#অনুভুতির_মায়ার_খেলা_(৩)
#সায়ারা_জাহান_লেখায়।
সায়ারার চি’ৎ’ৎ’কা’রে আগুন্তুক যুবক ও আয়ানা কেবিনে এসে পড়ে৷ তারা এসে দেখে নার্স সায়ারার হাত নিচে নামাতে বলছে আর সায়ারা তার হাত উপরের দিকে তুলে বাচ্চাদের মতো কা’ন্না করতে আছে।
-ম্যাম আপনি এভাবে হাত সরিয়ে নিলে আমি হাত ড্রেসিং কিভাবে করবো?
-আমি খুব ব্যাথা পাচ্ছি আপু ছেড়ে দিন করা লাগবে না।
-ড্রেসিং না করলে তো আপু হাতে ইনফেকশন হয়ে যায়।
-নার্স আপনি উঠুন আমি করে দিচ্ছি।
-জ্বি স্যার।
পুরুষালী কন্ঠস্বর পেয়ে সায়ারা মাথা ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকায়, ওখানে ডাক্তার আর সাথে আয়ানা আপুকে দেখে। নার্স ডাক্তারের কথায় উঠে যায় আর সেই ডাক্তার গিয়ে বসে সায়ারার সামনে। সায়ারা ডাক্তার কে দেখে তাকিয়ে আছে কেমন যেনো চিনা চিনা লাগছে তার কাছে। সায়ারা ডাক্তার কে দেখে কিসব ভাবতে ব্যাস্ত তখন ডাক্তার সায়ারার হাত ধরে পরিষ্কার করে ফু দিয়ে দিয়ে হাত ড্রেসিং করছে। সায়ারা এতোটাই মগ্ন ডাক্তার কে দেখতে যে টের পেলোনা কখন ডাক্তার তার হাতের ড্রেসিং করে হাত ব্যান্ডেজ করে ফেলছে। আয়ানা যখন দেখলো সায়ারা খেয়াল সে দিকে নাই সে ডাক্তার কে দেখতে ব্যাস্ত তখন তার হাসি পেলো৷
– ডাক্তার অর্ক তোমার পেসেন্ট এরে দেখো খেয়াল তোমার দিকে। এতোক্ষন যে মেয়ে হাতে ব্যাথা পেয়ে ড্রেসিং করবে না বলে চিল্লাচিল্লি করছিলো আর এখন তার হাতে ড্রেসিং করানো শেষ সে টের পেলো না।
– আমার মতো হ্যান্ডসাম কোনো ছেলে যদি সামনে বসে থাকে তাহলে কি মেয়েদের ধ্যান থাকে অন্যদিকে।
– আব আমি আসলে আমি কেন আপনাকে দেখতে যাবো আজিব৷ আপনি যে সুন্দর এই মিথ্যা কথা আপনাকে কে বলেছে?
সায়ারা আয়ানা আর ডাক্তার অর্কের কথায় লজ্জা পেয়ে কি থেকে কি বললো খুজে পেলো না। আয়ানার মুখে ডাক্তারের কথায় তার মন খারাপ হয়ে গেলো সে কিছু সময়ের জন্য অর্কের মধ্যে সায়ান কে খুজছিলো৷।
– আয়ানা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার ট্রাই করতে না কর আমি দেখতে কেমন তা আমি ভালো করে জানি।
সত্যি বলতে অর্ক যখন সায়ারার হাত যত্ন সহকারে পরিষ্কার করছিলো তখন আয়ানা একটু হলেও সায়ানের কথা মনে পড়ে যায়। সায়ান ছাড়া সে তো আর কিছ্য ভাবতে পারে না।
– জানিস সায়ু পিচ্ছি মম ড্যাড বলছে তোকে আমার সাথে আমার বাসায় নিয়ে যেতে। তোর খবর শুনে তারা আসতে চেয়েছিলো আমি না করেছি কারণ বিকেলেই তো তোকে ছেড়ে দিবে এখান থেকে।
– মামা মামি বাংলাদেশে কবে আসছে আপু?
– আসছে অনেক দিন হয়েছে পিচ্চি কাওকে জানানো হয় নাই। আমি পড়ার জন্য শুধু এব্রোড থাকতাম আর শেষ হওয়ায় সিয়ামের সাথে আসলাম।
– তুমি যেয়ো আপু আমি যাবো না খালা আমাকে যেতে দিবেনা।
সায়ারা মন খারাপ করে আয়ানা কে কথাটি বললো৷ আয়ানা সব জেনেও সায়ারাকে কিছু বললো না।
– সময় বলে দিবে সায়ারা কে কোথায় থাকবে আর যাবে তুই এতো ভাবিস না সোনা।
– আপু মামারা এতোদিন ধরে দেশে আমার সাথে কেনো যোগাযোগ করলো না। আমি জানো কতো মিস করতাম তোমাদের৷ আচ্ছা মামা মামি কি একাই দেশে এসেছে আর তুমি আর কেউ আসে নাই?
– আমাদের তো ঠিকানা দেওয়া হয় নাই পিচ্চি তোরা কোথায় থাকতিস তাই পারি নাই। আর আম্মুরা আসছে কয়েকমাস হবে দেশে। আর কেউ বলতে কার কথা জিজ্ঞেস করলি?
আয়ানা ভালো করে জানে সায়ারা সায়ানের কথা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু আয়ানা বুঝতে দিলো না কিছু তাকে।
– আসলে আমি সায়ান ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করছি উনি কোথায়?
