#অনুভুতির_মায়ার_খেলা_(৮)
#সায়ারা_জাহান_লেখায়।
আমি চুপচাপ দুই পা ভাজ করে সুন্দর মতো বিছানায় বসে আছি। সায়ান ভাইয়া নিজের সব দরকারি মেডিছিন গুলো বের করছে। গরম পানি যে আনতে বললো পোড়া হাতে গরম পানি লাগলে কি বেশি জ্বালা করবে না।
দূর আমি ডাক্তার না কি ভাইয়া ডাক্তাত যে আমি এতো বেশি বেশি ভাবি।
নিজেই নিজের ভাবনা চিন্তা নিয়ে একা একা হেসে যাচ্ছি। তখন ভাইয়ার কথা কানে আসলো।
– একা একা শুধু পাগলে রা হাসে উইদাউট এনি রিজন।
– কি আপনি আমাকে ইনডিরেক্টলি পাগল বললেন?
– আমার কি আর বলা লাগলো তুই তো নিজেই স্বীকার করলি।
আমি ভাবতেছি আমি স্বীকার করলাম কখন,আমি তো প্রশ্ন করছি আর তাকে ভাইয় ঘুরিয়ে আবারো আমাকে বোকা বানিয়ে দিলো আল্লাহ।
– হইছে তোদের আর ঝগড়া না করে এইবার মেয়েটার হাত তো ড্রেসিং করিয়ে দিবি।
মামির কথায় হাতের দিকে নজর গেলো উনি হাত ধরে রেখেছেন। মামি বিছানার উপর পানি রাখতেই উনি গরম আর ঠান্ডা পানি মিক্স করলেন। এবার বলে আঙ্গুল লাগিয়ে চেক দিলেন তাপমাত্রা। এরপর আনার হাত অই বলের মধ্যে ভেজালেন। হাল্কা কুসুম গরম পানির মধ্যে হাত ভিজিয়ে রেখে উনি যত্নসহকারে আমার হাতের ব্যান্ডেজ খুলতে লাগলেন। ব্যান্ডেজ খুলার পড়ে আমি হাতের দিকে তাকালাম আমার। এতো সুন্দর আমার হাত ছিলো আজ তার কি অবস্থা। কতোটা ভ★য়া★ন★ক লাগছে দেখতে যা দেখে সায়ারা নিজেকে আর কান্ট্রোল করতে পারলো না ফুপিয়ে কেঁদে উঠে৷ সায়ারার কান্না দেখে সায়ান ব্যাস্ত হয়ে যায়।
– কি হয়েছে পিচ্চি ব্যাথা পেয়েছিস,কোথায় পেয়েছিস ব্যাথা? আম সরি আমি দেখি নাই।
– আমি ব্যাথা পাই নাই তো সায়ান ভাইয়া।
সায়ান ভাইয়ার অস্থিরতা দেখে আমি কান্নারত অবস্থায়ই উনাকে বললাম। আমি ব্যাথা পাইনাই এটা শুনার পরে মামিমা এগিয়ে এসে বললেন।
– তাহলে কান্না করছিলি কেনো?
– আমার কতো সুন্দর হাত ছিলো মামিকা। আমার এখন হাত দেখে ভয় লাগছে কতোটা পচা দেখা যাচ্ছে আমার হাত। এতো বি★শ্রি হাত নিয়ে আমি কিভাবে থাকবো?
– আরে বোকা হাতের ক্ষ★ত শুকিয়ে গেলে আর এমন মনে হবে না তো।
মামিমা আমাকে শান্তনা দিচ্ছে আমার কান্না দেখে আমি বুঝতে পারি। উনার শান্তনায় কি হবে আমি তো জানি আমার হাত শুকালেও এই দাগ জাবেনা।
– সায়ান ভাইয়া আমার এই হাতের দাগ গুলো এইভাবেই থাকবে?
