প্রণয় ২০

0
476

#প্রণয়
#পর্বঃ২০
#তানিশা সুলতানা

রুটির মধ্যে ডিম দিয়ে রুটিটাকে রোল বানিয়ে একটা কমড় বসিয়েছে তানহা। এক কামড়ে পুরো অর্ধেক রুটি মুখের ভেতরে নিয়ে নিয়েছে। এখন চিঁবতেও পারছে না গিলতেও পারছে না।

“বাবু ওদের সবাইকে নিয়ে যাবে তুমি। ঘুরিয়ে আনবে কক্সবাজার। আর হ্যাঁ নানুবাড়িতে গিয়ে থাকবে।

তমাল কথা শেষ করে বেরিয়ে যায়। ওনার পেছন পেছন তাহেরও চলে যায়। সূচক তানহার দিকে কটমট চাহনিতে তাকাতে তাকাতে চলে যায়। তোহা ইরা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। আর তানহা মুখটা হা করে কপালে হাত দিয়ে বসে থাকে।

” সাথে উটকো ঝামেলা দিয়ে দিলো??
গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তানহার। মুখের ভেতরে থাকতে থাকতে রুটি নরম হয়ে আসে। কোনো রকমে চিবিয়ে পানি দিয়ে গিলে ফেলে। বাকিটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে।

“ইরা আপি চলো চলো আমরা লাগেজ গুছিয়ে ফেলি।

তোহা আর ইরা চলে যায়। তানহা গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। ওরা গেলে কিছুতেই যাবে না তানহা। যেতে তো চেয়েছিলো বিয়ে করতে। ঘুরতে একদম যাবে না।

” তানহা তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর। এভাবে বসে আছিস কেনো? ঔষধ খেতে হবে তো তোর।

তমা বেগম তানহার মাথায় আস্তে করে থাপ্পড় দিয়ে বলে। তানহা মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে রোলটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে রুমে চলে যায়। তমা বেগম বিলাপ বকতে থাকে।

“এই মেয়েটা মানুষ হবে না। এক জায়গায় বসে খেতে হয় এই জিনিসটাই শিখাতে পারলাম না আমি। সারাদিন টইটই করবে আবার খাওয়ার সময়ও টইটই। জান খে*য়ে ফেলবে আমার।

তানহা মায়ের কথায় পাত্তা দেয় না। রুমে গিয়ে খাটের ওপর বসে খেতে থাকে।

” বিছানায় বসে খেতে হয় না জানিস না তুই? ওঠে তাড়াতাড়ি

তোহা তানহার হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে উঠিয়ে দেয়। তানহা ভীষণ বিরক্ত এখন।
মানে সবাই খালি বকবেই? কেউ তো একটু ভালোবেসে কথা বলতে পারে।

বাকি রুটি টুকু মুখে পুরে সূচকের রুমের সামনে যায়। ও বাবা ইভা মাথায় ঘোমটা টেনে কফির মগ হাতে নিয়ে ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। আর সূচক বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন দেখছে। এখনো খেয়াল করে নি ইভাকে।

তানহা দাঁত কটমট করে ভেতরে ঢুকে পড়ে হুরমুরিয়ে।

“আরে ইভা যে
তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

তানহা একটু হাসার চেষ্টা করে জোরে বলে। সূচক এক লাফে উঠে বসে। ইভাও খানিকটা ভেবাচেকা খেয়ে যায়

” এই তো ওনাকে কফি দিতে এসেছিলাম

একটু হাসার চেষ্টা করে সূচকের সামনে কফির মগের এগিয়ে দিয়ে বলে ইভা।
সূচক তানহার দিকে এক পলক তাকিয়ে কফিটা হাতে নেয়।

“মা ডাকছে তোমায়। এতোগুলো মাছ এনেছে। সূচক ভাইয়া আবার মাছ দেখে দারুণ ভালোবাসে। তুমি নিজে হাতে মাছ গুলো কেটে রান্না করে নিয়ে এসো।
একবার মন গলাতে পারলেই কেল্লা ফতে।

তানহা ইভার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে। ইভা এক গাল হেসে দৌড়ে চলে যায়।
কাজ করায় একদম এক্সপার্ট এই মেয়ে। যে কোনো কাজ খুব ভালো করেই করতে পারে।।আর কাজ করতে ভালোও বাসে।

ইভা বেরিয়ে যেতেই তানহা ঠাস করে সূচকের পাশে বসে সূচকের হাত থেকে কফির মগটা টেনে নিয়ে তাতে চুমুক দেয়।

” এখানে কেনো এসেছিস?

