তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি পর্ব ২৯

0
390

#তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_২৯
-আমি বলেছি তুমি ওই পয়েন্ট গুলোর মধ্যে থেকে কিছু একটা ধরে নাও। একটা বারও বলিনি তোমায় সত্যি সত্যি ভালোবাসি। খামোখা সব সময় এক প্রশ্ন ভালোলাগে না, মন মতলবি একটা উত্তর ধরে নাও।
-জানেন আজ অব্ধি আমাকে যারা যারা মন থেকে ভালোবেসেছে তাঁরা প্রত্যেকেই মরে গেছে। আমি যাদের ভালোবেসেছি তাঁরাও মরে গেছে। আমি ভয়ে থাকি মামা, মিমি, দ্বীপ, তাপসিন ওরা যে আমাকে এতো ভালোবাসে ওদের না আবার কিছু হয়ে যায়। আমার বর্তমান পৃথিবীতে তো কেবল ওরাই আছে শুধু।আমার ইচ্ছে করে ওদের থেকে অনেক দূরে চলে যাই, আমার যা ইচ্ছে হোক,ওরা বেঁচে থাকুক। আমি তো একটা কুফা নিজের জীবনটা আঁধার করে দিয়েছি, ওরা তো আমার আপনজন আমার ছায়া ওদের উপর পড়ে কিছু যেনো না হয়ে যায় আবার!

কথা গুলো বলতে বলতে চোখের কোণে পানি জমে গেলো মিশানের,মন মরা হয়ে বললো কথা গুলো।
মিশানের কথার ভেতর না ঢুকে, তীব্র গাড়ি থামিয়ে বললো,
-রাস্তায় নামবে নাকি বাড়িতে দিয়ে আসবো?
-রাস্তায় ই নামিয়ে দিন স্যার,আজ বাড়ি অব্ধি যাওয়াটা ঠিক হবে না। আমাকে এখানেই নামিয়ে দিন।
-যেতে পারবে তো?
-পারবো স্যার, না যেতে পারলেও সমস্যা নেই। আমি মিশান যেখানে রাত, সেখানেই কাত।
মিশান সীট বেল্ট খুলতে খুলতে, তীব্র ওকে ক্রস করে গাড়ির ডোর ওপেন করে দিলো।
মিশান নেমে গিয়ে ঢোলতে ঢোলতে হাঁটতে লাগে, বাড়ির কাছাকাছি রাস্তায় নামিয়ে দিলেও মিশান রাস্তার ঠিকানা তালগোল পাকিয়ে ফেলে, নেশার প্রভাবটা একটু একটু করে বাড়ছে।

প্রায় ঘন্টা খানেক সময় ধরে মিশান বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে হেঁটে কোথায় চলে আসে নিজেও জানে না। তবে এতে মিশান একটুও ঘাবড়ে যাচ্ছে না। বরং ভালোই লাগছে এলোপাথাড়ি হাঁটতে।

-ম্যাডাম দেহেন রাস্তা দিয়া তো অইটা মাইয়া মানুষ যাইতাছে!
সিনজিতে চলমানরত এক মধ্যবয়সী নারী আরেক নারীকে বললো কথাটা, মুখ ভর্তি পান চিবাতে চিবাতে অপর নারীটি সি এন জি ড্রাইভারের পাশে বসা একজন পুরুষকে বললো,
-ভাইজান মাইয়াডার মুখে লাইট মারেন দেহি, চেহারা সুরত কেমন।

