#অনুভুতির_মায়ার_খেলা_৬
#সায়ারা_জাহান_লেখায়।
থম মেরে বসে আছি আমি মামিদের ড্রয়িংরুমে আমাকে ঘিরে বসে আছে মামা, মামি আর কিছু মানুষ যাদের আমি চিনিনা। আমার মধ্যের আ°°ত°°ং°°ক এখোনো কাটে নাই চুপচাপ বসে আছি। সায়ান ভাই আর আয়ানা আপু নিজেদের রুমে চলে গেছে। আয়ানা আপু বিদেশ থেকে আসলেন ভালোভাবে রেষ্ট নেওয়ার আগে আমাকে নিয়ে ছুটলেন হসপিটাল আর আজ সেখান থেকে এসে আমার এই অবস্থা৷ আপু ক্লান্ত হবে এটা অনেক স্বাভাবিক বিষয়। খুদা লেগেছে আমার পেটুর মধ্যে ব্যাথা করছে সেই হসপিটালে থাকাকালীন খেয়েছিলাম।
– মম তুমি একটু সায়ারা কে খাবার খাইয়ে দেও পড়ে আয়ানা মেডিছিন খাইয়ে দিবে। সায়ারা’র হাতের অবস্থা তো জানোই এই হাতে নিযে খেতে পারবে না।
আমার যে খুদা লাগছে উনি কিভাবে জানলেন। আমি মুখ ফুটে বলার আগে উনি উপর থেকে মামিকে ডেকে কথা গুলো বললেন। আমার ওষ্ঠদ্বয়ে হাসির রেখা ফুটে উঠলো তখন মামির কথায় আমি ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম।
– কি ব্যাপার ব্যান্ডেজ এরকম লালা কেন হাতে কি ব্যাথা পেয়েছিস তুই সায়ু?
– হ্যাঁ আসলে মামিমা হাতে একটু ব্যাথা পেয়েছিলাম তখন মেবি এরকম হয়েছে।
– সায়ান তাড়াতাড়ি তোর ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আয় তো মেয়েটা হাতে আবার ব্যাথা পেলো তোরা দেখিস নাই?
মামির ডাকে সায়ান ভাই নিজেই তারাহুরো করে চলে আসলেন। সোফায় আমার পাশে বসে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।
– আম্মু তুমি ওর জন্য খাবার আনো আমি দেখছি কি হইছে।
সায়ান ভাইয়ের কথামতো মামি রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো। আমি এবার মাথা নিচু করে বসে রইলাম।
– এই ব্যাথা কখন পেয়েছিস আমাকে আগে কেনো দেখাস নাই? ওড়না দিয়ে এইজন্য হাত ঢেকে রেখেছিলি?
– আসলে সায়ান ভাইয়া তখন সিয়াম ভাইয়া এই হাতে অনেক জোরে চেপে ধরেছিলো তাই এমন হয়েছে। আর আপনি আর আয়ানা আপু রেগে ছিলেন আমিও ভয়ে ছিলাম তাই বলা হয় নাই।
উনি আমার কথা শুনলো কি না জানিনা। সে এবার আমার হাত থেকে ব্যান্ডেজ খোলা আরম্ভ করলো। ব্যান্ডেজ খোলার সময় হাতের চামড়ার সাথে টান খাচ্ছে আর এতে আমি প্রচুর ব্যাথা পাচ্ছি। চোখ বন্ধ করে সোফা খামছে ধরে আছি।
– নিজের কষ্টের কথা আগে বলতে হয় পরিস্থিতি পড়েও সামলানো যায় নিজে ঠিক থাকলে। আগে নিজের যত্ন নিজের নিতে হয়। নিজের ভালো অন্যকেউ ভাববে না তা নিজেকেই ভাবতে হবে। নিজে সুস্থ থাকলে খুব ভালোভাবে অন্যের সাথে ল_.ড়া_.ই করা যায়। প্রথম নিজের সমস্যার কথা নিজেকে খুলে বলতে হয় কারণ সামনের মানুষ কখোনোই আমরা না বলা অব্দি আমাদের বুঝবে না।
সায়ান ভাইয়ের প্রতিটা কথা সত্যি উনি কি সুন্দর ভাবে আমাকে বুঝালেন। আমি মুগ্ধ হয়ে উনার প্রতিটি কথা শুনতে ব্যাস্ত ছিলাম যে কখন উনি আমার পুনরায় ব্যান্ডেজ করে দিলেন আমি বুঝতেই পারলাম না।
– আপনি আমাকে কিভাবে ভুলে গেলেন সায়ান ভাই? আমাকে দেওয়া কথা ও কি আপনার মনে নাই?
