তুমিময় আসক্তি ২ পর্ব ৫

0
910

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“৫”

–” দেখুন রুদ্র! আপনার যা করার আমার সাথে করুন কিন্তু আমার পরিবারের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না৷ তাহলে কিন্তু আমি আপনাকে ছেড়ে দেবো না৷ আর না কখনো ক্ষমা করবো। আপনার এই হিংস্র রুপ, স্বামীত্ব সব কিছু আমার উপর ফলান। আমি তো আপনার স্ত্রী, যা ইচ্ছে করা যায় আমার সাথে। কারণ আমি একটা মেয়ে আর কারো স্ত্রী হয়ে এসেছি। তো আমার উপর কারণে অকারণে অত্যাচার করাই যায়। নাহলে আপনার স্বামীত্ব প্রকাশ পাবে না যে। আপনি যে একটা পুরুষ মানুষ সেটা কেউ বুঝতে পারবে না৷ দোলার এমন বিদ্রুপ কথায় রুদ্র অসহায় হয়ে তাকায়।
– আমি জানি না আপনি কেনো এমন? কেনো আমার সাথে এমন করেন? আমার পরিবার থেকে কেনো দূরে রাখতে চান? জানি এর কোনো উত্তর আমি পাবো না৷ তাই আমি জানতেও চাইনা৷ কিন্তু যেদিন সব কিছু আমার সামনে আসবে আর সেদিন যদি দেখি আমার কোনো দোষ বা ভুলক্রুটি কিছু নেই৷ তারপরও আপনি আমার উপর নির্যাতন করে গেছেন সেদিনই আমার শেষদিন হবে এই বাড়িতে৷ আপনি চাইলেও আমি থাকব না আপনার সাথে৷ যা করার করে নিয়েন সেদিন কিন্তু আমি আপনাকে ছেড়ে যাবোই এটাই আমার শেষ কথাটা৷ দোলা রুদ্রকে ধাক্কা মেরে দুরে সরিয়ে দিয়ে ছলছল চোখে বেরিয়ে যায়। রুদ্র হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। এরই মাঝে রুদ্রর ফোনটা বেজে ওঠে। রাজের ফোন পেয়ে রুদ্র রিসিভ করতেই রাজ হতাশ কন্ঠে বলে,

— আমাদের যে মিটিং টা করার ছিলো সেটা সামির চৌধুরীর কোম্পানির সাথে হয়েছে। তুই মিটিং ক্যানচেল করার পর ওরা সামিরের সাথে ডিল করে। সামির বেশি টাকা ইনভেস্ট করায় ডিলটা ওদের দেওয়া হয়। রাজের কথায় রুদ্র হাসে। বেশ শব্দ করে হাসে। রুদ্রর এমন বিহেভে রাজ অবাক হয়ে বলে তুই হাসছির রুদ্র? এত বড় একটা ডিল হাত ছাড়া করলাম শুধু মাত্র তোর গাফলতির জন্য। কি এমন কাজে বিজি ছিলি তুই যে মিটিংটা এটেন্ড করতে পারলি না৷ কিছুটা রেগে বলে রাজ।
– এখন কি সব কিছুর কৈফিয়ত তোকে দিতে হবে আমায়? রেগে বলে রুদ্র।
– নাহ! তা কেনো দিবি। তুই তো রাজা আর আমি তো তোর সামান্য চাকর সে রাজ্যের। তোকে জিজ্ঞেস করাটাই আমার ভুল হয়েছে সরি।
– রাজ আমার কথাটা শুন! কোমল কন্ঠে বলে রুদ্র। তার আগে রাজ ফোন কেটে দেয়৷ রুদ্র একহাতে চুল টেনে ধরে ফোন টা ছুড়ে মারে দেয়ালের সাথে। সাথে সাথে ফোন ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে নিচে পড়ে।
– কেনো বুঝিস না তোরা আমায়। সব সময় মুখের কথা, আমার বাহ্যিক রুপটাই দেখতে পাস তোরা। আমার ভেতর টা কেনো উপলব্ধি করতে চাসনা তোরা। সবাই কেনো দূরে সরে যায় আমার থেকে? রুদ্র বিসানায় বসে যায় ধপ করে। বড্ড অসহায় লাগছে তার নিজেকে এই মুহুর্তে।
— নাহ! আমাকে ভেঙে পড়লে চলবে না৷ রুদ্রনীল চৌধুরী কখনো দুর্বল হতে পারে না। আমাকে স্ট্রং থাকতে হবে। দুর্বল হলে আশেপাশের সবাই আমাকে মাটির সাথে পিশে মারবে৷ আর এটা আমি কখনোই হতে দেবো না৷ আমি কখনো কারো কাছে মাথা নোয়াতে চাইনা কথাটা বলে রুদ্র হাতের পাশে থাকা ফুলদানিটা ফ্লোরে ছুড়ে মারে।

