#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই।
২৯
#WriterঃMousumi_Akter
আরিয়ান ভাইয়ের নামটা শুনে খানিকটা চমকে গেলাম আবার অবাকও হলাম।ওনি আরিয়ান ভাইকে চিনেন!আমি যার কথা ভাবছি ওনি কি তার কথাই বললেন!প্রবল অনুভূতিপ্রবণ মুহূর্তটা নিমিষেই কেমন ঘোলাটে হয়ে গেল!মনে পড়ে গেল জীবনের সব থেকে অপমানিত হওয়া সময়ের কথা।যা চাইলেও আমি ভুলতে পারব না কখনো।জীবনে প্রথমবার অত কেঁদেছিলাম,কেউ আমাকে তুচ্ছ করে দেখেছিল,খুব বাজে ভাবে হেয় করেছিল,করেছিল খুব বাজে ভাবে অপমান!ওই মানুষটার নাম আমি মনে করতেও চাই না,নাহ!কিছুতেই না।না চাইতেও চোখ ঝাপসা হয়ে এলো আমার।ওনি আমার নিঃশব্দের কান্না বুঝতে পারলেন কী-না জানি না।রুমের লাইট অন করে খুব নিরীহ চোখে তাকালেন আমার দিকে।ততক্ষণে আমার চোখ দিয়ে নোনাজল টুপটাপ গড়িয়ে গাল বেয়ে ঠোঁটে এসে পৌঁছিয়েছে।ওনার এই নিরীহ চাহনি দেখে আমার বড্ড মায়া হলো।কী-যে হলো জানি না।ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দিলাম।আমি কি আমার অতীত ভেবে কাঁদছি;নাকি এই মানুষটার মায়াবী চাহনীতে মায়ায় আবদ্ধ হয়ে কেঁদে দিলাম!ওনি হঠাৎ কেমন বিচলিত হয়ে পড়লেন।ওনার চোখ কেমন আতঙ্কিত হয়ে পড়ল।আমার দুই বাহুতে হাত রেখে বললেন, ‘এই সারাহ তুমি কাঁদছো কেন?হোয়াট হ্যাপেন্ড?কী হয়েছে?কষ্ট হচ্ছে?কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমাকে?’
ওনার এই বিচলিত অবস্থা দেখে আমার কান্না যেন প্রবল বেগে ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো।আমি আরও জোরে কেঁদে দিলাম।ওনি হঠাৎ কেমন থমকে গেলেন।অপরাধী কন্ঠে বললেন, ‘সরি সারাহ!আই এ্যাম রিয়েলি সরি।কিছুক্ষণ আগের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য সরি।প্লিজ কেঁদো না।আমি বুঝতে পারিনি।আমি তোমার সাথে থেকে কেমন ছেলেমানুষ হয়ে গিয়েছি।আমাকে খারাপ ভেবো না।আমি অন্যপুরুষের মতো নই।’
এই মানুষটা কেন এত এক্সপ্লেইন দিচ্ছে নিজের বিরুদ্ধে!মানুষ কিছু মুহূর্তে কষ্ট পেলে কাছের মানুষের বুকে মাথা গুজে শান্তি খোঁজার জন্যও কাঁদে।কেঁদে নিজের সব কষ্ট উড়িয়ে দেয়।অথচ,ওনি তা বুঝতেই চাচ্ছেন না। এই শ্যামসুন্দর মানুষটাকে ইচ্ছে করছে তীব্র আবেগে শক্তকরে জড়িয়ে ধরে বলি, ‘ভালবাসি তোমাকে!ভীষণ ভালবাসি!’কিন্তু চাইলেই কি সব বলা যায়!এই ‘আপনি’ সম্মোধন করা মানুষটা কি কখনো আপনি থেকে তুমি-তে নেমে আসবে!জানিনা আসবে কী-না?চাইলেও কিছু বলতে পারছিনা।চোখের পানি মুছে টেবিলে গিয়ে পড়তে বসলাম।কেমন বাজে একটা অনুভূতি হচ্ছে।আমার কান্নার ভিন্ন মানে খুঁজে ওনি কষ্ট পাচ্ছেন, কারণ আমি কষ্ট পেয়েছি ওনি এটা ভাবছেন।ওনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।কোথায় গেলেন জানিনা।টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলাম।সম্পূর্ণ অচেতন হইনি।ইন্দ্রিয় শক্তি জাগ্রত,কেননা ওনি বাইরে থেকে কখন আসবেন সেই আতঙ্ক রয়েছে।রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ওনি ঘরে প্রবেশ করলেন।আমার চোখে ঘুম,কিন্তু জাগ্রত; তবুও উঠলাম।উনি দরজা লাগিয়ে দিয়ে গায়ের গেঞ্জি খুলে আলনায় মেলে দিলেন।গুটি গুটি পায়ে আমার কাছে এগিয়ে এসে মাথায় রাত রাখলেন।চুলে কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলেন।রুমের লাইট অফ করে এসে নিজেও শুয়ে পড়লেন।
পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই শুনি চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি ওনি মাত্রই গোসল সেরে টাওয়াল পরে ডিভানে বসে ফোন চাপছেন।ঘড়িতে সাতটা বেজে চল্লিশ মিনিট।আমি চোখ মেলতেই উনি ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘গুড মর্নিং’
আমি ঘুমন্ত কন্ঠেই মৃদু স্বরে বললাম, ‘গুড মর্নিং।’
‘তরীর সার্টিফিকেট আনতে যাবেনা?’