ড্রাইভারের পাশে বসা লোকটা মুখের পানের পিক ফেলতে ফেলতে চলন্ত সি এনজি থেকে মিশানের মুখে লাইট মারলো।
মিশানের চেহারা দেখে মহিলাটা সন্তুষ্ট হয়ে বললো,
-ওরে রে লা জবাব! মাইয়া তো না সাক্ষাৎ পরী নাইমা আইছে আকাশ থিকা। ভাইজান দেখছেন আমাগো কয়দিন যেমন খরা যাইতাছিলো আইজ এই মাইয়ারে পাইয়া আমাগো সব খরা কাইটা যাইবো। এই মাইয়ারে দেশি গুলার কাছে দেওন যাইবো না, দেশী কাস্টমার গো অতো ট্যাকা নাই এই মাইয়ারে কেনার মতো।এই মাইয়ারে পাঠামু বিদ্যাশে, চাইরমোর দিয়া বিদ্যাশী কাস্টমার থাকবো আর দামাদামি করবো, এরে পাওয়ার লেইজ্ঞা দাম খালি বাড়তেই থাকবো বাড়তেই থাকবো।দেখছেন নি ভাই কি চেহারা সুরত মাইয়ার!
-আহা! রূপজান কথা কম কইয়া মাইটারে তুইলা আনার ব্যবস্থা করো আগে, এহন রাস্তায় একা একা আছে,কহন আবার ক্যারা নগে খাড়িয়্যা যাইবো।ঢাকা শহরে গাহেকের অভাব নাই কিন্তু,আমাগো মতো আরো দশটা দল এই গলীতে ঘুরতাছে।তাই কেউ নেওয়ার আগে, আমাগো ভাগে আনো এইডারে।
-ঠিক কইছেন ভাইজান।এডারে এহনি ধরতাছি।গাড়ি থামাও মনু, মালেকা তুই নু আমার লগে।

সি এনজি থামানোর পর পর দুই মহিলা মিশানের দিকে যেতে লাগলো, মিশান তো মিশান ই, কোনো তালে নেই।আশেপাশে দুজন মহিলা যে ঘুরঘুর করছে সেটা খেয়াল করছে না।

মহিলা দুজন বেশ স্বাস্থ্যবানও, মিশানের কাছে যেতেই কোনো শব্দ না বাড়িয়ে একজন মিশানের পেছন থেকে কিছু একটা দিয়ে চোখ বেঁধে দেয় আরেকজন রুমালে ক্লোরোফরম লাগিয়ে মুখে চেপে ধরে।

এরপর মিশানকে তুলে নিয়ে সি এনজির ভেতরে নিয়ে ওদের এলাকায় চলে যায়। আর মিশান যেনো পালাতে না পারে সেজন্য ঘরের বাইরে থেকে তালা মেরে রাখে।
একটা খাটে অবচেতন অবস্থায় পড়ে থাকে মিশান।

বেশ কয়েক ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে আসার পর মিশান চোখ খুলে চারদিকে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পায় সম্পূর্ণ একটা অচেনা জায়গা।
একটা চাপা খুপরির মতো ছোটো ঘর, ঘর ভর্তি বিভিন্ন নায়িকার আপত্তিকর ছবি টাঙানো চারপাশে। কিছুক্ষণ দম ধরে বসে থেকে জায়গাটা আইডিয়া করতে লাগলো ঠিক কোন জায়গায় আছে এই মুহূর্তে।
ঘরটাতে ওকে বন্দী করে রাখা হয়েছে বুঝা গেলো,কোনো মতে ঘরে এনে বিছানায় রেখে চলে গেছে,পায়ের জুতোটা অব্ধি খুলে দেয় নি।
একটা প্যান্টের সাথে টপস পড়ে তার উপর কটি পড়া ছিলো মিশান,জামা কাপড়ের কোনো হেরফের হয় নি।
মাথা দু চারটা ঝাঁকি দিয়ে পরিস্থিতিও আন্দাজ করতে পারলো।কাউকে যে কল দেবে সে অবস্থাও নেই,ভুলে মোবাইল টা বাড়িতে রেখে বেরিয়েছিলো।

বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বাইরে থেকে দরজার তালা খোলার আওয়াজ পেয়ে মিশান খাটে পা ঝুলিয়ে বসলো।
সেই দুজন মহিলা ভেতরে প্রবেশ করলো, দেখতে একটু উদ্ভট লাগছে, মুখ ভর্তি পান ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, চোখে মোটা কাঁজল,ভ্রুঁ গুলো চিকন। সাজসজ্জার পরেও কেমন যেনো দেখাচ্ছে, মিশান বিকৃত দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলো, মহিলা দুজনের পেছনে আরেকজন পাঞ্জাবী পড়া গলায় মাফলার জড়ানো লোক সেও পান চিবাচ্ছে।মিশান এদের দেখে একটুও ভয় পাচ্ছে না।

