#অনুভুতির_মায়ার_খেলা_(৯)
#সায়ারা_জাহান_লেখায়।
সুখের দিন বেশিদিন টিকে না এটা বারবার প্রমানিত হয়ে যায়। সেদিন শপিং মল থেকে সায়ারা গায়েব হয়ে যায়। সায়ান সারাটা সময় সায়ারা কে খুঁজে কাটিয়ে দেয় কিন্তু কোনো খোঁজ পায় না। আজ ৪র্থ দিনে পা দিলো সায়ারার কোনো খবর নাই। সায়ানের বাবা- মা সায়ান আয়ানা একদম চুপ চাপ হয়ে গেছে সায়ান তো এতোটাই চুপচাপ হয়ে গেছে যে বুঝাই যায় না এটা সায়ান। থানায় জিডি করা হইছে পুলিশ রা অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে সায়ারার খোঁজ পাচ্ছে না। সায়ান সিয়াম আর ওর মায়ের কাছেও গিয়েছে কিন্তু কোনো খোঁজ জানেনা উল্টো সায়ান কে ব্লেম করছে সায়ারার গায়েব হয়ে যাওয়ার পিছে। সায়ান ঠিক করলো আজ আবারো যাবে সিয়াম দের বাসায় তবে চুপিচুপি। যেই ভাবা সেই কাজ সায়ান সিয়াম দের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।
– সিয়াম সায়ারা কোথায় আছে আমি জানি এটা তোর কাজ।
– আম্মু কি সব বলছো তুমি? আজব আমার কাছে কিভাবে আসবে সায়ারা।
– আমি তোকে জন্ম দিয়েছি সিয়াম আমার সাথে চালাকি করিস না। তুই তো চাস সায়ারা কে বিয়ে করতে তাই না আমি নিজে দিবো তোর সাথে ওর বিয়ে।
– কিন্তু আম্মু ওরে বিয়ে করলে এ খবর জানলে মামা-মামি আমার সাথে আয়ানার বিয়ে দিবে না। আর আমি আয়ানা কেও ছাড়তে পারবো না।
– কিসব আবোল তাবোল বকছিস তুই বাবা এগুলা কোন ধরনের কথা? সায়ারা কে ভালোবাসলে তুই আয়ানা কে ছাড়তে পারবি না কেন।
– কারণ সায়ারা আমার ছোট বেলার জিদ ভালোবাসা তাই ওকে আমার চাই অল্প দিনের জন্য হলেও। আয়ানা আমার আবেগ মা ওর প্রতি আমি দূরবল ও কে ছাড়াও আমার পক্ষে সম্ভব না।
– তাহলে সায়ারা কে যেখানে রেখেছিস ওখানেই ও থাকুক,তুই আর আমি গিয়ে তোদের বিয়ে দিয়ে দিবো। আয়ানা বা ভাইয়ের ফ্যামিলি যেনো না জানে আমি তাদের বুঝিয়ে মাফ চেয়ে আবার আয়ানার সাথে তোর বিয়ের কথা তুলবো।
– উফফ মা ইউ আর গ্রেট আই লাভ ইউ সো মাচ।
সিয়াম ওর মায়ের বুদ্ধিতে ইম্প্রেশ হয়ে গেছে, সে ভাবতেও পারে নাই তার মা এতো সহযে রাজি হয়ে যাবে। আর যাইহোক সে সায়ারা কে ছাড়তে পারবে না। ছোট বেলা থেকে সায়ারার উপর করা অ* ত্যা* চা* র তার অভ্যাসের পরিনত হয়েছে। সায়ারা তার রা* গ জি* দ আর সায়ারা কে তার চাই এক বারের জন্য হলেও।
– সায়ারা পাখি অনেক উড়েছিলে না তুমি সায়ান কে দেখে কি ভেবেছিলে সায়ান ফিরে এসেছে এখন স্ব তোমাকে বাচাবে। আমি সিয়াম বেচে থাকতে এসব কখোনোই হবে না। সায়ান তোকে কখোনোই পাবে না আর না খোঁজ পাবে তুই কোথায় আছিস।
সিয়াম এতোক্ষন মনে মনে দাঁড়িয়ে এসব কথা ভাবছিলো। সে জানে তার কি করতে হবে সে তার মা কে পুরোপুরি বিশ্বাস করে। সিয়ামের মা যখন সিয়াম কে একবার বলেছে তখন সে সায়ারা আর আয়ানা দুইজন কেই এনে দিবে তাকে।
– কি হয়ছে এভাবে দাঁড়িয়ে কি ভাবিস তুই সিয়াম?
