#প্রণয়
#পর্বঃ১০
#তানিশা সুলতানা
“কি বললি তুই?
থাপ্পড় খেতে মন চাইছে তোর? একদম থাপ্পড়ে দাঁত ফেলে দেবো তোর। ইডিয়েট
সূচক লাফ দিয়ে উঠে বসে কান থেকে হেডফোন খুলে ধমক দিয়ে বলে। তানহা শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেলে।
” এখানে কেনো এসেছিস?
চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস টেনে বলে সূচক।
“আআআপনি নানা বললে
তানহা তুঁতলিয়ে বলতে যায়।
” যা বলার ডিরেক্টলি বলবি। এভাবে তুতলানো পছন্দ না আমার।
আবারও দ্বীগুন জোরে ধমক দিয়ে বলে। তানহা কেঁপে ওঠে। ঠাস করে বসে পড়ে সূচকের পাশে। চোখ বন্ধ করে বুকে থু থু দেয়।
“পা টিপে দিতে।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তানহা।
সূচক লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। তানহার কোলের ওপর পা দেয়।
তানহা প্রথমেই চমকে ওঠে কিন্তু পরে মুচকি হেসে পায়ে হাত দেয়।
” আমাকে ভয় পাবি সবার সামনে। যখন আমি একা থাকবো একদম ভয় পাবি না। অধিকার দেখাবি। একদম ভাইয়া বলবি না। ও গো হ্যাঁ গো বলে ডাকবি।
সূচক বিরবির করে বলে। তানহার কানে সে কথা পৌছায় না।
আলতো হাতে পা টিপতে থাকে। সূচক চোখ বন্ধ করে ভাবছে।
এখন তো তানহা ছোট। একটু ছোট না খুব ছোট। বিয়ের বয়স হয় নি। সূচকেরও হয় নি। ইসস এখন যদি ওরা বড় থাকতো। কতোই না ভালো হতো।
নিজের ভাবনায় নিজেই মুচকি হাসে সূচক।
“উনি ধমক দেয়।মাইর তো আর দেয় না। সাহস করে ওনার ওপর অধিকার দেখাতে হবে। যদি আবার অন্য কেউ অধিকার নিয়ে নেয়। সেটা হতেই দেওয়া যাবে না। ভয়টা কমাতে হবে।
মনে মনে বলে তানহা।
একটুখানি চোখ খুলে তানহার দিকে তাকায়। সে মনোযোগ দিয়ে পা টিপছে। মাঝে মধ্যে পায়ের বড় বড় লোম গুলোতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর মুচকি হাসছে। থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ার জন্য হাঁটু ওবদি পা বেরিয়ে আছে। ফর্সা পায়ে বড়বড় লোম।
একদম আকর্ষনীয়।
“জান বিয়ে করবা??
তানহা হুট করে সূচকের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে খানিকটা জোরে।
সূচক কপালে তিনটে ভাজ ফেলে চোখ বড়বড় করে তাকায়। চোখ পাকিয়ে ধমক দিতে যাবে তার আগেই তানহা বলে ওঠে।
” সব সময় খালি খিটখিট করেন কেন? একটু রোমান্টিক হতে পারেন না? খালি ধমক আর ধমক।
ধমক না দিয়ে চুমুটুমুও তো দিতে পারেন। এতো কিউট একটা মেয়ের আপনার পেছনে পড়ে আছে। মায়া হয় না?
অন্য ছেলেরা হলে তো তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলতো।
নিরামিষ একটা।
বলেই তানহা এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। সূচক বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। এটা কি তানহা ছিলো? না কি অন্য কেউ?
পুরো কথা গুলো মনে মনে বিরবির করতে করতে এক লাফে উঠে বসে সূচক। নিরামিষ বললো?
“সময় আমারও আসবে। তখন বুঝিয়ে দেবো আমিষ না নিরামিষ।
মুখ বাঁকিয়ে বলে সূচক।
🥀🥀
বিকেল বেলা ইরা আসে। সূচক এগিয়ে নিয়ে আসে। গেইটের সামনে থেকে ইমনের দিকে চোখ পড়ে ইরার।
স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইমনের দিকে। ইমন নিজের রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। সে ইরাকে খেয়াল করে নি।
ইরার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। দৌড়ে গিয়ে জাপ্টে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু হাত পা বাঁধা।
চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ঠোঁট দুটো তরতর করে কাঁপছে।
তানহার মুড অফ। একটু আগেই বড়বাবা কল দিয়ে পইপই করে বলে দিয়েছে সকাল বেলাই বাড়ি ফিরে যেতে। এখানে একদম থাকতে দেবে না।
গাল ফুলিয়ে বসে আছে তানহা। আর একটা দিন থেকে গেলে কি হতো?
