শালুক ফুলের লাজ নাই (৩৩)

0
1544

#শালুক_ফুলের_লাজ_নাই (৩৩)

সকাল হতেই শালুকের মনে হলো এর চাইতে লজ্জাজনক সময় তার জন্য আর আসে নি।এতোগুলো মানুষের সামনে গিয়ে এই লোক গরম পানি করে এনেছে।
লজ্জায় শালুকের ইচ্ছে করলো মাটির সাথে মিশে যেতে।

ধ্রুব শালুকের দিকে তাকিয়ে বললো, “উঠবা?নাকি আমি ও আসবো কম্বলের নিচে?”

শালুক ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসলো। তারপর বললো, “আপনি এরকম কেনো?লজ্জা নেই আপনার একটুও?”

ধ্রুব হেসে বললো, “শালুক ফুলের লাজ নাই,রাইতে শালুক ফোটে লো,রাইতে শালুক ফোটে।
যার সাথে যার ভালোবাসা সেই তো মজা লোটে লো,বকুল ফুল বকুল ফুল সোনা দিয়া হাত ক্যানে বান্ধাইলি?”

লজ্জায় শালুক ধ্রুবর বুকে আছড়ে পড়লো। ধ্রুবর বুক মুখ ঘষতে ঘষতে বললো, “আমার বুঝি লাজ নাই?”

ধ্রুব হেসে বললো, “আমার শালুক তো লজ্জাবতী। কে বলে তার লাজ নেই।লজ্জাবতী বলেই তো আমার ইচ্ছে করছে তাকে আবারও লজ্জা দিতে।”

শালুক ধ্রুবর কাছ থেকে সরে বললো, “দূর বদলোক,সবসময় শুধু এসব বলে। আপনি কিভাবে পারলেন পানি গরম করে আনতে বলেন তো?”

ধ্রুব হেসে বললো, “হিটার নিয়ে এসেছি বোকা ফুলের জন্য। যাতে সে আমাকে কোনো রকম অযুহাত দেখাতে না পারে।হিটার দিয়েই পানি গরম করেছি।কাউকে বলতে হয় নি নিচে গিয়ে। ”

শালুক বললো, “ছি!আমি তো আরো লজ্জায় শেষ। ভাবলাম আপনি নিচে গিয়ে এনেছেন। তাহলে তো আমি আজকে এই রুম থেকে বের হতেই পারতাম না।”

শালুক গোসল করে কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি পরে নিলো।এই শাড়িটি ধ্রুব গতবার বাড়িতে আসার সময় শালুকের জন্য কিনে দিয়েছিলো ব্যাগে,সাথে ম্যাচিং করে চুড়ি।শাড়ি ছাড়াও নতুন তিনটি ড্রেস,দুই জোড়া জুতা,হেয়ার ব্যান্ড,পাঞ্চ ক্লিপ এসব কিনে দিয়েছিলো। শালুক ঠিক করেছে সব পরবে ধ্রুবর সামনে।

ধ্রুবকে দিলো চুড়ি পরিয়ে দেওয়ার জন্য। একটা একটা করে যত্ন করে ধ্রুব শালুককে চুড়ি পরিয়ে দিলো।চুড়ি পরানোর দায়িত্ব ধ্রুব ভীষণ মনোযোগ দিয়ে করে। যেনো একটু এদিক সেদিক হলেই মহাবিপদ ঘটে যাবে।

শালুক বললো, “আমরা কখন যাবো?”

ধ্রুব জিজ্ঞেস করলো, “কোথায়?ঢাকায়?”

শালুক হেসে বললো, “না,মেজো চাচীর সাথে দেখা করতে।ওনাকে আমার দেখার খুব শখ।”

ধ্রুবর দুই চোখ টলমল করতে লাগলো। তার কি কম ইচ্ছে মায়ের সাথে দেখা করার?মায়ের চেহারাটা কেমন যেনো এখন অস্পষ্ট লাগছে।
মা কি এখন আগের মতো আছে?সেই লম্বা,ঘন চুল কি আছে?
এখনো কি আগের মতো গান গায় মা?
কতোগুলো বছর হয়ে গেছে ধ্রুব কাউকে মন ভরে মা বলে ডাকতে পারে নি?