আমি সায়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম। উনি আমার দিকে অসহায় এক চাহনি দিলো যার অর্থ বুঝতে আমি ব্যার্থ।
– শোনো পিচ্চি যদি তোর হাতের এই দাগ যদি এভাবেও না যায় তাহলে আমি সার্জারি করাবো ঠিক আছে তাহলে এই দাগ আর থাকবে না।
– সত্যি তাহলে ঠিক আছে তুমি এখন তাড়াতাড়ি আমার হাত ড্রেসিং করিয়ে দাও দেখি। আমি আজকে জানো তোমাদের পুরো বাড়ি ঘুতে ঘুরে দেখবো।
আমাকে আবার খুশি দেখে মামিমা সস্তির নিশ্বাস ফেলে রুম ত্যাগ করলেন। সায়ান ভাই ও এবার নিজের কাজে মনযোগ হলেন। আমি শুধু সায়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি উনি কি কি করে তাই দেখে যাচ্ছি। একটা মানুষ কে এতোটা ভালো কেনো লাগবে। প্রথম হাসপাতালে দেখেই এক পলকের জন্য সে ভাবছিলো তার সায়ান ভাই ও কি এমন দেখতে হয়েছে। আবার পড়ে ভাবলো জা এটা সায়ান ভাই না। আচ্ছা সায়ান ভাই পরিচয় না দিলে সে কিভাবে চিনতো যে এটা সায়ান কি না। কিভাবেই চিনবে সেই কোন ছোটবেলায় দেখছে এখন তো স্পষ্ট চেহারাও মনে নাই।
– আমাকে এইভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিস কেন, কি দেখছিলি এইভাবে?
– আপনি এতো সুন্দর কেন সায়ান ভাই? কক ই না তো কিছু বলি নাই আর আমি কখন আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বিরবির করে এইটুকু বলে পড়ে বললাম,
– আচ্ছা মানলাম তাকাস নাই এতোক্ষন মনোযোগ দিয়ে সেই তো আমার কথা ভাবলি তুই।
– মোটেও না আমি আপনার কথা একদম ভাবি নাই বুঝলেন। আচ্ছা আমাকে যে নিয়ে আসলেন খালা আসতে দিলো কিভাবে? উনি কোনো ঝামেলা করেন নাই?
– কি ভাবে নিয়ে এসেছি তা তোর মতো পিচ্চুকে শুনতে হবে না। তবে ঝামেলা করার চেষ্টা অকরেছিলো আমার জন্য পারেনাই। আসার সময় আমি আমাদের বাড়ির এড্রেস দিয়ে আসি নাই। ফুপি যাতে আমাদের বাড়ির খোঁজ না পায়ে। তুই কিন্তু সাবধানে থাকবি আর শোন চল ড্রয়িংরুমে।
সায়ান ভাইয়া আগে আগে যাচ্ছে আমি উনার পিছে পিছে যাচ্ছি। লামিশা আপু এখোনো ড্রয়িংরুমে বসে আছে দেখলাম।
– আয়ানা নিযে রেডি হ আর সাথে সায়ুরেও করা তাড়াতাড়ি আমরা আজ বের হবো ঘুরবো আর সাথে সায়ুর কিছু জিনিস ও কেনাকাটা করা হবে।
– সত্যি ভাইয়া ঘুরতে নিয়ে যাবে আমাদের ইয়ে অনেক মজা হবে।
– আমিও তোমাদের সাথে যাবো সায়ান আমাকেও নিবে।
সায়ান ভাইয়ের কথায় আয়ানা আপু অনেক খুশি হয়েছিলো যে আমাদের ঘুরতে নিবে। তখন আবার লামিসা আপু নিজ থেকে যাইতে চাইছে একটা মানুষ কে আর কতো বলবে তাই কেউ কিছু বলে নাই যা ক আমাদের সাথে। আয়ানা আপু আর আমি আয়ানা আপুর রুমে চলে গেলাম। আয়ানা আপু উনার ওয়ারড্রব থেকে একটি লেগিংস একটা ক্রপ টপস আর হিজাব বের করলো। সেম অন্য কালারের আরো একটা সেইট বের করে নিয়ে আসলো। এরপর আমাকে চেইঞ্জড করতে সাহায্য