#মন_ময়ূরী
#Tahmina_Akther
শেষাংশের (প্রথম খন্ড)
সকাল এগারোটায় অসুস্থ ফায়েজকে দেখতে চলে আসে খেয়ার মা এবং দাদি।
খেয়ার বাবা কবির খাঁন সকালে সচিবালয়ে চলে যায়। তাই উনারা দু’জন ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে চলে আসেন চৌধুরী বাড়িতে।
উনারা এসে দেখেন ফায়েজ সুস্থভাবে চলাফেরা করছে। ফায়েজ ওর শ্বাশুড়ি এবং দাদিকে হাসিমুখে সালাম দিয়ে কাজের লোকদের ডেকে খাবার দিতে বললে, খেয়ার মা বারণ করে দেয় কিন্তু কে শুনে কার কথা ফায়েজের অনুরোধে খেয়ার মা বারণ করেননি।
খেয়ার মা চারদিকে চোখ ঘুরেফিরে দেখতে লাগলেন হয়তো খেয়াকে খুঁজছেন। ফায়েজ বুঝতে পেরে খেয়ার মোবাইল নাম্বারে কল করে।
খেয়া তখন ঘরে পায়চারি করছিল এমন সময় মোবাইলে কল আসে। খেয়া হেঁটে গিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো, ফায়েজ কল করছে। খেয়া ভ্রু কুঁচকে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠলো,
-বাড়িতে থেকে আমাকে কল করছেন কেন উনি!শরীর খারাপ হলো না-কি আবার?
চিন্তিত ভঙ্গিতে কল রিসিভ করতেই ফায়েজ ওপাশ থেকে বললো,
-আপনার মা এবং দাদি এসেছেন। আপনি নিচে চলে আসুন তাছাড়া নওশিন আপনাকে খুঁজছে।
কথাগুলো শেষ হওয়া মাত্র কল কেটে দিলো ফায়েজ আর খেয়া ওর মা এবং দাদির এই বাড়িতে আসার খবর পেয়ে খুশি হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে ড্রইংরুমে চলে গেলো।
খেয়াকে দেখতে পেয়ে খুশি হয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো খেয়ার মা। খেয়া ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-মা, তোমাদের ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগছে না।
-তোকে ছাড়া আমারও ভালো লাগছিল না। তাই তো চলে এলাম তোকে আর ফায়েজকে দেখতে।
-দাদীবু,খালি তোর মায়ের সাথে কথা বলবি আমাকে চোখে দেখছিস না?
খেয়ার ওর দাদির কথা শুনে হেসে ফেললো এরপর ওর মাকে ছেড়ে ওর দাদির সামনে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
-তুমি হচ্ছো আমার কথা জমা রাখার ব্যাংক তোমাকে ভুলবো কি করে?
-ভালো আছিস খেয়া?
খেয়া ওর দাদির কাছ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কেন দাদি আমাকে দেখে মনে হচ্ছে না আমি ভালো আছি?
-তুই ভালো থাকার ভান করছিস?কি হয়েছে বলবি না তোর দাদীবুকে?
-তুমি বেশি বুঝো ঘুম হয়নি রাতে তাই হয়তো ওমন দেখাচ্ছে আমাকে।
দাদি আমার কথা বিশ্বাস করলো কি না জানি না কিন্তু ফায়েজের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে সে উত্তরে সন্তুষ্ট নয়। তাতে আমার কি সে যা বোঝার বুঝুক!
দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পর নওশিন সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় তবে যাবার আগে ফায়েজকে বারবার অনুরোধ করে সময় করে একবার যেন খেয়াকে সাথে নিয়ে ওদের বাড়িতে যায়।
ড্রইংরুমে বসে আছে খেয়ার বাবা-মা,দাদি, ফায়েজের বাবা-মা। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছে আর ফায়েজ চুপচাপ বসে বড়োদের কথা শুনছে। এমন সময় খেয়া এসে সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি আমার সিদ্ধান্ত জানার কর আপনারা আমাকে সার্পোট করবেন।
খেয়ার কথার মর্ম বুঝতে পেরে খেয়ার বাবা নড়েচড়ে বসেছেন। ফায়েজের বাবা হাসিমুখে খেয়াকে বলেন,
-কি বলবে খেয়া বলে ফেলো আমাদের? এতক্ষণ তোমার অপেক্ষায় ছিলাম আমরা।
-আসলে বাবা আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার বাকি পড়াশোনা হোস্টেলে থেকে পূরণ করতে চাই, যদি আপনারা সকলে অনুমতি দিন তবে।
খেয়ার কাছ থেকে হোস্টেলের কথা শুনে উপস্থিত সবাই অবাক হলো, বিশেষ করে ফায়েজ। ফায়েজ ভাবছে আজকের আচরণের জন্য হয়তো খেয়া হোস্টেল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
-দু’দুটো বাড়ি থাকতে তুমি হোস্টেল গিয়ে থাকবে এটা কেমন কথা, খেয়া?কিছু হয়েছে আমাকে বলো নাকি ফায়েজ তোমাকে কিছু বলেছ? ফায়েজের মা বলে উঠলো।
-হোস্টেলে থাকার সিদ্ধান্ত পুরোটাই আমার।আর যদি কোনো কারণ থাকে আমি আপনাদের বলতে পারবো না।
খেয়ার সিদ্ধান্তে সবাই যখন আশাহত ঠিক তখনি ফায়েজকে উদ্দেশ্য করে ফায়েজের বাবা বলেন,
-খেয়ার সিদ্ধান্তে তুমি কিছু বলবে না,ফায়েজ?