শালুক ধ্রুবর মুখোমুখি বসে বললো, “আমি জানি আপনি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন।কিন্তু একবার ভেবে দেখেন আজ যদি চাচীর কিছু হয়ে যায়, আপনি তাকে শেষ বার দেখতে না পারেন সারাজীবন এই আক্ষেপ আর মিটাতে পারবেন?
কার কখন মরণ চলে আসে,কে বলতে পারে। ওনার যদি কিছু হয়ে যায়, ওনার ও তো কষ্ট থেকে যাবে শেষ বারের মতো ছেলের মুখখানা দেখতে পান নি বলে। ”

ধ্রুব শালুককে জড়িয়ে ধরে বললো, “আমার সাথে কেনো এমন হলো শালুক? আমি কি অপরাধ করেছি?বাবা মা থেকেও আমার অনাথের মতো বড় হতে হয়েছে।পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকার স্বপ্ন তো আমার ও ছিলো, তবে আমি কেনো আমার এতো বড় পরিবার থাকার পরেও বড় হলাম একা?কেনো আমার দুঃসময়ে কাউকে পাই নি আমি?
ভীষণ জ্বরের সময় একটা দরদী হাতের স্পর্শ তো আমি ও পেতে চেয়েছি কেনো পাই নি আমি?
আমার বুকের ভেতর যদি কাউকে দেখাতে পারতাম তবে দেখতে পেতে এই বুকে কেমন পো/ড়া, ক্ষ/ত-বিক্ষ/ত হয়ে আছে। ”

শালুক ভেজা চোখে তাকিয়ে বললো, “আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে আপনার মনের সব ব্যথা দূর করে দিবো।আপনি এভাবে ভে/ঙে পড়বেন না প্লিজ।আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ খুব সুন্দর করে তুলবো। ”

মতির মা দরজায় নক করে বললো, “নাশতা খাইতে আসেন তাত্তাড়ি,সবাই বইসা রইছে। ”

চোখ মুছে শালুক উঠে দাঁড়ালো। ধ্রুব পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, “তুই কখনো আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাস না শালুক। তবে আমার এই জীবনে বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন ও হারিয়ে যাবে।”

শালুক ফিসফিস করে বললো, “পাগল না-কি, ৪ টা বাচ্চার আম্মু হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছি তা পূর্ণ না করে কোথাও যাচ্ছি না আমি।”

ধ্রুব চোখ বড় করে তাকিয়ে রইলো। শালুক আর দাঁড়ালো না। ছুটে যেতে যেতে তার মনে হলো আসলেও শালুক ফুলের লাজ নাই।নয়তো কিভাবে সে চারটা বাচ্চার কথা বলতে পারলো এরকম অনায়াসে?

খাবার টেবিলে আজকে সবাই একসাথে বসেছে।ধ্রুবরা বাবা ছেলে পাশাপাশি বসেছে।আদিবা বেগমের বুকের ভেতর কেমন করে কেঁপে উঠলো হঠাৎ করেই। আদনান না জানি কেমন আছে!
এই পর্যন্ত চার বার কল দিয়েছে আদনান। তাও ২-৩ মিনিট কথা বলতো।আজ ছেলেটা থাকলে তো সে ও বসতো তার বাবার পাশে।
সন্তান যতোই খারাপ হোক,যতোই অন্যায় করুক,মায়েরা বহুদিন সেই ক্ষোভ পুষে রাখতে পারে কি?
তিনি তো পারছেন না।এই যে এখন হুট করে মনে পড়ে গেলো ছেলের কথা।
নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করলেন,”কেনো ছেলেটা এসব অপরাধ করেছে?তার অপরাধের শাস্তি তো তাকে কেউ দেয় ও নি।কি দরকার ছিলো এসব করার?”