তানহা ধীরেসুস্থে কফিটা গিলে।

“আপনি না আমায় ভালোবাসেন? তাহলে সব সময় এরকম জল্লা*দের মতো মুখ করে থাকেন কেন? একটু হাসতে পারেন আমাকে দেখে। আড় চোখে তাকাতে পারেন আমার দিকে।
একটু আতটু রোম

তানহা বাকি কথা শেষ করার আগেই কোমরে ঠান্ডা একটা হাতের স্পর্শ পায়। শিউরে ওঠে। হাতে থাকা কফির মগের পড়ে বিকট শব্দ করে। চোখ দুটো বড়বড় করে সূচকের দিকে তাকাতে যেতেই আবার অনুভব করে সূচকের মুখটা তানহার ঘাড়ে। হাত পা কাঁপতে শুরু করে তানহার। বুকটা টিপটিপ করছে। হার্ট বিট দ্রুত লাফাচ্ছে।
ঘনঘন নিশ্বাস পড়ছে ঘাড়ে। চোখ মুখ খিঁচে শক্ত হয়ে যায় তানহা। শ্বাস নিতেও ভুলে গেছে।

ঘাড়ে এবার ঠোঁটের স্পর্শ পায় তানহা। শক্ত করে খামচে ধরে সূচকের হাত।

” এখন থেকে তুই আড় চোখে তাকিয়ে থাকিস।

কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে সূচক।

তানহা আরও জমে যায়। কিছু বলতে চাইছে কিন্তু গলায় কথা আটকে যাচ্ছে। মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।

সূচক ডান হাতটা তানহার গালে রাখে। ঠোঁটের আশেপাশে লেগে থাকা রুটির গুড়িগুড়ি অংশ হাতে বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে আলতো করে মুছে দেয়। তানহার কাঁপা-কাঁপি বেরে যায়।

তানহা সূচকের হাত ছেড়ে টিশার্টটা শক্ত করে ধরে।

“তোর দিকে তো আমার তাকাতেই ইচ্ছে করে না। আস্ত পাগল একটা। তাকালেই ইচ্ছে করে থাপ্পড়ে গাল লাল করে দিতে।
গালে হাত ছুঁয়িয়ে বলে।
তারপর দুজনই কিছুখন চুপ। সূচক তানহার চুলে ঘ্রাণ নিচ্ছে আর তানহা সূচকের নিশ্বাস গুনছে।

” খাবার খেয়ে পানি খেয়েছিস?

সূচক ঘাড় থেকে মুখ তুলে তানহার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে। তানহা কোনো উপর দেয় না। ওভাবেই চোখ মুখ খিঁচে থাকে।

সূচক তানহার মুখে ফু দেয়। বন্ধ চোখের পাতা কেঁপে ওঠে। ঠোঁট প্রসস্থ করে একটু হাতে সূচক। সেই হাসিতে কোনো শব্দ নেই।

আবারও ঘাড়ে মুখ ডোবায়।

পরপর কয়েকবার ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে ছোট্ট করে একটা কামড় দিয়ে সূচক ছেড়ে দেয় তানহাকে। ফোন নিয়ে আবার আগের মতো শুয়ে পড়ে। তানহা এখনো শক্ত হয়ে বসে আছে।

কি ছিলো এটা?
নরাচরা শক্তি পাচ্ছে না এখনো। কোনো রকমে শ্বাস টানছে।

” দুই মিনিটের মধ্যে এখান থেকে না গেলে যেটা হয়ে গেছে সেটা আবার হবে।

সূচক গম্ভীর গলায় বলে।
ধাপ করে চোখ খুলে তানহা। সূচকের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। গাল দুটো ভাঠি ভাড়ি লাগছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এখনো হাত পা কাঁপছে একটু একটু।

