#প্রেমরোগ-৭
#তাসনিম_তামান্না
আঁধার রাতে মরিচবাতি গুলোই সুন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে। শীতল হওয়া ফুলের সুবাসে মুখরিত চারিদিকে। মেঘা ছাদে এসে দেখলো রিদ রেলিং ধরে চাঁদহীন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘা গলা ঝেড়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিলো। রিদ ঘুরে তাকলো না পিছনে না ফিরেই বলল ” কি বলবে তারাতাড়ি বলো আমি ঘুম পাশে। আর বন্ধুর বোনের সাথে আলাদা কথা বলা শোভনিয় দেখায় না। লোকে খারাপ ভাববে ”
” আপনার গলা টা এমন লাগছে কেনো? ”
” একটু ঠান্ডা লাগছে। ”
” আপনার জন্য চা নিয়ে আসবো খেলে ভালো লাগবে ”
” লাগবে না আপাততঃ কি বলার তারাতাড়ি বলো ”
” এতো তাড়া কিসের? সবার বেলায় সময় হয় আমার বেলায় আপনার সময় হয় না ”
” কি বলছ তোমার খেয়াল আছে মেঘা এ কথার মর্মার্থ বুঝো। ঠিক ভাবে কথা বলো ”
মেঘা সময় না নিয়ে রিদ কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। বলল
” আমি আপনাকে ভালোবাসি… খুব বেশি ভালোবাসি ”
রিদ চমকে নিজের থেকে মেঘাকে সরিয়ে একটা চ’ড় মে’রে দিলো। মেঘা হতভম্ব, হতবিহ্বল হয়ে গালে হাত দিয়ে রিদের দিকে ছলছল নয়নে তাকালো। রিদের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে
” কি সমস্যা তোমার মাথার ঠিক আছে? একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে পারো? নির্ল’জ্জ হয়ে গেছো? ”
মেঘা কাজটা আবেগে ভেসে করে ফেলেছে। মেঘা রিদের ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে বলল
” আমি আপনাকে ভালোবাসি রিদ ”
রিদ জোরে জোরে বার কয়েক শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস চালিয়ে বলল
” মেঘা এটা তোমার আবেগ ভালো লাগা এসব ভুলে যাও মেঘা সেটা হওয়ার নয় সেটা নিয়ে ভাবার কোনো মানে হয় না ”
” অর্নাস ফাইনালে ইয়ারে পড়া মেয়েকে বলছেন আবেগ নিয়ে চলি? এটা আবেগ বা ভালোলাগা নয় এটা ভালোবাসা ”
রিদ মেঘার কান্নারত মুখশ্রীর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না অন্যর্ত দৃষ্টি স্থির রেখে বলল
” কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না ”
মেঘার চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু ঝরতে লাগলো ভা’ঙা গলায় বলল
” আমি কি দেখতে এতোটাই খারাপ ? আমাকে ভালোবাসা যায় না? ”
রিদ নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মেঘা চোখের পানি মুছে দৃঢ় কন্ঠে বলল ” আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। এভাবে অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো? ”
রিদ শান্ত কন্ঠে বলল
” মেঘা নিচে যা-ও। এভাবে কেউ দেখলে খারাপ ভাববে ”
” ভাবুক আপনার কি যায় আসে? ”
” ওকে তোমাকে যেতে হবে না আমি ই যাচ্ছি ”
রিদ যেতে নিলে মেঘা রিদের হাত ধরে কাতর কন্ঠে বলল ” একটিবার ভালোবেসে দেখুন আমি কথা দিচ্ছি আপনি যা বলবেন তাই করবো ”
রিদ ঝাড়ি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
” যদি আমাকে এতোই ভালোবেসে থাকো আমার থেকে দূরে থাকবে ”
” আমাকে কেনো ভালোবাসা যায় না? আমার দোষটা কোথায়? ”
” তুমি আমার বন্ধুর বোন তার সাথে আমি বে’ই’মা’নি করতে পারি না ”
মেঘা নাছোড় বান্দা হয়ে বলল
” কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি ”
” আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি ”
মেঘা থমকে গেলো। ছোট হৃদয়খানা খন্ড দিখন্ড হয়ে গেলো। রিদ চলে গেলো মেঘা রিদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো। অন্তস্থল জ্বলছে। জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে। অদৃশ্য অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে ছাদের মাঝখানে বসে পড়লো। ফেলে চলে যাওয়া মানুষটা কি একটি বারও বুঝলো মেঘার বুক ফাটা চিৎকার তার মন অব্দি পৌঁছালো না? তার হৃদয় স্পর্শ করতে পারলো না মেঘার কান্নারত মুখশ্রী?
