#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৯
দাদিন সহ তার তিন নাতি এলো সন্ধ্যার পর। রাদিফের আসার কথা থাকলেও অফিসে জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় আসতে পারেনি। সে আসেনি বলে তার মা, বউ, বাচ্চা কেউই এলো না। ছোটো চাচা, চাচি তারাও আসেনি। শুধু ছেলেদের পাঠিয়ে দিয়েছে। সাদমান, সোহান, রোশান বাড়িতে পা রাখতেই পুরো বাড়ির আমেজ বদলে গেল। দাদিন এসেই নিজের ঘরে গিয়ে হায় হুতাশ করতে শুরু করলেন। এই বয়সে এসে এমন জার্নি তার শরীরে কুলোয় না। মনে মনে প্রতিজ্ঞাও করে ফেললেন। আর ঢাকার মুখ সে দেখবে না। পায়ে ব্যথায় আহাজারি শুরু করাতে কাজের মেয়েটা ছুটে গেল তার পা টিপতে। মাহের শাওয়ার নিচ্ছিল বলে সেই ফাঁকে দাদিনের সঙ্গে দেখা করল সূচনা। কথার ছলে দাদিনকে বলল,
-” তুমি তাহলে রেস্ট করো। তোমার নাত জামাইকে কফি দিয়ে আসি। ”
দাদিন বলল,
-” যা যা খাবার সময় দেখা করবনি ওর সাথে। ”
সূচনা বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে হঠাৎ কাজের মেয়েটার দিকে তাকাল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” কুসুম তুই অমন মুখ চেপে রেখে হাসছিস কেন? কী হয়েছে? ”
দাদিনের পা টেপা থামিয়ে কুসুম লজ্জায় মুখ লুকাল। বলল,
-” আপা আমি কমু না। আয়নার সামনে যেয়ে আপনি নিজেই দেখে নিয়েন। ”
কপালে দু’ভাঁজ ফেলে রুম ছেড়ে বের হলো সূচনা। ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে তেমন মাথা ঘামাল না। ড্রয়িংরুমে সাদমান, সোহান, রোশান হুড়োহুড়ি করছে। তাদের চ্যাঁচামেচি বড্ড কানে লাগছে। একটু ধমক দেয়া প্রয়োজন। তাই হাঁটার গতি বাড়িয়ে ড্রয়িংরুমে এলো। তিনজনকে কঠিন করে ধমক দিল। সঙ্গে সঙ্গে তিনজন ভীষণ ভদ্র হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সাদমান সূচনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সহসা বত্রিশ পাটি দাঁত দেখিয়ে হাসল। তার হাসির দিকে তাকিয়ে বাকি দু’জনও হাসতে লাগল। কিছুটা বিব্রত হলো সূচনা। বলল,
-” বলদের মতো হাসছিস কেন? জার্নি করে তোদের মাথা কি গেল নাকি? ফ্রিজে সরবত বানানো আছে দেখ গিয়ে। ”
বলতে বলতে রান্নাঘরের দিকে গেল সে। সাদমান সোহানের মাথায় গাট্টা মেরে জিজ্ঞেস করল,
-” হাসছিস কেন? ”
সোহান, রোশান দু’জনই একসাথে বলল,
-” তোমার হাসিতে সঙ্গ দিলাম ব্রো। ”
সাদমান মনে মনে স্বস্তি পেল। যাক বাঁদর দু’টো তাহলে হাসির আসল কারণ বুঝতে পারেনি। কিন্তু সোহান বুঝে যেতেও পারে। তার তো আবার গার্লফ্রেন্ড আছে। যতদূর জানে বেশ লুতুপুতু ধরনের সম্পর্ক। গার্লফ্রেন্ড অবশ্য তার নিজেরও আছে। তাই সূচনার ব্যাপারটা বুঝতে দেরি হয়নি। শত হোক বড়ো বোন এভাবে লজ্জায় ফেলাও দৃষ্টিকটু তাই বাকি দু’জনের চোখে যেন সূচনা এ মূহুর্তে না পড়ে। তাই বলল,
-” তোরা দু’জন এখানে বসে থাক আমি সরবত এনে দিচ্ছি। ”
সূচনা কফি বানিয়ে যেই ঘুরল অমনি সাদমান দাঁত ক্যালিয়ে হাসি দিল। সূচনা চোখ রাঙিয়ে বলল,
-” ভালো হচ্ছে সাদু এমন করে হাসছিস কেন? ”
সাদমান মাথা চুলকে প্যান্টের পকেটে হাত ঢোকালে। হ্যাংলা, পাতলা বডির দিকে তাকিয়ে সূচনা বলল,
-” সামনে থেকে সরে দাঁড়া ভাই। এখন ইয়ার্কি মারার সময় নেই। ”
সাদমান ভীষণ সিরিয়াস হয়ে সরে দাঁড়াল। সতর্কী কণ্ঠে বলল,
-” বিচ্ছু দু’টোর সামনে আপাতত যেও না আপা। ওরা কিন্তু অনেক বেশি পেকে গেছে। ”
চোখমুখ শক্ত করে সূচনা তাকাল সাদমানের দিকে। বলল,
