#প্রেমরোগ-৪
#তাসনিম_তামান্না
সকাল ঘুম ভাঙলো দেরিতে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে সাড়ে আটটা বেজে গেলো কুয়াশা নিচে আসার সময় মেঘাকে জাগিয়ে দিয়ে আসছে। বয়স্করা নতুন বউ মাঝখানে বসিয়ে গল্প করছে। কুয়াশার এই ব্যপারটা খুব বিরক্ত হলো। কই নতুন বউ এতো ধকলের পর রেস্ট নিবে তা না। কিন্তু এদেরকে কিছু বলতে গেলে উলটো কুয়াশাকে বিয়াদপ উপাধি দিয়ে দিবে। রান্নাঘরে কেয়া আর মুন্নি ছাড়া কেউ নেই দেখেই বোঝা যাচ্ছে এতো জনের সকালের রান্না ফুল দমে তারা করছে। এখানে এতো লোক বসে গল্প না করে তো কাজে হেল্প করে দিতে পারে কিন্তু তাদের সে বিবেক আছে নাকি। পাখি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে কাটাকুটির কাজ করছে। দুপুর আর রাতেরটা অবশ্য বাবুর্চি দিয়ে করিয়ে নিবে। কুয়াশা রান্নাঘরে গিয়ে বলল
” সকালের রান্নাটাও বাবুর্চি দিয়ে করিয়ে নিলে আর এতো কষ্ট করতে হতো না তোমাদের ”
পাখি বলল
” হ্যাঁ বলেছিল অবশ্য কিন্তু তারা সকালে আসতে পারবে না বলে দিয়েছে ”
” ওহ। আচ্ছা মাম্মা এখানে নতুন বউকে মাঝখানে বসিয়ে তাকে অস্বস্তিতে না ফেললে কি হতো না মামনি তুমি ও কিছু বলছ না ”
মুন্নি কাজের ফাঁকে বলল
” কি বলবো? ”
” কি বলবে মানে দেখছ না ভাবির চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। সকালে কিছু খেতে দিয়েছিলে? ”
” চা আর বিস্কুট খেয়েছে ”
” তাতে কি পেট ভরে না-কি ”
কেয়া মেয়ের ওপর বিরক্ত হয়ে বলল
” কাজের মধ্যে বা হাত ঢোকাস না যা তো তুতুলকে ওপরে নিয়ে যা ওর একটু রেস্টের দরকার ”
কেয়ার কথাটা জোরে-ই বলল যাতে ড্রাইয়ংরুমে বসে থাকা মানুষ গুলোর কানে যায়। কুয়াশাও মায়ের কান্ডে হেসে ফেললো। মুন্নি বলল
” আরেকটা নবাবজাদি কই? ”
” আসছে ”
” তুই তুতুল কে নিয়ে ওপরে যা আর মেঘা কে এসে ওদের খাবার ওপরে নিয়ে যেতে বল তোরা ওপরে বসে খা তাতে তুতুলটাও একটু ভালো করে খেতে পারবে ”
” আচ্ছা মামনি ”
কুয়াশা তুতুল কে নিয়ে ওপরে চলে গেলো। কালকের প্লান অনুযায়ী সকলে সকালে খেয়ে কেয়া মুন্নি থেকে পারমিশন নিয়ে দুপুরের দিকে বেরিয়ে পড়লো। কেয়া মুন্নি অবশ্য তুতুলকে যেতে দিতে চাই নি কিন্তু ছোটদের জোড়া-জাড়ি রাজি হতেই হলো। এতে যে আত্মীয় স্বজনরা ভালো চোখে দেখে নি সেটা তাদের এক এক জনের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।
তুষার বাসা থেকে রেডি হয়ে বের হওয়ার সময় তিশাকে বলল
” আম্মু আমি বের হচ্ছি দুপুরে বাইরে খেয়ে নিবো ও বাড়ি থেকে ওরাও আসছে ”
তিশা ভাইয়ের বউদের সাথে কথা বলছিলো। উঠে তুষারকে সাইডে এনে বলল
” শোন কাল কিন্তু আমি কুয়াশার চোখে পানি দেখেছি। আর এটাও জানি তার কারণ টা তুই। আমি চাই না বাচ্চা মেয়েটা কষ্ট পাক এমনিতেই তুই ওকে কম জ্বালাস নি ”
তুষার ভ্রু যুগল কুচকে বলল ” তোমাকে এসব কে বলেছে আম্মু? ঔ মেয়ে? ”
” ঔ মেয়ে কাকে বলছিস তুই? তুই কি ভুলে গেছিস সি ইজ ইউর… ”
তিশার পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে তুষার বলল
” আম্মু স্টপ এখানে থেমে যাও যে এই সম্পর্ক মানে না সেই সম্পর্ক তার কাছে কোনো মূল্য নেই সম্পর্কে আমি কোনো কথা শুনতে চাই না যে দিন সে এই সম্পর্ক মানবে সেদিন আমিও এই সম্পর্ক টা মেনে নিবো ”
” তাহলে এই সম্পর্ক টা জোর করে কেনো বাঁধতে আমাদের বাদ্ধ্য করছিলি? মেয়ে ছোট সময় দে ভালো ভাবে কথা বল ঠিক মানবে ও ”
” আম্মু আমার এসব কথা বলতে বা শুনতে মোটেও ইচ্ছে করছে না ”
তুষার চলে যেতেই তিশা একটা হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করলো।