– অযথা কথা বলা আমার পছন্দ নয় সায়ারা। আমার কথা না ভেবে নিজের কথা ভাব তুই। আমি কিছু বললে কষ্ট তুই পাবি নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখ। প্রতিবাদ করা শিখে নে সবসময় আমি বা আয়ানা কেউ তোর পাশে থাকবে না আর না কেউ ছিলো। আগে এসবের প্রতিবাদ করলে না ফুপির সাহস হতো তোকে অ*ত্যা*চা*র করার আর না আজ সিয়াম সাহস পেতো।
সায়ান ভাইয়ের প্রতিটি কথার মধ্যে রাগের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। রাগের মাথায় বললেও প্রতিটি কথা সত্যি। আমার অবস্থার জন্য আমি নিজে দাই তা বুঝতে পারছি। উনি নিজের রুমে চলে গেলেন। মামি আমাকে খাইয়ে দিয়ে আয়ানা আপুর রুমে দিয়ে আসলেন। আপুকে অনেক টায়ার্ড দেখাচ্ছে উনি আমাকে আমার মেডিছিন খাইয়ে সুতে বলে লাইট অফ করে দিলেন। আপু ক্লান্ত আপুর ঘুমের প্রয়োজন তাই আমি জালাতে চাচ্ছি না। তখন অই বাড়িতে খালার সাথে অনেক যু*দ্ধের পড়ে আমাকে নিয়ে আসতে সফল হয়েছে সায়ান ভাই। সায়ান ভাই সিয়াম কে পুলিশের হাতে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু খালার অনুরোধে একটা সুযোগ দিতে রাজি হলেন। আর শর্ত দিলেন আজ থেকে আমি আমার মামা আর মামির সাথে থাকবো। সায়ান ভাই আমাকে এড়িয়ে চলছে আমি জানি। আচ্ছা উনার কি সত্যি আমাকে দেওয়া কোনো কথা মনে নাই তার। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
অন্যদিকে,, ব্যালকনিতে বসে কফি খাচ্ছে আর রাস্তায় গাড়ির যাওয়া আসা দেখে যাচ্ছে। আজ সে প্রচুর ক্লান্ত সারাদিনে অনেক ক্লান্ত থাকা আর না খেয়ে থাকায় খারাপ লেগেছিলো। ডিউটি শেষ করে যখন সায়ান আয়ানা আর আর সায়ারা কে তার সাথে নেওয়ার জন্য সিয়ামদের বাসায় গেলো,তখন কাজের মেয়েটি দরজা খুললে সে সোজা উপরে আয়ানার কাছে যায়। আয়ানার মুখে সব শুনে আর দেড়ি না করব দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করে সফল হন। সায়ানের বুক তখন কাপছিলো সায়ারার চিন্তায়। সিয়াম কে যখন দেখলো সায়ারার সাথে বাজে ব্যাবহার করছে তখন তার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। তবুও সব ঠান্ডা মাথায় হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করলো। সায়ারা কে সব কিছু থেকে বাচানোর দায়িত্ব সায়ানের। সায়ারার মা কে কথা দিয়েছিলো সে সায়ারা সব খেয়াল রাখবে। ছোট বেলার কথা মনে আসলো সায়ানের।
অতীত—
সায়ারা তখন একটু একটু করে হাটতে শিখছে সায়ানের বয়স তখন ১০ বছর। পায়ে নুপুর হাতে চুড়ি মাথার চুল ছোট করে ঝুটি করা একটু জিবন্ত পুতুল হেটে বেড়াতো সবার সামনে। সায়ারা ছিলো সায়নের কাছে পুতুলের মতো। সায়ান শুধু বলতো এই পুতুল একার আমার আর আমি একাই খেলবো এই পুতুলের সাথে। ছোট বেলায় সায়ারাকে কারো সাথে খেলতে দিতো না এই নিয়ে সিয়ামের সাথে সায়ানের প্রচুর ঝামেলা হতো৷ সিয়াম তখন থেকে সায়ান কে নিজের শ-ত্রু ভাবতো। বাড়ির সবাউ তখন হাসতো বাচ্চাদের এমন কাজে। আয়ানার তখন ৬ বছর আর সায়ারার ২, সায়ারা অস্পষ্ট কথা বলতো তখন সব থেকে বেশি বলতো,আপাপা মানে বাবাকে ডাকতো।
বর্তমান।—
ফোন বেজে ওঠায় ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে ফোন রিসিভ করে সায়ান।
ওপর পাশের লোকের সাথে কথা বলছে আর হাসছে। ১২ টা মতো বাজে এমন সময় এতো কথা তাও সায়ানের মতো গম্ভির মানু বলতে পারে।
– আচ্ছা দোস্ত আসবি কবে তুই আমি তোকে অনেক মিস করতেছি।
– আসবো আসবো এসে সবাইকে সারপ্রাইজ দিবো আমি।
– হয়েছে তোনমার সারপ্রিজ চুপ থাকো।
– একটাই সমস্যা আমার সাথে লিনা আসতে চাইছে আমি এখন কি করবো।
– আসতে যেহেতু চাইছে তুই এক কাজ কর নিয়ে আয় ঘুরে যাক এখান থেকে।
– সময় হলে নিয়ে আসবো রাখি রে আমার ঘুম পাচ্ছে।
– আচ্ছক গুড নাইট।
সায়ানের ও ঘুমের প্রয়োজন আছে কাল সকাল থেকে আবারো ডিউটি আছে তার। অনেক কাজ বাকি সায়ানের সব কাজ শেষ করতে হবে যার জন্য এখন থেকে সব কাজের খবর রাখতে হবে। এই সায়ান যখন বলেছে তখম সব কিছু খুজে বের করবেই।
সায়ারা এপিঠ ওপিঠ করছে ঘুম রা কি তার চোখে হানা দিবে না আর৷ সায়ারা কে শুধু সায়ানের করা কাজ কষ্ট দিচ্ছে শুধু নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টায় মন খুলে হাসতেও পারে না সে৷ নিজের সুখ এখন থেকে সায়ারা নিজেই খুঁজে নিবে। কি করলে স্ব খুশি থাকে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।
কাল নতুন ভোরের সূচনা কার জিবন কি থেকে কি হয়ে যায় তা আল্লাহ জানেন।
চলবে..?