-আমার কি বলার আছে বাবা! খেয়ার যা ভালো লাগে ও তাই করছে। এখন যদি ওর মনে হয় বাবার বাড়ি এবং শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে ও হোস্টেলে ভালো থাকতে পারবে তবে ওকে হোস্টেলে থাকার অনুমতি দেয়া ভালো হবে।
কথাগুলো বলে ড্রইংরুম ছেড়ে চলে গেলো ফায়েজ। বাড়ির সকলেই ফায়েজের কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে কিন্তু কেউই কিছু বলেনি। কি দরকার কিছু বলার? ওদের ঝামেলা ওরা মিটিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হবে।
খেয়া এবং ওর পরিবার সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো খাঁন বাড়িতে। কারণ, আর দু’সপ্তাহ পর খেয়ার পরীক্ষা। বিয়ের কারণে মোটেও ওর প্রিপ্রারেশন ঠিক নেই।
****************
এরইমাঝে কেটে গেছে একসপ্তাহ। ফায়েজ সুস্থ হয়ে আগের মতো শুটিংয়ে ব্যস্ত। খেয়া এখন হোস্টেলে আছে। সময় করে তিনবেলা দু’পরিবারের লোকদের সাথে কথা বলছে শুধুমাত্র ফায়েজকে ছাড়া। এই একসপ্তাহে না ফায়েজের সাথে খেয়ার দেখা হয়েছে না কথা হয়েছে। একপ্রকার বলা চলে দু’জন দু’জনকে এড়িয়ে যাচ্ছে।
এমনি এক সকালে খেয়া বসে বসে ল্যাপটপে কি যেন দেখছিল। রিমি এসে খেয়ার পাশে বসে বললো,
-তোদের বিয়ে হলো আজ প্রায় একমাস হতে চললো কিন্তু তোদের হাবভাবে দেখে মনে হচ্ছে তোরা ত্রিশবছর সংসার করে হাঁপিয়ে গেছিস, উপায় না পেয়ে তুই বনবাসে এসে চিল মারছিস। কি হয়েছে বল না খেয়া?
রিমির রোজকারের মতো আজও এমন প্রশ্নে খেয়া কিছুটা বিরক্তবোধ করলো। কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে এমন সময় ওর মোবাইলের মেসেজ টোন বেজে উঠলো।খেয়া মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো ফায়েজের মেসেজ।
হুট করে ওর হৃদপিণ্ড কাঁপতে লাগলো,শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে খেয়ার।পাষাণ একটা, আজ এতদিন ধরে একটিবারের জন্য কল দিয়ে বলেনি, খেয়া প্লিজ তুমি হোস্টেল থেকে বাড়িতে ফিরে এসো। আহাম্মক একটা!আমি যা বলবো সেই কথাতে তিনি মাথা কাত করে সায় দিবে কেন?একটিবার জোর খাটাতে পারে না। তার এত অহংকার নিয়ে সে থাকুক আমি আর নায়ক সাহেবের কাছে যাচ্ছি না।
অভিমানী কন্ঠে কথাগুলো মনে মনে বলছে খেয়া। দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে কিন্তু রিমির সামনে কান্না করা যাবে না। তাই শক্ত কন্ঠে রিমিকে বলে
-রিমি তুই যা আমি পরে তোর কথা শুনবো?