‘আমার ভালো লাগছে না,আপনি নিয়ে আসুন।আমি রোহানকে আনতে যাব।’
‘ওকে, বাট তুমি রেডি হয়ে নাও,আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে যাব।আর কাল রাতের জন্য স ‘সরি।’
আমি কিছু না বলে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশ রুমে গিয়ে গোসল সেরে নিলাম।বাইরে বেরোতে বেরোতেই পেছন থেকে জামার অর্ধেক ভিজে গিয়েছে।ওনি ফোন ডিভানের উপরে রেখে আমার টাওয়ালটা এনে হঠাৎ করেই আমার চুল মুছতে মুছতে বললেন, ‘চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে বেরোতে হয় জানো না?কীভাবে ভিজে গিয়েছ?’
মনে মনে বললাম, ‘ভাগ্যিস পেঁচিয়ে রাখিনি;তাহলে কি এই মুহুর্তটুকু পেতাম!’
হাতে লোশন মাখতে মাখতে বললাম,
‘আরিয়ান ভাই আপনার পরিচিত?’
‘কোন আরিয়ান?’
‘যার কথা গতকাল বললেন’
‘অবশ্যই পরিচিত।পরিচিত না হলে কীভাবে বললাম?’
‘আপনি জানেন ওনি আমার কাজিন?’
‘নাতো।’
‘আপনি চিনেন কীভাবে?’
‘আমার কলেজ ফাংশনে একটা নাটকের অংশ দেখেছিলাম।সেখানে আরিয়ান নামের একজন অভিনেতা ছিল।’
‘ওহ আচ্ছা’।
‘তোমার কাজিনের নাম আরিয়ান?’
‘হু।”
‘পরিচয় করিয়ে দিও’
‘ওনি দেশে থাকেন না।
‘এর-ই মাঝে দাদু আমাকে ডাকলেন।ওড়না ভালোভাবে ঠিক করে নিয়ে দাদুর রুমের দিকে গেলাম।দাদু আমাকে দেখেই ডাকলেন,
‘সারাহ!’
‘জি দাদু।’
‘কাছে আয়তো।’
দাদুর বিছানায় বসে বললাম,
‘বলুন দাদু।’
“পান বেটে দেতো।’
‘দিন দাদু।’
পান বাটতে বাটতে বললাম,
“দাদু দাদি কি খুব সুন্দরী ছিলেন?’
‘তার গায়ের রং অতটা সুন্দর না হলেও সুন্দরের মা থা খে ত।একদম রোশানের মত ছিল।’
‘ওনি কি ওনার দাদির মতো দেখতে?’
‘হ্যাঁ,একদম।তরীর সাথে কথা হচ্ছে তোর?’
‘হচ্ছে তো।আজ রোহানকে আনতে যাব।রোহান বাড়িতে আসবে।”
‘নিয়ে আয়।ওরে একটু পরাণ ভরে দেখব।আবার দিয়ে আসিস। ‘
‘ঠিক আছে দাদু।’
এর-ই মাঝে শাশুড়ি এসে বললেন,
‘তরী একটু ভাত রান্না করবে?আমার কোমরে ব্যাথা।’
আবাক হয়ে বললাম,
‘তরী কই?’
