অনুভুতির মায়ার খেলা পর্ব ২

0
666

#অনুভুতির_মায়ার_খেলা_২
#সায়ারা_জাহান_লেখায়

চোখ যখন আমার খুললো নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় দেখে খুব অবাক হলাম আমি। আমাকে তো হাসপাতালে আনার লোক খালা বা সিয়াম ভাই না। আমার জ্ঞান ফিরতে দেখে চট জলদি সিয়াম ভাই এগিয়ে আসলেন আমার দিকে। নিজের মুখের গাম্ভীর্য ধরে রেখে বললেন।

-আয়ানা অথবা কেউ জিজ্ঞেস করলে হাতের ক্ষত এর ব্যাপারে যাতে ভুলেও আমার নাম না আসে। মাথায় রাখবি আমার নাম নেওয়া মাত্র তোর কি হবে।
– চিন্তা কইরেন না আমি না বললেও একদিন সবাই জানবে উপরে আল্লাহ আছেনা।

আমি অবাক হয়ে যাই এতো অন্যায়ের পড়েও তার মধ্যে কোনো অনুশোচনার বিন্দুমাত্র চিহ্ন দেখা যাচ্ছেনা। তাই ওনার কথা আমার কাছে তাচ্ছিল্যপূর্ণ লাগলো৷ আমার উত্তর শুনে সে আবার দুড়ে চলে গেলো। আয়ানা আপুকে দেখলাম ওয়াসরুম থেকে বের হতে। আমার হাত ব্যান্ডেজ করা আরেক হাতে ক্যানেলারে স্যালাইন চলছে।

-সিয়াম তুমি এবার বাসায় যেতে পারো সায়ুকে আজ ছাড়বে না এখানে আমার থাকা লাগবে।
– আশ্চর্য আয়ানা কাল সারাদিন এতো জার্নি করে আসলে একফুটা রেষ্ট নিতে পারলা কই সারারাত এই মেয়েটার সেবাযত্ন করলা। আমার তো মনে হচ্ছে তুমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়বা তখন আমি মামাকে কি জবাব দিবো?
-আমার বাবা আমি বুঝে নিবো আমার অসুস্থ লাগছে না। মেয়েটা কে তো আর আমি একা ফেলে রাখতে পারি না।
-তোমার যা ইচ্ছা করো।

সিয়াম ভাই রাগ করে কেবিন থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। আয়ানা আপু দেখলাম যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাল্কা হাসলো। আজ প্রথম আমি আমার জন্য কাউকে ভাবতে দেখলাম। আমার জন্য চিন্তা করতে দেখলাম আনন্দে চোখের কোন বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। কেউ তো আমার যত্ন করতে পারে ভালোবাসতে পারে এই কথাটা বিশ্বাস হচ্ছে না। আমাকে কান্না কর‍তে দেখে আয়ানা আপু বিচলিত হয়ে পড়লেন।

-কি হয়েছে সায়ু পাখি তুমি কান্না করছো কেনো? কোথাও ব্যাথা পেয়েছো কষ্ট হচ্ছে ডাক্তার কে ডাকবো?
– না আপু অনেকদিন পড় কেউ এভাবে আমার যত্ন নিলো আমার কথা ভাবলো তা দেখে আমার কান্না চলে আসছে।
-দূর পাগলি এভাবে কান্না করেনা ফুপ্পি বা সিয়াম কেউ তোমার যত্ন নেয় না?
-আসলে বাদ দিন আপু তুমি টায়ার্ড না রেষ্ট নিলেই পারতে তো।
-সমস্যা নাই একজন আসতেছে আসলে আমি চলে যাবো সে থাকবে।

আয়ানা আপু হয়তো খালা আসলে চলে যাবেন তাই আর কথা বারালাম না চুপচাপ শুয়ে পড়লাম। আয়ানা আপু দেখি ফোন নিয়ে ফোন টিপছে। আমার একা একা বোরিং লাগছে খুব এভাবে শুয়ে থাকতে। অতীত থেকে ঘুড়ে আসা যাক।

—-অতীত—–

আমি সায়ারা জাহান আমি আমার মায়ের একমাত্র মেয়ে আমার বাবা ছোট বেলায় মারা গেছেন। আমার ততোটা মনে নাই তখন আমার ৫ কি ৬ বছর। আমরা খালাদের বাসায় থাকতাম। খালার এক ছেলে সিয়াম মাহমুদ। সায়ান হলো আমার মামাতো ভাই। সায়ান ভাই অনেক ছোট তখন মামা মামি বিদেশে চলে যায় আয়ানা আপু আর সায়ান ভাইয়ে কে নিয়ে। যাওয়ার আগে সায়ান ভাই আমাকে বলে গেছে তোর সব ভালো মন্দ আমার দায়িত্ব পিচ্চি অপেক্ষায় থাকিস আমি ফিরবো আমার বাচ্চা ছিলাম সায়ান ভাই বলতে পাগোল ছিলাম। আমার খেলা ধুলো আবদার সব সায়ান ভাইয়ের কাছেই ছিলো। তার জন্যই খালার এতো অপমান সহ্য করে পড়ে আছি আমি। তার চেহারা ও আমার ঠিক মনে নাই। হঠাৎ একদিন খবর এলো আমার মা আর খালু দুইজন না কি পালিয়ে গেছে। মায়ের আর খালুর কোনো খোঁজ খবর নাই এরপর সবাই ভাবলো খালুর সাথে মা পালিয়ে গেছে। কিছুদিন পড় খবর পেলো তারা বিয়ে করে অনেক দূরে চলে গেছেন। আমি জানিনা কোনো মা কিভাবে নিজের মেয়ে ও নিজের বড় বোনের জিবন কিভাবে নষ্ট করে। বাবাকে হারানোর পড় থেকে সিয়াম ভাই পালটে গেলো আমাকে সহ্যই হয় না তার। যেই খালার চোখের মনি ছিলাম আজ হলাম তার দুই চোখের বি’ষ। এতে কি আমার দোষ আমিও তো মা কে হারিয়েছি বাবাকে হারিয়েছি। খালা আমাকে প্রচুর মারে কাজ করায় তবুও আমি কিছু বলি না বললে বলবে মায়ের পাপের শা*স্তি আমি পাচ্ছি। আমার তো দাদি বাড়ির কেউ খোঁজ নেয় না কারণ বাবার সম্পত্তি তার ভাইয়েরা মিলে ভাগ করে নিয়েছে আমার খোঁজ নিলে যদি আমি সম্পত্তি দাবি করি। আমার সাথে এসব আজ নতুন হচ্ছেনা।