হাসনা বেগম গরুর মাংস মেরিনেট করতে করতে বললেন,”ভাবী,খাসির মাংসটা ভিজিয়ে ফেলুন।মতির মা’কে বলুন বেশি করে পেঁয়াজ কাটতে।”

আদিবা বেগম কিছুই বুঝতে পারলেন না।হাসনা বেগম তাড়া দিয়ে বললেন,”ভাবী,দুপুরে জামাই এসে খাবে কিন্তু,এখনো চিংড়ি ভাজা হয় নি।”

হুঁশ এলো আদিবা বেগমের। আজকে আফিফা আসবে,দাদীর অসুস্থতার কথা শোনার পর মেয়েটা অস্থির হয়ে গেছে। পরমুহূর্তে মনে পড়লো আজকে জহির ও আসবে।সবাই থাকবে আজকে বাসায় শুধু আদনান থাকবে না।

নাশতা খাওয়া শেষ করে ধ্রুব বললো, “আমি আর শালুক যাচ্ছি। ”

কোথায় যাচ্ছে কেউ জিজ্ঞেস করলো না। সবার মনের ভেতর ভয় কাজ করছে।কে জানে মা ছেলের মিলনদৃশ্য কেমন হবে!

বাজারে গিয়ে ধ্রুব অনেক কিছু নিলো মায়ের জন্য। ফলমূল, মিষ্টি, বিস্কুট চানাচুর অনেক কিছু। একটা সিএনজি ভর্তি করে ফেললো। শালুকের বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে অজানা আতংকে।

দীপালিদের বাড়ির সামনে এসে সিএনজি থামলো। গেইটের দারোয়ান এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, “কাকে চাই?”

ধ্রুব বললো, “আমি ধ্রুব।”

সাথে সাথে লোকটা ব্যস্ত হয়ে গেইট খুলে দিলো। ডাক দিয়ে বললো, “কর্তাবাবু,দেইখা যান কে আসছে বাড়িতে!”

সাদা ধুতি পরা একজন বৃদ্ধ লোক এগিয়ে এসে বললো, “তোমরা কারা?”

ধ্রুব বললো, “আমার স্ত্রী শালুক, আর আমি ধ্রুব।”

লোকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। দুই পা এগিয়ে এসেও আবার থেমে গেলো। তার দুই চোখ টলমল করছে। নাতিকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েও আর ধরলেন না।নাতি কিছু মনে করে যদি এই ভয়ে।
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, “আসো,আমার সাথে আসো।”

দোতলার সবচেয়ে শেষের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “যাও ভেতরে যাও।আমি নিচে আছি। ”

লোকটা চলে গেলো। ধ্রুব খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো বাহিরে।তারপর দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। বিছানার সাথে লেগে থাকা মানুষটাকে দেখে মুহুর্তেই ধ্রুবর মাথা ঘুরতে লাগলো।
এ যেনো কোনো মানুষ নয়।শুকনো পাটকাঠি,কঙ্কালের মতো হয়ে গেছেন।সারা দেহে তার এক ছটাক মাংস ও হবে না।থাকার মধ্যে আছে শুধু জ্বলজ্বলে দুই চোখ আর লম্বা, জট ধরা চুল।

ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে নিজে নিজে বললেন, “ধ্রুব এসেছিস?”

ধ্রুবর গলা ধরে এলো। কথা বলতে পারলো না। হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকলেন দীপালি ধ্রুবকে।ধ্রুব এগিয়ে যেতেই পাশে বসালেন।ধ্রুবর হাত খানা শক্ত করে ধরে বললেন, “আমার বাপধন, আমার মানিক তুই।আমার সাত রাজার ধন।আমাকে মাফ করে দিস বাবা।তোর সুন্দর জীবন আমি নষ্ট করে দিয়েছি।বেঁচে থেকেও তোকে মায়ের আদর দিতে পারি নি। ”

ধ্রুব জিজ্ঞেস করলো, “আপনার এই অবস্থা কেনো?ডাক্তার দেখিয়েছেন আপনি? ”

দীপালি হেসে বললো, “এই যে আমার সব রোগের ঔষধ, আমার ডাক্তার আজ আমার সামনে বসে আছে। এখন আমি একেবারে সেরে যাবো বাবা।তোর মুখখানা দেখার জন্য আমি অস্থির হয়ে ছিলাম।এবার আর কোনো য/ন্ত্রণা থাকবে না আমার দেহে।
ওই কে দাঁড়িয়ে আছে? ”