-” তুইও অনেক বেশি পেকেছিস। মাসে কয়টা গার্লফ্রেন্ড বদলাস সে খবর ঠিক কানে আসে। আর মুখ খুলতে বাধ্য করিস না। ফ্রিজে সরবত আছে, আইসক্রিম আছে, ফ্রুটস আছে, যা পারিস খেয়ে রেস্ট কর। ”
গটগট পায়ে সাদমানের সামনে থেকে চলে এলো সূচনা। ড্রয়িংরুমে বিচ্ছু দু’টো গেমস খেলায় ব্যস্ত। সূচনার বুকের ভিতরটায় অদ্ভুতরকম কাঁপছে। তখন ওভাবে মাহেরের বুকে নিজের জায়গা করে নেয়া তার দ্বারা সত্যি অসম্ভব ছিল৷ সেই অসম্ভটা সম্ভব করেছে মাহের নিজেই। এর পাশাপাশি আরো একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছে মানুষটা। তার কান্নার গতি যখন বেড়ে চলছিল তাকে থামানোর জন্য এ প্রথমবার আদর করেছে। সেই আদরের মাঝেই কখন যেন গালে গাঢ় করে চুম্বনও এঁটেছে। সেই শক্ত চুম্বনের রেশটা এখনো রয়ে গেছে। মাহেরের পুরুষালি পাতলা ওষ্ঠজোড়া যেন এখনো লেগে আছে তার নরম তুলতুলে গালটায়। অদ্ভুত শিরশিরানি অনুভব হচ্ছে। তার এই অনুভূতিটা কি কাজের মেয়ে কুসুম, ভাই সাদমান কোনোভাবে টের পেয়েছে? নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে মাহেরের দেয়া আদর তারা দেখে নিয়েছে। তীব্র অস্বস্তি নিয়ে রুমে প্রবেশ করল সূচনা। মাহের বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ফোনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা ছিল। সূচনা রুমে প্রবেশ করতেই ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলল,
-” দাদিনরা এসে গেছে? ”
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে কফির মগ এগিয়ে দিল সূচনা। মৃদু হেসে কফির মগ হাতে নিয়ে মাহের বলল,
-” আপনার জন্য বানাননি? ”
-” আমি এখন খাব না। ”
নরম সুরে কথাটা বলেই আয়না দেখার উদ্দেশ্যে পিছন ঘুরল সে। পা আগাতে নিতেই বিচলিত হয়ে মাহের বলল,
-” দেখি এদিকে ঘুরুন কী হয়েছে? ”
আঁতকে ওঠে মাহেরের দিকে ফিরে তাকাল। বেড সাইট টেবিলে মগ রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল মাহের। সূচনার বাম গালে কয়েক পল স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
-” এটা আমি করেছি? ”
কণ্ঠে অবিশ্বাস স্পষ্ট। সূচনা কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-” কী করেছেন? আমাকে দেখে ওরা হাসল, কী হয়েছে আমার ? ”
-” কারা হাসল! ”
-” কুসুম, সাদু মানে সাদমান! ”
অস্পষ্ট স্বরে মাহের বলল,
-” শীট! আমার খেয়াল রাখা উচিৎ ছিল। ”
সূচনা আর অপেক্ষা করতে পারল না। ত্বরিৎ পায়ে আয়নার সামনে গিয়ে নিজের মুখশ্রীতে সচেতন দৃষ্টি বুলালো। বাম গালে স্পষ্ট লালচে দাগ সুক্ষ্ম নজরে তাকালে স্পষ্টই বোঝা যাবে কেউ দৃঢ় চুম্বন এঁটেছে এই গালে। আর সেই কেউ যে তার স্বামী মাহের এ কথা কারোরি অজানা নয়। তীব্র লজ্জায় পুরো মুখশ্রীই রক্তিম হয়ে ওঠল এবার। নিশ্বাস হয়ে গেল বড়োই বেসামাল। একটুখানি পিছু তাকাতেই মাহেরের অদ্ভুত চাহনি দেখে মুখ লুকাতে ইচ্ছে করল। তার অমন কঠিনতম লজ্জা দেখে অধর কামড়ে হাসল মাহের। কফির মগ হাতে নিয়ে সন্তর্পণে চুমক দিল। এরপর হালকা কাশি দিয়ে সূচনার অ্যাটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করল। বলল,
-” একটু সময় নিন ঠিক হয়ে যাবে। আপাতত কিছু সময় বের হবেন না। ”
সূচনা মাথা দোলালো। মাহের তৃপ্তি নিয়ে আরেকটু হাসল। পরিস্থিতি স্বাভাবিকতায় আনতে প্রশ্ন করল,
-” হৈমী কোথায়? ওদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে? ”
চমকে ওঠল সূচনা সত্যিই তো হৈমী কোথায়?