—-বর্তমান——-

অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে কখন আবার ঘুমিয়ে পড়লাম জানা নাই।কেবিনে একজন সুদর্শন লোক প্রবেশ করলো। লোকটির গায়ে এপ্রোন পড়া দেখেই বলবে এই হসপিটালের কোনো ডক্টর। আয়ানা লোকটি কে দেখে জরিয়ে ধরে। লোকটিও পরম যতনে আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

-আমাকে ক্ষমা করবা আমি যে কাজে আসছিলাম তাতে ব্যার্থ হয়েছি। আমি এই বাচ্চা ফুলকে রক্ষা করতে পারলাম না।ফুটফিটে মেয়েটার একি অবস্থা হয়েঁছে।

আয়ানা ধীরে ধীরে কথা বলছে আর কান্না করছে সে কিছুতেই মানতে পারছে না সায়ারার প্রতি হওয়া এই অন্যায়।

– ডোন্ট ক্রাই মাই লিটল প্রিন্সেস কান্না করে না একদম।তোর কোনো দোষ নাই স্টপ ব্লেমিং ইউরসেল্ফ ডিয়ার। যারা এর প্রকৃত দোষি শাস্তি তো তারা পাবে।

ডাক্তারের কন্ঠে অনেক রাগ প্রকাশ পাচ্ছে, রাগে তার শ্যামবর্ন মুখ শক্ত করে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে নিজের রাগ সে কান্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।

– কিভাবে বলো সায়ু কিছুতেই বলছে না ওর এই অবস্থার কথা হয়তো মুখ ফুটে বলবেও না। আমার না রাগ হয় এতো ভালো কেউ ওকে হইতে বলছে। ড্যাড আর মম ফুপ্পিকে কতো বলছে যে সায়ুকে আমাদের কাছে পাঠাই দিতে কিন্তু ফুপ্পি কিছুতেই রাজি হয় নাই। সায়ুর খোঁজ নিবো দেখে আমাদের সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো নিজেদের ঠিকানা পালটে নিলো। নিজেরা এই মেয়েটা কে স্বাভাবিক জিবন দিবেও না আর আমাদের ও দিতে দিবে না।

– চুপ কর এখন তুই ক্যান্টিনে গিয়ে খেয়ে আয় যা আমি আছি এখানে আর আমার ব্যাপারে এখুমি কাউকে কিছু বলবি না।
-আচ্ছা।

আয়ানা ছেলেটার কথায় চলে গেলো। ছেলেটা এবার আয়ানার বেডের দিকে এগিয়ে গেলো। পাশে রাখা টুল পেতে এক দৃষ্টিতে সায়ারা কে দেখতে লাগলো। সায়ারার হাতের আঙ্গুল থেকে কবজি অব্দি ব্যান্ডেজ করা। কতোটা কষ্ট মেয়েটা পেয়েছে তা তার মলিন চেহারার দিকে তাকালে বোঝা যায়। হলুদ ফর্সা মুখোশ্রি এখন ব্যাথায় শুখিয়ে গেছে। মেয়েটা এতো শুক্না কেন ওকে কি কেউ খাবার দেয়না। এবার ছেলেটা তার হাত দিতে সায়ারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। সায়ারা নড়ে পাশ ফিরে শুতেই সায়ার পিঠের উপরের এক অংশে পুড়ে কালছে হয়ে আছে৷ ফর্সা দেহে পোড়ার দাগ পুরো স্পষ্ট ফুটে আছে। রাগে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলো ছেলেটি। মানুষ এতো পাষান কিভাবে হয় এইটুকু মেয়ের গায়ে হাত তুলতে কি তাদের মায়া লাগে না। সাইড থেকে বার্ন ক্রিম নিয়ে ছেলেটি সায়ারা পিঠের পোড়া স্থানে লাগিয়ে দিলো এরমধ্যে স্যালাইন শেষ হওয়ায় তা ও খুলে নিলো। হাত ড্রেসিং করাতে হবে এখন নাহলে ইনফেকশন হয়ে যাবে। কেবিম থেকে বেরিয়ে নার্স ডেকে নিয়ে আসলো। নার্স এসে সায়ারাকে ডেকে তুললো। আগে যখম ড্রেসিং করানো হয়েছিলো তখন সায়ারা অজ্ঞান ছিলো এখন তো সে সজ্ঞানে এখন কি হবে। মেয়েটি যখন সায়ারার হাতের ব্যান্ডেজ খুলে পরিষ্কার করতে নিলো। সায়ারা ব্যাথায় জোরে চিৎকার দিলো৷ সায়ারার চিৎকারে ছেলেটি ও আয়ানা দৌড়ে চলে এলেন।

..চলবে..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here