্যই কি আমাকে অবহেলা করা রুদ্র? তুমি যে দোলাকে ভালোবাসো না এটা আমি খুব ভালো করে জানি৷ তুমি যে সবার সামনে ভালোবাসি বলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছো! দোলার সাথে তোমার সম্পর্কটা কত সুন্দর আমাকে দেখাতে চাইছো? এই সব কিছু যে আমাকে দেখানো এটাও আমি জানি। রুদ্র তুমি আমাকে ভালোবাসো আমি জানি। কেনো করছো এমন? রাগ করে তাই তো। আচ্ছা আমাকে বলতে দাও একবার আমি কেনো গিয়েছিলাম৷ আর কোথায় গিয়েছিলাম। আমি তোমায় সত্যি ভালোবাসি রুদ্র। আমি তোমাকে বাচ্চা দেবো৷ তোমাকে বাবা হওয়ার সুখ দেবো। আমি যে ভুল করেছি সেটা শোধরাই নেবো। তুমি দোলাকে ছেড়ে দাও৷ তাছাড়া ওই সন্তান তোমার নয় রুদ্র৷ দোলা তোমাকে.. বাকিটা শেষ করার আগে দোলা সপাটে একটা চড় বসিয়ে দেয় রোজার গালে। রোজার নোংরা কথায় বাধ্য করে দোলাকে এটা করতে।
– তানিয়া তো বেশ খুশি, রত্না চৌধুরীর মুখেও তৃপ্তিকর হাসি। রাজ মৃদু হাসে, তানভীর আহমেদ খোস মেজাজে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু আতংকিত জেসমিন চৌধুরী। রোজার এমন অপমান তার যেনো সহ্য হচ্ছে না৷ রোজা রাগী লুকে তাকায় দোলার দিকে। মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে তার আগে দোলা একটা আঙ্গুল তুলে রোজার দিকে তাকিয়ে বলে তোমার এই নোংরা মুখে আমার মাসুম,পবিত্র সন্তানকে নিয়ে একটাও কথা শুনতে চাইনা৷ ভেবো না তুমি যেমন লোভী,নিচ,স্বার্থপর চরিত্রহীন ঠক প্রতারক মেয়েমানুষ তেমনটা সবাই। আমার সন্তানের দিকে বাজে আঙ্গুল তোলার কোনো অধিকার নেই তোমার। যার কাছে ভালোবাসার দাবী নিয়ে এসেছো সেই তোমাকে ঘৃণা করে শুনেছো না। তাহলে কেনো দাঁড়িয়ে আছো এখনো? তোমার মতো নির্লজ্জ মেয়ে আমি আর দ্বিতীয় দেখিনি।
-খুব বড় বড় কথা বলছো তুমি। আমার সাথে লড়তে এসো না দোলা। তাহলে শেষ হয়ে যাবে৷ রেগে বলে দেয় রোজা।
– আসল রুপ প্রকাশ পেয়ে গেলো তবে। গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে রাজ৷ রোজা ভ্রু কুচকে তাকায়।
তোর মধ্যে যে খারাপ মানুষটা আছে যেটা তুই এতখন জোরপূর্বক ভাবে লোকানোর চেষ্টা করছিলি সেটা এখন প্রকাশিত। তুই কেনো এসেছিস? কেনো এইসব ন্যাকামি করছিস জানি না৷ তবে আমি এটা জানি তুই সব জেনে-বুঝে তবেই এসেছিস। আর তার প্রমাণ তোর বলা একটু আগের কথাগুলো। দোলা যে মা হবে আমরা কেউ একবারও বলিনি তোকে। কিন্তু তুই সেটা অনায়াসে বলে দিয়েছিস। তাই বলছি! তুই যে উদ্দেশ্য নিয়ে আসিস না কেনো বেরিয়ে যা এখানে থেকে। আর এবার যদি রুদ্রর কোনো ক্ষতি করার কথা ভুলেও ভাবিস তাহলে কিন্তু আমি তোকে ছেড়ে কথা বলবো না৷ আমার ভাবতেও লজ্জা লাগে এক সময় তুই আমার বন্ধু ছিলিস। বেরিয়ে যা রোজা চিৎকার করে ধমক দিয়ে বলে রাজ।
