#কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে
#পর্ব-৫
জয়ীকে তাসিন আর নওশিন উপরে নিয়ে গেল। ও তখনও চোখ বন্ধ করে আছে। তাসিন আদনান কে জিজ্ঞেস করলো,
“ব্যাপার টা কী হলো ভাইয়া?”
আদনান ঠোঁট উল্টে না জানার ভান করে বলল,
“আমাকেও বল। আমিও জানতে চাই। ”
নওশিন জয়ীকে পানি দিলো। বলল,
“আপনি একটু পানি খান। ”
জয়ী বাধ্য মেয়ের মতো পানিটুকু খেয়ে নিলো। নওশিন বলল,
“এবার কফি দেব?”
জয়ী মাথা নেড়ে না বলল। ও এখনো আদনানের দিকে তাকাচ্ছে না। আন্দাজ করতে পারছে যে আদনান ওর দিকে তাকিয়ে আছে। যদিও আদনান কে এতো ভয় পাওয়ার কারণ ছিলো না। কিন্তু কেন যে হঠাৎ কিছু না ভেবে দৌড়াতে গেল! এখন অবশ্য ভয়ের অনেক কারণ আছে। আদনান সেলিব্রিটি ক্রিকেটার। ওর বাসায় নিশ্চয়ই লাইসেন্স করা পিস্তল আছে। যদি ঠুকে দেয়! ধ্যাৎ কী আবোলতাবোল ভাবছে! ও’কে গুলি করতে যাবে কেন! ও অল্প একটু খারাপ ব্যবহার করেছে তার জন্য এভাবে মেরে ফেলবে! না না এটা করবে না। কিন্তু ওই অস্কার! অস্কার কে দিয়ে ও’কে এভাবে আটকে কেন রাখলো!
জয়ী একা একাই বিড়বিড় করে কী যেন বলছে। বাকীরা কেউ সেটা শুনতেও পেল না। তাসিন বলল,
“আপনি হঠাৎ ভাইয়াকে দেখে ওভাবে দৌড়াতে শুরু করলেন কেন?”
জয়ী এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল,
“ওই কুকুর টা কী সত্যিই মানুষ কামড়ায়? আমার কিন্তু সূঁচ দেখলে ভয় লাগে। ”
আদনান অন্যদিকে তাকিয়ে হাসি আড়াল করলো। সেদিন বন্ধু, বান্ধব সঙ্গে নিয়ে কী বাহাদুরি দেখালো; আর আজ সব সাহস হাওয়া!
আদনান এই প্রথম জয়ীতার সাথে কথা বলল। জিজ্ঞেস করলো,
“মোবাইল, ব্যাগ, এক পায়ের জুতা সব ফেলে বাসা পর্যন্ত কিভাবে যেতেন? হাটুতে ভর করে?”
জয়ীতা আদনানের দিকে তাকিয়েই সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিলো। নওশিন বলল,
“থাক ভাইয়া উনি মেবি কোনো কারণে আপসেট। ”
জয়ীতা সঙ্গে সঙ্গে বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ ঠিক। আমার এখন বাসায় যাওয়া উচিত।
আদনান তাসিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোরা একজন পৌছে দিস।”
***
তাসিন, নওশিন দুজনেই জয়ীর সঙ্গে গেল। জয়ীকে গাড়িতে বসতে বলে দুজনে আদনান কে ফোন করলো। আদনান ফোন ধরেই বলল,
“আগে বল মেয়েটা এখানে কেন এসেছে?”
“মামী পাঠিয়েছে। বলল তুই নাকী চাকরি দিবি। ”
“মামী ও’কে কিভাবে চিনে?”
“আগে বলো তুমি ও’কে কিভাবে চিনো? যেভাবে বেচারি দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো তাতে বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা কাহিনী আছেই। ”
“সেই কাহিনী তোদের জানা আছে। ”
নওশিন জিজ্ঞেস করলো, এটা কী দিল্লীওয়ালি?”