________
রুদ্রর রুম থেকে বেরিয়ে হৈমী সূচনাদের গেস্ট রুমে গিয়ে বসে ছিল দীর্ঘক্ষণ। তীব্র বিষণ্ণতায় আচ্ছাদিত মন। তাই এই বিষণ্নভরা মনে একমাত্র সম্বল হিসেবে টিশাকেই মনে পড়ল তার। সঙ্গে সঙ্গে কলও করে ফেলল। রুদ্রর বলা কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে জানালো টিশাকে। সব শুনে টিশা ভীষণ রেগে গিয়ে ধমক দিল, বিরক্তি ভরা কণ্ঠে বলল,
-” তুই কাঁদছিস! তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। একজন গর্ভবতী মেয়েকে ফোন করে কাঁদিস। আর কান্নার কারণ কী বললি? ঐ রুদ্র না ছিদ্র, হ্যাঁ ছিদ্রই তার নাম। তোর হৃদয় ছিদ্র করেই তো দিয়েছে। ব্যাটা খাটাশ, এই শোন খাটাশের দিল ওয়ালি। আরে বেটি থাম আগে আমার কথা শোন। আরে আশ্চর্য তোর সঙ্গে চিল্লাতে চিল্লাতে আমার ডেলিভারি হওয়ার উপক্রম, আর তুই থামছিস না। দেখ হৈমী আমার জামাই বাসায় নেই। খালামুনি রান্নাঘরে বিপদ ঘটলে কিন্তু সর্বনাশ! ”
ধমক খেয়ে কিছুটা দমে এলো হৈমী। ভাঙা কণ্ঠে নাক টেনে বলল,
-” বল শুনছি । ”
-” আমি যা বলব একদম মাথায় সেট করে ফেলবি। আর সে অনুযায়ীই কাজ করবি কেমন? তাহলে দেখবি ব্যাটা বেয়াই কেমন জব্দ হয়। ”
-” আচ্ছা বল। ”
-” ওকে মস্তিষ্কে নোট করে ফেল। ”
______
ডিনারের সময় সবাই একত্রিত হলো। টিশার সঙ্গে কথা বলার পর মনের আকাশে মেঘের ঘনঘটা কেটে গিয়েছিল। তাই সবার সঙ্গে অর্থাৎ সাদমান, সোহান, রোশানের সঙ্গে দেখাটা স্বাচ্ছন্দ মতোই হলো। খেতে বসার পর রুদ্রর মুখোমুখি হলেও একবার তাকিয়ে দেখল না। বোনের মাঝে কিঞ্চিৎ নিরবতা দেখে মাহের আড়ালে জিজ্ঞেস করল,
-” তোমার শরীর খারাপ লাগছে? চোখ, মুখ লাল কেন? ঠান্ডা লাগিয়েছ? ”
হৈমী মাথা নাড়িয়ে না বোঝাল। মৃদু হেসে বলল,
-” দুপুরে একটু আইসক্রিম খেয়েছিলাম তাই বোধহয় একটু ঠান্ডা লেগেছে। ”
সকলকে খাবার বেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সূচনা। মাহের মৃদু কণ্ঠে তাকে আদেশ করল,
-” দাঁড়িয়ে থাকবেন না, আমাদের সাথেই খেয়ে নিন। কারো কিছু প্রয়োজন হলে কুসুম এনে দেবে বসুন। ”
মাহেরের এটুকু আদেশকে রুদ্র ভীষণ পজেটিভ নিল। আপনমনে খুশিও হলো ভীষণ। তাই গম্ভীর কণ্ঠে বোনকে বলল,
-” দাঁড়িয়ে কেন খেতে বোস। ”