– আব কিছু না আম্মু আমার ক্ষুদা লাগছে খাবারের ব্যাবস্থা করো। আমি রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসি।
সিয়াম চলে যাওয়ার পড়ে সিয়ামের মায়ের হাসি খুশি মুখ এবার গম্ভির হয়ে গেলো, ছেলের সামনে যতোই নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুক না কেন সে তো সত্যি আশ্চর্য হয়ে গেছে ছেলের কাজে। কিন্তু একবার যখন সে ছেলেকে কথা দিয়েছে তার তো সে কথা রাখতেই হবে৷ আর এমনিই সায়ারাকে তার প্রয়োজন আছে তা তো এতোগুলা বছর সায়ারা কে নিজের কাছে আটকে রেখেছে ।
সায়ারার জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে এক রুমে আবিষ্কার করলো। মাথা দু হাত দিয়ে চেপে রেখে উঠে বসলো, সায়ারা কে দেখে মনে হচ্ছে সে নে* শা করেছে। কেমন লাল হয়ে আছে তার আঁখি যুগল। মেয়েটার মুখ শুখিয়ে আছে। সায়ারা কে দেখে মনে হচ্ছে সে নিজের মধ্যেই নাই। সামনে তাকিয়ে দেখে টেবিলের উপর পানির জগ আর গ্লাস রাখে, সে কোনোমতে উঠে টলতে টলতে সেখানে গিয়ে বাম হাত দিয়ে পানি ঢেলে খেয়ে নিলো।
– আয়ানা আপু, মামিমা, সায়ান ভাইয়া তোমরা কোথায় আমাকে এখানে আটকে রেখেছো কেনো?
সায়ারার কথাগুলো কেমন অস্পষ্ট হয়ে ভেষে আসছে গলার স্বর কেমন অদ্ভুদ শোনা যাচ্ছে। নিজেই নিজের উপর বিরক্ত হচ্ছে সায়ারা এমন কেন লাগছে তার। ঘুমে চোখে ভে* ঙ্গে আসছে সে আবার ঢু* প করে ফ্লোরে বসে পড়লো দাঁড়িয়ে থাকা পসিবল হচ্ছে না তার। সে ধীরে ধীরে বেডের মধ্যে গিয়ে আবারো শুয়ে পড়লো।
সায়ান সিয়াম দের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে বসে রইলো যখন সিয়াম বা ওর মা কোথাও যাওয়ার জন্য বের হবে সে তাদের ফলো করবে। সায়ানের পুরা বিশ্বাস সে যদি ওদের ফলো করে তাহলে সে সায়ারার কোনো না কোনো খবর পাবে। সায়ারা কেমন আছে কি করছে এসব ভেবেই সায়ানের চোখ থেকে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। এতোগুলো দিনের পর সে সায়ারা কে পেয়েছিলো, কতো বছরের অপেক্ষা খোঁজ আজ আবার পেয়েও সে তার পিচ্চি সায়ু কে হারালো এ কষ্ট সে কিভাবে সইবে। তার পিচ্চির যদি কোনো ক্ষ* তি করে দেয় সিয়াম বা ফুপি তাহলে সায়ান সে কি নিয়ে বাচবে। সায়ান যে তার ছোট্ট পিচ্চি সায়ুকে ভালোবাসে। সে তো তার সায়ু কে জানাতেও পারলো না কতোটা ভালোবাসে সায়ুকে। এসবের মধ্যে সায়ানের ফোন বাজতে শুরু করলো, সায়ান ফোন রিসিভ করে কানে তুললো।
– ভাইয়া তুমি কোথায় আছো সায়ুর কোনো খোঁজ পেয়েছো?