-তুই সবসময় আমি প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যাস। কিছু প্রবলেম থাকলে বল, কোনো না কোনো সলিউশন অবশ্যই পাবি।
-তুই যা তো এখন। আমার কোনো সলিউশনের দরকার নেই।
রিমি উঠে চলে গেলো।রিমি চলে যাবার পর খেয়া বলে উঠলো,
– রিমি,চাইলেও তোকে আমি আমার সমস্যার কথা কাউকে খুলে বলতে পারবো না এমনকি আমার বাবা-মা, দাদীবুকেও না। আমার সলিউশন আমি নিজেই খুঁজে বের করবো।
খেয়া উঠে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো। কারণ,এই রুমে আরও দুজন মেয়ে থাকে ওরা এখন ক্লাসে গিয়েছে যেকোনো মূহুর্তে চলে আসতে পারে।
ফায়েজের মেসেজটি পড়তে লাগলো খেয়া। লেখা আছে,
“তোমার ইমেইল এ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পাঠিয়েছি। সময় হলে দেখো, তুমি তো অনেক ব্যস্ত মানুষ।”
-হ্যা,আমি ব্যস্ত মানুষ আর আপনি ভাদাইম্মা। সারাদিন ওমুক নায়িকাদের সাথে ফটোশুটে ব্যস্ত থাকে। সেই মানুষ কি-না আমাকে বলছে আমি নাকি ব্যস্ত।
খানিকটা রাগীস্বরে কথাটি বলে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে ইমেইলের ইনবক্স চেক করে দেখলো, সত্যি সত্যি ফায়েজ ভিডিও সেন্ড করেছে।
দুরুদুরু বুকে ভিডিও প্লে করে দিলো খেয়া।
ভিডিও প্লে হবার পর ল্যাপটপের স্ক্রীণে ফায়েজের চেহারা ভেসে উঠেছে। খেয়া তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে আছে ফায়েজের দিকে। আচ্ছা, উনি কি রাত জাগেন?হয়তো,চোখের নিচে কালি বলে দিচ্ছে উনি কত রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন!
ফায়েজের কন্ঠ শোনামাত্র খেয়ার ভ্রম দূর হলো, মনযোগ হলো কথা শোনার জন্য। ফায়েজ বলছে,
“খেয়া,তুমি হয়তো ভাবছো কেন আমার কথার ভিডিও রেকর্ডিং করে তোমার কাছে সেন্ড করেছি? আসলে,আজ যে কথাগুলো বলব সেসব কথাগুলো কখনো তোমার সামনে আমি বলতে পারবো না। তুমি হোস্টেলে যাবার পর থেকে আমি বহুবার তোমার হোস্টেলের পাশের মেইন রোডে দাঁড়িয়ে থাকতাম,এই কথাগুলো বলার জন্য। কিন্তু সাহস পায়নি তোমাকে কল করে বলতে,খেয়া তুমি নিচে এসো তোমার সাথে আমি কিছু কথা বলব।
আজ হুট করে সকালে মনে হলো আজ এতদিন হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে কিন্তু আমাদের দুজন দুজনকে জানার কোনো ইচ্ছা নেই।আমি তোমাকে জানতে চাই খেয়া, খুব ভালো করে জানতে চাই কিন্তু অদৃশ্য এক বাঁধায় আমি তোমার কাছ থেকে বারবার দূরে সরে যাচ্ছি।
তোমাকে দেখতে যেদিন আমি তোমাদের বাড়িতে গেলাম, সেদিন বলতে পারো কোনো এক কারণে আমার মুড অনেক খারাপ ছিল কিন্তু তোমাকে দেখার পর অটোমেটিক আমার মুড ভালো হয়ে গেলো।তোমাকে দেখার পর ভাবছিলাম এত মিষ্টি একটা মেয়ের মুখ দেখে অনায়াসে না খেয়ে জীবন পাড় করা যাবে। কিন্তু, আমার আশায় গুড়েবালি দিয়ে তুমি আমার ভার্জিনিটি নিয়ে প্রশ্ন করলে। আমার অনেক রাগ হয়েছিল তোমার উপর কেন হয়েছিল জানি না, হয়তো তুমি বলতে পারো আমার ভার্জিনিটি নিয়ে প্রশ্ন করাতে আমার তোমার প্রতি রাগ জমেছিল। কিন্তু, বিষয়টা মোটেও এমন ছিল না।
তোমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে আমি গাজীপুর এলাকায় গিয়ে রাত দশটা পর্যন্ত আমার রাগের কারণ খুঁজছিলাম,কারণটা খুঁজে পেয়েছিলাম। আমার রাগের কারণ ছিল তোমার আমাকে রিজেক্ট করে দেয়া শুধুমাত্র নায়ক হবার কারণে।
সোজাসাপ্টা কথা বলা মেয়েটা,মিষ্টিচোখে তাকিয়ে থাকা মেয়েটা আমার হবে না। এই কারনটা যখন আমার সামনে পরিষ্কার হয়ে গেলো, তখন বিতৃষ্ণায় আমার পুরো শরীর কেমন যেন করছিল?আমি তোমাকে সেই অনুভূতি বোঝাতে পারবো না।
তোমার জন্মদিনের পার্টিতে আমাদের হুট করে এনগেইজমেন্ট হওয়া, তোমার শর্ত মেনে নেয়া এরপর বিয়ে সবই যেন আমার কাছে স্বপ্নের মতো। বিয়ে হবার আগমুহূর্ত পর্যন্ত আমি তোমার সাথে কথা বলিনি যদি তুমি আমার কোনো কথায় রেগে গিয়ে বিয়ে ভেঙে দাও। বিয়ে হলো আমাদের।
বিয়ের রাতে মা তোমাকে একটি লাল শাড়ী দিয়েছিল মনে আছে? ওটা আমি মাকে দিয়ে তোমাকে দিয়েছিলাম যেন তুৃমি এই শাড়িটা পড়ো আর ওই শাড়িতে জড়িয়ে থাকা তুমিটাকে দেখে ক্লান্ত হতে চেয়েছিলাম।জানো, সে রাতে আমি একটুও ক্লান্ত হয়নি বরং মনে হয়েছে আমি ঘুমিয়ে পড়লে লাল শাড়ী পরিহিতা, মায়াময় চেহারা নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা আমার মন-ময়ূরীকে কেউ নিয়ে যাবে পরীর রাজ্যে। তুমি জানতে না অব্দি সে রাতে কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে রাত পার করেছে।
এরপর,আমার সময় হলো ইন্ডিয়ায় যাওয়ার। তোমাকে না জানিয়ে যেতে চেয়েছি আমি কিন্তু ফাহিম তোমাকে এয়ারপোর্ট অব্দি নিয়ে এসেছে।
জানো,এয়ারপোর্টে যখন তুমি হলুদ শাড়ি পড়ে আমার সামনে এসে আমার অনুরোধ রাখতে আমায় জড়িয়ে ধরলে ঠিক তখন মনে হয়েছে, এই জীবনে বুঝি কাউকে বুকে জরিয়ে নিলে এত শান্তি অনুভব করা যায়!
জীবনের সব শান্তি বুঝি তোমাকে বুকে জড়িয়ে অনুভব করেছি। তোমাকে ছেড়ে আমি সেদিন প্লেইনে তো উঠেছিলাম কিন্তু আমার মন রেখে গিয়েছিলাম তোমার কাছে।
ইন্ডিয়ায় যাবার পর আমার কঠিন জ্বর এলো ভালোবাসার জ্বর।
তোমাকে হলুদ শাড়িতে দেখার পর আমার দুচোখে সর্ষে ফুল দেখছিলাম। এত অসুস্থের মাঝে আমি বারবার তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু তুমি কথা বলতে চাওনি। হুট করে এক দুপুরে তুমি ভিডিও কল করে কথা বললে, ব্যস সে রাতে আমি হাড় কাঁপানো জ্বরে কাতর হয়ে সোজা বাংলাদেশে পৌঁছে গেলাম।
ঘুম থেকে জাগার পর তোমাকে দেখতে পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম জানো কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনি।
খেয়া আমি জানি না তোমার মনে কেন এত ঘৃনা নায়কদের প্রতি?তোমার সেই ঘৃনার রোষানলে পড়ে আমি বারবার আহত হয়েছি তোমার ধারালো কথার অস্ত্রের আঘাতে। সহ্য করতে না পেরে তোমার সাথে ওরকম আচরণ করে ফেলেছিলাম আমি। বাট,ট্রাস্ট মি খেয়া আমার কোনো ইনটেনশন ছিল না তোমাকে কষ্ট দেয়ার। কিন্তু, তুমি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো। আমার উপর রাগ মেটাতে যেয়ে তুমি তোমার পরিবারের কাছ থেকে দূরে গিয়ে হোস্টেলে গিয়ে থাকছো। আমি তোমার সাথে খারাপ কিছু করেছি তাই বলে নিজের পরিবারের কাছ থেকে তুমি দূরে থাকবে?