“হু। ”
দুজনেই একসঙ্গে হেসে ফেলল। আদনান বলল,
“হাসছিস কেন?”
দুজনেই একসঙ্গে বলল,
“কনগ্রাচুলেশন ভাইয়া।”
****
লিজা জয়ীকে দেখে বলল,
“তোমার কী হইছে?”
জয়ীর এক হাত তাসিন, আর অন্যহাত নওশিন ধরে রেখেছে। ছোটাছুটিতে কখন যে ব্যথা লেগেছে এতো টেরও পায় নি। আসার পথে কপালে হাত দিয়ে দেখলো যে একটা ছোট সাইজের আলুও হয়েছে।
জয়ী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, কুকুরে তাড়া করেছিল ভাবী। এরা দুজন আমাকে বাঁচিয়েছে।
তাসিন, নওশিন মিটিমিটি হাসছে। লিজা ওদের কে ভেতরে যাওয়ার সুযোগ দিলো। ওরা বসতে চাইলো না। তাসিন জয়ীকে বলল,
“আপনার সঙ্গে একটু কথা আছে। ”
“বলুন। ”
তাসিন আড়ালে গিয়ে বলল,
“আপনি যে দিল্লীতে ভাইয়াকে বলেছেন ও আপনাদের টাকায় খেলে এই কথাটার মিনিং কী?”
জয়ীর মুখ টা শুকিয়ে গেল। জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
“আমার আসলে মাথা একটু খারাপ। ভুলভাল বলে ফেলি। কোনো মিনিং নেই।”
তাসিন বলল,
“আমাকে বলতে পারেন। আমি আপনার দলেরই। হাফ পাগল।”
জয়ী বুঝলো এই বান্দাকে উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে কাজ নেই। মিনমিন করে বলল,
“ওই সাধারণ পাব্লিক যে ট্যাক্স দেয় ওটাই বুঝিয়েছি আর কী।”
তাসিন হাসলো। বলল,
“আপনি খুব সুইট। আজ আসি। ”
নওশিন লিজার সঙ্গে টুকটাক কথা বলছিল। জয়ীকে বলল,
“আবার একদিন আমাদের বাসায় আসবেন কিন্তু। ”
জয়ী মুখ ফসকে বলল,
“কুকুর থাকলে জীবনেও আসব না। ”
***
“তোরা তিন ভাই, বোন কী গাধা? তোদের কী লজ্জা শরম আছে?”
আদনান নওশিন আর তাসিনের দিকে তাকালো। ফোনে স্পিকার দেয়া। কথা বলছে নওশিন। বাকী দুজন শুনছে। নওশিন বলল,
“জি মামি।”
“হ্যাঁ স্বীকার না করে যাবি কই? গাধার ঘরের গাধা। তিনটাই একদম মামার মতো অসভ্য হয়েছিস। একটা মেয়েকে পাঠিয়েছি তাকে কু*ত্তা দিয়ে তাড়ালি?”
“আমরা তাড়াই নি। আসলে উনি ভাইয়াকে দেখে ভয় পাইছে।”
“ভয় পাইছে মানে কী? নিশ্চয়ই ভয় দেখাইছে। ”
নওশিন আদনানের দিকে তাকালো। আদনান ইশারায় বলল কন্টিনিউ করতে।
নওশিন বলল,
“স্যরি মামী। ”
” আমাকে সরি না বলে ওই মেয়েটাকে বল। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। মেয়েটার কান্না শুনে আমার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠছে। মেয়েটা নাকি সারা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে গেছে৷ এখনো কাঁদতেছে। ওর ভাবী আমাকে জানাইছে।”
নওশিন তাসিনের দিকে তাকালো। জুলিনা জানেনা যে ওরাই বাড়ি অবধি পৌছেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো পুরো ঘটনায় জয়ীর চোখ থেকে এক ফোঁটা পানিও পড়ে নি।
জুলিনা আবারও বলল,
“এই শুনছিস?”
