চায়ের পাতিল থেকে গরম ফুটানো চা টা সিয়াম ভাই যখন আমার হাতের উপর ঢেলে দিলো আমার মনে হলো আমার চারোদিক অন্ধকার হয়ে আসছে৷ এতো জ্বালা করছে যখন আমি চিৎকার দিতে যাবো তখন সিয়াম ভাই আমার মুখ চেপে ধরলেন। ব্যাথায় আর ছোটার জন্য আমি ছটফট করছি তখন সেই হাতেই সিয়াম ভাই আমার হলুদের গুরা আর লবন ঢালতে লাগলেন। হাতে কি পরিমান জলছে আমি চিৎকার দিয়েও কান্না করতে পারতেছি না। এসব সহ্য করতে না পেরব যখন জ্ঞান হারালাম, তখন সিয়াম ভাই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে আমার রুমের মধ্যে রেখে টেবিল থেকে পানির জগ নিয়ে বাহির থেকে দরজা আটকে বেড়িয়ে গেলেন। যাতে আমার জ্ঞান আসলেও আমি হাত ধুতে না পারি।
-সিয়াম জগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছো আর সায়ু কে দেখছি না কেনো?
-পানি নেই আমার ঘরে আয়ানা আমি পানি আনতে যাচ্ছি আর দেখো তোমার সায়ু কোথায় চলে গেছে কে জানে।
আয়ানা সিয়ামের কথা বিশ্বাস করলো কি না তা তার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে না। সিয়াম আয়ানা কে তার সাথে নিয়ে তার মায়ের রুমে গেলো।
– ফুপ্পির রুমে কেনো যাচ্ছি আমরা সিয়াম?
-আম্মু বলছে যেতে গল্প শুনাবে আজ আমাদের।
সিয়াম আয়ানা কে নিয়ে ওর মায়ের ঘরে চলে গেলো যাতে সে সায়ারার খোঁজ না নিতে পারে। অইদিকে আয়ানার জ্ঞান ফিরলো হাতের মধ্যে কেউ আ*গু*ন লাগিয়ে দিয়েছে এমন জ্বালা করছে তার হাতে৷ রুমের মধ্যে পানি খুঁজতে লাগলো সে কিন্তু সে পেলো না কিভাবে পাবে সিয়াম যে পানি নিয়ে গেছে৷ সায়ারার রুমে এটাচড বাথরুম ও নাই অবশেষে সে তার কলেজের ব্যাগে মধ্যে বোতলে পানি পেলো। হাত ধুতে গিয়ে পানি লাগলেই আরো জ্বলে উঠছে। বাম হাতের উপর পিঠের চামড়া ঝলসে গেছে। নিজের এই করুন পরিস্থিতি দেখে আজ নিজের উপর কান্না পাচ্ছে তার। অনেক যন্ত্রনা হচ্ছে তার, ফুঁপিতে কাঁদতে কাঁদতে সে ওখানেই শুয়ে পড়লো আর সকালের কথা মনে করতে লাগলো সে ।।।
——–সকালে——————
মাছটা একটু পু’ড়ে যাওয়ায় খালা আমার চুলের মু*ঠি ধরে ঘুরিয়ে কড়াইয়ের উপর থেকে গরম খুচুন টা আমার পিঠে চেপে ধরে৷ পিঠ আমার জ্বলে যাচ্ছে কিছু বলতেও পারছি না বললেই উনার পাশবিক নি”র্যা’ত’ন আরো বেড়ে যাবে। কান্না মাখা কন্ঠে বলে সায়ারা।
-আমাকে ছেড়ে দিন খালা আমার ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবেনা।
ভুল কিভাবে হয় মন কই থাকে তোর হ্যাঁ? আজকে তোর ভাই আসবে জানিস না তুই ওর প্রিয় মাছ এটা কিভাবে পুঁড়ে?
খালার ঝাঝালো কন্ঠে কেঁপে উঠি আমি। আজ খালার একমাত্র ছেলে সিয়াম আসবে ঢাকা থেকে। এই লোক আসা মানেই আমার উপর দিগুণ অ’ত্যা’চা’র বাড়বে। সিয়াম ভাইয়া কেনো জানিনা আমাকে পছন্দ করে না।
-আমার ইচ্ছা করে এমন হয় নাই খালা আসোলে আমি একটু অন্যমনস্ক হওয়াতে এমন হয়েছে আর হবেনা।
-অন্যমনস্ক কেনো হবি তুই মন কোন না’গ’রে’র কাছে রেখে আসছিস?
খালার মুখের ভাষা ভয়ংকর বিশ্রি কেউ বলতে পারবে না। খালা শুধু আমার বেলায় এমন। আমাকে রেখে আমার মা না কি খালুর সাথে পালিয়েছে সেই থেকে আজ অব্দি খালার সব ক্ষো’ভে’র স্বীকার আমি। উত্তর না দিয়ে নিজের মতো কাজ করতেছি খালা এবার নিজে গা’লাগা’ল করতে করতে বেড়িয়ে গেলেন। আমি নিজের করুন অবস্থা দেখে হাঁসছি। আমাকে একজন কথা দিয়েছিলো আমার সব কষ্টের ভাগ তিনি নিবেন আজ কোথায় সে। মানুষ বড়ই বিচিত্র কেউ কি পারে কারো কথা রাখতে। উনি হয়তো এতো বছরে আমাকেই ভুলে গেছে আর আমার দেওয়া কথা মনে রাখবে। ছোটবেলায় বলা কথাগুলোকে ঘিরে আমি এখোনো দিবা স্বপ্ন দেখি৷ নিজের উপর তাচ্ছিল্যের হাসি আসে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো সিয়াম ভাই হয়তো এসেছেন খালা দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন ছেলেকে দেখতে আর আমি ধিরে ধিরে তার পিছে গেলাম। খালাকে দেখে সিয়াম ভাই জরিয়ে ধরলো এতোগুলো দিন পড়ে ছেলেকে পেয়ে কান্না করে দিলেন খালা।
– আরে মা এতো কান্না করে না তোমাকে অনেক পচা দেখাবে জানো? চুপচুপ জানো তোমার জন্য আমি এও সারপ্রাইজ নিয়ে আসছি৷
সিয়াম ভাইকে অনেক খুশি দেখাচ্ছে এতো খুশি আগে কখোনো দেখি নাই৷
– কি সারপ্রাইজ বাবা এতোদিন পাড়ে তোক৩ দেখলাম একটু কান্না ও করতে দিবি না।
সিয়াম ভাই খালার কথা শুনে মুচকি হেসে গাড়ি থেকে আরকজনের হাত ধরে বের করে আনলেন। গাড়ি থেকে জিন্স পড়া আর হাফ কূর্তি পড়া এক অপরুপ সুন্দরী মেয়ে নেমে এলেন। খালা খুব অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে আর মেয়েটিও খালার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
– কেমন আছো ফুপ্পি তুমি?
