#প্রেমরোগ-২১
#তাসনিম_তামান্না
~সুইজারল্যান্ড~
কুয়াশা এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ তুষারের দেখা নেই। তুষার জানতো না কুয়াশা আসবে। কুয়াশাই সবাইকে বলে দিয়েছিল প্লেন ফ্লাই করলে তুষারকে তখন জানিয়ে দিতে যদি তার আগে জানাত তাহলে তুষার কখনো কুয়াশাকে একা আসার পারমিশন দিতো না। সেই ভেবেই কুয়াশা তুষারকে জানাতে বারন করেছিল। কুয়াশা এখানকার কিছুই চিনে না চিনলে এতোক্ষণে চলে যেত তুষারের বাসায়। ফোনও করতে পারছে না এদেশের সিম না-ই।
সেপ্টম্বর মাসের মাঝামাঝি দিকে বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ভিজে রাত গভীর হচ্ছে। চারিদিকে রূপকথার মতো সব গোছানো। কৃত্রিম আলোয় চারিদিকে আলোকিত। লোকজনের সমাগম কম নেই মোটামটি আছে। কেউ তার প্রিয়জনকে বিদায় দিচ্ছে আবার কেউ বা প্রিয়জনকে কাছে পেয়ে আনন্দ উল্লাশে মেতে আছে। কুয়াশা প্রথমে সবটা মুগ্ধ চোখে দেখলেও এখন আর ওদিকে মন নেই। কুয়াশার মনে ভয়ের দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এদিকে শীত ও লাগছে অনেক। তুষার কি আসবে না? কুয়াশা ওখানকার বেঞ্চে বসে পড়লো। এখান থেকে বের হলে যদি কোনো বি প দ হয়।
তুষার কাল সারারাত আর আজ সারাদিন কাজ করে টাইয়াড হয়ে ছিল তাই লান্স করে ঘুমিয়েছে। ঘুম ভাঙ্গলো সাড়ে নয়টার দিকে। ফ্রেশ হয়ে কফি বানিয়ে ফোন অন করলো ফোনের চার্জ ছিল না বিধায় ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। ফোন অন করতেই WiFi কানেক্টেড হয়ে যেতেই WhatsApp, messenger এ বাড়ি থেকে আসা অসংখ্য কল মেসেজের নোটিফিকেশন আসলো। তুষার অবাক হলো। এতোগুলো কল কেনো? কারোর কিছু হলো না-কি আবার? ভাবতে ভাবতে আবারও কল আসলো। তুতুল ফোন দিয়েছে তুষার ধরতে সময় নিলো না।
” কি হয়েছে? এতোগুলো ফোন দিচ্ছিস কেনো? সব ঠিক আছে তো? ”
তুতুল রেগে বলল ” এতোক্ষণ কোথায় ছিলে ভাইয়া? টেনশনে হচ্ছে কত যানো? ”
” ফোনে চার্জ ছিলো না টায়ার্ড হয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ”
” ভাইয়া তুমি তারাতাড়ি এয়ারপোর্টে যাও কুয়াশা অপেক্ষা করছে প্লেন অনেকক্ষণ হয়েছে ন্যান্ড করেছে ”
তুষার বিস্ময় হয়ে চিল্লিয়ে উঠলো ” হোয়াট? কুয়াশা এয়ারপোর্টে মানে? ”
” কুয়াশা তোমার ওখানে গেছে ”
” তুই আমাকে এখন বলছিস কেনো? আগে কেনো জানাস নি? আর তোরা ওকে একা আসতে দিলিই বা কেনো? ”
তুতুল মিনমিন করে বলল
” কুয়াশা জানাতে বারণ করেছিল। আর ও ওখানে নিজের ইচ্ছেতেই গিয়েছে ”
তুষার ধমক দিয়ে বলল ” ফোন রাখ ”
তুষার টি-শার্টের ওপরে জ্যাক্টে গায়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। বেশ স্প্রিডেই গাড়ি চালাতে লাগলো মনে হাজারো কু চিন্তা ঘুরাঘুরি করছে।
কুয়াশা ভয়ে এবার কেঁদেই দিলো এক বয়স্ক মহিলা কুয়াশা কাছে এসে আদুরে কন্ঠে বলল ” হোয়াট হ্যাপেন বেবি? হোয়ার আর ইউ ক্রাইং? ”
কুয়াশার কান্নার জন্য কথাও বলতে পারছে না। বয়স্ক মহিলাটি কুয়াশাকে শান্তনা দিতে লাগলো।
৩০ মিনিটের রাস্তা ২০ মিনিটে এসে পৌছালো। তুষার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো টেনশনে ঘাম বের হয়ে গেছে। তুষার কুয়াশাকে বসে কাঁদতে দেখে থমকায়। কুয়াশা তুষারকে দেখে দৌড়ে এসে তুষারকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেটে বলল
” আপনি আসতে এতো দেরি করলেন কেনো হ্যা? জানেন আমি কত ভয় পেয়েছি? ”
তুষার যেনো প্রাণ ফিরে পেলো এতোক্ষণে। বয়স্কমহিলাটি হেসে চলে গেলেন। কুয়াশার কান্নার গতি কমে এলো। তুষার কুয়াশাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলল
” পা গ ল তুমি? এভাবে আমাকে না জানিয়ে এসেছো কেনো একা? আজ আমি ফোন অন না করলে তোমার বি প দ হতে পারতো। জাস্ট কিছুক্ষণ আগে জানলাম তুমি এখানে আসছো আর তখনই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি। আর তুমি? ”