ধ্রুব বললো, “আমার স্ত্রী, শালুক। ”

দীপালি কাছে ডেকে বললো, “কোন শালুক বাবা?আমাদের শালুক?আমার সেই ছোট্ট রসগোল্লার মতো সেই শালুক? ”

ধ্রুব হেসে বললো, “হ্যাঁ, সেই শালুক। ”

দীপালি শালুকের হাত ধরে বললো, “মা’গো, কেমন আছো তুমি? আমি তোমার শাশুড়ী হতাম।এখন আমি তোমার কেউ না মা।আমাকে তুমি চিনবে না।আমি চিনি তোমাকে।তোমার তুলতুলে নরম শরীরটা আমার এখনো মনে আছে।তোমাকে আমি বলতাম মোমের পুতুল তুমি আমার।
এখনো তুমি তেমনই আছো।”

শালুক কিছু বলতে পারলো না। তার কান্না পাচ্ছে ভীষণ ওনাকে এই অবস্থায় দেখে।

ধ্রুব বললো, “আপনার বাচ্চারা কোথায়?”

দীপালি অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললো, “আমার তো এই একটাই বাচ্চা বাবা,সেটা তুই।”

ধ্রুব লজ্জা পেয়ে বললো, “আমি শুনেছি আপনার বাবা মা আপনাকে আবার বিয়ে দিয়েছিলেন।”

দীপালি করুণ হেসে বললো, “না তো,এরকম কিছুই হয় নি। তোমাদের বাড়ি থেকে আসার পর পরই আমাকে গৃহবন্দী করে ফেলে।তারপর আমি অসুস্থ হয়ে যাই,আজও সেই অসুস্থতা বয়ে বেড়াচ্ছি। আমি তো একজনকে ভালোবেসেছি বাবা,তাকে ছেড়ে এসেছি বলে কি অন্য কারো হয়ে যাবো না-কি? আমার ভালোবাসা তেমন ছিলো না। ”
ধ্রুব কেঁদে দিয়ে বললো, “কেনো এরকম হলো বলেন আপনি?আপনি ও কষ্ট পেয়েছেন এখানে থেকে,আমি ও কষ্ট পেয়েছি আপনাদের ভালোবাসা হারিয়ে আমার বাবা তো উন্মাদের মতো হয়ে গেছিলেন।”

দীপালি হেসে বললো, “দোষ আমাদের ছিলো বাবা।ভালোবাসার টানে দুজনে নিজেদের ধর্মকে অসম্মান করেছি।হিন্দু হয়ে মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করেছি,সে ও মুসলিম হয়ে হিন্দু মেয়েকে বউয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে। উপরওয়ালা কি এমনি এমনি ছেড়ে দিবে না-কি?
তোমার ধর্মে যেমন এই বিয়ের অনুমতি নেই আমার ধর্মে ও নেই।তবুও আমরা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে করে ফেলেছি।দুজনের মধ্যে এ ও কথা ছিলো কেউ কারো ধর্ম অসম্মান করবো না।নিজ নিজ ধর্ম পালন করবো।

বলো বাবা,এই অনাচারের শাস্তি কি সৃষ্টিকর্তা দিবেন না আমাকে?বিশেষ করে আমি নিজেই চাপ দিয়েছি তোমার বাবাকে।এখানে কারো কোনো দোষ নেই বাবা।আমাদের ভাগ্যে এই ছিলো। ”

ধ্রুব কেঁদে বললো, “আমার যে জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেলো তাতে!”