পা নাচাতে নাচাতে তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-কি মাইয়া অমন কইরা চাইয়া আছো ক্যান?কাইন্দা দিব্যা নাকি পলিয়া যাইবা?
-একটু আদা চা হবে?
মিশানের চোখে ছুটাছুটির জন্য উত্তেজনা না দেখে উল্টো ওর মুখে চা চাওয়ার কথাটা তাদের চোখে খুবই বেমানান লাগলো। একজন আরেকজনের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বললো,
-আদা যা খাইবা?
শান্তস্বরে মিশান উত্তর দিলো,
-দিলে খুশি হবো।
-মালেকা যা তো আদা চা লইয়া আয় ।

মিশানের দিকে ঘুরে রূপজান জিজ্ঞেস করলো,
-শুধু আদা চা ই খাবা?
-ও হ্যাঁ চায়ে একটু লেবুর রসও দিয়েন, আর হ্যাঁ সুগার দিয়েন না।

রূপজান হেসে দিয়ে তাঁর পাশের লোকটাকে বললো,
-দেখলেন ভাইজান, এহনকার যুগের মাইয়া, ডায়েট না কি জানি কি করে চিকন থাকবার লেইগা।
লোকটা মিশানের দিকে তাকিয়ে আতেল আতেল হাসি দিচ্ছে।
একজন চা আনতে গেলো আর বাকি দুজন মিশানের সামনে বসলো,
মিশান আরাম করে বসে চারদিকটায় মাথা ঘুরাচ্ছে। দুজনেই মিশানের দিকে তাকিয়ে ওর হাব ভাব বুঝার চেষ্টা করছে। মিশানকে বেশ ঠান্ডা মেজাজের দেখা যাচ্ছে চোখে মুখে কোথাও এক ফুটা উত্তেজনা ভয় দেখাচ্ছে না, একটাবার জিজ্ঞেসও করলো না কোথায় আছে, ওকে এখানে কিভাবে কেনো আনা হয়েছে, সেসব বিষয়ে মিশানের ভেতর থেকে কিঞ্চিৎ আগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছে না।
মিশানকে চা এনে দেয়ার পর পা নাচাতে নাচাতে চা খাচ্ছে। মিশানের এমন ঠান্ডা মেজাজ কোনো ভাবেই তাদের ভেতর শান্ত রাখতে পারছে না, প্রতি সেকেন্ডে তাঁরা বিব্রতকর অবস্থায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আজ অব্ধি যতো গুলো মেয়ে ধরে এনেছে তাঁরা প্রত্যেকেই কান্নাকাটি ছুটাছুটি করেছে। এই প্রথম দেখলো কোনো মেয়েকে এভাবে শান্ত হয়ে বসে থাকতে।রূপজান মিশানকে প্রশ্ন করলো,
-তা তোমার নাম কি গো?
-মিসাইল।
-হি হি হি এইটা আবার কোনো নাম হইলো নাকি, এইরকম কারো নাম হয় নাহ।
-কারো হয় না বলে আমারও হওয়া যাবে না সেরকম কোনো নিয়ম আইন আছে?
-সে যাক গে,নামটা মানলাম । তা তুমি এতো রাইতে একা একা হাঁইটা কই যাইতাছিলা?বাড়ি থিকা রাগ কইরা বাইরাইছিলা?
-নাহ ঘুরতে বেরিয়েছিলাম।
-এতো রাইতে কেউ ঘুরতে বাইর হয় নাকি।
-কেউ হয় না, আমি হই।
-পাগল নাকি এরা!আমি তো নেশা করে মাতাল হয়ে ছিলাম।হুঁশ জ্ঞান কিছুই ছিলো না, দেখে কি কিছুই বুঝে নি নাকি, আমি স্বাভাবিক ছিলাম না।
মনে মনে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে গত রাতে কি হয়েছিলো সেটা আবার মনে করার চেষ্টা করলো।
মিশান যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো তখন ওরা এক প্রকার তাড়াহুড়োর মধ্যেই ওকে কিডন্যাপ করে, মিশান মাতাল না সুস্থ সেটা দেখার সময় ছিলো না।

