প্রেমরোগ-৯

0
831

#প্রেমরোগ-৯
#তাসনিম_তামান্না

সন্ধ্যা বেলা ড্রাইংরুম বসে সকলে গল্প করছে। মেঘা মন খারাপ নিয়ে ও বসে আছে কোনো কথা বলছে না শুধু হুম, আর না ছাড়া। কুয়াশার এ বাড়িতে থাকতে মন চাইছে না। এটা নিয়ে ও নিজের ওপরে মহা বিরক্ত তাও সকলের সাথে হাসি মুখে কথা বলছে। তুতুল বলল
” কি হয়েছে মেঘা মন খারাপ ”
মেঘা সাথে কুয়াশাও চমকে উঠে মেঘা বলল
” কি বলো ভাবিপু আমার আবার কি হবে? ”
” উহুম বলে ফেলো সত্যি করে কি হয়েছে? ”
” কিছু হয় নি আচ্ছা কবে বাসায় যাবো? ”
” কেনো বাসার জন্য মিস করছো? ”
” তা বলতে পারো ”
” বিয়ের পর কি করবে? ”
মেঘা হাসলো। কুয়াশা বলল
” ভাবিপু তুষার ভাইয়া কবে চলে যাবে ”
” বলল তো ৩ মাসের ছুটি নিয়ে আসছে মাত্র তো একমাস হলো এখনো দু’মাস বাকি ”
” ওহ ”
” কেনো কিছু হয়েছে? ”
” না কি হবে? শুনছিলাম উল্টো পাল্টা শুনিয়ে দিলো ”
” আমার ভাইটা ওমনই জানিস ই তো একটু ঘাড় ত্যাড়া। এই দুই মাস চুটিয়ে প্রেম করে নে ”
কুয়াশার খুব বলতে ইচ্ছে হলো ” তোমার ভাই যা আস্ত একটা শ’য়তা’ন প্রেম দূরের কথা স্বাভাবিক কথা বলতে গেলে ধমকের ওপর রাখে আর কিভাবে আমাকে অপমান করা যায় সেই সুযোগে থাকে ” তুতুলের কথায় ভাবনার সুতা ছিঁ’ড়ে বেড়িয়ে আসলো কুয়াশা তুতুল হেঁসে বলল
” কুয়াশা আমার ভাইটা কি রোমান্টিক নাকি রে ”
কুয়াশা সাথে সাথে ভিতরের লজ্জারা ভির জমায় সেদিন রাতের দৃশ্য পট চোখের সামনে ভেসে উঠলো গলায় ফাস্ট চু!মু দিয়ে ছিলো। কুয়াশা তুষারের সম্পর্কটা বৈধ হওয়ার শর্তেও সেই প্রথম তুষার কুয়াশার প্রতি ওমন ফিলিংস প্রকাশ করে। কুয়াশার মনে প্রশ্ন জাগে তুষার কি সত্যি রোমান্টিক?
কুয়াশার মুখে রক্তিম আভা ফুটে উঠে। সেটা দেখে তুতুলের সাথে মেঘা ও না হেসে পারে না। কুয়াশা অস্বস্তিতে পড়ে বলল
” কি সব আজেবাজে কথা বলো ভাবিপু ”
” হুম হুম আমরা বুঝতে ও পারছি আবার দেখতেও পারছি ”
কুয়াশা আমতাআমতা করে বলল
” তেমন কিছু নয় আপু ”
তিশা এসে বলল ” কি রে তোরা কি গল্প করছিস ”
” তেমন কিছু না আম্মু ”
” কি খেতে চাস বল ”
” কিছু করতে হবে না তুমি বসো তো একটু গল্প করি
” কিছু বানিয়ে আনি খেতে খেতে গল্প করার মজায় আলাদা ”
তিশা শুনলেন না রান্নাঘরে চলে গেলো। ঝটপট পিঁয়াজু, বেগুনি বানাতে লাগলো। ততক্ষণে মেঘ আর তুষার ও চলে এসেছে। তুতুল বলল
” শুনেছ কুয়াশা মেঘা বাসার জন্য মিস করছে ”
মেঘ হেসে বলল
” ওরা তো কখনো বাবা-মা কে ছাড়া একা কোথাও যায় নি এটাই প্রথম তাই এমন হচ্ছে ”
তিশা শুনতে পেলো কথাটা তুষার কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না। তিশা টি-টেবিলে খাবার গুলো রাখতে রাখতে বলল
” আমি আরও ভাবলাম তুতুল চলে গেলো ও তোদের দুইটাকে রেখে দিবো। তা না একরাত থেকে তোরা কান্না কাঠি লাগিয়ে দিলি? ”
মেঘা বলল
” মামনি ভাবিপু তুষার ভাইয়া চলে গেলে আর আংকেল তো সারাদিন অফিসে থাকে তাই বলছিলাম যে আমাদের ওখানে কয়দিন থেকে এসো চল ”
” সে পরে দেখা যাবেক্ষণ নে খেয়ে নে তোরা ”

