#প্রেমরোগ-৩
#তাসনিম_তামান্না
সময়টা দুপুর মেঘলা আকাশ শীতল হওয়া বইছে। মেঘের আড়ালে ক্ষনে ক্ষনে সূর্য উঁকি মারছে। তুষার কুয়াশাকে সেন্টারের বাইরে পুল সাইডে আনলো। এদিকটা ফাঁকা সকলে খাবারের, বর-কণের দিকে। তুষার পুলের পানিতে পা ডুবিয়ে বসলো। কুয়াশা তখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। তুষারের মতিগতি ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ও। কুয়াশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তুষার বলল
” কি হলো দাড়িয়ে আছো কেনো? ”
কুয়াশা বুঝতে না পেরে বলল
” তো কি করবো? ”
তুষার অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলল
” আমার মতো করে বসো ”
কুয়াশা বিনাবাক্যব্যয়ে জুতা খুলে প্যান্ট পাজামা উঁচু করে নিলো যাতে ভিজে না যায়। তুষারের থেকে বেশ দূরত্ব নিয়ে বসলো। তুষার সেটা আড়চোখে দেখেল কিছু বলল না।
চুপচাপ নিরবতা নিয়ে বসে আছে দুজন কুয়াশা আজ তুষারের সাথে গল্প করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু কিছু বলবে বলবে করেও বলতে পারছে না। কোনো এক অজানা অদৃশ্য হাত এসে গলা চেপে ধরেছে যেকোনো কথায় মুখ দিয়ে বের হতে চাইছে না। তুষার ফোনে কি জানি করছে আর কুয়াশা চুপচাপ বসে পা দিয়ে পানি নাড়াচাড়া করছে। কুয়াশা দম দিনে হুট করে প্রশ্ন করলো
” আপনি কবে চলে যাবেন? ”
তুষার ফোনে চোখ রেখে ভ্রু কুঁচকে বলল
” কেনো আমি চলে গেলেই বেঁচে যাবে আমার দৃষ্টির সীমানার বাইরে। সেটা তোমার সম্পূর্ন ভুল ধারণা ”
তুষারের কথায় কুয়াশা টাস্কি খেলো যেনো। সে একটা সাধারণ কথা জিজ্ঞেসা করলো। তার কথায় তাকে পেচিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলল। কুয়াশার প্রচন্ড রাগ লাগল। রাগ নিয়ে ঝাঁজ মেশানো গলায় বলল
” আপনি আমার কথার উলটো পালটা মিনিং বের করছেন কেনো? আমি তো জাস্ট সাধারণ একটা কথা জিজ্ঞাসা করলাম আর আপনি… ”
তুষার ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো বলল
” ভুল তো কিছু বলেছি বলে আমার মনে হয় না। আমি না থাকলে তোমার পাখা গজায় আজকাল আমার সামনেই আবার তোমার পাখা গজাচ্ছে ”
কুয়াশা তুষারের খোঁচা মারা কথায় মেজাজ গরম হতে লাগলো। কথায় কথা বাড়বে কুয়াশা উল্টো পাল্টা কিছু বললে তুষার নিশ্চয়ই ছেড়ে দিবে না উল্টো থা’প্প’ড় বসিয়ে দিবে। কুয়াশা শান্ত কন্ঠে বলল
” আপনার কি আমাকে কিছু বলার আছে? না থাকলে আমি যাচ্ছি। এখানে বসে মেজাজ গরম করার কোনো মানে দেখছি না ”
” বাবাহ। তোমার আবার মেজাজ ও আছে না-কি? ”
কুয়াশার রাগে কান্না পেলো উঠে যেতে নিলে তুষার কুয়াশার হাত ধরে আটকে দিলো। কুয়াশা তুষারের দিকে না তাকিয়ে-ই বলল
” ছাড়ুন আমার হাত ব্যথা পাচ্ছি ”
” ভালো ”
” আমাকে কষ্ট দিয়ে আপনি শান্তি পান ”
” তুমি নিজের কষ্ট নিজেই ডেকে আনো এতে আমার কোনো হাত নেই ”
কুয়াশা শক্ত চোখে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল
” কাল রাতে আপনি আমার রুমে এসেছিলেন তাই না? ”