– না রে আয়ু আমি সায়ুর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমার পিচ্চি টা কোথায় হারিয়ে গেলো রে বোন আমার তো এসব আর ভাল্লাগছে না।
– ভাইয়া সন্ধ্যা হয়ে গেছে বাসায় আসো আবার কাল খুজতে বের হইয়ো.।
– না রে আয়ু আমি আজ আসবো না আমার জন্য চিন্তা করিস না আমি সায়ু কে খোঁজে এরপর ফিরবো।
সায়ান ওখানে বসেই অপেক্ষা করতে লাগলো যে কখন তারা বের হবে আর সে তার সায়ুর খোঁজ পাবে। সায়ানের পূর্ন বিশ্বাস সায়ুর খোজ সিয়াম আর ফুপি জানে। অইদিকে সিয়াম ওর মা কে বকে পিছের গেইট দিয়ে বের হয়ে গেছে সায়ারা কাছে যাবে। ওখানে গিয়ে সায়ারা কে যদি রাজি না করাতে পারে তাহলে সে তার মা কে কল দিলে তার মা তখন যেনো চলে যায়।সিয়াম সায়ারা কে যেখানে আটকে রেখেছে অই বদ্ধ রুমে প্রবেশ করে। নিষ্পাপ ঘুমন্ত সায়ারার মুখের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে সিয়াম। কি সুন্দর মায়াবি দেখতে সায়ারা,সায়ারার এই শান্ত স্বভাবের কারনেই তার প্রতি অনুভুতি তৈরি হয়েছে সিয়ামের। সিয়ামের হাজারো মা* ই* র অ* ত্যা* চা* র যখন চুপচাপ সহ্য করেও কোনো কথা বি* চা* র দিতো না তখন থেকেই সায়ারা কে সে আরো ক* ষ্ট দিতো। সিয়ামের এসব অভ্যাসে পরিনত হয়ে গিয়েছিলো তাই ওর মা ও কে সায়ারা থেকে দূরে রাখতে বিদেশে পাঠিয়ে দেন পড়া লেখার জন্য। তারপরও সিয়াম ঠিক করে রেখেছে যে সে সায়ারা কেই বিয়ে করবে আর যেভাবেই হোক সিয়ামের সাথেই তার বা কি জিবন কাটাতে হবে। ছোট বেলায় সায়ারা সারাদিন সায়ান ভাই সায়ান ভাই করতো সব আবদার খাওয়া দাওয়া সব কিছুতেই সায়ারার কাছে সায়ান ভাই আগে। এসব সিয়ামের স* হ্য হতো না সিয়াম আর সায়ান সমবয়সী তবুও সায়ান বেশি ভালোবাসা পেতো৷
সায়ারাকে পানি মেরব ঘুম থেকে টেনে তুললো সিয়াম। অনেকটা সময় যাওয়ার পড়ে সিয়ারা স্বাভাবিক হলো তার ধীরে ধীরে সব কথা মনে পড়তে লাগলো৷ এখানে আনার পড়ে সিয়াম সায়ারা কে ড্রা* গে* র উপর রেখেছে যা তে সায়ারা কিছু করতে না পারে৷
– আমাকে কেনো এভাবে তু* লে আনলেন সিয়াম ভাই আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?
-তুই ই তো আমার সবথেকে বড় ক্ষতি টাই করেছিস। যাইহোক এতো কথার সময় নাই আজ আমাদের বিয়ে হবে এটা জানাতে এসেছি।
সায়ারা পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো সিয়াম এসব কি বলছে বিয়ে নিশ্চিত তার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
– আমার সাথে মজা করা ছাড়ুন আর আমাকে যেতে দিন সায়ান ভাই হয়তো আমাকে খুজছে।
..চলবে.?