–
— এখানের সবাইকে দেখে নেবো আমি। আমাকে অপমান করে একদম ঠিক করোনি তোমরা। আর তুমি! দোলার দিকে আঙ্গুল তুলে দাঁতে দাঁত চেপে বলে তোমাকে তো আমি ছাড়বো না। আমাকে চড় দেওয়ার শোধ আমি নিয়ে ছাড়বো মনে রেখো। আর রুদ্র তুমি আমার পেছনে কুকুরের মতো ছুটতে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আর আজ আমি যখন নিজে তোমার কাছে ধরা দিতে এসেছি তখন তুমি আমাকে বড়বড় লেকচার দিলে। এই দুই টাকার মেয়েটাকে প্রাধান্য দিলে তো৷ তোমার জন্য কি অপেক্ষা করছে সামনে তুমি নিজেও জানো। কথাগুলো বলে রোজা ব্যাগপত্র গুছিয়ে আবারও হাঁটা দেয়। রোজা চলে যেতেই সবাই স্বস্তি শ্বাস ছাড়ে। রুদ্র রাগের বশে সামনে টেবিলে থাকা ফুলদানি এক-লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। সবাই কেঁপে উঠে।
– রুদ্র আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না৷ দ্রুত পায়ে ঘরে চলে আসে। রাজ রুদ্রর পেছনে আসতে গেলে দোলা বাধা দেয়।
– উনাকে একা ছেড়ে দেন ভাইয়া৷ উনার কিছু সময় একা থাকা প্রয়োজন। নিজেকে নিজের সামলানো দরকার। উনাকে শক্ত হতে হবে আর সেটা নিজেকেই করতে হবে। দোলার কথায় রাজ আর যায়না রুদ্রর কাছে। কিন্তু একটু বাদে উপর থেকে ভাংচুরের শব্দ ঠিকই শুনতে পাই সবাই। দীর্ঘশ্বাস ফুকে সবাই নির্বিশেষে।
— রোজা একে একে ঘরের সব কিছু এলোমেলো করে। সবার করা অপমান কোনো ভাবেই হজম হচ্ছে না তার৷ রুদ্রর থাপ্পড় আর দোলার থাপ্পড় যেনো ঘুরে ফিরে তার গালে আঘাত করছে। রোজা এবার আয়নায় একটা গ্লাস ছুড়ে মারে৷ কাচ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে নিচে পড়ে ঝনঝনিয়ে। এমন সময় উপস্থিত হয় সামির। রোজাকে এমন পাগলামী করতে দেখে অবাক হয়ে ভ্রু কুচকায়।
— আমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার সাহস দেখিয়ে অনেক বড় ভুল করেছে ওরা। আমি সবাইকে শেষ করে দেবো। আর দোলা! ওর খুব অহংকার না বেবিটা নিয়ে। ওকে ফাইন! বেবিটার ব্যবস্থা আগে করবো আমি। তারপর দেখবো দোলার বড়বড় কথা কোথায় থাকে তখন! কথাটা বলে রোজা হো হো করে হেসে উঠে। সামির তো হতভম্ব হয়ে গেছে রোজার বিহেভে।
– রোজা কি হয়েছে? তুমি এমন করছো কেনো? একি অবস্থা করেছো ঘরের। একের পর এক প্রশ্নের তীর ছুড়ে দেয় রোজার দিকে। (সামির সময় তে আপু আবার সময় তে নাম ধরে ডাকে রোজার। যেহেতু সমবয়সী তাই সবই চলে তাদের। রোজা সামিরের থেকে এক মাসের বড়। যার ফলে সামির আপু বলে মাঝে মাঝে আর সেটা মুডের উপর ডিপেন্ড) রোজা সামিরের দিকে তাকিয়ে তেড়ে এসে কলার চেপে ধরে বলে তুমি বসে বসে শুধু দোলাকে পাওয়ার স্বপ্নই দেখো। আর ওইদিকে দোলা আর রুদ্র চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে। তাদের ভালোবাসার ফসল দোলার পেটে। আর তুমি এখনো বসে বসে দিবাস্বপ্ন দেখছো। হঠাৎ আক্রমে সামির ঘাবড়ে যায় প্রথমে। কিন্তু রোজার কথায় তার মধ্য কৌতুহল জাগ্রত হয়।