সন্ধ্যায় ভাজাপোড়া নাশতা খাওয়ায় রাতে কেউ খেতে পারলো না। রাতে আবারও রিদ নামক পোকা মেঘার মাথায় কুটকুট করে কামড়াতে লাগলো। রিদের ছবি বুকে জড়িয়ে কান্না করে দিলো কুয়াশা প্রথম প্রথম মেঘাকে বোঝাতে চাইলেও মেঘা বুঝলো না। কুয়াশা এসব সহ্য করতে না পেরে ছাদে চলে গেলো। মেঘা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো
” এখনি আমার রিদের সাথে কথা বলা লাগবে না হলে দম আঁটকে মা’রা যাবো। কিন্তু নম্বর কোথায় পাবো? মেঘ ভাইয়া? না না ভাইয়া সন্দেহ করতে পারে। তাহলে কার কাছ থেকে নিবো? তুষার ভাইয়া? হ্যাঁ হ্যাঁ তুষার ভাইয়া দিতে পারবে ”
মেঘা চোখমুখ মুছে তুষারের রুমে নক করলো তুষার দরজা খুলে মেঘাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল
” তুমি এখানে? এতো রাতে কোনো দরকার? ”
মেঘার আবারও কান্না ঠেলে আসতে চাইলো। তবুও ঠোঁট চেপে কান্না সংবরণ করে উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলল ” হ্যাঁ দরকার ”
তুষার বলল ” হ্যাঁ বলো কি লাগবে? ”
” ভাইয়া রিদ ভাইয়ার নম্বর টা দিবেন প্লিজ ”
তুষারের ভ্রু কুঁচকে গেলো বলল
” রিদের নম্বর নিয়ে তুমি কি করবে? ”
” একটু দরকার ভাইয়ার সাথে ”
তুষারের সন্দেহ হলেও কিছু বলল না নম্বর টা দিয়ে দিলো। রিদের নম্বর পেয়ে মেঘা মন খুশিতে ঝলমলে করে উঠলো। রুমে এসেই রিদ কে ফোন দিলো প্রথম বার না ধরলেও দ্বিতীয় বার ধরলো রিদ হ্যালো বলতেই মেঘার মন ঠান্ডা হয়ে গেলো।
” কেমন আছেন? ”
রিদ চট করে রেগে গেলো মেঘার গলার আওয়াজ শুনে বলল
” তুমি? আমার নম্বর কোথায় পেলে? আর আমাকেই বা ফোন দিয়েছ কেনো? ”
” আমি ফোন দিতে পারি না আপনাকে? ”
” অবশ্যই না ”
মেঘা কেঁদে দিয়ে বলল ” ভালোবাসি আপনাকে। বুঝেন না কেনো? কেনো আমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছেন? ”
রিদ কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল ” আমার যা বলার সেদিন রাতেই বলে দিয়েছি আর কিছু বলার নাই তুমি আমাকে আর ফোন দিবে না ”
” আপনি যদি এখন ফোন কাটেন। আমি কিন্তু যা খুশি করে ফেলবো ”
রিদ থমকায় ফোন না কাটলো না শান্ত কন্ঠে বলল
” কি চাচ্ছোটা কি তুমি? ”
” আপনাকে চাই ”
” আচ্ছা। আমার মধ্যে কি আছে যে তোমার আমাকেই লাগবে? ”
” আপনার একটা সুন্দর মন আছে ”
” মেঘা পাগলামি করো না। মন দিয়ে কিছু হয় না। আমি এতিম পুলিশের চাকরিটা করে নিজেকে চালায়। তোমার বাবা-মা তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন আছে তাদের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব তোমার। তাই এসব পাগলামো ছেড়ে দাও। পড়াশোনায় কনসানটেশন করো। ”
” আপনি সবার দিকটা দেখতেছেন আমার দিকটা দেখতেছেন না? ”
” মেঘা এভাবে অবুঝের মতো কথা বলছ কেনো? মেঘ জানলে ব্যপারটা আরো খারাপ হবে। তুমি নিজে একটা বার ঠান্ডা মাথায় ভাবো। তোমার আর আমার সম্পর্ক হওয়ার নয় আর যা হওয়ার নয় তা নিয়ে কথা বা সম্পর্ক বাড়ানোর কোনো মানেই হয় না ”
” আপনি একটা বার মেনে নেন আমি নিজে সবাইকে মানিয়ে দিবো ”
” মেঘা তোমার সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না রাখছি। আর ফোন দিও না ”
রিদ ফোন কেটে দিতেই মেঘা কাদলো না ফোনের দিকে তাকিয়ে রিদের সবটা কথা প্রথম থেকে ভাবলো।।
চলবে ইনশাআল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের রেসপন্সের ওপর ভিত্তি করে বোনাস পার্ট দিবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here