চা খাওয়া শেষ হওয়ার পর মিশান কাপটা সাইডে রেখে দিলো।
-চা টা বেশ ভালো ছিলো,আমি এখানে প্রায় ই আসবো এই চা খেতে। মাথা অনেক হাল্কা লাগছে,
-আরেক কাপ খাবা?
-নাহ!অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। খাবার যতোই মজা হোক, একবার খেলেই ভালো লাগে, বার বার না ।তারপর বলো তো আমি এখানে কি করে এলাম? আমি ঠিক মনে করতে পারছি না, জায়গাটা কোথায় সেটাও জানি না, তবে চারপাশের পরিবেশ দেখে আন্দাজ করতে পারছি । তোমাদের চেহারা আর বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছে প্রস্টিটিউড।
– বাংলায় কও, ইংরাজি বুঝি না।
-পেটের দায়ে শরীর বেচাবেচি চলে।
রূপজান মুখে পান থাকা সত্ত্বেও আরেকটা পান মুখে দিতে দিতে বললো।
-ভালো বুঝছো মাথায় বুদ্ধি আছে।দুই একের মধ্যে আমাগো মতো তোমার জীবনডাও হইয়া যাবো, দুপুর বেলা খদ্দের আইতাছে দেশের বাইর থিকা।
-ওওও আচ্ছা,তা কোথা থেকে?
-মেলা দেশে থিকা আইবো, যে দাম বেশি দিবো তাঁরাই নিবার পারবো। তোমার দামাদামি হবো, চড়া দামে বেচার উদ্দেশ্য আমাগো।
একটু পরে সাজানের মানুষ আইবো,ভালোমতো সাইজা গুইজা তৈওরী অও।তোমার চেহারা সুরত ভালো, ভালো জায়গায় যাইবার পারবা,আমাগো চেহারা ভাল না তাই এই শহরে ছোট্ট একটা পতীতা পল্লিতে পইড়া আছি।
-আমাকে কি আপনারাই ধরে এনেছিলেন?
-হ।

মিশান কোনো রেসপন্স না দিয়ে, বিছানায় পা তুলে বসে । পা থেকে জুতো খুলে জুতার ভেতর থেকে কিছু জিনিস বের করলো।স্প্রিং, ছোটো বড় স্ক্রু , আরো নানান রকম ছোটো খাটো জিনিস, পায়ের গোড়ালির কাছে প্যান্টের ভাঁজ খুলে আরো কিছু জিনিস বের করলো।
সব কিছু এবার একটু একটু করে সেট করে কিছু একটার রূপ দিতে যাচ্ছে। মিশানের কারসাজী তিনজন মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে দেখছে, মিনিটের মধ্যেই বস্তুগুলো এক করে পিস্তলের রূপ দিলো, সবার চোখ উল্টে যাওয়ার দশা। কি থেকে কি বানালো।
এরপর মাথার চুল গুলো থেকে মোটা গার্ডার খুলে ফেলার পর ঝরঝর করে বেশ কয়েকটা বুলেট বের হলো।
-এই বুলেট গুলোর ভেতরে যে গান পাউডার গুলো আছে সেগুলো আমার থেকে তেজস্ক্রিয় কেনো জানেন?
আমার মাথা অলটাইম থাকে হট তার ওপর যদি এরকম মাথার মধ্যেই বন্দী থাকে জিনিস গুলো,তাহলে ঘটনা কোথায় দাঁড়াতে পারে?
– মা মা মা মানে! এই মেয়ে এই সব খেলনা দিয়া আমাগো ডর দেহাইবার চাইতাছত?জানস ক্যারা আমি?
এই এলাকার সরদারনী আমি।
– আর আমি কি সেটা আমি কাজের মাধ্যমেই দেখিয়ে দিচ্ছি।
বুলেট গুলো লোড করে। ওদের দিকে তাক করে বললো,
-খুব বেশি ভাল হতো যদি একটা বুলেট একাধিক বার ব্যবহার করতে পারতাম। কতোই না ভালো হতো তাই না? টাকা পয়সার খুব অভাব রে।
সে যাই হোক। ঘটনা সেটা না এখন কথা হলো, আমার গান থেকে যতগুলো বুলেট তোদের পেটে যাবে, ততোগুলোর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে আমাকে।
-রাজি?
তিনজনেই হাত উঁচু করে মিশানের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বেরুনোর শক্তি নেই।
-এই পাঞ্জাবী এদিকে আয়!