– কি হয়েছে তোমার? আর এইসব কেনো বলছো? বিস্মিত কন্ঠস্বর সামিরের।
রোজা সামিরের কলার ছেড়ে দাঁতে দাঁত চেপে সবটা বলে। সব শোনার পরও সামির স্বাভাবিক।
– ওহ এই ব্যাপার। তো! তোমার কি মনে হয় এতদিন পর তোমাকে দেখে রুদ্র কোলে তুলে নাচবে? সামিরের লজিকহীন কথায় রোজা আরও ক্রোধানল হয়ে বলে কি বলতে চাইছো?
– তুমি যাকে ধোঁকা দিয়েছো। যার বিশ্বাসকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে এসেছো। যার স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার অর্থটাই মূল্যহীন করে দিয়েছো সে তোমায় কীভাবে ভালোবাসবে এখনো?? তোমার জন্য ঘৃণা ছাড়া আর কি অবশিষ্ট থাকতে পারে তার মনে।
— সব দোষ দোলা নামের ওই মেয়েটার । ওর জন্য রুদ্র আমাকে রিজেক্ট করার সাহস দেখিয়েছে। রুদ্রর মনে একদম জেঁকে বসে গেছে ওই মেয়ে। যে রুদ্র আমার পেছনে কুকুরের মতো ছুটতো সে এখন আমায় ইগ্নোর করছে! আমায়। এর ফল যে কি ভয়াবহ হবে রুদ্র বা তার পরিবার জানে না। আর রইলো দোলা। ওর আমি এমন ব্যবস্থা…. স্টপ রোজা। যতটুকু বলেছো ব্যাস। আমি দোলার নামে একটাও উল্টো পালটা কথা শুনতে চাইনা আর না ওর কোনো ক্ষতি। দোলা আমার ভালোবাসা। আমি ওকে ভালোবাসি।
দোলার প্রেমে তুমিও কি অন্ধ হয়ে গেছো সামির। ওই একটা মেয়ে তোমাদের হাতের মুঠোয় করে রেখেছে। শুনো সামির এইসব ভুলে যাও। আমাকে সাহায্য করো চৌধুরী বাড়িকে ধ্বংস করতে। আমি তোমাকে দোলার চেয়ে সুন্দর মেয়ে দেবো।
– আমি বলেছি দোলাকে নিয়ে আর একটাও বাজে কথা৷ নয় তো নয়। দোলা আমার শুধু আমার। ওর কোনো ক্ষতি করার কথা ভুলেও ভাবনা না বুঝেছো। সামির রেগে চলে যায়। রোজার ইচ্ছে করছে এই সামিরের সহ গলা টিপে সবাইকে হ/ত্যা করতে।
– দোলা মনে মনে প্রস্তুতি নেয় সামিরের কাছে যাওয়ার জন্য আর সেটা আশাকে সাথে নিয়ে। অপেক্ষা রুদ্রর ঘুমানোর।
চলবে….
– ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌অতিক্ষুদ্র একটা পর্ব। না দেওয়ার ইচ্ছে থেকে এই পর্বটা। তবে আগামীকাল বড় একটা পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো। বাড়িতে কাজ চলছে তাই ব্যস্ত সময়ও যাচ্ছে। ফ্রি হলে একটা বোনাস পর্বও দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। ভুলক্রুটি মাফ করবেন।