উঠে দাঁড়ায় যাওয়ার জন্য।

“মনটা নিয়ে যা

সূচক একই ভঙিতে বলে।
তানহা মনটা তুলে দাঁড়াতেই আবারও সূচকের গম্ভীর কন্ঠ

” গুনে গুনে দুই গ্লাস পানি খেয়ো ঔষধ খেয়ে নিস।

এক দৌড়ে এই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

ইরা আর তোহা ফোনে ভিডিও দেখছে তানহা এক দৌড়ে এসে শুয়ে পড়ে। দুজনই ভ্রু কুচকে এক পলক তাকায় তানহার দিকে। তারপর আবার নিজেদের কাজে মনোযোগী হয়।

সাদিয়া বেগমের মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওনার বড় ভাই ফোন করে জানিয়েছে।
বাবা মারা গেছে কয়েকবছর আগে। এখন মা টাই সম্বল। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে পাগল হয়ে গেছে যাওয়ার জন্য।

সূচক এমনিতেও কক্সবাজার যাবে। সাদিয়া বেগম এখন তাড়া দিচ্ছে এখনই নিয়ে যাওয়ার জন্য। সূচক ভীষণ বিরক্ত। একটা বিয়েতে এতো বাঁধা আসতেই হবে?
আগে জানলে কালকেই বিয়েটা সেরে ফেলতো।

সাদিয়া বেগম তোহা আর তানহাকেও রেডি হতে বলে দিয়েছে। ইরা আর ইভার যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও উনি নেবেন না।
কারণ তমা বেগম বাড়িতে একা কাজের জন্য। বুড়ো শাশুড়ী তারপর তমাল আর তাহের।
সব মিলিয়ে উনি একা পারবে না। তাই ওদের রেখে যাবে তমা বেগমের হাতে হাতে কাজ করে দেওয়ার জন্য।

তানহা এখনো সেই ঘোর থেকে বের হতে পারছে না। খালি সেই দৃশ্যটাই মাথায় ঘুরছে।
তোহার নানু বাড়ি যেতে দারুণ লাগে।

নানু বাড়ি দুরে হওয়াতে দুই তিন বছর পর পর যাওয়া হয়।
চটপট তোহা রেডি হয়ে নেয়।
তানহা ঝিমচ্ছে দেখে তোহা বিরক্ত হয়ে জোর করে ড্রেস দিয়ে ওকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়। আর তোহা তানহার জামাকাপড় নিজের ব্যাগে নিয়ে নেয়।

তানহা ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে।

উসকো খুশকো চুল নাকের ওপর ডার্ক পিপল, শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট। মনে হচ্ছে খড়া ধরেছে। শীত আসছে। এখন ঠোঁট হাত পা এমন হয়ে হবে।
শ্যামলা মুখটা আরও কালো দেখাচ্ছে।

তানহা মুচকি হেসে ঘাড়ে হাত বুলায়। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। লাল হয়ে গেছে জায়গাটা।
তারপর ফ্রেশ ওয়াশ দিয়ে দুই বার মুখ ধুয়ে শেম্পুর করে চটপট গোছল সেরে নেয়।
আজকে নিজেকে গোছাবে। যাতে সূচকের ওর দিকে তাকালে পাগল মনে না হয়।

নীল রংয়ের একটা গাউন পড়ে নেয়।

তোহা রেডি হয়ে বিছানায় বসে আছে। তানহাকে বের হতে দেখে বড়বড় চোখ করে তাকায়।
যে মেয়ের দশ মিনিটেই গোছল শেষ হয়ে যায় ডেকে আজ পাক্কা আধ ঘন্টা লাগিয়েছে।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সুন্দর করে সাজুগুজু করতে থাকে তানহা।

“তানহা আমরা না বিয়ে খেতে যাচ্ছি না। মা আর ভাইয়া অনেকখন দাঁড়িয়ে আছে। চল

সবে এক ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছে। তখনই তোহা ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
চুল টাও আঁচড়াই নি। শুধু মুখে স্নো আর চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে।

” বাকিটা গাড়িতে বসে করিস।

তানহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ওর আর স্মার্ট হওয়া হলো না। সারাজীবন এমন অগোছালোই থাকবে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here