করলো আমার প্রচুর লজ্জা লাগছিলো বাট হাতের জন্য আর কিছু করার ছিলো না। আমার চুল খোপা করে দিলো৷ গালে ক্রিম লাগিয়ে ঠোটে লিপজল লাগিগে দিয়ে হিজাব বেধে দিলো আমার৷ এরপর আয়ানা আপু নিজে রেডি হয়ে নিলো। টপ্স টা আমার একটু ঢিলা ঢিলা লাগছে কিন্তু এখন আর আমার কিছু করার নাই। এই বাসায় আমার কোনো জামা নাই হ্যাঁ অই বাসায় ও আমার তেমন ভালো কোনো জামা নাই। খালা আমাকে ২ টা করে থ্রিপিস কিনে দিতো তাও আগের জামা একদম পুরানো হয়ে ছিড়ে গেলে এরপর নতুন কিনে দিতো। খালার যে টাকা পয়সা নাই এমন না খালার তো অনেক টাকা আছে। খালা তার ফ্রেন্ড দিয়ে কতো পার্টি করে তবে এগুলা সিয়াম ভাই দেশে না থাকলে। আমি অবাক হতাম সিয়াম ভাই থকলে খালামনি একদন চেইঞ্জ থাকতো। আর সিয়াম ভাই না থাকলে ড্রিংক করতো ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়তো একদন দুটো মানুষ কে আলাদা করা খুব কঠিন কাজ। আমি মা★র খাবার ভয়ে কখোনো কিছু বলতাম না তার যা ইচ্ছা করুক আমার কি। আমাদের রেডি হওয়ার পড় আমি আয়ানা আপু মামা মামি থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির কাছে যাচ্ছি সায়ান ভাইয়া না কি ওখানেই আমাদের জন্য ওয়েট করছে। লামিসা আপু ও সেখাবে গেছে। ওখানে গিয়ে দেখি সায়ান ভাই গাড়ির সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে একদম স্টাইল করে৷ ব্লু সার্ট কালো জিন্স চোখে কালো চশমা মানুষ টা কে দেখে আবারো ক্রাস খেলাম। ড্রাভিং সিটের পাশের সিটে আগেই লামিসা আপু বসে আছে৷ লামিসা আপু ওখানের বসার কারণ আমার যতোদূর মনে হচ্ছে ভাইয়ার সাথে বসতে চায়৷ দরজার এক সাইড খুলে দিয়ে সায়ান ভাই আয়ানা আপুকে বসতে বললো৷ আয়ানা আপু ভাইয়ের কথামতো বসে পড়লো এবার আমাকে নিয়ে সায়ান ভাই আরেক সাইডে গেলো। অই সাইডের দরজা খুলে মাঝের সিটে সে বসে পড়লো আর আমি হা করে তাকিতে আছি। উনি কি আজ ড্রাইভ করবেন না।
– এভাবে বলদের মতো হা করে না তাকিয়ে থেকে উঠে পড় তা-নাহলে তোকে এখানে ফেলেই আমি চলে যাবো।
– জি ব্যাপার সায়ান ওদের মধ্যে বসলা কেন আজ কি তুমি ড্রাইভ করবা না?
– আজ আমার ভালো লাগছে না যেহেতু রেষ্টে আছি আজ ড্রাইভ ড্রাইভার আংকেল করবেন।
সায়ান ভাইয়ের কথায় লামিসা আপুর চেহারা একদম চুপসে গেছে। মুখ কালো করে বসে রইলো৷ আমি গাড়িতে ওঠার পড়ে দেখি এই বিষয়ে দুই-ভাই বোন মুচকি মুচকি হাসছে। কি যে একটা মজা পাইছে তারা তাদের দেখে বুঝা যাচ্ছে৷ এদের দেখে এবার আমিও একটু হাসলাম। কতোদিন পড়ে নিজের কাছে শান্তি লাগছ৩ বলতে পারবো না। ড্রাইভার আংকেল এসে গাড়ি চালানো শুরু করলো। গাড়ি নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওবা দিয়ে দিয়েছে। আহালে বেচারি লামিসা আপু ড্রাইভারের পাশে বসে কেমব করছে।
চলবে.?