এতদিন ছিলে কিন্তু আর দূরে থেকো না খেয়া।তোমাকে আমি কখনোই কিছুর জন্য জোর করবো না কিন্তু তুমি দয়া করে বাড়িতে ফিরে এসো। তোমার পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হবে না দরকার হলে তোমাদের বাড়িতে গিয়ে থেকো তুমি। আমি একবার হলেও তোমাকে চোখের দেখা দেখতে পারবো।
খেয়া তোমাকে দেখার পর থেকে আমি কাঙাল হয়ে গিয়েছি। তোমাকে একনজর দেখার জন্য কাঙাল হয়ে গিয়েছি।
তোমাকে একপলক দেখার সুযোগ করে দিও ফায়েজ নামক কাঙালটাকে।
উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো। ভালো থেকো খেয়া।
ভিডিও শেষ হয়ে গেলো। খেয়া ততক্ষণে হিচকি তুলে কান্না করছে।
#চলবে
#মন_ময়ূরী
#Tahmina_Akther
শেষপর্বের(দ্বিতীয় খন্ড)
প্রিয় খেয়া,
অবাক হচ্ছো নিশ্চয়ই!কেন তোমাকে চিঠি দিলাম এই ভেবে?না দিয়ে উপায় ছিল না।
জানি না আজকের পর থেকে তোমার সাথে আমার আর কথা হবে কি না?কিছু গোপনীয় কথা বলতে চাই তোমার সাথে, হয়তো আমি যে কথাগুলো তোমাকে বলব সেই কথাগুলো বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই। কিন্তু, বয়স বাড়ার সাথে সাথে একদিন আমার কথাগুলো বুঝতে পারবে।
আমাদের কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আসেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য নায়ক সাইফুল আজম।সেদিন সাইফুলকে দেখার পর আমার অনেক ভালো লাগে ওকে।সেসময় ভাইয়ার রাজনীতির দাপট ছিল অনেক, সেইসূত্রে সাইফুলের সাথে আমার একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। সময় অতিক্রম হবার সাথে সাথে আমাদের এই ভালো সম্পর্ক ভালোবাসার সম্পর্কে পরিণত হয়।
সাইফুলের আমাকে দেয়া বিয়ের প্রতিশ্রুতি ছিল পুরোটাই স্বপ্নের মতো।
আমি সাইফুলের ভাবনায় এতটাই মগ্ন ছিলাম যে বিয়ের আগে ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক হতে থাকে।
হুট করে সাইফুল আমার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। ওর শুটিংয়ের জায়গায় গিয়ে ওর দেখা পেতাম না।আমার মনে হচ্ছিল ও আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।
একদিন,খেয়াল করলাম আমার দু’বার পিরিয়ড মিস হয়েছে,আতঙ্কে পুরো শরীর কাঁপছিল আমার।
আমার সখি তামান্নাকে নিয়ে চলে গেলাম হসপিটালে। সেখানে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পর জানতে পারি আমি সন্তান-সম্ভবা।
একদিকে সাইফুল আমার সাথে যোগাযোগ করছে না অন্যদিকে ওর অনাগত সন্তানের মা হতে যাচ্ছি আমি। সব মিলিয়ে একটা বিশ্রি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।
তামান্না আমাকে বুঝিয়ে বলে,সাইফুলের বাড়িতে যেয়ে ওর সাথে সামনাসামনি আলোচনায় বসতে। আর সাইফুল যদি জানতে পারে আমাদের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে তাহলে সাইফুল আমাকে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে।
আমি তামান্নার কথায় যুক্তি পেলাম তাই চলে গেলাম সাইফুলের বাড়িতে। সেখানে যাবার পর আমি জানতে পারি, সাইফুলের বিয়ে ঠিক হয়েছে শহরের নামকরা ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে। আর সাইফুলকে আমি যখন বললাম আমি ওর সন্তানের মা হতে যাচ্ছি তখন ও সবটা শুনে কি বলে জানো? বলে কার নষ্টের ফল পেটে নিয়ে আমি এখন সাইফুলের নামে চাপিয়ে দিতে চাচ্ছি।
সাইফুলের কাছ থেকে তিক্ত বাক্য শুনে আমি পাথর হয়ে গেলাম। এ কোন সাইফুলের কাছে নিজের ভালোবাসা সর্বস্ব সঁপে দিয়ে ছিলাম!
খেয়া এতটুকু পড়ার পর হয়তো বুঝতে পারছো কেন আমি এমন একটা ঘৃন্য কাজ করতে যাচ্ছি?
শুধুমাত্র তোমার কাছে একটা অনুরোধ করে যাচ্ছি, তুমি কখনো কোনো নায়কের প্রেমে পড়ো না, সাদামাটা মানুষকে নিয়ে জীবন পাড়ি দেয়া অনেক ভালো। নায়কদের নাটকীয় সংলাপের সাথে ওদের বাস্তবিক জীবনের সংলাপ পুরোটাই অভিনয়ে ভরপুর থাকে।
কখনো এই চিঠিটা কাউকে দিবে না,এমনকি তোমার বাবা-মা,দাদা-দাদিকে। এই চিঠিটা যদি উনারা পড়ে তবে অনেক কষ্ট পাবে। তুমি কি চাইবে তোমার কাছের লোকেরা কষ্ট পাক?