-আলহামদুলিল্লাহ আয়ানা মামুনি তুই কতো বড় হয়ে গেছিস চিনাই যাচ্ছে না তোকে। তুই আসবি সিয়াম আমাকে বলে নাই, বাড়ির বাকি সবাই কেমন আছে?
-আরে আবার কান্না করতেছো কেনো তুমি ফুপ্পি আমি আসছি না দেখবা এবার সবাই আসবে। দেইখো সব ঠিক হয়ে যাবে আমাকে এখানেই দাড় করিয়ে রাখবা?
খালামনি এবার চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে ফেললো আর তাদের বাড়ির ভিতরে যেতে বললো। আমি চিনতেই পারছি না উনি কে অথচ খালা কে ফুপ্পি ডাকছে। সিয়াম ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হনহন করে ভিতরে চলে গেলো। আমার চেহারা দেখলেই না কি তার আমার মায়ের কথা মনে পড়ে রাগ হয়ে যায়। মেয়েটি এবার আমাকে দেখে আমার কাছে এগিয়ে আসে।
– সায়ারা তোমার নাম এম আই রাইট?
-হ্যাঁ আমার নাম সায়ারা আপনি কিভাবে জানলেন?
-আমি তোমার মামাতো বোন আয়ানা আমার কথা কি তোমার মনে নাই সায়ারা?
-সরি আপু মনে ছিলো কিন্তু এতোগুলা বছর পড় দেখে কি চিনা যায় আর সেই কোন ছোটবেলায় দেখেছি তাও স্পষ্ট মনে নাই আমার।
-থাক সমস্যা নাই এখন আমি আসছি সব মনে করিয়ে দিবো চলো এবার।
আয়ানা আপুর ব্যাবহার খুব আমায়িক। এই বাড়িতে আজ অনেকদিন পড়ে আমার সাথে ভালো ব্যাবহার করলো কেউ। খুশি মনে আমি আপুর সাথে ভিতরে গেলাম আপু ফ্রেস হয়ে আসার পড় অনেক গল্প করলাম তার সাথে৷ রাত তখন ৮ টা বাজে আপু গেলো তার রুমে দরকারি কাজে আর আমাকে সিয়াম ভাই পাঠালো রান্না ঘরে চা বানাতে৷ আমি চা বানান প্রায় শেষ পাতিলে চা বলকাচ্ছে তখন রান্না ঘরে প্রবেশ করে সিয়াম ভাই।
বর্তামানে আমি শুয়ে আছি আর আমার চারোপাশ অন্ধকার রুমে আলো নাই। আমার মনে হচ্ছে এতো য’ন্ত্র’না না দিয়ে আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাচ্ছে না কেনো। ছটফট করছি আমি হাতের য’ন্ত্র’না’য়। আমার রুমের দরজা খোলার আওয়াজ আমি পেলাম তাকিয়ে দেখি আয়ানা আপু রুমের লাইট জালালো। আমাকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে ছুটে আমার কাছে এলেন এসে আমাকে ডাকছে আমি আত চোখে খুলে রাখতে পারলাম না। আয়ানা আপু আমার হাতের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলেন কি বুঝলেন জানিনা।
– ফুপ্পি সিয়াম কোথায় তোমরা তাড়াতাড়ি আসো।
আয়ানাত চিৎকারে ফুপি আর সিয়াম দৌড়ে চলে আসলেন। আয়ানা কে এই ঘরে দেখে ফুপি অবাক হলেও সিয়াম ভাই ঘাবড়ে যাচ্ছে।
– কি হয়েছে ও এভাবে এখানে সুয়ে আছে কেন?
– ও এখানে সুয়ে না ফুপি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে। ও কে হসপিটাল নি তে ওর হাত দেখো তুমি৷
ফুপ্পি হাত দেখে আঁতকে উঠল আর সিয়ামের দিকে তাকালো তার আর বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে।
– সিয়াম সায়ারাকে কোলে নে তাড়াতাড়ি, আর ওকে হাসপাতাল নিয়ে যা৷
-সিয়াম তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো আমি আমার ফোন নিয়ে আসছি।
সিয়ামের অনিচ্ছা হওয়া সত্তেও আয়ানার কথায় নিয়ে যাচ্ছে। আয়ানা ঘরে গিয়ে কাউকে কল দিয়ে সব খুলে বলে।
-তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো ভাই দেখে যাও এখানে কি হচ্ছে।
চলবে.?
#অনুভুতির_মায়ার_খেলা_১
#সায়ারা_জাহান_লেখায়।