কুয়াশা অপরাধী ন্যায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। তুষারের রাগে মাথা দপদপ করছে। একহাতে লাগেজ আর কুয়াশার হাত ধরে পার্কিংলটে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল
” বসো ”
কুয়াশা চুপচাপ বসে পড়লো। রাস্তায় কেউ কারোর সাথে কথা বলল না। বাসায় এনে কুয়াশাকে রুম দেখিয়ে দিলো তুষার বলল
” এই রুমে থাকবে তুমি ”
” এটাতে আপনি থাকেন? ”
” নাহ তোমার পাশের রুমেই আমি আছি ভয় পাওয়ার কারণ নেই ”
কুয়াশা তুষারের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
” আমি তো আপনার বউ আমি আপনার রুমেই আপনার সাথেই থাকবো ”
তুষার নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলো না। হতভম্ব! দৃষ্টি শূন্যে মিলিয়ে তাকিয়ে রইলো কুয়াশার দিকে যে মেয়ে কি-না তুষারের থেকে ১০০ হাত দূরে থাকে সেই মেয়ে তুষারের সাথে এক রুমে থাকতে চাইছে এটা অর্চয্য ঘটনা। কেউই বিশ্বাস করতে চাইবে না। কুয়াশারে রুমে চলে গেলো। তুষারের বিস্ময় যেনো কাটছেই না। নতুন এক কুয়াশাকে আবিষ্কার করছে যার চোখে ভয়, সংকোচ দেখতে পাচ্ছে না। অদ্ভুত সে চোখে চাহনি। তুষার সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ডিনার রেডি করতে লাগলো। কাজের ফাঁকে বিরবির করে বলতে লাগলো
” মেয়েটা কি পা গ ল হলো না-কি? হুট করে চলে আসলো বউ বর বলে চিল্লাচিল্লি করছে কেনো? কিছু কি হয়েছে ওর? ”
কুয়াশা ভিজে চুলে ড্রাইনিংটেবিলে এসে বসে বলল
” আপনি রান্না করেছেন? ”
” হুম এখানে নিজের রান্না নিজেকে করতে হয় ”
” এখানে অনেক ঠান্ডা ”
” নতুন এসেছ সয়ে যাবে ”
তুষার পাস্তা আর স্যান্ডুইস করেছে এতোটুকু সময়ের মধ্যে যা করতে পেরেছে। কুয়াশা খেয়ে নিলো। বড্ড খুদা লেগেছিলো ওর। কুয়াশার খাওয়া শেষ হতেই তুষার বলল
” এখানে কেনো এসেছ ”
” কেনো এসেছি মানে? বরের কাছে বউ আসবে না তো কোথায় যাবে? ”
” কুয়াশা আমি তোমাকে যথেষ্ট পরিমান চিনি হয়ত তোমার থেকেও বেশি তোমাকে চিনি। তুমি কোনো কারণ ছাড়া এভাবে চলে আসার মেয়ে নও ”
কুয়াশার মুখে আধার করে বলল
” আমি এসেছি আপনি খুশি হন নি? ঝামেলায় ফেললাম? আ… ”
” স্টপ কুয়াশা কথা ঘুরাচ্ছ তুমি কি হয়েছে বলো আমাকে ”
” কিছু হয় নি। আমি কি আপনার কাছে আসতে পারি না? আপনার সাথে থাকতে পারি না? ”
” অবশ্যই পারো তোমার সম্পূর্ন রাইট আছে। তাই বলে তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে নয় ”
” আমি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছেই নিজের স্বজ্ঞানে এখানে এসেছি। বিয়ে টাও মেনে নিয়েছি। ”
তুষার ভ্রু কুঁচকে বলল ” সত্যি বলছ তুমি? ”
” মিথ্যা কেনো বলবো? ”
” তোমার চোখ মুখ অন্য কথা বলছে। তুমি আমাকে মেনে নাও নি। আর তুমি আর আমি একরুমে থাকলে তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ কিছু হয়ে যাবে যা আমি চাইছি না একবার আমি রাগের মাথায় তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তোমাকে স্প র্শ করেছি আমি তখন নিজেকে কন্ট্রোল করে নিয়েছিলাম। আমি মহাপুরুষ নই যে সবসময় নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখবো ”
তুষার উঠে গেলো। কুয়াশা লজ্জায় মাটি ফাঁকে ডুকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। কুয়াশা উঠে রুমে চলে গেলো। বিছানায় শুয়ে তুষারের পারফিউমের ঘ্রাণ পেলো। তুষারের কথা ভাবতে ভাবতে কুয়াশা ঘুমিয়ে গেলো। তুষার ঘুমাতে পারছে না হাসফাস করছে। কুয়াশা কেনো এসেছে এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরঘুর করতে লাগলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