সকলে মিলে পুরান ঢাকা আসলো এখানে এসে তুষারও সাথে মিলিত হলো। খাওয়া-দাওয়া জন্য পুরান ঢাকা বেস্ট। সকলে একটা রেস্টুরেন্টে ডুকলো সকলে মিলে ১৭ জন আরও কয়েকজনের আসার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে আসতে পারে নি। ঈশান, অনু, রাহুল ও বাদ পড়ে নি। সবচেয়ে বড় টেবিলটায় ওরা বসলো। দু এক জনের জায়গা না হলেও অন্য টেবিল থেকে চেয়ার টেনে বসেছে। সকলে তার পছন্দ মতো খাবারের নাম বলল তার মধ্যে থেকে বাছায় করে মোমোস, চিকেন, পাস্তা, পিৎজা, বার্গার, কোক, জুস অর্ডার করলো। কুয়াশা তুষারের মুখোমুখি বসেছে। শুধু চোখে চোখ পড়ে যাচ্ছে তাতে অবশ্য তুষারের কোনো যায় আসছে না পাশে বসা মেঘার খালাতো বোন পায়েলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। এতে কুয়াশা মনে মনে ফুঁসে উঠছে। কুয়াশা মনে মনে তুষারকে বকতে লাগলো ” ইই শ’য়’তা’ন একটা আমি অন্য ছেলেদের সাথে নাচলে কথা বললে বাবুর খুব জ্বলে এখন যে দিব্বি অন্য মেয়ের সাথে কথা বলছিস তাতে কিছু না আমি বললেই দোষ হুহ্ ঢং। আবার আমি কিছু বলতে গেলো আমাকে রোস্ট বানিয়ে ছেড়ে দিবে। হুহ্ আমিও অন্য ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলবো দাঁড়া ”
তখন-ই কুয়াশার ফোনে ফোন আসলো সকলে যে যার মতো কথা বলছে কুয়াশা উঠে গিয়ে ফোনটা ধরলো উমা ফোন দিয়েছে। সালাম বিনিময় করে।
” উমা কি হয়েছে? তোমার গলাটা কেমন লাগছে? শরীর খারাপ নাকি কান্না করছ? ”
” মন খারাপ আপু। ঈশান কি আমার প্রতি কখনো একটু সিরিয়াস হবে না? আমার বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করছে আপু। ঈশান কি আমাকে ভালোবাসে না আপু? ”
বলে কাঁদতে লাগলো। কুয়াশা উমাকে শান্ত হতে বলল। কিন্তু উমা কেঁদেই চলেছে।
” দেখ উমা কেঁদো না কাঁদলেই কি সমাধান মিলবে? আর তোমাদের তো প্রতি বার ঝগড়া হয় আমার রিলেশনে যাও এবার এমন কি হলো যার জন্য দু’জন দু-জনের সাথে কথায় বলছ না অথচ কষ্ট পাচ্ছো। ”
” আপু আমি কিছু জানি না তুমি ঈশান কে বললো চাকরি জোগার করতে বেকার ছেলের হাতে নিশ্চয়ই আমার বাবা তার মেয়েকে তুলে দিবে না ”
” এভাবে কেনো বলছ উমা চাকরি টা মুখের কথা নয় এখন অনেকে পড়াশোনা শেষ করে ও চাকরি করছে না সেখানে ঈশান এখনো অর্নাস শেষ করতে পারলো না। তোমার আব্বু আম্মু কে বোঝাও আর কয় মাস পর ই তো আমাদের এক্সাম তার মধ্যে আমি ঈশানকে জবের জন্য বলবো আমি তোমার ব্যপারটাও বুঝতে পারছি ”
” আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করছি আপু তুমি একটু ঈশানকে সিরিয়াস হতে বলো না হলে আমাকে হারাতে হবে বলে দিলাম ”
উমা ফোন রেখে দিলো কুয়াশা চিন্তিত হয়ে চেয়ারে গিয়ে বসে ঈশানের দিকে তাকলো। ঈশান সকলের সাথে মজা করছে হাসিমজায় মেতে আছে। কুয়াশা ঠিক করলো ঈশান চলে যাবার আগে কোনো একসময় ফাঁক করে ঈশানকে বোঝাবে। মেঘা কুয়াশার পাশে বসে ফিসফিস করে বলল
” কে ফোন দিয়েছিল? ”
কুয়াশা ও ফিসফিস করে বলল
” উমা ”
” কেনো কি হয়েছে? ”
” ওর বাসা থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে। ”
” তাহলে এখন কি হবে? “।
” জানি না দেখা যাক কি হয় ”
রিদ বলল ” কুয়াশা মেঘা কি ফিসফিস করছ আমাদের কেও বলো আমরাও শুনি ”
কুয়াশা বলল ” তেমন কিছু না ভাইয়া ”
রিদ বলল ” তো তোমরা কবে বিয়ে করছো? ”
মেঘা নিজ মনে বিরবির করে বলল ” আপনি রাজি থাকলে এখনি ”
কেউ না শুনলেও কুয়াশা শুনে ফিক করে হেসে রিদ কে বলল ” আপনি বড় আপনার বিয়ে তে মজা করে নি আগে ”
” তাহলে তো আমার বিয়ে আগে করতেই হয় শুভ কাজে দেরি কিসের? ”
” আমাদের ভাবি কি ঠিক করা আছে না-কি? ”
” নাহ। সেটা খোঁজার দায়িত্ব তোমাদের দিলাম ”
মেঘা আবার বিরবির করে বলল ” খোঁজার কি দরকার সামনেই তো আছে চোখে কি নেবা হয়েছে কানা কোথাকার ”
চলবে ইনশাআল্লাহ