ভালো থেকো, তোমার প্রত্যেকটি দোয়ায় আমাকে স্মরণ করো।
ইতি
তোমার রেনু ফুপি
চিঠিটা পড়া শেষ করে আরও একটি চিঠির খাম খুলে চিঠি বের করে পড়তে শুরু করলো,ফায়েজ।
প্রিয়,
বলব না আপনাকে,
চিঠিটা আমার রেনু ফুপির।আমার মায়ের পর আমার রেনু ফুপির মমতার ছায়াতলে বড়ো হয়েছি আমি।রোজকারের মতো ফুপির বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম আমি। কিন্তু, সকালে ঘুম থেকে জাগার পর আমার রেনু ফুপিকে দেখেছিলাম, ফ্যানের সাথে পুতুলের মতো ঝুলে ছিল।কি বিভৎস সেই দৃশ্য! আমি নয় বছরের ছিলাম তখন। আমার চিৎকারে বাবা-মা, দাদা-দাদি সবাই ঘরে এসে দেখে,রেনু ফুপি আত্মহত্যা করেছে।
ফুপির আত্মহত্যার কারণ কেউই খুঁজে পায়নি। আমিও জানতাম না। বাবার রাজনীতির দাপটে হোক ফুপির এই অস্বাভাবিক মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু ঘোষণা করে ফুপির দাফন সম্পন্ন হয়।
একদিন,হুট করে ফুপির দেয়া সেই ডায়েরির কথা মনে পড়লো আমার। ডায়েরি বের করে প্রথম পাতায় চোখ রাখতে দেখতে পেলাম আমার আর ফুপির ছবি। ফুপির গলা জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি।
দ্বিতীয় পাতায় উল্টাতে একটি খাম দেখতে পেলাম। খাম খুলে পেলাম আমার ফুপির হাতের লেখা চিঠি। চিঠিতে লেখা এক একটি শব্দ আমার মস্তিষ্কে প্রভাব ফেললো।
আমার ফুপির জীবন শেষ করার কারণ ছিল নায়ক সাইফুলের ঘৃন্য অবদান। সে কেন আমার ফুপির সাথে এমন করেছিল আমি জানতে চাই?কিন্তু,আমি জানতে পারি না কারণ আমার ফুপি বারণ করেছে।
আমার খুব রাগ হয় যখনি ফুপির বারণ মনে পড়ে। ফুপি তো কবেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু সেই নরপশু সাইফুল এখনও পৃথিবীর বুকে উল্লাসে মেতে আছে।
আমি জানি আমার ফুপির মৃত্যুর কারণ কে ছিল কিন্তু আমি বিচার চাইতে পারি না আমার মৃত ফুপির বারণের জন্য।
নায়ক সাহেব, আপনি হয়তো ভাবছেন আমার পরিবারের কেউ আমার ফুপির মৃত্যুর কারণ জানে না, সে জায়গায় আপনাকে কেন জানাচ্ছি?
যখন থেকে আমার বয়স বাড়তে লাগলো তখন থেকে আমি ফুপির সব চিঠির অর্থ বুঝতে পারি। তখন থেকেই আমার এই চলচ্চিত্র জগতের প্রত্যেকটি মানুষকে কেন যেন সহ্য কারতে পারিনি!
আপনার সম্পর্কে আমি প্রথম যেদিন জানতে পারি সেদিন আমার ফুপির সাথে ঘটে যাওয়ার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায়।তাই আপনাকে যা ইচ্ছে তাই বলেছি কারণ আমি ভাবতাম নায়কেরা এমনই হয়।
এরপর, আপনারা বাবা এলেন আমার সাথে দেখা করতে, কিছু সময় পর আপনিও এলেন।আপনাকে দেখার পর আমার বিরক্তি ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
আমাদের দু’জনের দু’বারের সাক্ষাতে আমি আপনাকে আমি অনেক কিছু বলেছি কিন্তু আপনি পাল্টা জবাব দেননি। অথচ, আপনি চাইলে অনেক কিছু আমাকে বলতে পারতেন।
আমার জন্মদিনে বাবার হুট করে এনগেজমেন্ট এনাউন্সমেন্ট শুনে আমার দম আঁটকে যাবার উপক্রম কিন্তু আমার একটা না শব্দের উচ্চারণে বাবার কতটুকু অপমানিত বোধ করবে এই কল্পনা, সেই সাথে আপনারা ক্যারিয়ারের শুরু দিকে এসে একটা ফলস নিউজ আপনার জীবনে কতটা বিরুপ প্রভাব ফেলবে এরকম ভেবে সবকিছু মিলিয়ে আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। আমার বাবার ভুলের জন্য আপনি কেন সাফার করবেন?