তুষার হাসলো কুয়াশা সেই হাসির দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না চোখ সরিয়ে নিলো। হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও পারলো না। হাতে খামছি দিলো, চিমটি দিলো তবুও তুষার ছাড়লো না হাতে দাগ হয়ে গেলো। শক্ত কন্ঠে বলল
” জঘন্য নিকৃষ্ট মানুষ হয়ে যাচ্ছেন আপনি। বিদেশে গিয়ে মেয়েদের সম্মান করতে ভুলে গেছেন? ছিঃ আপনার প্রতি আমার… ”
তুষার শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল
” কথাটা শেষ কর ”
কুয়াশা দমে না গিয়ে বলল
” আপনার প্রতি আমার ঘৃণ্য আসছে ”
তুষার কুয়াশার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল
” আর চোখের সামনে থেকে যা ”
তুষারের তুইতোকারিতে কুয়াশার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো। ওখানে আর না দাঁড়িয়ে দৌড়ে চলে আসলো। পুরো অনুষ্ঠান কুয়াশা আর তুষারের ধরে কাছেও যায় নি। অবশ্য দু’জনের চোক্ষাচোক্ষি হয়েছে বেশ কয়েকবার।
তুতুলে বিদায়ের সময় এই প্রথম কুয়াশা তুষারের চোখে পানি দেখেছে। নিজেরও কষ্ট হচ্ছিল তুতুল তুষারের কান্না দেখে। তাকেও তো এভাবে পরিবারের সকলকে ছেড়ে যেতে হবে তখন কি সে এভাবে এতো ভালোবাসা মানুষ গুলোকে ছেড়ে থাকতে পারবে? বিদায়ের পর সকল নিয়ম-কানুন এর পর সব কাজিন আর মেঘের ফেন্ডরা মিলে মেঘের বাসর রাতের দরজা ধরলো টাকা বা দিলে মেঘকে ডুকতে দেবে না মানে দেবেই না। মেঘা লজ্জায় লাল নীল হয়ে কোনো কথায় বলতে পারছে না কুয়াশা এটাতে বেশ মজা নিচ্ছে। অবশেষে টাকা দিয়ে রুমে ডুকে দরাম করে দরজস লাগিয়ে দিলো। মেঘের ফেন্ডরা বলল
” শা’লা এতো তারাহুরোর কি আছে? এখনো অনেক সময় আছে ”
মেঘের দেওয়া টাকা নিয়ে সকলে গোল হয়ে বসে বলল
” এই টাকা নিয়ে কি করা যায়? ”
” আজ রাতে সাদে পার্টি ”
রিদ বলল
” উহুম এমনিতেই সকলের ওপর ধকল গিয়েছে রেস্ট নেওয়ার সময় পাই নি কেউ রাত জাগা ঠিক হবে না ”
” তাহলে কি করবি? ”
রিদ ভেবে বলল
” কাল যেহেতু সকলে এখানে আছিস কাল সকলে মিলে বাইরে খেতে গেলাম। মেঘ, তুতুল কেউ সাথে নিলাম আর তুষার কেউ সাথে নিলাম কি বলিস তোরা ”
কুয়াশা দূর্বল কন্ঠে বলল
” ঠিক বলেছেন ভাইয়া আজ প্রচুর টায়ার্ড লাগছে। যা কারার কাল করা হোক ”
সকলে সহমত পোষণ করলো। সিদ্ধান্ত হলো পৌশু যেহেতু বৌভাত তাই কাল সকলে মিলে বাইরে খেতে গেলো আর টাকা যা কম পড়বে রিদ দিবে।
টায়ার্ড হয়ে রুমে আসলো কুয়াশা আর মেঘা আজ একসাথে ঘুমাবে। মেঘা মুখ ফুলিয়ে আছে তার রুম ছেড়ে আসছে ইচ্ছেই করছিল না কিন্তু কালকের তুলনায় আজ আত্নীয় স্বজন বেশি হওয়ায় রুম ছাড়তেই হলো। কুয়াশা মেঘার কষ্টে কষ্টিত না হয়ে তাতে ঘি ডেলে বলল
” আহারে কষ্ট হচ্ছে না-কি মেঘুবেবি ”
” এই একদম আমার সাথে কথা বলবি না ”
” বললাম না হুহ্ তোর সাথে না কথা বললেও আমার দিন যাবে ”
” হুহ্ ঢং ”
” হ্যাঁ জানি তুই ঢংগি তাই ঘুমা জ্বালাস না খুব টায়ার্ড ”
মেঘাও আর কথা বা বাড়িয়ে শুয়ে পড়লো।
চলবে ইনশাআল্লাহ
[ ]