“জি মামী।”
“তোর আশেপাশে কেউ আছে?”
তাসিন ইশারায় না বলতে বলল। নওশিন বলল,
“না মামী।”
“মেয়েটাকে কেমন দেখলি?”
“ভালো মামী। ”
“সুন্দর না?”
“হ্যাঁ। ”
“চুল টা আমিই কার্লি করতে বলেছি৷ খুব ই বাধ্য মেয়ে। আমাকে খুব মানে।”
“ওহ।”
“তাসিন কেও জিজ্ঞেস করিস পছন্দ হইছে কী না?”
নওশিন আদনানের দিকে তাকিয়ে হাসলো। তাসিনও বুঝে গেল। নওশিন জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি কী ভাইয়ার বিয়ের জন্য ওনাকে পাঠিয়েছো?”
“হ্যাঁ। তোর বুদ্ধি আছে। নিয়মিত বাদাম খাবি। বাদাম খেলে বুদ্ধি বাড়ে। তবে বেশী খাবি না, গ্যাসের সমস্যা হবে। তোর মামার যেমন হতো। হতো কী এখনো হয়, গত সপ্তাহে গেলাম টাকা আনতে। তখন আমার সামনেই ফড় ফড় আওয়াজ করে গ্যাস ছাড়লো। মানে মিনিমাম লজ্জাটুকু নাই! আমিও ছাড়িনি। একদম বইলা আসছি যে এই ব্যটা তোমার লজ্জা নাই? অসভ্যের মতো কাজ করো! যাও বাথরুমে যাও, পেট পরিস্কার করে আসো।
নওশিন মুখ চেপে হাসতে শুরু করলো। তাসিন ওখান থেকে উঠে চলে গেছে। ওর আবার হাসির রোগ আছে। দুনিয়াদারী কাঁপিয়ে না হাসলে শান্তি পায় না। আদনান ঠোঁট টিপে হাসছে। জুলিনার টেপ রেকর্ডার বেজেই চলছে। নওশিন কে বলছে,
“শোন ওইদিন তোর মামার বাসায় কী হইছে। যাওয়ার পর দেখি ভুটকিটা(নওশিনের মামার দ্বিতীয় স্ত্রী) তার মেয়েরে জিজ্ঞেস করতেছে, আঁম্মুঁওঁওঁ তুঁমিঁ কীঁ বায়ু দিছো? আমি তো বায়ু বুঝিনাই। পরে বুঝলাম যে গ্যাস। কী যে ঢং ভুটকিটার! বস্তির বেটি স্টাইল করে পা*দরে বলে বায়ু! আমরাই তো গ্যাস বলি। বায়ু তো বলি না।
নওশিন বুঝলো গ্যাস বিষয়ক আলোচনা আরও কিছুক্ষন চলবে। জুলিনা ছুতো পেলেই স্বামী আর সতীনের বদনাম করবে। এই বদনামে জয়ীর ব্যাপার টা চাপা পড়ে গেল। নওশিন হাসির কারনে কিছু বলতেও পারছে না। জুলিনার বকর বকর শুনছে।
কথা চলাকালীন ফোন টা কেটে গেল। আদনান বলল,
“আর কথা বলা লাগবে না।”
নওশিন বলল,
“তোমার বিয়ে বিষয়ক কিছু তো শোনাই হলো না।”
আদনান হাই তুলে বলল,
“নেক্সট উইকে টেস্ট সিরিজ শুরু। আপাতত আমি সেটাতেই কনসানট্রেট করি কেমন! পাগলা মামীকে তোরা সামলে নিস। ”
নওশিন বলল, বলা যায় না; পাগলা মামী জয়ীকে স্টেডিয়ামেও পাঠাতে পারে।
আদনান হেসে ফেলল। বলল, ওখানে অবশ্য ভালো করে দৌড়াতে পারবে।
নওশিনও হাসলো।
চলবে…..