সে সময়টাতে আমি নিজেকে যতটা শক্ত ভাবছিলাম কিন্তু আমি ঠিক ততটা শক্ত ছিলাম না।
হুট করে আমার অপছন্দের পেশায় যুক্ত মানুষটাকে আমি আমার জীবনের সাথে জড়াতে চাইছি এই ব্যাপারটা আমার ভয়ের কারণ হয়ে যাচ্ছিলো।উপায় না পেয়ে আপনার সাথে দেখা করে শর্ত জুড়ে দেই। আপনি বিনাবাক্য রাজি হয়ে গেলেন।
আমি ভীষণ অবাক হয়ে ছিলাম জানেন,কেন না একজন পুরুষ বিয়ে করে তার স্ত্রীর কাছে নিজের স্বামিত্ব ফলাতে পারবে না এই ব্যাপারটা ক’জন পুরুষ শর্ত হিসেবে মেনে নিবে!
আপনার সাথে মোবাইলে কথা বলা, শপিংয়ে যাবার পর আপনার মায়ের সাথে আপনার কথোপকথন,হলুদের দিনে আপনার বলা কথা, দুষ্টুমি সব আমার মনে একটু একটু করে ভালোলাগার ক্ষত সৃষ্টি করতে শুরু করেছিল।
আপনি বললেন না আপনি আমাকে বিয়ের রাতে সারারাত চোখের দেখা দেখে ক্লান্ত হয়েছেন?অথচ, সেই রাতে আমি আপনার পরীক্ষা নেবার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।আপনি সে রাতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। এরপর দিন আমাদের বাড়িতে আপনাকে একপ্রকার সারারাত অপেক্ষায় রেখে রাগাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি রাগ করেননি। সকালে ঘুম থেকে জাগার পর যখন দেখলাম, আপনি হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে, আমার তখন অনেক রাগ হয়েছিল আপনার উপর। মনে হচ্ছিল আপনি আমার সব প্লানিং জেনে গেছেন, তাই ওসব ভান করে আমার মন জিতে নিতে চাচ্ছেন তাই রাগ করে আপনারা সাথে নিষ্ঠুরের মতো ব্যবহার করেছি।
এতকিছুর পরও যখন ফাহিম এসে বললো,আপনি ইন্ডিয়ায় চলে যাচ্ছেন। তখন আমার হয়েছে আমার অনেক কাছের মানুষ আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। চলে গেলাম এয়ারপোর্টে সেখানে গিয়ে আপনাকে দেখে প্রথমবারের মতো প্রেমে পড়লাম।এমন প্রেমে পড়েছিলাম, যে আপনাকে ছুঁয়ে দেখার জন্য লোভ সামলাতে পারিনি, তাই তো আপনার অনুরোধ রাখার ভান করে আমি আমার চাহিদা মিটিয়েছি।
আপনি তো চলে গেলেন অথচ আপনার সেই জড়িয়ে ধরার সেই অনুভব,আপনার গায়ের গন্ধ সবটা আমার গায়ে জড়িয়ে রাখতে আমি সেই হলুদ শাড়িটা ধুয়ে পর্যন্ত দেয়নি।
সে দিনের পর থেকে আমার আপনাকে ভালোবাসা শুরু হলো। একদিকে আপনাকে ভালোবেসে অজানা শিহরণে কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম অন্যদিকে আমার ফুপিকে ধোঁকা দেয়া সেই নায়ক সাইফুলের কথা মনে পড়তেই আমি ভয় পাচ্ছিলাম, আপনাকে ভালোবাসার ভয় পাচ্ছিলাম।
এরপর,একরাতে বাবা আমাকে নিয়ে আপনাদের বাড়িতে নিয়ে গেলো। সেখানে যাবার পর আপনার এত অসুস্থতা দেখে আমি চুপসে গিয়েছিলাম। সারাটা রাত আমি আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি আর নিজের মনের সাথে, নিজের মস্তিষ্কের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছি। মস্তিষ্ক বলছে এক যুক্তি আর মন বলছে আরেক যুক্তি।
সারারাত নিজের সাথে যুদ্ধ করার পর নওশিনের কথা শুনে যা বুঝতে পারলাম আপনি আমাকে পছন্দ করেন। তাই আপনাকে রাগানোর জন্য হোক বা আপনার মনের অনুভূতি জানার জন্য হোক আমি আপনার ফিলিং নিয়ে কথা বলেছিলাম।
