#কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে
#পর্ব-৬
জয়ীকে দেখতে সকাল সকাল অনীশ এসে হাজির হলো। জয়ী একটু অপ্রস্তুত হলো। অনীশ জিজ্ঞেস করলো,
“কীভাবে হলো এসব?”
“বেশী কিছু তো হয় নি৷ শুধু একটু পায়ে ব্যথা।”
“সেটাই বা কী করে হলো? ”
“পড়ে গিয়ে।”
“শুনলাম কুকুর নাকি তাড়া করছিল?”
জয়ী ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলল। ওই কেলেঙ্কারীর কাহিনী সবাইকে বলবেই বা কী করে! জয়ীর পাশে বসে গল্পের বইয়ে মগ্ন সৌমি মিটিমিটি হাসছে। জয়ী যে ওর দিকে একটু চোখ পাকিয়ে তাকাবে সে উপায়ও নেই। অনীশ ক্যবলার মতো তাকিয়েই আছে। জয়ী যে এতো চেয়ে থাকার মতো সুন্দরী সেটা আজ জানতে পারলো ও। জয়ী জিজ্ঞেস করলো,
“আপনার কী অবস্থা? ”
“আর অবস্থা! তোমার খবর শুনে এতো টেনশন হলো। ভালো করে ঘুমাতে পর্যন্ত পারিনি।”
জয়ী বিস্মিত হলো। এই ভদ্রলোক এতো লেইম কথাবার্তা কিভাবে বলছে! নাম শুনে তো এমন মনে হয় নি। ও ভেবেছিল স্মার্ট হবে। সৌমি এবার একটু শব্দ করে হাসলো। জয়ী এবার আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো না। চোখ পাকিয়ে তাকালো। অনীশ বলল,
“উনি কী আমার কথা শুনে হাসছে?”
“না। ও বই পড়ছে তো তাই হাসছে।”
সৌমির হাতের বইটার নাম দহন। এই বইটা মোটেও হাসির বই না। সিরিয়াস টাইপ বই।
অনীশ সেটুকু বিশ্বাসও করে নিলো। জয়ী জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি ব্রেকফাস্ট করে এসেছেন?”
“না। খবর শুনেই সকাল সকাল চলে এলাম। এই খবর শুনে কী আর খাওয়া যায়!”
জয়ী অতিসন্তঃর্পনে দীর্ঘশ্বাস লুকালো। ওর তেমন কিছুই হয় নি। পায়ে দুটো প্লাস্টার ছাড়া আর কিছুই লাগে নি। অথচ এই লোক এমন ভাব করছে যে, কু*ত্তা কামড় দিয়ে খাবলা খাবলা মাংস খেয়ে নিয়েছে।
জয়ী বলল,
“তাহলে চলুন ব্রেকফাস্ট করবেন। আপনি না খেয়ে আছেন শুনলে ভাবী কষ্ট পাবে। সুইট ভাবীকে কষ্ট দেয়ার কী দরকার বলুন তো!”
অনীশ একটু লজ্জা পেল। সৌমি আবারও হাসলো অল্প শব্দ করে।
অনীশ বলল,
“আচ্ছা।”
***
অনীশকে পাউরুটি, ডিম পোচ, চা খেতে দিলো জয়ী। সৌমিও বসেছে। ওর মুখ হাসিহাসি। অনীশ কে দেখে ওর মজাই লাগছে। এই লোকের সঙ্গে জয়ীর বিয়ে হবে ভেবে ওর হাসি পাচ্ছে। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ। সৌমি জয়ীকে বলল,
“তুই বোস। আমি দেখি।”
দরজা খুলে সৌমি জয়ীকে জোরে ডেকে বলল,
“এই জয়ী দেখে যা।”
জয়ীর সঙ্গে অনীশও গেল। একটা বিশাল ফুলের বুকে আর সেই সঙ্গে অনেকগুলো প্যাকেট। দরজায় দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক। জয়ী জিজ্ঞেস করলো কাকে চাই?
লোকটা বলল, জয়ীতা ম্যাম কে।
“আমিই জয়ীতা। ”
“এগুলো আপনার। ”
জয়ী সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“কে পাঠিয়েছে?”