দীপালি হেসে বললেন,”সেটাই তো আমার আর তোমার বাবার জন্য সবচেয়ে বড় শাস্তি সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে।”

অনেকক্ষণ সবাই চুপ করে ছিলো। কারো কোনো কথা নেই।দীপালি ধ্রুবর হাত চেপে ধরে শুয়ে রইলো চোখ বন্ধ করে। তারপর অনেকখানি সময় কেটে যাবার পর বললো, “এবার তোমরা যাও বাবা।মন ভরে দেখে নিয়েছি তোমাকে।”

ধ্রুব চুপ করে থেকে বললো, “আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি মা।আমি আপনাকে আর বাবাকে ভীষণ ভালোবাসি।একটা বার যদি আমি আপনাদের দুজনকে একই সাথে কাছে পেতাম মা,দুজনকে একই সাথে দেখতে পারতাম তবে আমার সব কষ্ট চলে যেতো। ”

দীপালি চোখ মুছে বললো, “যাও ধ্রুব, চলে যাও তুমি। আমার নার্স আসার সময় হয়েছে এখন।”

ধ্রুব শালুককে নিয়ে বের হয়ে এলো। একটু এগিয়ে শালুক থমকে দাঁড়ালো। তারপর বললো, “আমরা ওনাকে ঢাকায় নিয়ে যাবো।ওখানে ওনাকে ডাক্তার দেখাবো।উনি সুস্থ হয়ে যাবেন চিকিৎসা করালে।টাকা পয়সার জন্য আপনি ভাববেন না।বাড়ি থেকে যেসব গহনা পেয়েছি তাতে প্রচুর টাকা পাওয়া যাবে বিক্রি করে। আপনার কাছে রিকুয়েস্ট রইলো প্লিজ আমাকে না বলবেন না।এতো দিন পরে আপনি আপনার মা’কে ফিরে পেয়েছেন আমি তাকে এভাবে থাকতে দেখতে পারবো না। আপনি ছাড়া তার আর কেউ নেই এখন”

ধ্রুব বললো, “তাই হবে শালুক। ”

ধ্রুবর নানা নিচে বসে রইলেন সিড়ির পাশে।ধ্রুব এসে তাকে বললো, “আমি মা’কে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাই।ওনার চিকিৎসা করানোর জন্য। ”

তিনি বললেন, “তোমার মা,তোমার অধিকার আছে। নিয়ে যাও।আমার মেয়েটা বেঁচে থাকুক তবুও।”

ধ্রুব চলে এলো শালুককে নিয়ে। রিকশায় বসে শালুককে বললো, “ঢাকায় গিয়ে আগে বাসা চেঞ্জ করতে হবে শালুক।তারপর মা’কে নিয়ে যাবো।”

শালুকের ভীষণ ভালো লাগলো। এতো বছর পর মা বলে ডাকতে পেরেছে ধ্রুব,এটাই তার সবচেয়ে খুশির কারণ।

বাসায় গিয়ে দেখলো সবাই বসে আছে ধ্রুবদের জন্য। ধ্রুব সবকিছু বললো সবাইকে।বাবার কাঁধে হাত রেখে বললো, “আপনি চিন্তা করবেন না বাবা।আমি আছি আমার মা’কে দেখার জন্য। আপনি আমার এক মায়ের জন্য চিন্তা করতে গিয়ে অন্য মা’কে কষ্ট দিবেন না বাবা।”

ফরিদার দিকে তাকিয়ে বললো, “উনি ও তো আমার মা।ওনাকে আর কখনো কষ্ট দিবেন না বাবা।এক মা’কে হারাতে হারাতে পেয়েছি, আপনার অবহেলার জন্য ওনাকে যেনো হারাতে না হয়।আমি তো নিজেকে সামলাতে পেরেছি,আমার ভাইবোন এখনো ছোট। ওরা ওনার কষ্ট সহ্য করতে পারবে না বাবা।”

ফরিদা কেঁদে ফেললো। আফিফারা এসেছে কিছুক্ষণ আগে।হাতমুখ ধুয়ে নিচে নেমে আসতেই দেখলো সবাই বসে আছে। জহির ও আছে সাথে। আফিফা এক নজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।মিথ্যা মায়া বাড়িয়ে লাভ হবে কি?
বহুদিন পর আজ আবারও সবাই একই সাথে খেতে বসলো। আনন্দ, বেদনা সবার বুকের মধ্যে রয়েছে তবুও সবাই খুশি আজ একত্রিত হতে পেরে।

চলবে…..

রাজিয়া রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here