— দোলা নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে নিচে নামে। হাতে ব্যথা করছে খুব। রত্না চৌধুরী আর তানিয়া নিচেই ছিলো। তারা চিন্তিত হয়ে আছে দোলাকে নিয়ে।দোলাকে নিচে আসতে দেখে দুজনেই স্বস্তির শ্বাস রাখে৷
– ভাবি! তানিয়া এগিয়ে আসে দোলার কাছে৷ দোলা হাসার চেষ্টা করে সবার সামনে।
– দোলা রুদ্র তোকে কিছু বলেছে। খুব বকেছে তাই না রে? অসহায় কন্ঠস্বর রত্না চৌধুরীর। রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা ঠোঁট এলিয়ে হাসে।
— না মা তেমন কিছুই বলেননি উনি। ওই একটু বকে ছেড়ে দিয়েছে৷ চিন্তা করো না তুমি আর এইসব নিয়ে।
– সত্যি বলছিস তো? সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে বলেন তিনি? দোলা আমতাআমতা করে বলে হ্যাঁ মা একদম সত্যি বলছি৷ আমি তো ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কি-না কি বলে। যাক বাবা অল্পের উপর দিয়ে বেঁচে গেছি। দোলার কথায় রত্না চৌধুরী এবার হাসে৷ একটা দীর্ঘশ্বাস রেখে বলে এবার শান্তি লাগছে একটু। আচ্ছা আমি ঘরে যায় এবার৷ রত্না চৌধুরী চলে যায়।

– ভাবি! তানিয়ার ডাকে ঘাবড়ে যায় দোলা। হাসার চেষ্টা করে বলে তুমি ঘরে যাও তানিয়া আমি নাস্তা রেডি করি। সন্ধ্যায় নিশ্চয় কেউ কিছু খাওনি আমার চিন্তায়৷ দোলা তানিয়াকে এড়িয়ে রান্না ঘরে যেতে গেলে তানিয়া বলে তুমি সবার চোখ ফাকি দিলেও আমার চোখ কিন্তু ফাঁকি দিতে পারবে না। তোমার সাথে কি হয়েছে সেটা তোমার হাতের দাগই প্রমাণ দিচ্ছে। তানিয়ার কথায় দোলা চমকে উঠে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাতে আঙুলের ছাপ বিদ্যমান। রুদ্র এত শক্ত করে চেপে ধরেছিলো যে। উজ্জ্বল শরীরে তার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

– ব্রো আবারও তোমার গায়ে হাত তুলেছে তাই না? দোলা ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে।
– তুমি মামিকে সেটা বললে না কেনো? মিথ্যা কেনো বললে তুমি? কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে তানিয়া।
— উনার সাথে সব হিসাব, বোঝাপড়া আমার। উনি আমার স্বামী ঠিকই তার আগে কারো সন্তান কারো ভাই। আমার সাথে তার সম্পর্কটা যাই হোক না কেনো। আমার চোখে উনি যেমন মানুষই হোক না কেনো আমি চাইনা কোনো মায়ের কাছে তার সন্তান খারাপ ভাবে উপস্থাপন হোক। সন্তানের জন্য মা কষ্ট পাক। আমার মা নেই তাই আমি জানি মায়ের কষ্ট কতটা যন্ত্রণাদায়ক। মা উনার কোনো কিছুতে আঘাত পাক আমি একদম চাই না তানিয়া৷ তাই উনার সম্মান সবার সামনে রাখা আমার কর্তব্য। তবে এটা ভেবো না যে আমি উনাকে মাফ করে দেবো। উনার কাজের জন্য উপযুক্ত শাস্তি আমি উনাকে দেবো সময় হলে৷ তার আগে আমাকে জানতে হবে উনি কেনো আমার সাথে এমন করে। কেনো এতো হিংস্র হয়ে উঠেন আমার প্রতি। কি করেছি আমি উনার যার জন্য এমন শাস্তি দেন আমাকে। সবার থেকে দূরে করে রাখে আমাকে। আর সেদিন পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো। উনাকে সহ্য করে যাবো৷ যেদিন সবটা জানতে পারবো আমি সেদিনই উনার সাথে আমার শেষ দিন হবে এই বাড়িতে।
– তুমি কি করতে চাও ভাবি? বিস্ময় নিয়ে বলে তানিয়া।
– আপাতত দেখা ছাড়া কিছু না। সময় আসলে ভেবে দেখবো। আচ্ছা তুমি যাও এখন আমি নাস্তা নিয়ে আসছি৷ তানিয়া ওকে বলে ঘরের দিকে যায়। দোলা রান্নাঘরে যাবে তখন খেয়াল যায় সিঁড়ির দিকে। রুদ্র হন্তদন্ত হয়ে আসছে৷ নিচে আসতেই দোলা আর রুদ্রর চোখাচোখি হয়ে যায়। রুদ্র অসহায় একটা চাহনি রাখে দোলার দিকে। দোলা রুদ্রর দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এরপর দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে চলে যায়। রুদ্র একটা তপ্ত দীর্ঘশ্বাস রেখে বেরিয়ে যায়।