“আদনান ফয়সাল। ”
সৌমির চোখ বড় হয়ে গেল৷ জয়ীও বিস্মিত হয়ে গেল। লোক টা চলে গেছে। জয়ী ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। অনীশ অবাক গলায় বলল,
“এই প্যাকেটে কী আছে।”
সৌমি একটা প্যাকেট খুলে বলল,
“ফল, আর চকলেট, চিপস। ”
অনীশ জয়ীকে প্রশ্ন করলো,
“আদনান ফয়সাল কে?”
জয়ী জবাব দেয়ার আগেই সৌমি বলল,
“ক্রিকেটার আদনান ফয়সাল।”
অনীশ অবাক গলায় বলল,
“আদনান ফয়সাল তোমাকে কী করে চিনে জয়ী?”
এবারও জয়ীর আগে সৌমি বলল,
“দিল্লীতে দেখা হয়েছিল। তখনই আলাপ। ভালো ছেলে। জয়ীর সাথে বন্ধুত্বও আছে।”
জয়ী সৌমির মিথ্যে শুনেও কিছু বলল না। জোর করে হাসলো৷ সৌমি অনীশ কে শুনিয়ে জয়ীকে বলল,
“দেখ, এতো বিখ্যাত লোক; তবুও ম্যানারস আছে। অসুস্থ হলে যে খালি হাতে আসতে হয় না সেটা মাথায় রেখেছে।”
এটা যে অনীশ কে খোঁচা দিয়ে বলা সেটা জয়ী বুঝলো। অনীশ নিজেও বুঝলো। তার মুখ টা ছোট হয়ে গেছে৷ কোনোরকম চা খেয়েই বিদায় নিলো। জয়ী সৌমি কে বলল,
“ব্যটাকে বিদায় করার জন্য থ্যাংকস। ”
সৌমি হেসে বলল,
“এই লোক কে বিয়ে করবি? এ তো বিয়ের পর সারাদিন তোর দিকে তাকিয়ে থাকবে। চাকরি, বাকরি সব শিকেয় তুলে।”
“ধ্যাৎ! বাদ দে।”
জয়ী ফুলের সঙ্গে ছোট একটা চিরকুট পেল। সৌমিকে বলল,
“এই দেখ, মনে হচ্ছে চিরকুট। ”
“কী লিখেছে রে?”
জয়ী চিরকুট খুলল। সেখানে লেখা,
“আপনার জমজ বোন কেমন আছে?”
জয়ী চিরকুট টা সৌমিকে দিলো। সৌমি হাসতে হাসতে বলল,
“গেট ওয়েল সুন এর বদলে এই লেখা কেন?”
“আমি কী জানি?”
“আমি কিন্তু বুঝেছি।”
“কী?”
“মানে সেদিন তো সাহসী রুপ দেখিয়েছিস। আর ওইদিন….
সৌমি পুরোটা বলতে পারলো না। হাসতে লাগলো। জয়ী হাসলো না৷ চিরকুট টা হাতে নিয়ে গভীর মনোযোগে দেখতে লাগলো।
***
আদনানের আজ একটা বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং আছে। তৈরী হয়ে অপেক্ষা করছে, এই সময় জুলিনার ফোন। আদনান একবার ভাবলো ফোন টা তুলবে না, কিন্তু তাতে জুলিনা থেমে থাকবে না। বিরক্তিহীন ভাবে ফোন করেই যাবে। আদনান ফোন টা তুলল। ও হ্যালো বলার আগেই জুলিনা ওপাশ থেকে বলল,
“যা যা পাঠাতে বলেছিলাম পাঠিয়েছিস?”
“জি মামী।”
“ফল পাঠিয়েছিস?”
“হ্যাঁ। ”
“ঠিক আছে। তোরা যা করলি, একটা কুত্তা দিয়ে মেয়েটাকে হেনস্তা করলি!”
“আমরা কিছু করিনি। উনিই দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছিলো। ”
“ও শুধু শুধু দৌড়াবে কেন! তোদের ওই খাটাশের মতো দেখতে কুত্তা দেখে ভয় পেয়ে মেয়েটা দৌড়েছে। নরম সরম মেয়ে তো।”
আদনান নিঃশব্দে হাসলো। জয়ীতা নাকি নরম!
জুলিনা আবারও বলল,
“এই শোন, জয়ীকে একটা ফোন করিস।”
“মামী আমি এই মুহুর্তে বিয়ের কথা ভাবছি না।”
জুলিনার গলার আওয়াজ এবার আরও বড় হলো। বলল,
“তাহলে কী ভাবছিস? বিজ্ঞাপনের মডেল দের পেছনে দৌড়াবি?”