‘সারাহ বলতে গিয়ে তরী হয়ে গিয়েছে।আজ একটু রান্না করবে?’
‘সো সরি আম্মা।আমি এ বাড়িতে তরীর মতো রান্না করতে আসিনি। তাই আমাকে ভুলেও এসব বলবেন না।’
‘তুমি তাহলে কী করতে এসেছ?”
‘আপনার ছেলের মা- থা চি বি য়ে খে তে এসেছি।’
‘তাই তো খাচ্ছো।আমার ছেলে বদলে গিয়েছে।’
‘মাত্র তো ট্রেইলার দেখলেন,বাকি মুভি শেষ হতে দিন।’
শাশুড়ি দাদুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন,
‘বাবা ওরা নাকি ফার্নিচার দিবে বলেছিলেন।কই সেসব?আবার নাকি নগদ টাকাও দিবে?’
‘কেন আমার বাবা দিবে কেন?আমার বাবা কিচ্ছু দিতে পারবে কান খুলে শুনে রাখুন।’
‘আমার অত সুন্দর ছেলের সাথে কি এমনি এমনি আনলাম তোমাকে?অনেক ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার মেয়েও সেধেছিল;কিন্তু আমি আনিনি।তোমার ফ্যামিলি এই দেবে সেই দেবে বলে আমার মাথা খেল।’
‘এত মেয়ে সেধেছিল খুব-ই গর্বের কথা এটা।আপনার ছেলেকে গোরুর মতো গোরুর হাটে উঠালেন না কেন?তাহলে আরও খদ্দের পেতেন।’
‘মুখ সামলে কথা বলো।অনেক সহ্য করেছি।তোমাকে এনেই আমার সংসার এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।তোমার বাবাকে বলে দিও যা যা দেওয়ার কথা দিয়ে যেতে।’
‘কেন? আপনার ছেলেকে কি বিক্রি করেছেন নাকি?আমার বাবা সব দিয়ে যাবে তাহলে আপনিও আপনার ছেলেকে আমার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন কাজ করার জন্য।’
‘বাবা দেখছেন এই মেয়ের মুখ কী!’
দাদু হেসে বললেন, ‘ অনেক দিন পর একটু শান্তি পেলাম!’
আমি আবারও তেজী কন্ঠে বললাম,
‘সুন্দরী,শিক্ষিতা,স্মার্ট, বড়োলোক ঘরের বউ লাগবে আপনাদের?সব কিছুর চাহিদা একসাথে মেটাতে চান তাইনা?’সব চাহিদা মিটিয়ে দেব;দেখে নিবেন।’
এর-ই মাঝে ওশান এসে দাঁড়াল দরজায়।শাশুড়িকে বললাম, ‘ওই যে আপনার ছেলে হাজির। বলুন বিয়ে করে নিয়ে আসতে।বউ পেয়ে যাবেন।’
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
_______________________________
কেটে গেল বেশ কয়েকদিন।এর-ই মাঝে তরীকে মৃন্ময়ের বোনের সাথে ছোটো একটা বাসায় উঠিয়ে এলাম।হাতের কাজের একটা ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দিলাম।রেগুলার ট্রেনিং সেন্টারে যাচ্ছে আসছে,সব কিছু ভালোই চলছে।সেদিন রোহানকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম।সারাদিন ঠিক থাকলেও রাতে তরীর জন্য ভীষণ কান্নাকাটি শুরু করে।সেই মধ্যরাতে দিয়ে আসতে হয়।
__________________________
আমাদের পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এসেছে।কলেজে এডমিট কার্ড আনতে গিয়েছি।মৃন্ময়, তন্ময়, দ্বীপ, ছোঁয়া সবার সাথেই দেখা হলো।ওদের দেখেই তেলে-বেগুনে জ্বলে এগিয়ে গেলাম।এর মাঝে কয়েকবার জু* তা মা’ র ‘ ব বলে দেখা করতে বলেছি; কিন্তু করেনি।ওরা জানত আমি ওদের আচ্ছা গা* লি দেব,তাই সামনে আসেনি।আমাকে দেখে মৃন্ময় দ্বীপের পেছনে গিয়ে লুকাল।তন্ময় বলল, ‘সারাহ জু* তা কই?’
আমি রাগী চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ওসব যে দিয়েছিস আমার জামাই কেডা জানিস?’
‘কেডা?’
‘যেদিন দেখবি বুঝবি!’
চলবে?