খাবারের পাট চুকিয়ে হৈমী রাতে কোথায়, কার সঙ্গে ঘুমাবে এই আলোচনা করে উপরে চলে গেল মাহের। একা যেহেতু এক রুমে থাকতে পারবে না তাই আজ রাত সে দাদিনের সঙ্গে ঘুমাবে বলে ঠিক হলো। হৈমীর ঘুমের স্টাইল তেমন সুবিধার নয়। তাই সে ভীষণ চিন্তিত। বুড়ো মানুষ না জানি আজ রাতে কী অঘটন ঘটে যায়! ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে ভাইদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে হৈমীকে দ্রুত ঘুমাতে যাওয়ার কথা বলে সূচন চলে গেল। কিন্তু হৈমীকে যেতে দিল না রোশান। তার বায়না তিন ভাইয়ের সঙ্গে এবার লুডু খেলতে হবে। খেলায় একটি নিয়মও দেয়া হলো। যে জিতবে সে দু’টো শর্ত দেবে। সেই শর্তগুলো পূরণ করতে হবে যে হারবে তাকে। দূর্ভাগ্যবশত আজ হেরে গেল হৈমী। আর জিতে গেল সোহান। মনটাই খারাপ হয়ে গেল হৈমীর। বিরস মুখে বলল,
-” আমার শরীরটা ভালো নেই আজ৷ না জানি কী শর্ত দেবে আজকে সেসবের জন্য আমি প্রস্তুত নই। তাছাড়া রাতও হয়েছে অনেক এবার ঘুমাতে যাই। যত শর্ত সব কাল পূরণ করব। ”
প্রতিবাদ করল সোহান কিন্তু সাদমান মেনে নিল। মাত্রই তার ফোনে রুদ্রর ম্যাসেজ এসেছে। অ্যাংরি ইমোজি দিয়ে সে লিখেছে,
-” বারোটা চব্বিশ বাজে। এবার তোদের খেলা বন্ধ না হলে খুব খারাপ হবে! ”
এমন ম্যাসেজ পেয়ে সাদমান বাকি দু’জনকে ম্যানেজ করে উপরে চলে গেল। বিরস মুখে হৈমীও দাদিনের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। সারারাত না ঘুমিয়ে ছটফট ছটফট করেই কাটল তার। একদিকে অবশ্য ভালই হলো, ঘুমের ঘোরে মহাবিপদ ডেকে আনা হলো না।
পরের দিন সকাল থেকে রুদ্র ভীষণ ছটফট করতে লাগল। গতকাল হৈমী তাকে উত্তর না দিয়েই বেরিয়ে গিয়েছিল। এরপর সকলের ভীরে আর উত্তর শোনা হয়নি। কিন্তু আজ শুনতেই হবে তার উত্তরটি। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে হৈমী কোথায় সেটাই দেখার চেষ্টা করছিল সে। এমন সময় সূচনার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো হৈমী। রুদ্রও তার সামনে দেয়াল সরূপ দাঁড়াল। রাশভারী স্বরে জিজ্ঞেস করল,
-” আমার উত্তরটা? ”
সূচনার ঘর থেকে মাহের বেরিয়ে এলো। রুদ্র কৌশলে হৈমীকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। মাহের জিজ্ঞেস করল,
-” এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? রুদ্র কিছু বলেছে? ”
-” কইই না তো আমি যাচ্ছিলাম উনি তো ছাদে গেলেন। সামনাসামনি পড়ে গিয়েছিলাম। ”
-” আচ্ছা, বাইরে যাচ্ছি কিছু খাবে? কী আনব? ”
-” যা খুশি এনো। ”
ভ্রু কুঁচকে তাকাল মাহের। থতমত খেয়ে হৈমী বলল,
-” চকলেট, আর চাটনি এনো। ভাবি তো চিকেন ফ্রাই বানাচ্ছে কোকাকলাও নিয়ে এসো। ”
______
দুপুর বেলা হঠাৎ হৈমীর মনে পড়ল সে গতকাল লুডু খেলায় হেরেছে। সে জন্য তাকে আজ দু’টো শর্ত পূরণ করতে হবে। কিন্তু শর্তগুলো কী কী জানা হয়নি। তাই রোশান, সোহানকে খুঁজতে বের হলো। খোঁজাখোঁজি করতে করতে রুদ্রর রুমের সামনে এসে দ্বিধায় পড়ল। দুবার ডাকল,