— সোফায় বসে! পায়ের উপর পা তুলে আয়েস করে হুইস্কির বোতলে চুমুক দিচ্ছে সামির চৌধুরী। পাশের তার কিছু চ্যালাপেলা আছে। সবাই বেশ খোস মেজাজে আছে আজ৷ রুদ্রর থেকে ডিল টা হাতিয়ে নিতে পেরে খুবই প্রাউড ফিল করে সামির চৌধুরী।

— অবশেষে আমরা রুদ্র চৌধুরীর মুখের খাবার কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছি বস! হাস্যজ্বল মুখে বলে কায়নাত ( সামিরের ম্যানেজার)
– সবে তো শুরু কায়নাত। এখনো অনেক কিছু বাকি। ও আমার জানটাই ছিনিয়ে নিয়েছে আমার থেকে। আমি ওর থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়ে একবারে নিঃস্ব করে পথে বসিয়ে ছাড়বো। আমার বুকে যে তীব্র ব্যথার জাল ছড়িয়ে সে সবকিছুর হিসাব আমি একে একে নেবো৷ আবারও সব কিছু আমার করে নেবো৷ কথাটা বলে সামির হো হো করে হেসে উঠে।

— তবে বস! সব কিছু এত সহজে হবে বলে মনে হয়না৷ ওই রুদ্রনীল চৌধুরী খুবই চালাক আর ধুরন্ধর মানুষ। আজ নেহাতই মিটিং এটেন্ড করতে পারেনি বলে প্রজেক্ট টা আমরা পাই। উনি আসলে কিন্তু আমরা এই প্রজেক্টটাও পেতাম না৷ কায়নাতের কথায় সামির চোখ লাল করে তাকায় ওর দিকে৷ কায়নাত ঘাবড়ে যায়।
— না মানে এখন তো সব ডিল একে একে রুদ্র চৌধুরীর হাতে চলে যাচ্ছে তাই বললাম।
– এখন থেকে আমার হাতে আসবে সব স্বাভাবিক ভাবে বলে সামির। রুদ্রর পতন আজ থেকে শুরু মনে করো। এখন তোমরা আসতে পারো। আমার কিছু ইমপোর্টেন্ট কাজ আছে। আমি বের হবো একটু বলে সামির উঠে দাঁড়ায়। এরপর সবাই একে একে চলে যায় সেখানে থেকে। সামির কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে। এরপর সেও বেরিয়ে যায় গাড়ির চাবি আঙ্গুলে ঘোরাতে ঘোরাতে।

