#প্রণয়
#পর্বঃ৯
#তানিশা সুলতানা
দুপুরে সবাই এক সাথে খেতে বসেছে। তানহা লজ্জায় চোখ তুলে সূচকের দিকে তাকাতেই পারছে না। তখনকার কথা মনে পড়ছে। মাথা নিচু করে কোনোরকমে খাবার মুখে পুরছে। ইলিশ মাছ ডাল আর বেগুন ভাজি করেছে বড়মা।
ইলিশ মাছ তানহা আর সূচকের দারুণ পছন্দ।
তোহারও পছন্দ তবে কাটা বাঁচতে পারে না। তাই খেতে চায় না।
সূচকের ডান পাশে তোহা বসেছে আর বা পাশে তানহা। বৃষ্টি সূচকের মুখোমুখি বসেছে। সাদিয়া বেগম খাবার বেরে দিচ্ছে ওদের। উনি পরে খেয়ে নেবে।
সূচক তোহাকে কাটা বেছে দিচ্ছে একমনে। তানহা হা করে দেখছে। পুরো মনোযোগ দিয়ে কাটা ছাড়াচ্ছে। কাটা ছাড়িতে প্লেটে সাজিয়ে দিচ্ছে। আর তোহা ভাতের মধ্যে পুরো খেয়ে ফেলছে।
তানহার লোভ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে সূচককে বলতে কাটা ছাড়িয়ে দিতে। কিন্তু লজ্জা আর দ্বিধায় বলতে পারছে না।
“খাচ্ছিস না কেনো?
গালে হাত দিয়ে সূচকের দিকে তাকিয়ে ছিলো তানহা। তখন সূচক ধমক দিয়ে বলে।
তানহা চমকে ওঠে। গাল থেকে হাত নামিয়ে মাথা নিচু করে মুখে ভাত পুরে। সবাই তাকায় তানহার দিকে। আবারও লজ্জায় পড়ে যায় তানহা।
সবার সামনেই একটা একটা করে গ্লাস নামানো। সূচক নিজের সামনে রাখা গ্লাস তুলে একটু পানি খেয়ে সেটা রেখে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।
তানহা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। সূচকের অর্ধেক খাওয়া পানি খাবে। সাদিয়া বেগম রান্না ঘরে চলে যায়।
বৃষ্টি আর তোহা গল্প করছে আর খাচ্ছে।
এই সুযোগে তানহা গ্লাসটা তুলে নেয় সূচক যে পাশ থেকে খেয়েছে। সেই পাশ মুখে দিয়ে এক চুমুক দেয়। আর তখনই সূচক বড়বড় চোখ করে তাকায় তানহার দিকে।
পুরো পানি শেষ করে সূচকের দিকে তাকাতেই বুকটা ধক করে ওঠে তানহার। এই রে দেখে ফেললো। এখন?
শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেলে। আস্তে করে গ্লাসটা টেবিলে রাখে। তানহার আড়ালে সূচক মুচকি হাসে।
সূচক শুকনো কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই তানহা সূচকের পায়ের ওপর পা রাখে।
কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তানহার দিকে তাকায় সূচক। তানহা কাঁদো কাঁদো ফেস করে ইশারায় চুপ থাকতে বলছে।
সূচক মুখ বাঁ কায়।
” প্লিজ বললেন না।
ওই ডাইনিটা আমার দিকে কটমট করে তাকাবে।
সূচকের টিশার্টের এক কোনা ধরে টান দিয়ে মাথাটা একটু নিচু করে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে তানহা।
“ডাইনি কে?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে সূচক।
” আর ওই বৃষ্টি।
“আচ্ছা বলবো না। যদি খাওয়া শেষ করে তুই আমার পা টিপে দিস।
সূচকও ফিসফিস করে বলে
” আচ্ছা দেবো।
সূচক মাথা উঁচু করে মুখে ভাত পুরে মিষ্টি করে হাসে। তানহা মাথা নিচু করে গিলতে ব্যস্ত।
সূচকের বা পায়ের ওপর তানহার ডান পা। সূচক ওর ডান পা টা তানহার পায়ের ওপর রাখে।
বেচারা তানহা এতে টাই ভয়ে আছে যে এটা বুঝতেও পারে না।
খাওয়া শেষ হতে না হতেই সূচকের ফোনটা বেজে ওঠে। সবাই তখন বসে টিভি দেখছিলো ফোনের স্কিনে কাকিমা নামটা ভেসে ওঠে।
সূচক বিরক্ত হয়। নিশ্চয় এখন তানহাকে যেতে বলবে। তানহা কি যাবে?