লোকটা কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়িয়ে মিশানের সামনে দাঁড়ালো ,
-জি জ্জি ম্যাডাম!
-তোর প্যান্টের বেল্ট খুলে এই দুটোকে পিটাবি।যতক্ষণ না আমি থামতে বলবো,তুই তোর কাজ চালিয়ে যাবি, যদি থেমে।যাস প্রতি সেকেন্ডে তোর পেটে একটা করে গুলি তোর পেটে যাবে ।
চল কাজে লেগে পর।

লোকটা কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টের বেল্ট খুলে, মহিলা দুটোকে পেটানো শুরু করলো।মহিলা দুটো একেকটা বেল্টের বাড়ি খেয়ে লাফাচ্ছে আর চিৎকার করছে” ওমা, ও বাবা গো বাঁচাও” বলে।

ওদের চিৎকার শুনে আশেপাশে থেকে অনেকে ছুটে এসেছে। মিশান পিস্তল নাচাচ্ছে, আর সামনে সরদারনী রূপজান আর তাঁর এসিস্ট্যান্ট মালেকা মার খেয়ে সাপের মতো আকুপাকু, বেচারা লোকটা না চাইতেও মারধোর করছে প্রাণের ভয়ে।
যাদের কিডন্যাপ করে ধরে এনে জোর করে এই পেশায় আনতে বাধ্য করেছে, তাঁরা যেনো এই দিনটির ই অপেক্ষায় ছিলো। পতীতা পল্লিতে সাধারণত সরদারনী রা অনেক অত্যাচার করে কর্মীদের উপর।একদিন টাকা কম জমা পড়লে তাঁর উপর নির্যাতন ও করা হয়।শারীরিক প্রহার করার হয়।

মার খেয়ে যখন আধমরা হয়ে পড়ে যায়
মিশান তখন উঠে দাঁড়ায়।
অই লোকটাকে বলে এবার নিজের গায়ে নিজে আঘাত করতে, বাধ্য হয়ে এরপর নিজের গায়ে আঘাত করতে লাগলো আর চিৎকার করতে লাগলো। সবাইকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে মিশান বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে,আর সকল কর্মীদের উদ্দেশ্যে বললো,
-যাদেরকে এখানে জোর করে ধরে আনা হয়েছে, যারা এখানে থাকতে ইচ্ছুক না, নতুন ভাবে বাঁচতে ইচ্ছে যাদের,
তাঁরা চাইলে বেরিয়ে চলে যেতে পারে এখান থেকে,কেউ কিছু বলবে না, শুধু আমাকে ফলো করলেই হবে। শর্ত একটাই শরীর মুখ ঢেকে বের হও যেনো সাধারণ মানুষ তোমাদের দেখে নিচু নজরে না তাকায়।