“আমি আপাতত ক্যারিয়ারে ফোকাস করতে চাইছি।”
“তো করবি। কেউ মানা করছে? বিয়ে করলে ক্যারিয়ারে ফোকাস করা যায় না?”
“এই বিষয়ে পরে কথা বলি? এখন একটু ব্যস্ত আছি।”
“এই শোন, আমাকে ব্যস্ততা দেখাবি না। আমিও ব্যস্ত। ফর্সা রুনার ছেলের জন্মদিনে যেতে হবে। তারজন্য পার্লারে যাব, গিফট কিনব। কতো কাজ! আমাকে কাজ দেখাতে আসিস না। ”
আদনান চুপ করে রইলো। জুলিনা আবারও বলল,
“জয়ী খুব ভালো মেয়ে। আজকালকার মেয়েগুলোর তো চেহারা খুঁজে পাওয়া যায় না মেকাপের কারনে। তাও সস্তা মেকাপ। চকবাজার থেকে কিনে মুখে মেখে বেরোয়। বিদেশি মেকাপ এরা চিনেও না। এরপর বিদেশে খেলতে গেলে একটা ভালো মেকাপ বক্স আনিস তো জয়ীর জন্য। দাম একটু বেশী পড়বে। কিপ্টেমি করবি না। বউয়ের জন্য খরচা করতে সমস্যা কী!”
আদনান বুঝতে পারলো না কী বলবে! তাই চুপ করে রইলো।
জুলিনা তার কথা চালিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে আদনানের ম্যানেজার এসে জানালো যে জয়ীতা ফোন করেছে।
জুলিনার হাত থেকে এক প্রকার জোর করে নিস্তার পেল আদনান। তারপর জয়ীতার ফোন টা ধরলো। আদনান হ্যালো বলতেই জয়ীতা বলল,
“আপনার ম্যানেজারের নাম্বার টা এন্ট্রি খাতায় ছিলো তাই এই নাম্বারে ফোন করা।”
আদনান জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি এখন কেমন? ”
“ভালো। জমজ বোনের ব্যাপার টা কী?”
“আসলে দিল্লীতে আমার একজনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। দেখতে আপনার ই মতো। সে খুব সাহসী৷ একদম আমার হাত ধরে টেনেছিল। দুই একটা নখের দাগ এখনো আছে হয়তো হাতে। সে আপনার বোন না? আইমিন দেখতে তো আপনার ই মতো। ”
“আপনি আমার সঙ্গে ফাজলামি করছেন?”
“না তো।”
“আপনার খুব দেমাগ না?”
আদনান হেসে ফেলল। বলল,
“আপনি আমাকে এতো অপছন্দ কেন করেন বলুন তো?”
জয়ীতা থতমত খেল। আদনান বলল,
“আমাকে দেখা মাত্রই ওভাবে ম্যারাথন রেসের কারন টা কী? আপনি ভেবেছিলেন আপনাকে আটকে রাখব?”
জয়ী তোতলাতে তোতলাতে বলল,
“না…. সেটা কেন….”
“তাহলে বন্ধুরা সঙ্গে ছিলো না বলে সাহস কমে গিয়েছিল?”
“আপনি আমার বাসায় ফুল কেন পাঠিয়েছেন?’
আদনান আবারও হাসলো। বলল,
“ফুল পছন্দ হয় নি?”
“না। আমি সবার কাছ থেকে ফুল নেই না। সব ফেরত পাঠাচ্ছি। ”
“আচ্ছা। আপনি নিজে দিয়ে আসবেন বাসায়? ওপস সরি; আপনি তো অস্কারের উপর রাগ করে বাসায়ও যাবেন না।”
“আপনি আমার সঙ্গে রসিকতা করছেন?”
“উঁহু। ”
“সব ফেরত পাঠাচ্ছি কিন্তু দুটো ডার্ক চকলেট বাদে। ভুলে খেয়ে ফেলেছি।”
আদনান হেসে বলল,
“ওকে। একটা কথা ছিলো। ”
“কী?”
“এরপর থেকে ম্যারাথন রেসের সময় জুতার দিকে খেয়াল রাখবেন। নাহলে দৌড়ানোর সময় ব্যালেন্স রাখতে কষ্ট হবে। ”
জয়ীতা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। এই লোককে বলার মতো কোনো বিশেষন ও এখন খুঁজে পাচ্ছে না।
চলবে…..