“তোর মা কল দিছে।
কল রিসিভ করে ফোনটা তানহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে সূচক।
শুকনো ঢোক গিলে ফোনটা হাতে নেয়। মা খুব বকবে এটা জানে তানহা। তাই ফোনটা হাতে নিয়ে কিচেনে চলে যায়। ওইখানে এখন কেউ নেই। নিশ্চিন্তে বকা খেতে পারবে।
” হ্যাঁ মা বলো।
“কি করছিস? ভাবি কি করছে?
মায়ের ঠান্ডা গলা শুনে তানহা রীতিমতো অবাক হয়ে গেছে।
” এই তো মা বসে আছি।
“ইরাকে নিয়ে যেতিস। বেচারা একা একা বোর হচ্ছে। আর শোন তোর বড় বাবা কল দিলে সূচককে বলতে বলবি তোরা ওখানে নেই।
তানহা ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে মায়ের দুই গালে দুইটা চুমু দিতে।
” আচ্ছা
খুশিতে গদগদ হয়ে বলে তানহা।
“বিকেলে ইরা যাবে। সূচককে বলবি ওকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
” আচ্ছা মা।
কল কেটে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে তানহা। আজকে স্কুলে না যাওয়ার জন্য যখন বকে নি এখানে অনেক দিন থাকলেও বকবে না। এক সপ্তাহের আগে এখান থেকে নরবে না তানহা।
খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। রাত হলে জমিয়ে লুঙ্গি ডান্স দেবে তোহাকে সাথে নিয়ে। ওই বৃষ্টি ফিস্টিকে নেবে না।
মুখ বাঁকিয়ে লাফাতে লাফাতে ওদের কাছে যায়।
সূচক ততখনে রুমে চলে গেছে। বৃষ্টি একা বসে আছে। তোহাও নেই আশেপাশে।
সাদিয়া বেগম ঘুমিয়েছে। এখন তানহা একা একা কি করবে?
ধুর মনটা খারাপ হয়ে যায় তানহার। আর যাই হোক ওই বৃষ্টির সাথে তো আর আড্ডা দেওয়া যাবে না।
🥀🥀
তোহা ছাঁদে যাচ্ছে ইমনের সাথে দেখা করতে। তখন ইমন পথ আটকে দাঁড়িয়েছিলো। তোহা বলেছে পরে দেখা করবে।
দুই তালায় উঠতেই ইমনের মায়ের সাথে দেখা হয়ে যায়। উনি ছাঁদে জামাকাপড় রোদে দিতে গেছিলো।
“তোহা মামনি কেমন আছো?
এক গাল হেসে বলে। তোহাও আলতো হাসে। ছোট থেকেই চেনেন উনি।
“আলহামদুলিল্লাহ আন্টি। আপনি কেমন আছেন?