এটা বলেই মিশান হাঁটতে লাগলো, মিশানের পিছু পিছু সবাই না বেরিয়ে গেলেও, বেশ কয়েকজন বেরিয়ে গেলো, যাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই জীবনের কাছে হেরে গেছে যারা, তাঁরাই রয়ে গেলো এখানে।
যারা নতুন ভাবে বাঁচার তীক্ষ্ণ আশা নিয়ে বেঁচে ছিলো তাঁরাই মিশানের পিছু নিলো ।
বাড়ির কলিংবেল বাজতেই মিশানের মামী গেট খুলে দিয়ে দেখলো
মুখ শুকনো করে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিশান।মিশানকে দেখে মিশানের গালে হাত জড়িয়ে বললো,
-মা তোর মুখ শুকনো লাগছে কেনো?রাতে কোথায় ছিলিস?জানিস তোকে কত খুঁজাখুঁজি করেছি?মোবাইলটাও বাড়ি রেখে চলে গিয়েছিস।রাতে হঠাৎ একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ছিটকে যাই।ঘুম থেকে জাগানা পাওয়ার পর তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করলো। বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে দেখি, তুই ঘরে তো নেই ই পুরো বাড়িতেও নেই।কোথায় গিয়েছিলিস মা?
-হাঁটতে বেরিয়েছিলাম রাতে,ভালো লাগছিলো না।
-কোথায় গিয়েছিলিস?ফিরতে এতো দেরি হলো যে?এতো রাতে কেউ বের হয় এভাবে? আমার মাথা শেষ হয়ে গেছে তোর চিন্তায়!
-কিডন্যাপ হয়েছিলাম হয়েছে? এবার আমাকে একটু খেতে দাও কিছু,খিদে পাচ্ছে কেমন জানি।
মামী মিশানকে ভেতরে নিয়ে যেতেই দ্বীপ অফিস যাওয়ার জন্য বের হবে তখন মিশানকে দেখে, ওর মাকে বলে,
-দেখেছো মা , বললাম না মিশান হাঁটতে বেরিয়েছে,সময়মতো ফিরে আসবে। খামোখা তুমি আজে বাজে চিন্তা করছিলে।
তুমি আমার কথা শুনলেই না।বাড়ির সবার মাথা খেয়ে দিচ্ছিলে।
জানিস মিশান মা তোর চিন্তায় এতোটা উদ্বেগ হয়ে পড়েছিলো যে পেশার হাই হয়ে অবস্থা খারাপ,রাতে মাথায় পানি ঢালতে ঢালতে তাঁর হুঁশ ফিরে।
মিশান মামীর দিকে তাকিয়ে বিকৃত ভাবে বললো,
-কি অবস্থা! মিমি এমন কেনো করো?আমি বড় হয়ে গেছি।কেনো চিন্তা করো আমায় নিয়ে? আর আমাকে ডক্টর বলেছে যখনি ঘরের ভেতর দম বন্ধ হয়ে আসবে সোজা খালি পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে,যতক্ষণ না ভেতরে শান্তি অনুভব হচ্ছে ততোক্ষণ অব্ধি আমাকে এলোপাথাড়ি আনমনা গন্তব্যহীন হাঁটতে বলেছে।এতো রাতে তোমায় ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলবো আমি বেরুচ্ছি?আর দ্বীপ তো জানেই আমাকে ডক্টর এই সাজেশন দিয়েছে।এখন বলো আমি কি ভুল করেছি ?
দেখো এতো হাঁটাহাঁটি করে মনটা হাল্কা লাগছিলো,তোমার কথা শুনে আবার মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো।আমার শরীর ক্লান্ত লাগছে আমি আর হাঁটতে পারবো না, কিন্তু আমার মন ভালো করার জন্য বেরুতে হবে আবার।
-না না মা তুই এখন বেরুস না, তুই ড্রয়িংরুমে বস আমি তোর মন ভালো করার চেষ্টা করছি, তোর বেরুতে হবে না এখন।আর আমি কথা দিচ্ছি এরকম রাত বিরাত তোকে উধাও দেখলে আর কখনো ঘাবড়ে যাবো না, চিন্তা করবো না, তুই যেভাবে যা করে ভালো থাকবি আমিও সেভাবে তাতেই খুশি। তুই ভালো থাক মা।
চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here