— রাত প্রায় একটার কাছাকাছি। রুদ্র এখনো বাড়ি ফিরেনি৷ দোলা ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে। রুদ্রর জন্য চিন্তা হচ্ছে খুব৷ সেই সন্ধ্যায় বেরিয়েছে এখনো ফেরার নাম নেই। রত্না চৌধুরীকে বুঝিয়ে ঘরে পাঠান দোলা। কিন্তু রুদ্র এখনো ফেরার নাম নেয়না।
— দোলা ফোনটা নিয়ে রাজের নাম্বারে কল দেয়। রাজ ঘুমিয়ে পড়ে আজ তাড়াতাড়ি। ফোন বাজায় বিরক্ত নিয়ে ঘুমের মধ্যে ফোন রিসিভ করলে দোলা চিন্তিত গলায় বলে রাজ ভাইয়া উনি কি আপনার সাথেই আছেন? রাজ দোলার গলা শুনে ঘাবড়ে যায়। ঘুম ঘুম ভাবটা কেটে যায়৷ উঠে বসে রাজ।
– রুদ্র তো আমার সাথে নেই ভাবি। তাছাড়া আমরা আজ তো আজ দেখা করিনি। দুপুরে অফিসে একবার যা দেখা হয়েছে৷ কেনো রুদ্র বাড়ি ফিরেনি?
– এত রাত হয়ে আসলো উনি এখনো বাড়ি ফিরেনি৷ ভাবছি হয়তো আপনার সাথে আছে তাই ফোন দিলাম আপনাকে।
– রুদ্রর নাম্বারে ফোন দিয়েছিলে তুমি? রাজের কথায় দোলা নুয়ে পড়া কন্ঠে বলে জ্বি না। রাজ বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে এদের মধ্যে। তাই দোলা রুদ্রকে ফোন না দিয়ে তাকে ফোন দেয়।
– ওকে ভাবি! আমি দেখছি চিন্তা করো না। রাজ ফোন কেটে দেয়৷ দোলা বারান্দায় দাঁড়ায় গিয়ে। হঠাৎ প্রকৃতির রুপ বদলে আসে। তীব্র বাতাস সাথে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়৷ মেঘের গর্জনে গর্জে উঠে ধরণী। হুট করে আবহাওয়া বলদে যাওয়াতে দোলা আরো চিন্তিত হয়ে পড়ে। একটু পড়েই ঝুম বৃষ্টি নামবে৷ কোথায় আছে রুদ্র সে ভাবনায় মাথা ফেটে যাচ্ছে তার।

— রাজ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ছে আধা ঘণ্টা মতো হয়েছে৷ রুদ্র যেখানে যেখানে থাকতে পারে এমন সব জায়গা দেখা শেষ। এখন শুধু একটা জায়গা বাকি৷ রাজ এখন সে জায়গার উদ্দেশ্যে যাচ্ছে৷ তুমুলবেগে ঝড় শুরু হয়ে গেছে ইতি মধ্যে। যেমন বৃষ্টির ঝংকার তোলা শব্দ তেমন বাতাস চারিপাশে।
— বৃষ্টির মধ্যে নীরব মেরে বসে আছে রুদ্র সামনে পুকুরের পানির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। রাজ এসে রুদ্রর কাধে হাত রাখলে রুদ্র নড়েচড়ে উঠে।
– তুই এখানে আর আমি সব জায়গা খুঁজে মরছি। তুই বাড়ি না ফিরে এখানে কি করছিস? আর বৃষ্টিতেই বা ভিজছিস কেনো? তুই জানিস না তোর বৃষ্টির পানি একদম সহ্য হয়না৷ শরীর খারাপ করবি নাকি? শাসনের সুরে বলে রাজ৷ রুদ্র রাজের দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
– আমি খুব খারাপ তাই না রে রাজ? হঠাৎ রুদ্রর এমন কথায় রাজ চোখ মুখ কুচকে তাকায়।
– কি হয়েছে রুদ্র? কোমল কন্ঠস্বর রাজের৷
– আমি সবাইকে কষ্ট দিই। আমি অনেক রাগী, হিংস্র আমাকে সবাই ভয় পাই। আমি কারো সাথে ভালো ভাবে কথা বলতে পারিনা৷ কাউকে প্রায়োরিটি দিতে পারি না এটা কি আমার দোষ বল। এই যে একটু আগে তুইও আমাকে ভুল বুঝলি এটা তো আমি চাইনি। কিন্তু কেনো হয় এইগুলো আমার সাথে। আমি তো এমন হতে চাইনি রাজ। কিন্তু পরিস্থিতি.! পরিস্থিতি আমাকে শান্ত থাকতে দেইনি। এখনো দেয়না আমাকে শান্ত থাকতে। আমি যার দিকে হাত বাড়ায় সেই দূরে চলে যায় আমার থেকে। সবাই এমন কেন করে বলতে পারিস? রুদ্রর চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। প্রকৃতিও যেনো চাইনা এই কঠোর মানুষটার চোখের পানি, তার দুর্বলতা কেউ দেখুক। তাই তার ছন্দে প্রতিটি অশ্রুকণা ধুয়েমুছে সাফ করে দিচ্ছে৷