-” সোহান… রোশান… তোমরা আছো? ”
কোনো সাড়া পেল না। ব্যর্থ হয়ে সরে যেতে উদ্যত হলো। পেছন ঘুরেছে অমনি দরজা শব্দ করে খুলে রুদ্র
তার ওড়না টেনে ধরল আচমকা। আঁতকে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল হৈমী। বড়ো বড়ো চোখ করে শুঁকনো ঢোক গিলল বারকয়েক। পুরো ওড়না যখন রুদ্রর দখলে তখন নিজের শেষ চেষ্টাটুকু দিয়ে ওড়নার শেষ কোণাটা টেনে ধরল হৈমী। শঙ্কিত হয়ে বলল,
-” প্লিজ এমন করবেন না। ভাইয়া এসে যাবে। ”
প্রতুত্তরে রুদ্র কিছু না বলে ওড়নায় হেঁচকা টান দিল। ফলশ্রুতিতে ওড়না সহ পুরো হৈমীটাই রুদ্রর ঘরে চলে গেল। ত্বরিত গতিতে দরজা লক করে দিল রুদ্র৷ জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে হৈমী। সুক্ষ্ম নজরে বোঝা যাবে তার শরীর মৃদু কাঁপছে। চোখের পাতা চঞ্চলিত। ঢোক গিলছে ঘনঘন। রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল রুদ্র। হাতে থাকা ওড়নাটা ছুঁড়ে দিল হৈমীর দিকে। হৈমী তৎক্ষনাৎ ওড়না গলায় জড়িয়ে নিল। রুদ্র কঠিন চোখে তাকিয়ে। তীব্র রোষানলে কপালের রগ ফুলে ওঠেছে তার। চোয়ালজোড়াও দৃঢ়। হৈমী ভীতু চোখে তার পানে তাকাতেই সে দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করল,
-” উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে চলছো কেন? আমার উত্তর চাই। ”
হৈমী এক সেকেণ্ড সময় না নিয়ে বলল,
-” আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমার উত্তর কর হতে পারে? ”
চিল্লিয়ে ওঠল রুদ্র। দু’কদম তেড়ে এলো হৈমীর দিকে। হাত বাড়িয়ে শক্ত করে চেপে ধরল হৈমীর কাঁধজোড়া। ব্যথায় চোখ বন্ধ করে ফেলল হৈমী। রুদ্র ধমকে বলল,
-” না জানি না৷ আমি তোমার মুখে উত্তরটা শুনতে চাই। ”
কয়েক পল পর অসহায় চোখে তাকাল হৈমী। রুদ্রর কঠিন দৃষ্টিজোড়া তার চোখেতেই স্থির। সে চোখে নিজের চাহনি দৃঢ় করল হৈমী। কিঞ্চিৎ দৃঢ় স্বরে উত্তর দিল,
-” কোনো মেয়ে তার ভালোবাসার জন্য মাতৃসত্তা ত্যাগ করেছে কিনা জানি না। কিন্তু আমি করতে রাজি যদি আপনি আপনার পৌরুষ চাহিদা ত্যাগ করতে পারেন। আপনার বউ হতে রাজি তখন হবো যখন আপনি আমাকে সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা দিতে পারবেন। মা তো আর একা একা হওয়া যায় না তাই না? এবার আপনি নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করে আমাকে উত্তরটা জানান ? মনে রাখবেন আপনার আমার মনের সম্পর্ক তৈরি হবে, দেহের না৷ আপনি, আপনার পৌরুষচিত মন, দেহ যদি এই ত্যাগটুকু করতে পারে আমারো নারী মন, মাতৃসত্তা ত্যাগ করতে পারবে। ”
চলবে…