– সময় হলে সবার সাথে দেখা হবে পিচ্চি কথা না বলে চুপ চাপ থাক এখন।
– শুন তোর এই কাজিন কে কিছু খাইয়ে দে দেখোস না চিকনু চামেলি না খেয়ে কেমন হয়েছে জোরে বাতাস বইলে এরে খুজে পাওয়া যাবেনা।
– এই এই কি বললেন আপনি আমি চিকনি চামেলি? আপনার এতো সাহস আমাকে চিক্না বললেন।
সায়ারা অর্কের কথায় রেগে গিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে উত্তর দিলো। আয়ানা দূরে দাঁড়িয়ে এদের ঝ’গ’রা দেখতে লাগলো। তখন ই খালা কেবিনে ঢুকলেন। আমার দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো।
– আয়ানা মামনি তুই বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেষ্ট নে আমি থাকি এখন ওর সাথে।
– না ফুপি আমি ঠিক আছি বিকেলে ওকে ডিসচার্জ দিলেও প্রতিদিন ওকে এখানে এনে হাত ড্রেসিং করানো লাগবে।
– সমস্যা নাই মা আমি আছি এখানে ওর খেয়াল রাখতে পারবো তুই চিন্তা করিস না।
– অর্ক মিস আয়ানা আপনি একটু আমার কেবিনে আসুন তো কথা আছে।
– হ্যাঁ আসছি,ফুপি তুমি থাকো একটু এখানে আমি আসছি।
– যা আমি আছি এখানে।
আয়ানা অর্কের সাথে চলে যাওয়ার পড়ে খালা আমার দিকে এগিয়ে আসলো৷ আমি খালার দিকে তাকিয়ে আছি চুপচাপ৷ উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে ঠা’স করে আমার গালে থা’প্প,র লাগাই দিলো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি উনি আমাকে হসপিটালে এসেও মা’র’বে আমি বুঝতে পারি নাই। আমি উনার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি আমাকে কেনো মা’র’লো বুঝলাম না আমি। আমার ঝুটি করা চুল খালা মু’ঠ করে ধরলো।
– আয়ানা কে দেখে বেশি বে’রে গেছিস তাই না মা**। আনাদের নামে বদনাম করবি আর আমি চুপচাপ দেখবো।
– আমি কিছু বলি নাই খালা আমাকে ছেড়ে দিন আমি ব্যাথা পাচ্ছি।
– মনে রাখবি আয়ানা এসব ব্যাপারে যেনো বুঝতে না পারে তাহলে আমার থেকে খারাপ দ্বিতীয় কেউ হবে না।
– তুমি নিশ্চিন্ত থাকো আমি নিজের মুখে কখোনো বলবো না কিন্তু খালা সত্য কি কখোনো চাপা থাকে বলো?
– এতো বড় বড় কথা শুনতে আমি চাই না। আমি আয়ানার সাথে সিয়ামের বিয়েটা দিতে চাই এর মধ্যে যদি তুই বাধা দিতে আসিস তখন বুঝবি আমি কে।
সায়ারা কি উত্তর দিবে সিয়ামের মতো এমন মানুষের সাথে আয়ানার বিয়ে হলে যে আয়ানার জিবন টা শেষ হয়ে যাবে। আয়ানা আপুর মতো ভালো মানুষের সাথে এটা হতে দেওয়া যাবে না। বাহির থেকে এতোক্ষন সব আয়ানা আর অর্ক দেখছিলো আয়ানা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মানুষ কিভাবে এতো যঘন্য হয়। আয়ানা তার আগের ফুপির সাথে এই আগের ফুপির কোনো মিল পাচ্ছে না। অর্কের রাগে মাথা ফে’টে যাচ্ছে সে পারছে না এখন সব তছনছ করে দিবে। রাগ কমাতে পাশের ওয়ালে দু তিনটে ঘু’সি মেরে দিলো।
– কি করছিস ভাইয়া শান্ত হ ব্যাথা পাবি তো হাতে এইভাবে কেউ করেন
– আমি কি করবো আয়ু এভাবে অই মেয়েটা কে মা’র খেতে দেখবো তারা এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে এমন করছে কেন তার কি দোষ?
– শান্ত হ ঠান্ডা মাথায় ভেবে কিছু ডিসিশন নে ভাই রা’গ’লে ক্ষতি হবে শুধু।
আয়ান কেবিনে গিয়ে বললো ফুপিকে ডাক্তার তার চেম্বারে ডাকছে। আয়ানার কথা মতো ফুপি অর্কের কেবিনা আসলো।
– আসুন আসুন আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
– কি ব্যাপারে ডাকলেন বলেন।
– তা মিস সায়ারা’র হাত পু’ড়’লো কিভাবে?
– চা ঢালতে গিয়ে ভুলে নিজের হাতে ঢেলে ফেলছিলো।
– তা ভুলে ঢেলেছিলো না কি কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে ফেলছে।
অর্কের এমন কথায় সায়ারার খালা ঘামছে কি ভাবে কি বলবে কাজ তো তার ছেলে করেছে।
– কিসব আবোল তাবোল বকছেন কে করবে এসব নিজে থেকেই হয়েছে।
– সাট আপ মিসেস পারুল আমরা সায়ারার পিঠে হাতে নানা পো’ড়া মারের ছাপ স্পষ্ট দেখেছি যা দেখেই বোঝা যায় আপনারা কিভাবে অই মেয়েকে ট’র’চা’র করেন।
..চলবে.??
(আসসালামু আলাইকুম রাতে দিবো বলেও দেই নাই অসুস্থ হওয়ার কারণে ঘুমিয়ে গেছিলাম আমি দুঃখিত।)