– বাড়ি চল রুদ্র। তোর শরীর খারাপ করবে এইভাবে থাকলে। দোলা ভাবি খুব চিন্তা করছে তোকে নিয়ে। আর কেউ না জানুক না বুঝুক আমি তো সব জানি। আমি তোকে বুঝি রুদ্র৷ তাই তো সব সময় তোর পাশে থাকার চেষ্টা করি। শুধু একটাই কথা রুদ্র! তুই দোলার উপর এই অত্যাচারটা আর করিস না। আমার বিশ্বাস তোর কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আরো ভালো করে সব কিছু জানা দরকার আমাদের৷

– আমি সব জেনে বুঝে করছি রাজ। আমার জানার মধ্যে কোনো ভুল নেই। দোলা আমার। শুধু আমার। আর ওকে আমি কোথাও যেতে দেবো না। রুদ্র উঠে চলে আসে কথাগুলো বলে। রাজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুদ্রর পেছনে আসে৷

– রাত প্রায় দুইটা। এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যেও দোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে৷ শাড়ি অর্ধেক ভিজে উঠেছে তার। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই৷ রুদ্রর চিন্তায় দিশেহারা সে। বাইরে যতটা না ঝড়বৃষ্টির প্রকোপ তার থেকে বেশি উচ্ছ্বাস দোলার মনে৷ সব কিছুর প্রশ্ন, এতো কেনো, কারণের ভীড়ে দোলা তলিয়ে যায়৷ দোলার ভাবনা চিন্তার মধ্যে গাড়ির হর্ণ কানে আসে। এতে দোলার ভাবনাচ্যুত হয়৷ আশাবাদী হয়ে নিচে তাকাতেই দেখে রাজ আর রুদ্র গাড়ি থেকে নামছে। রুদ্রকে দেখে দোলা স্বস্তি পাই। মুখে আপনাআপনি একটা হাসি চলে আসে। রাজ রুদ্রকে ভেতরে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।
– দোলা বারান্দা থেকে দ্রুত পায়ে এসে শুয়ে পড়ে। ঘুমের ভান ধরে চোখ বন্ধ করে থাকে। রুদ্র ঘরে এসে দরজার সামনে থমকে দাঁড়ায়। বিসানার দিকে তাকাতেই দেখে দোলা ঘুমিয়ে আসে৷ রুদ্র কিছুক্ষণ অপলক ভাবে দোলার দিকে তাকিয়ে থেকে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ ফ্রেস হয়ে চেঞ্জ করে বিসানায় শুয়ে পড়ে রুদ্রও। দোলা এখনো একই ভাবে আছে। রুদ্র দোলার দিকে থেকে পাশ ফিরে শুইতেই দোলা চোখ খুলে রুদ্রর দিকে তাকায়। রুদ্র কাঁথা মুড়ি দেয়৷ তার ভীষণ শীত করছে এতখন ভেজার ফলে। রুদ্র অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে যায়। দোলাও তার কিছুক্ষণ বাদে ঘুমিয়ে পড়ে।
– ভোরে কারো গোঙানির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় দোলার৷ ধুসমুসিয়ে উঠে দোলা। ঘুমের রেশ কেটে যায় তার৷ পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে রুদ্র কাঁথা জড়িয়ে কাঁপছে শীতে। দোলার ভ্রু কুচকে আসে। দোলা কি করবে বুঝতে পারছে না৷ রুদ্রর কপালে হাত রাখতে গিয়েও আবার ফিরিরে আনে৷ রুদ্রর আর্তনাদ বেড়েই চলেছে। দোলা তার ভাবনা চিন্তা ছেড়ে রুদ্রর কপালে হাত রাখতেই চমকে উঠে। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে রুদ্রর৷ দোলা কপালে হাত রাখলে রুদ্র সে হাত টেনে বুকের সাথে চেপে ধরে ঘুমের মধ্যেই। দোলা চমকে উঠে তাতে। রুদ্রর সারা শরীর উষ্ণতায় ছেয়ে যায়। বুকের মধ্যে অদ্ভুত আওয়াজ। দোলা ঘাবড়ে যায় অনেক। রুদ্রর থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।

— চলবে…..

– ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।


LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here