” আলহামদুলিল্লাহ।
আমাদের বাসায় চলো। ইরিন এসেছে। ওর মেয়ে হয়েছে। দেখবে চলো।
উনি রীতিমতো জোর করে তোহাকে টেনে বাসায় নিয়ে যায়। ইরিনকে চেনে তোহা। দুই একবার দেখেছে। দারুণ দেখতে। বিয়েও খেয়েছে। বরটা ওনার থেকেও বেশি সুন্দর। এখন বাবুটা নিশ্চয় আরও কিউট হয়েছে। মনে মনে ভীষণ দেখতে ইচ্ছেও করছে।
ইমনদের বাসাটা আগের চেয়েও আরও বেশি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। দুই বছর আগে এসেছিলো তোহা ইরিনের বিয়েতে। তখনকার সব ফার্নিচার পাল্টে ফেলা হয়েছে।
বসার ঘরেই ইমন বসে আছে বাবুকে কোলে নিয়ে। পাশে সোফায় ইরিন শুয়ে শুয়ে ফোন দেখছে।
ইমনের বাবা ভার্সিটির টিচার। ইরিনের বর আর্মিতে আছে।
তোহার কেমন অনইজি ফিল হচ্ছে। লজ্জাও লাগছে খুব।
“আরে তোহা যে। এসো এসো
ইরিন ফোন রেখে আস্তে আস্তে উঠে বসতে বসতে বলে। মাএ বারো দিন হয়েছে সিজারের।
তোহা আলতো হেসে ইরিনের পাশে গিয়ে বসে। ইমনের বাবা কিচেনে চলে যায় তোহার জন্য নাস্তা আনতে।
ইমন আড়চোখে এক পলক তাকায় তোহার দিকে।
তোহা ইরিনের পাশে গিয়ে বসে।
” বড় হয়ে গেছো দেখি।
থুতনিতে হাত দিয়ে বলে ইরিন। লজ্জা পায় তোহা। এভাবে মুখের ওপর কেউ বড় হওয়ার কথা বলে।
“ছাই হয়েছে। এখনো তো নাক দিয়ে পানি পড়ে। সে আবার বড় হয়ছে।
ইমন পিঞ্চ মেরে বলে। তোহা রেগে গাল ফুলায়। ইচ্ছে করছে বলতে আমার নাক দিয়ে পানি পড়ে না তানহার পরে। কিন্তু বলতেও লজ্জা লাগছে। তাছাড়া এরকম মানুষের সাথে বেশি কথা না বাড়ানোই ভালো।
” ইমন তুই এখান থেকে যা।
নাহলে মার খাবি আমার হাতে।
ইরিন চোখ পাকিয়ে বলে।
“থাকি। আর কথা বলবো না।
ইমন বাবুকে চুমু খেয়ে বলে।
” আপু আমি কোলে নেই?
তোহার বাবুকে কোলে নেওয়ার জন্য হাত উসখুস করছে। ইরিন আলতো হাসে। ইমনকে বলে তোহার কোলে দিতে।
ইমন উঠে এসে তোহার পাশে বসে। বুক টিপটিপ করছে তোহার। আগে ইমন আশেপাশে আসলে ভালো লাগতো। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করতো। নানা বাহানায় আশেপাশে থাকতে ইচ্ছে করতো।
কিন্তু এখন গা গুলিয়ে উঠতে। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলতে এভাবে চিপে বসার কি হলো? ফাঁকে যান। কিন্তু ইরিনের জন্য বলতে পারছে না।
“হাত পাতো
ইমন কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে। তোহা চমকে ওঠে। তাকায় না ইমনের দিকে। চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
দুই হাত মেলে দিতেই ইমন বাবুকে তোহার কোলে দেয়।
বাবুর মুখটা দেখে প্রাণ জুরিয়ে যায়। মুখ আপনাআপনি বেরিয়ে আসে মাশাআল্লাহ।
তোহা যখন বাবুকে দেখায় ব্যস্ত তখন ইমন তোহার কোমরে হাত রাখে। লাফিয়ে ওঠে তোহা।
ইরিন চমকে ওঠে। তোহা তারাহুরো করে বাবুকে ইমনের কোলে দিয়ে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। হতদম্ভ হয়ে তাকিয়ে থাকে ইরিন আর ইমন।
🥀🥀
সূচক উপুড় হয়ে শুয়ে আছে৷ কানে হেডফোন। তানহা পা টিপে টিপে সূচকের পাশাল গিয়ে দাঁড়ায়। পা টিপে দেওয়ার কথা ছিলো। ইমন হয়ত ভুলে গেছে। কিন্তু তানহা ভোলে নি। ভুলবেও না। সূচককে ছোঁয়ার এতটুকু সুযোগও হাত ছাড়া করবে না।
” ও গো শুনছো
তানহা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলে।
সূচক লাফ দিয়ে ওঠে। তানহা চমকে ওঠে। ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায়। শুনলো না কি?
সূচক কান থেকে হেডফোন খুলে তানহার দিকে তাকায়।
চলবে