আচ্ছা এমন কিছু করা যায় না? যাতে সব সময় তানহা সূচকের সাথে থাকতে পারবে।
বৃষ্টিকে এখানে রেখে একদম যেতে ইচ্ছে করছে না তানহার।
জানলো কি করে বড়বাবা? বললো কে ওনাকে?
চানাচুর টমেটো শশা পেঁয়াজ ধনে পাতা আর কাচা লঙ্কা দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে নিয়ে আসে সাদিয়া বেগম।
সূচকের দারুণ পছন্দ এটা। সূচক তার রুমে। আর বাকি সবাই গোল হয়ে বসে আছে। তোহা আর ইরার মন খারাপ সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তোহাকে একা পাচ্ছে না তানহা। একা পেলেই জেঁকে ধরবে।
“তোহা যা বাবুকে ডেকে নিয়ে আয়।
প্লেটে প্লেটে মুড়ি দিয়ে বলে সাদিয়া বেগম।
” ফুপি আমি যাচ্ছি।
বৃষ্টি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে।
“নাহহহহহহহহহ
এটা হতে পারে না। আমি যাবো।
বৃষ্টির হাত ধরে টান দিয়ে বৃষ্টিকে আবার বসিয়ে দিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে বলে তানহা।
বৃষ্টি চোখ বড়বড় করে তাকায় তানহার দিকে।
তানহা ভেংচি কেটে হনহনিয়ে চলে যায়। বৃষ্টি ফুঁসে ওঠে।
তানহা ফুঁসতে ফুঁসতে সূচকের রুমে ঢোকে। সূচক রেডি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে।
তানহা একদম সূচকের সামনে এসে দাঁড়ায়।
সূচক ভ্রু কুচকে তাকায়।
” নিচু হন।
সূচকের শার্টের কলার ধরে বলে তানহা।
“কেনো?
” হন না।
সূচক নিচু হয়। তানহা সূচকের চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।
“এতো পাকনামি করিস কেন তুই?
সূচক তানহার হাত সরিয়ে বলে।তানহা গাল ফুলায়।
” পাকনামিই করবো।
কালকে টিকটকে দেখেছি “যাকে অন্যের পাশে দেখলে কষ্ট হয়। তাকেই নিজের পাশে যত্ন করে রাখতে হয়।
তাই এখন থেকে আমি যত্ন করবো।
তানহার কথা শুনে সূচক হা হয়ে যায়।
” থাপ্পড়ে দাঁত ফেলে দেবো তোর।
রাগ দেখিয়ে বলে সূচক।
“ফেলে দিয়েন। লস টা আপনারই হবে। সবাই বললে সূচকের বউয়ের দাঁত নাই।
তাতে আমার কি?
এক গাল হেসে বলে তানহা।
সূচক কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। এই মেয়েকে কি বলা উচিৎ?
” শুনেন। আমার শাশুড়ী মুড়ি ভর্তা করেছে। তো আপনি আমার প্লেট থেকে খাবেন।
সূচকের দিকে তাকিয়ে বলে।
“খাবো না। আর তোর শাশুড়ী কে?
হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলে সূচক।
“আপনার মা।আর না খেলে আমি এখনি চলে যাবো বাড়িতে।
বলেই চলে যায় তানহা। সূচক মুচকি হাসে।
টিকটক থেকে ভালো জিনিসই শিখেছে।
তানহা ফ্লোরে বসেছে। সোফায় জায়গা হয় নি। একজন বসার জায়গা বাকি আছে। এতোখনে তোহার মন ভালো হয়েছে। বৃষ্টির সাথে ননস্টপ বকবক করে যাচ্ছে। ইরা একমনে খেয়ে যাচ্ছে। সাদিয়া বেগম খাচ্ছে আর টিভি দেখছে।
সূচককে আসতে দেখে বৃষ্টি এক গাল হাসে।
“ভাইয়া এখানে বসো। আমার সাথে খাও তুমি।
বৃষ্টি উৎফুল্ল হয়ে বলে। সূচক এক পলক তাকায় তানহার দিকে।
” নারে ভাই তুই তানহার সাথে খা। ও আবার এতো খেতে পারে না।
তোহা মুখে এক মুঠো মুড়ি পুরে বলে।
সূচক নিঃশব্দে তানহার পাশে গোল হয়ে বসে পড়ে। তানহা সূচকের সাথে একটু চিপে বসে। তানহা এখনো মুখে দেয় নি মুড়ি। সূচক নিতেই ও হাতে নেয়।
চলবে