চোখ মুখ ফুলিয়ে রুমে আসলো মেঘা। কুয়াশা মেঘার জন্য অপেক্ষা করছিলো। মেঘা আসলেই ঘুমিয়ে পড়বে বলে। কিন্তু মেঘাকে বিদ্ধস্ত অবস্থা কক্ষে প্রবেশ করতে দেখে থমকায় কুয়াশা। বিছানা থেকে নেমে রুমের দরজা লাগিয়ে আতংকিত কন্ঠে বলল ” কি হয়েছে তোর? এমন অবস্থা কেনো? কান্না করেছিস? ”
মেঘা কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো। কুয়াশা মেঘাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল ” বল আমায় কি হয়েছে? ”
মেঘা ধীরে ধীরে কুয়াশা কে সব বলল। কুয়াশা সব শুনে এলোমেলো শব্দে বলল ” পাগল তুই? এভাবে কেউ কিভাবে তুই? আমার মাথা কাজ করছে না। তুই আগে শিওর হয়ে নিতি ভাইয়া আগে থেকে অন্য কাউকে ভালোবাসে ”
” না ও মিথ্যা বলছে আমি জানি ”
” মেঘা পাগলামি ছাড় এটা জানাজানি হলে কি হবে ভাবতে পারছিস? রিদ ভাইয়া ঠিকি বলছে মেঘ ভাইয়া জানলে ওদের ফেন্ডশিপটা নষ্ট হবে। তুই নিশ্চয়ই সেটা চাস না। ”
মেঘা মাথা নাড়ালো সে চাই না এটা।
” ঘুমিয়ে পড় রাত হয়েছে। ”
মেঘা ভাঙাচোরা মন নিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু ঘুম আসলো না নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিলো রিদের কথা ভাবতে ভাবতে নিশ্চুপ বোবা কান্না করলো। কুয়াশা মেঘার পাশে শুয়ে মেঘার উসখুস দেখেও কিছু বলল না। নিজেকে নিজে সামলাতে না পারলে অন্য দেওয়ার যুক্তি জ্ঞান ও কাজে আসে না। কেমন তিক্ততা আসে রাগ লাগে।
কুয়াশারও রাতে ঘুম হলো না। মেঘার পাশে শুয়ে একবার ভাবলো তুষার কে ফোন দিয়ে তুষারের রাগ ভাঙিয়ে সব টা বুঝিয়ে বলবে। পর মুহূর্তে সে ভাবনা মুছে ফেলে মনে মনে বলল ” আমার ঠেকা পড়েছে নাকি? হুহ্ আমার রাগ কখনো ভাঙিয়েছে নাকি বুঝেছে। বুঝলেও নিজে রাগ দেখিয়েছে আমি কেনো রাগ ভাঙাবো? পারবো না। “,
রিসিভশন হলো বাগানে সেখানে স্ট্রেজ, প্যান্ডেল করা হয়েছে। কুয়াশা, মেঘাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিচে নিয়ে এসেছে। সকলে ততক্ষণে চলে এসেছে খাওয়া দাওয়া পাটচুকিয়ে কেউ কেউ চলে যাচ্ছে। মেঘা সদ্য ভাঙা হৃদয় নিয়ে সকলের সাথে ভালো ভাবে কথা বলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। রিদ নাকি সকালে চলে গেছে কি নাকি কাজ পড়ে গেছে। মেঘা কথাটা শোনা মাত্র বুঝে ফেলেছে তার থেকে পালিয়ে গেছে রিদ। কুয়াশা আর তুষারের বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে। কেউ ই কারোর সাথে কথা বলে নি। সকল আত্নীয় স্বজন চলে যেতেই। তুষারে মা বলল ” আপা আমি তুতুল মেঘার সাথে কুয়াশা আর মেঘা কেউ ও বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই ”
সকলে সহ মত পোষণ করলো। কিন্তু কুয়াশা আর মেঘা যেতে নারাজ তারা অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো। কিছু বলার সাহস ও পাচ্ছে না কি ভেবে বসবেন কে জানে। অগততা শেষ মেষ কুয়াশা আর মেঘাকেও অনিচ্ছার শর্তেও যেতে হলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম। জানি পার্টটা ছোট হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু করার নাই ভেবেছিলাম আজ দিবো না। মাইগ্রেনের ব্যাথাটা প্রচন্ড বাড়ছে। জানি না কি লিখেছি। আশা করি বুঝবেন। ভালোবাসা নিবেন।