আপনি খুব শক্ত জবাব দিয়েছিলেন আমায়। আপনার জবাবে আমি যতটা খুশি হয়েছি তারচেয়ে কাঁপছিলাম আপনার মুখ থেকে সেই ম্যাজিকাল তিনটি ওয়ার্ড শুনে।
ফায়েজ,আপনি হয়তো আমাকে বিয়ে করেছেন এই জিনিসটা খুব স্পেশাল ভেবে এসেছেন কিন্তু আমি আপনাকে বিয়ে করেছি এই ব্যাপারটাকে একটা গেইমের মতো করে খেলেছি। আপনাকে প্রতিনিয়ত হারাতে চেয়েছি কিন্তু আপনি আমার ভাবনাকে হারিয়ে প্রতিটি ধাপে জিতে দেখিয়েছেন। আপনার জিত আমার হারের কারণ হলেও আমি বড্ড খুশি কারণ এরকম নায়ক কজন পায় যারা কাছে ভালোবাসার চেয়ে বড়ো কিছু নেই। আপনি শরীর ছুঁয়ে দেখার চেয়ে আমাকে দেখে ক্লান্ত হতে চেয়েছেন। আমার তিক্ত বাক্য জর্জরিত হয়েছেন কিন্তু আমাকে এমন কোনো বাক্য বলেননি যারা জন্য হলেও আমি একটু কষ্ট পাবো। আমার প্রত্যেকটি কথায় আপনি সায় দিয়েছেন এই জিনিসটা আমার ভালো লাগতো না।কারণ,ভালোবাসলে আদায় করে নিতে হয়। ভালোবাসা তো আর আপনার কাছে এসে ধরা দেবে না। এই একটা ব্যাপার নিয়ে আমি আপনার উপর ভীষন রেগে আছি।
সর্বশেষ, একটি কথা আপনাকে জানাতে চাই ফায়েজ,আমার আপনাকে ভালোবাসা ছাড়াও একটি স্বপ্ন আছে আর তা হলো সাংবাদিক হওয়া। আমার ফুপির কারো কাছ থেকে এতটা ধোঁকা পেয়ে দুনিয়া ছেড়ে যাওয়া ব্যাপারটা আমি এখন মেনে নিতে পারিনা। তাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো লক্ষ্য হলো দেশের বড়ো সাংবাদিক হয়ে নায়ক সাইফুলদের মতো মানুষদের এক্সপোজ করা। শুধু নায়ক কেন সাধারণ অনেক পেশার মানুষ মেয়েদের সাথে এরকম ঘৃন্য কাজ করে। আমি চাই আমার জীবনের অর্ধেক অংশ এই বিষয়ে কাজে লাগিয়ে মেয়েদের সাহায্য করতে।
এই যে আপনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অজস্র ভালোবাসা দিয়ে আমি তো আপনার হাত খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে পারবো না। কারণ, আপনাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়া মানে আমাকে শূন্য করে ফেলা।
আমার কথার মর্মতা হয়তো আপনি বুঝতে পারবেন। আমি অপেক্ষায় থাকবো কোনো এক কৃষ্ণচূড়ার গাছের ছায়াতলে আপনি নাহয় এসে নিয়ে যাবেন আপনার মন-ময়ূরীকে।
ইতি
নায়ক সাহেবের একমাত্র বৌ
খেয়া
চিঠি শেষ করে ফায়েজ মুচকি হেঁসে উঠলো। আব্দুল জব্বার তার স্যারের দিকে তাকিয়ে বললো,
-কি হয়েছে, স্যার?ভাবি কিছু বলেছে?
-না, তোমার ভাবি কিছুই বলেনি। আর তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
-ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে ছোট করবেন না স্যার।
-ধন্যবাদ এইজন্য দিচ্ছি কারণ তুমি সঠিক সময়ে আমাকে এই চিঠি দুটো পৌঁছে দিয়েছো নয়তো আমি আজ বাংলাদেশ থেকে বহুদূরে চলে যেতাম।
আচ্ছা, তোমাদের ভাবির হোস্টেলের কাছাকাছি কোনো কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে?
-জি স্যার আছে। কেন স্যার ভাবি আপনাকে ওখানে যেতে বলছে?
ফায়েজ আব্দুল জব্বারের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিজে নিজে হেসে উঠলো,আর চিৎকার করে বলছে,
“বহুদিন পর হোক আমার মন ময়ূরী তবে আমার হলো”
আব্দুল জব্বার বেকুবের মতো তাকিয়ে আছে ফায়েজের দিকে আর ভাবছে তার স্যার পাগল হয়ে গেলো না-কি?
#চলবে